ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে নিহত ২০০ জনের পরিবারকে পাঁচ লাখ টাকা করে আর্থিক সহায়তা দেওয়া শুরু হয়েছে। এছাড়াও স্বজন হারানো পরিবারের পুনর্বাসন, দীর্ঘমেয়াদি সম্মানীভাতা এবং অন্তত একজন সদস্যের চাকরির ব্যবস্থা করার পরিকল্পনা রয়েছে বলে জানিয়েছেন জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক সারজিস আলম।
শনিবার (২ নভেম্বর) ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের নগর ভবনে ‘শহীদ পরিবারের পাশে বাংলাদেশ’ এই শিরোনামে সহায়তা প্রদান কর্মসূচিতে তিনি এ কথা বলেন।
সারজিস বলেন, পর্যায়ক্রমে ধাপে ধাপে আর্থিক সহযোগিতা হোক, দীর্ঘমেয়াদি পুনর্বাসন হোক, আমাদের শহীদ ভাইদের পরিবারের পরিবার থেকে অন্তত একজনের বিভিন্ন জায়গায় তাদের চাকরির ব্যবস্থা হোক, আমাদের যারা আহত ভাইরা রয়েছে, তাদের পুনর্বাসন কিংবা দীর্ঘমেয়াদি সম্মানীভাতা থেকে শুরু করে সকল পরিকল্পনা আমাদের রয়েছে।
ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে প্রথম ধাপে ৫০ টি ‘শহীদ পরিবারের’ প্রত্যেকের হাতে ৫ লাখ টাকা করে অনুদানের চেক তুলে দেন নারী, শিশু ও সমাজকল্যাণ উপদেষ্টা শারমিন মুরশিদ। সকাল নয়টার প্রথম ধাপের আয়োজন শুরু হলেও বেলা সাড়ে ১২টায় মূল আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়।
সারজিস বলেন, এটি মাত্র শুরু। এ ফাউন্ডেশন কয়েক মাসের জন্য না, অন্তর্বর্তী সরকার যে ‘কিছু দিন’ থাকবে, ওই ‘কিছু দিনের’ জন্য এ ফাউন্ডেশন নয়। আমরা প্রয়োজনে এ ফাউন্ডেশনকে জীবনের বিনিময়ে বাঁচিয়ে রাখব; যতদিন আমাদের একজনও আহত ভাই বেঁচে থাকবে, যতদিন শহীদ পরিবারের সদস্যরা থাকবেন।
যেভাবে আহতদের পাশে দাঁড়ানোর দরকার ছিল, যেভাবে ‘শহীদ পরিবারের পাশে’ দাঁড়ানোর প্রয়োজন ছিল, বাংলাদেশ রাষ্ট্রের নতুন একটি পর্যায়ে নতুন ঘটনা সৃষ্টির পরিক্রমায় ‘ঠিক সেভাবে’ দাঁড়াতে পারেননি বলে স্বীকার করেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃত্বে থাকা এই ছাত্রনেতা।
‘আমরা আপনাদের সন্তান হিসেবে হোক, ভাই হিসেবে হোক এতটুকু আশ্বস্ত করতে চাই, আমাদের চেষ্টার কোনো কমতি তখনও ছিল না, এখনও নেই, সামনেও থাকবে না। আমাদের যথেষ্ট পরিকল্পনা রয়েছে।আমার যদি নিজেদের একটু গুছিয়ে নিতে পারি তাহলে খুব দ্রুত, আমাদের ইচ্ছা রয়েছে আমরা প্রত্যেক বীর শহীদ ভাইদের বাড়িতে আমরা যাব। আমরা আমাদের ভাইদের সঙ্গে, বাবাদের সঙ্গে বোনদের সঙ্গে একসঙ্গে বসে তাদের কথাগুলো শুনব।’
আহত ও ‘শহীদ’ পরিবারের যাচাই-বাছাইয়ের প্রয়োজনীয়তা ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, আমি ধরে নিচ্ছি আমার ১৬শ ভাইবোন রয়েছে। এর মধ্যে যদি ১০ জনও এমন ঢুকেন যারা প্রশ্নবিদ্ধ, যারা অভ্যুত্থানের শহীদ নন, ওই দশজনের জন্য সবাইকে প্রশ্নবিদ্ধ হতে হবে। একাত্তরের বীর মুক্তিযোদ্ধাদের যে লিস্টটি আছে সেটিকে বিভিন্নভাবে প্রশ্নবিদ্ধ করা হয়। আমরা সে সুযোগটি কাউকে দিতে চাই না। তাই পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে আমাদের এই ভেরিফিকেশন প্রক্রিয়ার জন্য আমাদের কিছুটা সময় লাগছে। আমার আশা করি নভেম্বর মাসের মধ্যে আমাদের ভেরিফিকেশন প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে।
জরুরি প্রয়োজনে আহত ও ‘শহীদ’ পরিবারের সদস্যদের ফাউন্ডেশনের সঙ্গে যোগাযোগের পরামর্শ দেন সারজিস। বলেন, আমাদের অফিস রয়েছে, শাহবাগের পাশে, হোটেল ইন্টার কন্টিনেন্টালের পাশে। আপনাদের যে কোনো জরুরি প্রয়োজনে আপনারা সেখানে আসবেন কিংবা আমাদের যে জরুরি হেল্পলাইন নম্বর রয়েছে ১৬০০০, সেখানে আপনারা আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেন। সন্তান হিসাবে, ভাই হিসাবে সর্বোচ্চ টুকু করব, সেই কথা আমরা আপনাদের দিচ্ছি।
জুলাই-আগস্টের ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে এখন পর্যন্ত ১ হাজার ৬০০ জনের বেশি শহীদ এবং ২৪ হাজার আহত ব্যক্তির পরিচয় প্রাথমিকভাবে তালিকাভুক্ত করা হয়েছে বলে জানিয়েছে জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশন। তারা জানায়, তালিকাটি বারবার যাচাই করা হচ্ছে।
সময়ের আলো/জেডআই