আশ্রয়হীনরা ছুটে চলে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে। কখনো জলোচ্ছ্বাসের তাণ্ডব, কখনোবা অতিরিক্ত জোয়ারে বাড়িঘর ডুবে যায়। বর্ষায় ভাঙনের চিত্রটা এখন একেবারেই স্বাভাবিক। বাপ-দাদার পুরোনো ভিটে ছেড়ে দিয়ে মাথা গোঁজে বাঁধের ধারে। কারও ঠিকানা মেলে শহরের রাস্তার ধারে।
সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে উপকূলে বাড়ছে এ দুর্যোগের ঝুঁকি। দুর্যোগ মৌসুমে ভোলার মনপুরার বাসিন্দাদের দুশ্চিন্তার শেষ থাকে না। ঝুঁকি বাড়তে থাকে প্রতিনিয়ত। তবু উপকূল থেকে যায় অরক্ষিত। পাঁচ মাস আগে ঘটে যাওয়া ঘূর্ণিঝড় রেমালের ক্ষতি তারা এখনও কাটিয়ে উঠতে পারেননি। এর মধ্যেই চোখ রাঙাচ্ছে ঘূর্ণিঝড় ‘ডানা’।
গত ৫ মাস আগে ঘূর্ণিঝড় রেমাল আঘাত হানে মনপুরা উপজেলায়। তার ক্ষত রয়ে গেছে এখনও। বেশিরভাগ বেড়িবাঁধই রয়ে গেছে সংস্কারহীন। এতে নতুন করে আতঙ্কে রয়েছেন উপজেলার বাসিন্দারা। ক্ষতিগ্রস্ত বেড়িবাঁধগুলো আংশিক মেরামত করা হলেও অজানা কারণে উপজেলার প্রধান শহর রক্ষা বেড়িবাঁধটি এখনও অরক্ষিতই রয়ে গেছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের এ উদাসীনতাকে চরম অবহেলা বলেই মনে করছেন এ উপকূলবাসী।
এলাকার মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ঘূর্ণিঝড় রেমালে উপজেলার হাজীরহাট ইউনিয়নের ১১টি পয়েন্ট ভেঙে অন্তত ৪ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এ ছাড়া দক্ষিণ সাকুচিয়া ইউনিয়নের ৯টি পয়েন্ট ভেঙে ৩ কিলোমিটার, উত্তর সাকুচিয়া ইউনিয়নের ৩টি পয়েন্ট ভেঙে ১ কিলোমিটার ও ১ নম্বর মনপুরা ইউনিয়নের ৩টি পয়েন্ট ভেঙে ১ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এগুলো পানি উন্নয়ন বোর্ডের অবহেলা, উদাসীনতা ও অব্যবস্থাপনার কারণে এখনও অরক্ষিতই রয়ে গেছে। ফলে মেঘনার জলোচ্ছ্বাস ও ঘূর্ণিঝড়ের ঝুঁকিতে রয়েছেন উপকূলের দেড় লক্ষাধিক মানুষ।
আবহাওয়া অফিসের তথ্য মতে, রেমাল থেকে শক্তিশালী হতে পারে ঘূর্ণিঝড় ডানা। ইতিমধ্যে এটি লঘুচাপ থেকে নিম্নচাপে পরিণত হয়েছে।
এদিকে মঙ্গলবার চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরকে ১ নম্বর দূরবর্তী সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে আবহাওয়া অধিফতরের পক্ষ থেকে। ঘূর্ণিঝড়টি বুধবার ও বৃহস্পতিবার আরও ভয়ংকর রূপ ধারণ করে উপকূল অতিক্রম করতে পারে। এদিকে আসন্ন ঘূর্ণিঝড় ‘ডানা’কে কেন্দ্র করে দ্বিগুণ আতঙ্ক বিরাজ করছে উপকূলজুড়ে। সে আশঙ্কা থেকেই আতঙ্ক বেড়ে গেছে দ্বীপ উপজেলা মনপুরার মানুষের মধ্যে।
উপকূলের মানুষ দুর্যোগ থেকে বাঁচার জন্য সরকারের কাছে দাবি তুলছে। উপকূলীয় এ দ্বীপ উপজেলার ঘূর্ণিঝড় বিধ্বস্ত মানুষের প্রধান দাবি, শুধু ঘূর্ণিঝড়ের আগে-পরে নয়, সারা বছরের জন্য টেকসই বাঁধ নির্মাণ।
দক্ষিণ সাকুচিয়া ইউনিয়নের বেড়িবাঁধে বসবাসকারী ইমাইল, বিদ্যুৎ চন্দ্র দাস, অপু রানী দাসসহ আরও অনেকে বলেন, রেমালে আমাদের দখিনা হাওয়ায় বেশ কয়েকটি বেড়িবাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আমাদের মাথা গোঁজার ঠাঁই হারিয়ে গেছে। এখন আমরা বিভিন্ন বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছি। কিন্তু বহুবার অফিসে জানানোর পরও মেরামত করা হয়নি বাঁধ।
তবে পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্মকর্তারা বলছেন, মনপুরায় নদী ভাঙন রোধ প্রকল্পের কাজ চলমান রয়েছে। নদী ভাঙন রোধ প্রকল্পের কাজ শেষ হলেই এসব বেড়িবাঁধের কাজ হয়ে যাবে।
মনপুরার দায়িত্বে থাকা পানি উন্নয়ন বোর্ড ভোলা-২-এর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আসফাউদদৌলা জানান, মনপুরার মূল ভূখণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত বেড়িবাঁধগুলো সংস্কারের ব্যাপারে প্রকল্পের প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। তবে নতুন দায়িত্ব গ্রহণ করায় অনেক বিষয়ে আমি অবগত নই। বেড়িবাঁধটি দ্রুত সংস্কার করা হবে।
সময়ের আলো/জিকে