ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে মামলা করার হিড়িক পড়েছে। গত ৫ আগস্ট সরকার পরিবর্তনের পর প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে একের পর এক হত্যা ও বিস্ফোরক আইনে মামলা করা হচ্ছে। শুধু ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর মডেল থানাতেই প্রায় একডজন হত্যা, বিস্ফোরক ও নাশকতার মামলা নথিভুক্ত করা হয়েছে। পাশাপাশি আদালত এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার অন্যান্য থানায়ও মামলা হচ্ছে। প্রায় প্রতিটি মামলাতেই গড়ে দুই শতাধিক মানুষকে আসামি করা হচ্ছে।
হত্যা, বিস্ফোরক ও নাশকতার মামলায় আওয়ামী লীগ সরকারের আমলের সাবেক মন্ত্রী, সংসদ সদস্য, জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, মেয়র, উপজেলা চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান, ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান, মেম্বারসহ প্রতিপক্ষের রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীসহ সাধারণ মানুষকেও আসামি করা হচ্ছে। এমনকি মামলায় ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার কয়েকজন সাংবাদিককেও আসামি করা হয়েছে। শুধু তাই নয়, প্রবাসে থেকেও মামলার আসামি হয়েছেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌর এলাকার ভাদুঘর গ্রামের মো. বাছির দুলাল এবং সদর উপজেলার নাটাই উত্তর ইউনিয়নের ভাটপাড়া গ্রামের মো. রাসেল। এ অবস্থায় সাধারণ মানুষ মামলা আতঙ্কে ভুগছেন। কখন কার বিরুদ্ধে মামলা হয় এই আতঙ্কে তটস্থ সাধারণ মানুষ।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, একটি প্রতারক চক্র মামলা হওয়ার আগেই শহরের বিভিন্ন কম্পিউটারের দোকান থেকে মামলার কপি বানিয়ে ভুয়া মামলার কপি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দিচ্ছে। যাদের ওইসব ভুয়া মামলায় আসামি করা হচ্ছে মামলার কপি দেওয়া হচ্ছে তাদের ম্যাসেঞ্জার ও হোয়াটসঅ্যাপে। পরে তাদের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নেওয়া হচ্ছে।
এদিকে এমন পরিস্থিতিতে বিব্রতকর অবস্থায় পড়েছে পুলিশ। সম্প্রতি ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর মডেল থানা পুলিশের পক্ষ থেকে ভুয়া প্রতারকদের কাছ থেকে জনগণকে সাবধান থাকার জন্য সতর্ক করা হয়েছে। সদর মডেল থানার ওসি মোহাম্মদ মোজাফফর হোসেন স্বাক্ষরিত সতর্ক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, একটি প্রতারক চক্র মামলার ভয়ভীতি দেখিয়ে টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। এসব নিয়ে আতঙ্কিত না হয়ে থানায় যোগাযোগ করার অনুরোধ জানানোর পাশাপাশি এর সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানানো হয়েছে সতর্ক বিজ্ঞপ্তিতে।
সতর্ক বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়েছে, সম্প্রতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে যে, কতিপয় ব্যক্তি কম্পিউটার টাইপের মাধ্যমে ২০০ থেকে ৩০০ বা তারও অধিক ব্যক্তির নাম উল্লেখ করে মামলার অভিযোগ লিখে তা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচার করছে। মামলায় নাম ঢুকিয়ে দেওয়া ও মামলা থেকে নাম বাদ দেওয়ার কথা বলে টাকা-পয়সা আদায়সহ জনমনে আতঙ্ক ছড়াচ্ছে। এ ধরনের অভিযোগ দেখে আতঙ্কিত হয়ে টাকা-পয়সার লেনদেন থেকে বিরত থাকার জন্য অনুরোধ জানানো হচ্ছে সবাইকে। প্রতারক চক্র বিভিন্ন সময়ে বিভিন্নজনের নাম লিখে টাকা-পয়সা নিচ্ছে।
সতর্ক বিজ্ঞপ্তিতে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, থানায় কোনো অভিযোগ দায়ের হলে বা মামলা হলে প্রতি পাতায় স্বাক্ষর ও সিল থাকে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভুয়া অভিযোগ বা এজাহার প্রচারকারীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। প্রতারকদের বিষয়ে তথ্য দিতে ০১৩২০-১১৪৯৮১ (অফিসার ইনচার্জ, সদর মডেল থানা) ও ০১৩২০-১১৪৯৮৬ (ডিউটি অফিসার) নম্বরে যোগাযোগ করার অনুরোধ জানানো হচ্ছে।
উল্লেখ্য, গত ৫ আগস্টের পর মাত্র তিন মাস সময়ের ব্যবধানে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় দায়ের হওয়া বিভিন্ন মামলা নিয়ে বাণিজ্যের এই অভিযোগ টক অব দ্য টাউনে পরিণত হয়েছে। ব্যাপক আলোচনা ও সমালোচনা চলছে বিষয়টি নিয়ে। নিকটতম সময়ে গত ২৮ অক্টোবর ৩৫০ জনের নামে একটি মামলা হয়। এ ছাড়া ২৫ অক্টোবর ২৪০ জনের নামে আরও দুটি মামলা হয়। এসব মামলা রুজু হওয়ার আগেই মানুষের মুখে মুখে মামলার কথা চাউর ছিল।
সময়ের আলো/আরএস/