প্রকাশ: রবিবার, ২৭ অক্টোবর, ২০২৪, ৩:৩২ এএম (ভিজিট : ৪৬০)
ছয় সপ্তাহ থেকে মজুরি না পাওয়ায় ছেলেমেয়ের মুখে খাবার তুলে দিতে পারছি না। তারা খাবারের জন্য কান্নাকাটি করে, কিন্তু তাদের কীভাবে সান্ত্বনা দেব। টাকার অভাবে সবজি কিনতে পারি না। মাঠ থেকে যে কচুর মুড়া এনে রান্না করব সেই কচুর মুড়াও এখন মাঠে নেই। প্রতিদিন চা বাগানে কাজ শেষে মাঠ থেকে কচুর মুড়া তুলে নিয়ে আসি। আমাদের জীবনযুদ্ধের সঙ্গে কচুর মুড়া তোলাও একটা যুদ্ধ। পুরো বাগান ঘুরে দেখতে পাবেন, কোথাও এখন কচু গাছ নেই। অনেক দিন হয়ে গেল-ভাতের সঙ্গে সবজি খাওয়া হয় না।
স্কুলে যাওয়ার সময় ছেলেমেয়েরা আমাদের কাছে টাকা চাইলে তাদের হাতে দুই টাকা তুলে দেব সেই সামর্থ্য এখন নেই। ছয় সপ্তাহ থেকে রোদ-বৃষ্টিতে ভিজে চা বাগানে কাজ করছি কিন্তু মজুরি পাচ্ছি না। এভাবে আমাদের জীবন্ত কষ্ট না দিয়ে মেরে ফেললেইতো হয়। তখন সংসারে আর জবাবদিহিতা করতে হবে না।
কথাগুলো বলেন, হবিগঞ্জ জেলার চুনারুঘাট উপজেলার চানপুর চা বাগানের নারী শ্রমিক অবলা ভাউরী। শনিবার দুপুরে পুরান ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক অবরোধকালে দৈনিক সময়ের আলোর সঙ্গে আলাপকালে তিনি একথা বলেন।
অবলা আরও বলেন-জন্মের পর থেকেই আমরা এই চা বাগানের সঙ্গে মিশে আছি, আমাদের সুখ-দুঃখের দুনিয়া হচ্ছে-এই চা বাগান। এর বাইরে কিছুই ভাবতে পারি না। কিন্তু এখান থেকে যদি আমাদের জীবন না চলে তা হলে আমরা কোথায় গিয়ে দাঁড়াব। আমাদের মজুরি যদি নিয়মিত না দেওয়া হয় তা হলে আমরা আরও কঠোর আন্দোলনে যেতে বাধ্য হবো। আমাদের কঠোর আন্দোলনে যেতে বাধ্য করবেন না।
একই বাগানের বিজলী তাতী বলেন, আমরা দীর্ঘদিন থেকে অনাহারে-অর্ধাহারে দিন পার করছি কিন্তু মালিকপক্ষ একটিবার এসে আমাদের দেখে যায়নি। আমরা বে^ঁচে আছি, নাকি মরে গেছি একটিবার এসে খবর নেয়নি তারা। এভাবে একটি মানুষ কতদিন না খেয়ে বেঁচে থাকতে পারে। আমাদের এই বাগানে খেয়ে বেঁচে থাকার সুযোগ দেন। আমরাও বেঁচে থাকতে চাই।
নমিতা মুন্ডা নামে আরেক নারী শ্রমিক জানান-অনেক শ্রমিক বিভিন্ন দোকান থেকে বাকিতে খরচ করেছেন, দোকানিরা এখন আর আমাদের বাকি দিতে চান না। চা বাগান পক্ষ থেকে আমাদের শুধু আটা দেওয়া হয় কিন্তু তা আমরা কীভাবে গিলে খাব। আর কতদিন এভাবে চায়ের মধ্যে রুটি ভিজিয়ে জীবন পার করব। আমরা যখন সপ্তাহিক মজুরি পাই তখন আমরা এক সপ্তাহের বাজার করি। কিন্তু এই ছয় সপ্তাহ থেকে কোনো মজুরি না পাওয়ায় ঘরে আগুন জ্বালানোর কোনো উপায় নেই। আমাদের একটিবারের জন্য মানুষ হিসেবে বিবেচনা করুন। ক্ষুধার জ্বালায় আমাদের ছোট ছোট ছেলেমেয়ে কান্নাকাটি করে। তাদের একটাই প্রশ্ন, তুমি সারা দিন মাঠে কাজ কর কিন্তু বেতন কোথায়?
সময়ের আলো/আরএস/