ঢাকার ধামরাইয়ে একটি আবাসন নির্মাণপ্রতিষ্ঠান আকসির নগর কর্তৃপক্ষের কাছে কাঙ্ক্ষিত পরিমাণ চাঁদা না পাওয়ায় ‘বিএনপি-জামায়াত’ আখ্যা দিয়ে ভাঙচুর ও লুটপাটের অভিযোগ উঠেছে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় করা মামলায় পাঁচজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
শুক্রবার (১৮ অক্টোবর) গ্রেফতারদের আদালতে পাঠানো হয়েছে। এর আগে, গত ২ আগস্ট ধামরাইয়ের কুল্লা ইউনিয়নের মাখুলিয়া এলাকায় প্রতিষ্ঠানটির সাইড অফিসে এসব ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় গত ১৫ অক্টোবর মো. আমিনুল ইসলাম নামে প্রতিষ্ঠানের এক কর্মকর্তা বাদী হয়ে ধামরাই থানায় মামলাটি করেন।
গ্রেপ্তাররা হলেন- মো.আরমান (৫৫), সজিব (২৮), মনসুর (৪৮), আফসান আলী (৪৬), মরন রায় (৫৫)। তারা সবাই ধামরাইয়ের কুল্লা ইউনিয়নের মাখুলিয়া এলাকার বাসিন্দা।
মামলার আসামিরা হলেন- ঢাকা জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সহসভাপতি মো. নজরুল ইসলাম, যুবলীগ নেতা বাবুল ওরফে কানা বাবুল (৪৮), যুবলীগ নেতা মনসুর (৪৮), কুল্লা ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সহসভাপতি মো. আরমান (৫৫), একই ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সহসভাপতি মরন রায় (৫৫), আনোয়ার আলী (৪৮), মো. নজরুল (৩৫), আরশাদ (৪৫), আশু (৪০), আফসান আলী (৪৬), আতিকুর (৪৫), লোকমান (৩২), মনির মৃধা (৩৭), সজিব (২৮)। তারা সবাই আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মী। তারা ধামরাইয়ের কুল্লা ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দা।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, গত ১৯ জুলাই আসামিদের ছয়জন প্রকল্প দেখাশোনার ওই অফিসে এসে কর্তৃপক্ষের কাছে ৫০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে। কর্তৃপক্ষ ভয় ও আতঙ্কে গত ৩১ জুলাই দুইজন সাক্ষীর সামনে আসামিদের ছয়জনের কাছে ১০ লাখ দেন। এরপর তারা পরবর্তী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে বাকি ৪০ লাখও দিতে হবে বলে হুমকি দিয়ে যায়, না হয় প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালককে হত্যার হুমকি দেয় তারা। তবে কর্তৃপক্ষ সময়মতো চাঁদা দিতে পারেনি।
এতে বলা হয়, চাঁদা দিতে ব্যর্থ হওয়ায় জেরে বৈষম্য বিরোধী আন্দোলন চলাকালে গত ২ আগস্ট সকাল ১০টার দিকে আসামিরা পিস্তল, শর্টগান, দা, লাঠি, লোহার রডসহ দেশিয় অস্ত্র নিয়ে প্রকল্প দেখাশোনার অফিসে ঢুকে বিএনপি-জামায়াত আখ্যা দিয়ে অকথ্য গালিগালাজ করতে থাকে ও কার্যালয়ে তালা দিতে চায়। এ সময় তাদের তালা দেওয়ার কারণ জিজ্ঞেস করলে তারা প্রতি মাসে ৫ লাখ টাকা করে বাকি ৪০ লাখ টাকা দিতে হবে বলে জানায়। নাহয় কার্যালয় ও প্রকল্প সব বন্ধ করে দেওয়া হবে বলে হুমকি দেয় আসামিরা। পরবর্তীতে বাদি তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে এভাবে চাঁদা দেওয়া সম্ভব নয় বলে জানান। এরই জেরে দুপুর ২টার দিকে আসামিরাসহ আরও ২০-৩০ জন ফের অস্ত্রসহ কার্যালয়ে ঢুকে পড়ে। এ সময় কার্যালয়ে থাকা কেয়ারটেকারকে মাথায় পিস্তল ঠেকিয়ে বেরিয়ে যেতে বলে যুবলীগ নেতা মনসুর। তিনি অস্বীকৃতি জানালে ১ নম্বর আসামি মো. নজরুল ইসলাম শর্টগানের পেছনের অংশ দিয়ে কেয়ারটেকারের মাথায় আঘাত করলে তিনি মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। এ সময় আসামিরা প্রায় ২০টি সিসিটিভি ভাঙচুর করে, সিসিটিভির প্যানেল বক্স লুট করে ও পুরো অফিসে লুটপাট করে। এরমধ্যে দুটি কম্পিউটার সেটআপ, দুইটি দুই টনের এসি, তিন সেট সোফা, আইপিএস, খাট, কমোড, বেসিন, ৫ টন রড, সাইনবোর্ড তৈরির শিট ভাঙচুর ও লুটপাট করে। এছাড়া গুরুত্বপূর্ণ দলিল-দস্তাবেজও নিয়ে যায়। এতে অন্তত ১৪ লাখ ৮০ হাজার টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়। এছাড়া যাওয়ার আগে এই বিষয়ে কোনো মামলা করতে চেষ্টা করলে বিএনপি-জামায়াতের মামলা দিয়ে পুলিশ দিয়ে গ্রেফতার করানোর হুমকি দিয়ে যায় তারা। ওই সময় বিষয়টি তৎকালীন ওসিকে জানালেও রাজনৈতিক কারণে তিনি মামলা নেননি।
এ বিষয়ে ধামরাই থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো. ইব্রাহিম পাটোয়ারী বলেন, মামলার পরিপ্রেক্ষিতে পাঁচজন আসামি গ্রেফতার করা হয়েছে। তাদের আদালতে পাঠানো হয়েছে।
সময়ের আলো/জেডআই