ই-পেপার রবিবার ১৫ ডিসেম্বর ২০২৪
রবিবার ১৫ ডিসেম্বর ২০২৪
ই-পেপার

রবিবার ১৫ ডিসেম্বর ২০২৪

খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে লক্ষ্মীপুর পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট
অন্তর্বর্তী সরকারের সুদৃষ্টি কামনা
প্রকাশ: মঙ্গলবার, ২২ অক্টোবর, ২০২৪, ৬:৪৪ এএম  (ভিজিট : ৩০৬)
শিক্ষক সংকটসহ নানা জটিলতায় খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে লক্ষ্মীপুর পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষা কার্যক্রম। প্রতিষ্ঠানটিতে শিক্ষক-কর্মকর্তার ১২৪টি পদ থাকলেও নিয়মিত শিক্ষক রয়েছেন মাত্র ২২ জন। এতে মানসম্মত শিক্ষা কার্যক্রম থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন শিক্ষার্থীরা। এক বিষয়ের শিক্ষক নিচ্ছেন অন্য বিষয়ের ক্লাস। ফলে ব্যাহত হচ্ছে প্রতিষ্ঠানটির স্বাভাবিক কার্যক্রম। রয়েছে অবকাঠামোগত সমস্যাও।

ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে চলছে পাঠদান। অন্যদিকে ল্যাবে যন্ত্রপাতি সংকট থাকায় ব্যবহারিক ক্লাসও নিয়মিত হচ্ছে না। এতে প্রতিষ্ঠানটিতে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং শিক্ষার গুণগত মান রক্ষা করা সম্ভব হচ্ছে না। 

শিক্ষাজীবন নিয়ে হুমকির মুখে পড়েছেন বহু শিক্ষার্থী। এমন বাস্তবতায় এই পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে শিক্ষক সংকট দূরীকরণের জোর দাবি তুলেছেন শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা। সমস্যা নিরসনে অন্তর্বর্তী সরকারের সুদৃষ্টি কামনা করেছেন তারা।

লক্ষ্মীপুর পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মো. জহিরুল ইসলাম শিক্ষক সংকটের কারণে শিক্ষার্থীদের মানসম্মত ক্লাস করানো যাচ্ছে না স্বীকার করে বলেন, বিষয়টি কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে। শিক্ষক সংকট নিরসন হলে প্রতিষ্ঠানটিতে শিক্ষার স্বাভাবিক কার্যক্রম ফিরে আসবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, কারিগরি শিক্ষার প্রসার ও দক্ষ জনশক্তি গড়ে তোলার লক্ষ্যে ২০০৬ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় লক্ষ্মীপুর পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট। লক্ষ্মীপুরসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের শিক্ষার্থীরা কারিগরি শিক্ষায় জ্ঞান অর্জনের মাধ্যমে স্বপ্ন বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের বিভিন্ন কোর্সে ভর্তি হন লক্ষ্মীপুর পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে। এ প্রতিষ্ঠানে সিভিল, কম্পিউটার, আর্কিটেকচার, ইলেকট্রিক ও ইলেক্ট্রনিকস ডিপার্টমেন্টে প্রায় ১৮শ শিক্ষার্থী অধ্যয়ন করছেন। তবে দীর্ঘমেয়াদি শিক্ষক সংকটসহ নানা জটিলতায় এখন হুমকির মুখে পড়েছে এ প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষা কার্যক্রম।

লক্ষ্মীপুর পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে শিক্ষক-কর্মকর্তার ১২৪টি পদের বিপরীতে এখানে অধ্যক্ষসহ কর্মরত আছেন মাত্র ২২ জন শিক্ষক। এ ছাড়া বাংলাদেশ সরকার ও বিশ্ব ব্যাংকের স্কিল অ্যান্ড ট্রেনিং এনহ্যান্সমেন্ট প্রকল্পের আওতায় কর্মরত তিনজন শিক্ষকসহ প্রতিষ্ঠানটিতে পাঠদান কার্যক্রম চালাচ্ছেন আরও ১০ জন খণ্ডকালীন শিক্ষক। তীব্র শিক্ষক সংকটে এখন প্রতিষ্ঠানটিতে ব্যাহত হচ্ছে শিক্ষা কার্যক্রম। শিক্ষকরা বলছেন, সীমিত জনবল দিয়ে শিক্ষার্থীদের ক্লাস পরিচালনায় হিমশিম খেতে হচ্ছে তাদের। নিয়মিত করানো যাচ্ছে না তাত্ত্বিক ও ব্যবহারিক ক্লাসও। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন শিক্ষার্থীরা। প্রতিষ্ঠানটিতে সিভিল ডিপার্টমেন্টে ২৪ জন শিক্ষক থাকার কথা থাকলেও রয়েছেন মাত্র দুজন। 

আর্কিটেকচার ডিপার্টমেন্টে ১২ জন শিক্ষককের বিপরীতে নিয়মিত শিক্ষক একজনও নেই। এই বিভাগে রয়েছেন প্রকল্প থেকে আসা দুজন শিক্ষক। তারাও আবার পাচ্ছেন না পাঁচ মাসের বেতন।

লক্ষ্মীপুর পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের সিভিল ডিপার্টমেন্টের জুনিয়র ইন্সট্রাক্টর সাজ্জাদুল হাসান বলেন, এই বিভাগে তীব্র শিক্ষক সংকট থাকায় আমরা শিক্ষার্থীদের তাত্ত্বিক ও ব্যবহারিক ক্লাসগুলো ঠিকমতো নিতে পারছি না। নিয়মিত ক্লাস না হওয়ায় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে শিক্ষার্থীরা। তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে আরও বলেন, সিভিল ডিপার্টমেন্টে ২৪ জন শিক্ষককের বিপরীতে দুজন শিক্ষক দিয়ে কোনোমতে চলছে শিক্ষা কার্যক্রম। তাও আবার দুটি শিফটে করাতে হচ্ছে শ্রেণি কার্যক্রম। এতে বিঘ্নিত হচ্ছে মানসম্মত শ্রেণি শিক্ষা কার্যক্রম।

আর্কিটেকচার ডিপার্টমন্টের জুনিয়র ইন্সট্রাক্টর (প্রকল্প) আবু ওবায়দা বলেন, এই বিভাগে রাজস্ব খাতের ১২ জন শিক্ষক থাকার কথা। কিন্তু একজনও নেই। স্কিল অ্যান্ড ট্রেনিং এনহ্যান্সমেন্ট প্রকল্পের আওতায় আমরা দুজন শিক্ষক আর্কিটেকচার ডিপার্টমেন্টে পাঠদান কার্যক্রম পরিচালনা করছি। এতে আমাদের ওপর প্রচণ্ড চাপ পড়ছে। শ্রেণি কার্যক্রম চালাতে গিয়ে রীতিমতো হিমশিম খাচ্ছি আমরা।

এদিকে আর্কিটেকচার ডিপার্টমন্টের শিক্ষক আবু ওবায়দা দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, বাংলাদেশ সরকার ও বিশ্ব ব্যাংকের যৌথ প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হওয়ায় ৫২ মাস ধরে বেতন পাচ্ছেন না স্কিল অ্যান্ড ট্রেনিং এনহ্যান্সমেন্ট প্রকল্পের আওতায় এই প্রতিষ্ঠানে কর্মরত তিনজন শিক্ষক। ফলে অনেকটা অনাহারেই এখন দিন কাটাতে হচ্ছে তাদের। রাজস্ব খাতে তাদের নেওয়ার কথা থাকলেও এখনও অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি প্রকল্পের আওতায় এসব শিক্ষকদের। এমন নির্মম বাস্তবতায় অন্তর্বর্তী সরকারের সুদৃষ্টি কামনা করেন এই শিক্ষক।

ইলেক্ট্রনিকস ডিপার্টমেন্টের জুনিয়র ইন্সট্রাক্টর (প্রকল্প) ইউছুফ হাসান বলেন, এই ডিপার্টমেন্টের ১২ জন শিক্ষককের বিপরীতে আমরা কর্মরত আছি চারজন। ১২ জনের কাজ চারজন দিয়ে করানোর কারণে আমরা ক্লাসগুলো ঠিকভাবে শিডিউল অনুযায়ী করতে পারছি না। প্রতিষ্ঠানের শিক্ষাব্যবস্থা পুরোপুরি হুমকির মুখে পড়েছে। ছাত্রদের যেভাবে হাতে-কলমে শিক্ষা দেওয়ার কথা সেভাবে আমরা করতে পারছি না।

এদিকে শিক্ষার্থীরা বলছেন, শিক্ষক সংকটের কারণে নিয়মিত ক্লাস হচ্ছে না। নানা সংকটে ব্যবহারিক ক্লাস থেকেও বঞ্চিত হচ্ছেন তারা। নিয়মিত ক্লাস না পাওয়ায় হুমকির মুখে পড়েছে তাদের শিক্ষাজীবন।

কম্পিউটার ডিপার্টমেন্টের চতুর্থ সেমিস্টারের শিক্ষার্থী আবুল কালাম জানান, শিক্ষক সংকট থাকায় তাদের ক্লাসগুলো নিয়মিত হচ্ছে না। তা ছাড়া ল্যাব ক্লাসগুলো না হওয়ায় সেদিক থেকেও পিছিয়ে পড়ছেন তারা। এতে পরবর্তী সেমিস্টারে নানামুখী ঝামেলা পোহাতে হবে তাদের। একই বিভাগের শিক্ষার্থী সুরাইয়া জাহান বলেন, ভবনগুলো ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় সবসময় একটা অজানা আতঙ্কের মধ্যে থাকতে হয় আমাদের। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এই প্রতিষ্ঠানে পড়াশোনা করতে হয় আমাদের। ল্যাব ক্লাসগুলো নিয়মিত না হওয়ায় আমাদের ভবিষ্যৎ জীবন অন্ধকার।

সিভিল ডিপার্টমেন্টের শিক্ষার্থী সাইদুল ইসলাম বলেন, নির্মাণ প্রকৌশলী হওয়ার ইচ্ছে নিয়ে এই প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হয়েছি। ৪ নভেম্বর থেকে চতুর্থ পর্বের পরীক্ষা শুরু হবে। অথচ এখন পর্যন্ত একটা ব্যবহারিক ক্লাসও হয়নি। কারিগরি সেক্টরে পড়ে যদি হাতে-কলমে শিখতে না পারি তা হলে তো আমাদের ভবিষ্যৎ জীবনই অন্ধকার।

সময়ের আলো/আরএস/ 




এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ


https://www.shomoyeralo.com/ad/1698385080Google-News-Update.jpg

সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : সৈয়দ শাহনেওয়াজ করিম, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ। নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।
ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫ | ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com
close