ই-পেপার সোমবার ১৬ ডিসেম্বর ২০২৪
সোমবার ১৬ ডিসেম্বর ২০২৪
ই-পেপার

সোমবার ১৬ ডিসেম্বর ২০২৪

এখনও ঝুলছে শতাধিক মামলা
চসিক মেয়র হিসেবে শপথ নিচ্ছেন শাহাদাত
প্রকাশ: শনিবার, ২৬ অক্টোবর, ২০২৪, ১২:৪৫ এএম  (ভিজিট : ৪৭২)
নাশকতা, হামলা, ভাঙচুরসহ শতাধিক মামলার খড়গ বিএনপি নেতা ডা. শাহাদাত হোসেনের ঘাড়ে। এরই মধ্যে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) মেয়র পদে শপথ নিতে যাচ্ছেন তিনি। আগামী ৩ নভেম্বর শপথ অনুষ্ঠান হবে ঢাকায়। এরপর মেয়রের চেয়ারে বসবেন সেই ‘জনতার মেয়র’। বাস্তবেই তিনি মেয়র পদে আসীন হবেন তা বিএনপি ও অঙ্গ-সংগঠনের নেতাকর্মীদের কাছে ছিল কল্পনা। কিন্তু আদালত ডা. শাহাদাত হোসেনকে মেয়র ঘোষণা করে রায় দেওয়ার পর এখন দায়িত্ব নিতে কোনো বাধা থাকল না। ডা. শাহাদাত হোসেন মেয়র পদে আসীন হচ্ছেন তা নিয়ে সংগঠনের কর্মীদের মধ্যে উচ্ছ্বাসের যেন শেষ নেই। নেতাকর্মীদের মধ্যে চলছে ক্ষণ গণনা। চসিকের মতো দেশের বৃহত্তম এবং গুরুত্বপূর্ণ নগরে আদালতের সিদ্ধান্তে মেয়র নির্বাচিত ঘোষণাও দেশে অনেকটা নতুন। ৬০ লাখ নগরবাসীও অধীর আগ্রহে আছেন নতুন মেয়রের কার্যক্রম দেখার জন্য।

শপথ নেওয়া প্রসঙ্গে চসিক সংশ্লিষ্টরা জানান, আগামী ৩ নভেম্বর রোববার বেলা সাড়ে ১১টায় ঢাকায় অনুষ্ঠিত হবে শপথ। এরই মধ্যে ডা. শাহাদাত হোসেনের সম্পত্তির বিবরণ সম্বলিত হলফনামা স্থানীয় সরকার বিভাগে পাঠাতে বলা হয়েছে। স্থানীয় সরকার বিভাগের উপসচিব মাহবুবা আইরিন স্বাক্ষরিত চিঠি দেওয়া হয়েছে চসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে। চিঠিতে চসিকের নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে এ ক্ষেত্রে আদালতের কোনো স্থগিতাদেশ বা আইনগত জটিলতা আছে কি না তা দ্রুত জানাতে বলা হয়েছে।

আগামী ৩ নভেম্বর চসিক মেয়র হিসেবে শপথ নিচ্ছেন বলে জানিয়েছেন ডা. শাহাদাত হোসেন। তিনি শুক্রবার সময়ের আলোকে বলেন, শপথ নেওয়া সংক্রান্ত চিঠি পেয়েছি। যেহেতু সরকারি সিদ্ধান্ত তাই ৩ নভেম্বর শপথ নিতে কোনো বাধা থাকবে না বলে মনে করছি।

আপনি দীর্ঘদিন নগর বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। দলের আন্দোলন সংগ্রামে ছিলেন সামনের কাতারে। এইসময় অনেক জেল-জুলুম সহ্য করেছেন। এখন কতটি মামলা আছে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, অনেক মামলা। একশর ওপরে তো হবেই। বিভিন্ন সময় আন্দোলন সংগ্রাম করতে গিয়ে তৎকালীন সরকার এসব মিথ্যা মামলা দিয়েছে।

মেয়র নির্বাচিত হওয়ার পর নগরীর কোন সমস্যাটিকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেবেন এ প্রশ্নে তিনি বলেন, স্যানিটেশন, পরিবেশ বিশেষ করে মশক নিধন করে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণকে অবশ্যই বেশি গুরুত্ব দেওয়া হবে। পাশাপাশি গ্রিন-ক্লিন সিটি করার ব্যাপারে আমার আগেও প্রতিশ্রুতি ছিল। এবার দায়িত্ব নেওয়ার পর এসব বিষয়কে সর্বাধিক গুরুত্ব দেওয়া হবে।

নগরীর বড় সমস্যা জলাবদ্ধতা। চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ) বাস্তবায়ন করছে জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্প। মেগা প্রকল্প সিডিএ বাস্তবায়ন করলেও চসিকের এই নাগরিক সংকট নিরসনে ভূমিকা আছে। এ ব্যাপারে আপনার কী পরিকল্পনা আছে এ প্রশ্নে তিনি বলেন, ভারী বর্র্ষণ বা বৃষ্টিপাতের কারণে নগরীর বড় অংশ জলমগ্ন হয়ে যায়। এটা নগরবাসীর জন্য একটা বড় সমস্যা। আমি এরই মধ্যে সিডিএর সঙ্গে কথা বলেছি। মেয়রের দায়িত্ব নেওয়ার পর জলাবদ্ধতা সংকট নিরসনে সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে কাজ করব। পাশাপাশি খাল-নালা পলিথিনসহ বর্জ্যরে কারণে যাতে ভরাট হয়ে না যায় সে ব্যাপারে জনসচেতনতা বৃদ্ধি করব। আশা করছি জলাবদ্ধতার সংকট থেকে নগরবাসীর মুক্তি মিলবে।

চসিক সূত্র জানায়, অন্তত ১৫ দিন আগে ডা. শাহাদাত হোসেন মেয়র হিসেবে শপথ নিতেন। কিন্তু কিছু জটিলতা থাকায় শপথের দিনক্ষণ পিছিয়ে যায়। শেষ মুহূর্তে স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা অসুস্থ হওয়ায় শপথ আরেক দফা পেছানো হয়। সবশেষ আগামী ৩ নভেম্বর তার শপথের দিনক্ষণ চূড়ান্ত করা হয়েছে। মন্ত্রণালয়ের মেয়র অপসারণ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন সংশোধনের পর শপথের বাধাও আর নেই। এই সংশোধনীর ফলে সাময়িকভাবে চসিকে কিছু সংকট দেখা দিয়েছে। প্রশাসক শূন্য হয়ে অভিভাবকহীন হয়ে পড়েছে চসিক এমন অভিযোগ উঠেছে। এখন প্রশাসকের পরিবর্তে চসিকের আর্থিক বিষয় হ্যান্ডেল করছেন প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও)। এই ক্ষমতায় তিনি সর্বোচ্চ ৩০ হাজার টাকা হ্যান্ডেল করতে পারছেন। এতে দৈনন্দিন কাজে বিঘ্ন ঘটছে বলে অভিযোগ উঠেছে। তবে চসিকের দায়িত্বশীল একাধিক কর্মকর্তা বলছেন, কর্মীদের বেতন দেওয়াসহ বড় কোনো সমস্যা হচ্ছে না। শপথ নিয়ে নতুন মেয়র দায়িত্ব নিলেই সংকট কেটে যাবে। সেই সময় আর বেশি দূরে নয়।

গত ১ অক্টোবর ডা. শাহাদাত হোসেনকে বিজয়ী ঘোষণা করে চট্টগ্রামের নির্বাচনি ট্রাইব্যুনাল। আদালতের নির্দেশে ৮ অক্টোবর নির্বাচন কমিশন সচিবালয় সাবেক মেয়র মো. রেজাউল করিম চৌধুরীর স্থলে বিএনপির প্রার্থী ডা. শাহাদাত হোসেনকে মেয়র ঘোষণা করে গেজেট সংশোধনীর বিজ্ঞপ্তি জারি করে। এরপর ১৭ সেপ্টেম্বর সিটি করপোরেশনের মেয়রদের অপসারণ সংক্রান্ত ১৯ আগস্টে জারি করা প্রজ্ঞাপনও সংশোধন করা হয়। সেই প্রজ্ঞাপন থেকে চট্টগ্রাম বাদ দিয়ে সংশোধিত প্রজ্ঞাপন জারি করে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। ১৯ আগস্ট চসিকের সাবেক মেয়র মো. রেজাউল করিম চৌধুরীকে অপসারণ করে প্রশাসক হিসেবে বিভাগীয় কমিশনার মো. তোফায়েল ইসলামকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল। এই প্রজ্ঞাপনের পর ১৯ আগস্ট দেওয়া প্রশাসকের নিয়োগও অকার্যকর হয়। এর ফলে নতুন মেয়রের দায়িত্ব নেওয়ার পথে বাধাগুলো দূর হয়ে যায়।

নগর বিএনপির দফতরের দায়িত্বে নিয়োজিত ইদরিস আলী সময়ের আলোকে বলেন, অনেক জেল-জুলুম সহ্য করে শাহাদাত ভাই মেয়র হিসেবে শপথ নেবেন ৩ নভেম্বর। এতে চট্টগ্রামে দলের সর্বস্তরের নেতাকর্মীদের মধ্যে উচ্ছ্বাস ছড়িয়ে পড়েছে। শপথ অনুষ্ঠানে আমিসহ চট্টগ্রামের সিনিয়র নেতারা সবাই উপস্থিত থাকব। শপথ নেওয়ার পরই ঢাকায় শহিদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের মাজার জিয়ারতের পরিকল্পনা আছে। এরপর ঢাকার বেইলি রোডের অফিসার্স ক্লাবে অনুষ্ঠিত হবে মেজবান। মেয়র হিসেবে শপথ নিয়ে শাহাদাত ভাই দ্রুত সময়ের মধ্যে চট্টগ্রামে পৌঁছবেন। চট্টগ্রামে তাকে বর্ণাঢ্য আয়োজনে বরণ করে নেওয়ার প্রস্তুতিও নেওয়া হয়েছে।

ডা. শাহাদাত হোসেন মেয়র হচ্ছেন নেতাকর্মীদের অনুভূতি কী এ প্রশ্নে তিনি বলেন, আওয়ামী দুঃশাসনের সময় গেল ১৫ বছরে বিএনপির কোনো নেতাই জনপ্রতিনিধি হিসেবে উচ্চ পদে নেই। শাহাদাত ভাই দীর্ঘদিন পর সরকারি একটি বড় পদে আসীন হচ্ছেন। তাও আবার চসিক মেয়র হিসেবে। তা নিয়ে নেতাকর্মীদের মধ্যে উচ্ছ্বাস-উদ্দীপনা কাজ করছে।

প্রসঙ্গত, ২০২১ সালের ২৭ জানুয়ারি বিতর্কিত চসিক নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ভোটারবিহীন নির্বাচনে দিনভর গোলাগুলি, সংঘর্ষ, হামলার ঘটনা ঘটে। উত্তপ্ত পরিবেশে ভোটগ্রহণ শেষ হয়। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী মো. রেজাউল করিম চৌধুরীকে বিজয়ী ঘোষণা করেন রিটার্নিং অফিসার। ওই দিনই নির্বাচনের ফলাফল প্রত্যাখান করে ফলাফল বাতিল ও পুনরায় নির্বাচনের দাবি করেছিলেন বিএনপির প্রার্থী ডা. শাহাদাত হোসেন। ২০২১ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি নির্বাচনি ট্রাইব্যুনালে ওই নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগে ৯ জনকে বিবাদী করে মামলা করেন নগর বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক ডা. শাহাদাত হোসেন। এই মামলার রায়ে আদালত ডা. শাহাদাত হোসেনকে মেয়র হিসেবে নির্বাচিত ঘোষণা করেন। এরপর সাবেক মেয়র মো. রেজাউল করিম চৌধুরীর স্থলাভিষিক্ত করে সংশোধনী গেজেট প্রকাশ করে নির্বাচন কমিশন। এখন সেই রায়ের ভিত্তিতে মেয়র পদে আসীন হচ্ছেন ডা. শাহাদাত হোসেন।

সময়ের আলো/আরএস/




https://www.shomoyeralo.com/ad/1698385080Google-News-Update.jpg

সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : সৈয়দ শাহনেওয়াজ করিম, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ। নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।
ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫ | ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com
close