ই-পেপার শুক্রবার ১৮ অক্টোবর ২০২৪
শুক্রবার ১৮ অক্টোবর ২০২৪

নভেম্বরের শুরুতেই আসছে ইইউ প্রতিনিধি দল
খুলছে বিনিয়োগের নতুন দরজা
প্রকাশ: বৃহস্পতিবার, ১৭ অক্টোবর, ২০২৪, ৭:০৬ এএম  (ভিজিট : ৪২০)
ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে অংশীদারত্ব সহযোগিতা চুক্তি (পিসিএ) করতে মুখিয়ে আছে বাংলাদেশ। এ নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে আলোচনা শুরু করতে ৩ নভেম্বর ইইউ প্রতিনিধি দলের ঢাকা সফরের কথা রয়েছে।

ইউরোপিয়ান এক্সটার্নাল অ্যাকশন সার্ভিসের ডেপুটি ম্যানেজিং ডিরেক্টর পাওলা পামপালোনি ওই প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেবেন। আগামী ৪ ও ৫ নভেম্বর ঢাকায় দুই পক্ষের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক হতে পারে। কূটনীতি বিশ্লেষকরা বলছেন, ইউরোপের ২৭ দেশের জোটের সঙ্গে পিসিএ চুক্তি হলে বাংলাদেশ-ইইউ সম্পর্কে নতুন মাত্রা যোগ হবে। বাংলাদেশের রফতানি বাণিজ্য ও বিনিয়োগের ক্ষেত্রে খুলবে অভাবনীয় সম্ভাবনার দরজা।

পিসিএ চুক্তি মূলত দুই পক্ষের মধ্যে একটি আইনগত সমঝোতা। যার মাধ্যমে দুই পক্ষই বাণিজ্য, বিনিয়োগ, জলবায়ু, ইন্দো-প্যাসিফিকসহ সম্পর্কের সব বিষয়ে সহযোগিতার জন্য চুক্তি করবে। এরই মধ্যে ইইউ এই চুক্তির খসড়া ঢাকাকে পাঠিয়েছে। দুই পক্ষের সম্পর্ক গত ২০২২ সালে রাজনৈতিক পর্যায়ে উন্নীত হয়। এই সম্পর্ক আরও দৃঢ়, অংশীদারত্ব এবং সহযোগিতামূলক পর্যায়ে নিত দুই পক্ষই অংশীদারত্ব সহযোগিতা চুক্তির অঙ্গীকার করেছে।

বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ঢাকায় নিযুক্ত ইইউর নতুন রাষ্ট্রদূত মাইকেল মিলার গত মঙ্গলবার মন্ত্রণালয়ে প্রথমবারের মতো পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেনের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন। সে সময় উভয়ের মধ্যে পিসিএ চুক্তি নিয়ে আলাপ হয়। উপদেষ্টা এবং রাষ্ট্রদূত উভয়েই পিসিএ চুক্তি নিয়ে সামনের দিনে আলোচনা হওয়ার বিষয় উল্লেখ করে বলেন, চুক্তিটি হলে দুই পক্ষের সম্পর্কে নতুন মাত্রা যোগ হবে। কূটনৈতিক সূত্রগুলোও বলছে, বাংলাদেশ-ইইউ সম্পর্কে নতুন মাত্রা যুক্ত হতে যাচ্ছে।

পাওলা পামপালোনির নেতৃত্বাধীন প্রতিনিধি দলের সঙ্গে সামনের ৪ নভেম্বর ঢাকায় দুই পক্ষের মধ্যে যৌথ কমিশনের বৈঠক এবং ৫ নভেম্বর চুক্তির খসড়া নিয়ে প্রথম পর্বের আলোচনা হওয়ার কথা রয়েছে। তবে শেষ পর্যন্ত এই সূচিতে দুয়েক দিন পরিবর্তন আসতে পারে। দুই পক্ষের কূটনীতিকরা আসন্ন বাংলাদেশ-ইইউ বৈঠক অনুষ্ঠান সফল করতে কাজ করছেন। পিসিএ চুক্তি নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে মোট ৫টি বৈঠক হবে। নভেম্বরে ঢাকায় প্রথম বৈঠক অনুষ্ঠানের পর দ্বিতীয় বৈঠক হবে ব্রাসেলসে। খসড়া নিয়ে দুই পক্ষ পাঁচবার বৈঠক করে খসড়াটি চূড়ান্ত করা হবে।

শেষ পর্যন্ত ইইউর সঙ্গে বাংলাদেশ পিসিএ চুক্তি চূড়ান্ত হলে তা হবে এক অভাবনীয় সাফল্য। সে ক্ষেত্রে বাংলাদেশই হবে এশিয়ার প্রথম স্বল্পোন্নত দেশ, যারা সবার আগে ইউরোপের ২৭ দেশের জোটের সঙ্গে এই চুক্তি সম্পাদন করবে। সবশেষ মালয়েশিয়া এবং থাইল্যান্ড ইইউর সঙ্গে পিসিএ চুক্তি সম্পাদন করেছে।

কূটনৈতিক সূত্রগুলো বলছে, এই চুক্তি হলে বাংলাদেশের রফতানি বাণিজ্যের বাজার অনেক বড় হবে। সুবাতাস পাওয়া যাবে বিনিয়োগের ক্ষেত্রেও। পাশাপাশি ইউরোপের বিনিয়োগকারীরা বাংলাদেশে উৎপাদনমুখী কার্যক্রম নিতে উৎসাহ পাবে। এ ছাড়া ইউরোপের বাজারের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ বিশে^র আরও একাধিক বাজারে প্রবেশ করার সুযোগ নিতে পারবে।

গত নভেম্বরে ইউরোপিয়ান এক্সটার্নাল অ্যাকশন সার্ভিসের ডেপুটি ম্যানেজিং ডিরেক্টর পাওলা পামপালোনির সঙ্গে বৈঠক হয়েছিল। সে সময় স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা (এলডিসি) থেকে উত্তরণের পরও ইইউর বাজারে বাংলাদেশের জিএসপি প্লাস সুবিধার পাওয়ার বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়। বাংলাদেশ ইইউকে জানিয়েছে, এলডিসি থেকে উত্তরণের পর যদি তৈরি পোশাক খাতের পণ্য তাদের বাজারে শুল্কমুক্ত সুবিধার বাইরে থাকে তবে তা হবে অর্থহীন। ঢাকার দাবি, তৈরি পোশাক খাতকেও শুল্কমুক্ত সুবিধার মধ্যে (জিএসপি প্লাস) যুক্ত করতে হবে। শ্রম ইস্যুতে জাতীয় কর্মপরিকল্পনার যে ৯টি লক্ষ্য আছে সেগুলো নিয়েও কথা হয় সে সময়। ইইউকে বাংলাদেশের তরফে জানান হয়, এই কর্মপরিকল্পনার প্রায় ৮০ শতাংশ অগ্রগতি হয়েছে। ওই সময়ে ইইউ শ্রম আইন নিয়েও কথা বলেছে। বাংলাদেশ ইইউকে জানিয়েছে যে এই ইস্যুতে আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) সঙ্গে নিবিড় যোগাযোগ রক্ষা করে কাজ করছে ঢাকা।

আন্তর্জাতিক বিশ্লেষক অধ্যাপক নাজমুল ইসলাম দৈনিক সময়ের আলোকে বলেন, বাংলাদেশ আগে থেকেই ইইউর সঙ্গে পিসিএ চুক্তি করতে আগ্রহী ছিল। এই চুক্তিটি হলে বাংলাদেশের বাণিজ্য ও বিনিয়োগের জন্য খুব ভালো হবে। বাণিজ্যের অনেক ক্ষেত্রেই বাংলাদেশ শুল্কছাড় পাবে। ইইউর বাজার অনেক বড়। চুক্তি হলে তাদের আশপাশে পশ্চিমা দেশগুলোতেও বাংলাদেশ পণ্য রফতানির সুযোগ নিতে পারবে। মূলত এই চুক্তিটি বাংলাদেশের জন্য খুবই ইতিবাচক। বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিশ্বজুড়ে যে ভাবমূর্তি রয়েছে, চুক্তিটি করার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ তার সুবিধা নিতে পারে। এই চুক্তিটি হলে আন্তর্জাতিক বাজারে বাংলাদেশ ভিয়েতনাম, পাকিস্তানের সঙ্গে সহজেই প্রতিযোগিতা করতে পারবে।

আন্তর্জাতিক বিশ্লেষক অধ্যাপক সাহাব এনাম খান দৈনিক সময়ের আলোকে বলেন, ইইউর সঙ্গে এই চুক্তিটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। চুক্তিটি হলে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সহজ হবে। আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে বাংলাদেশের গ্রহণযোগ্যতা বাড়বে। মূলত চুক্তিটি হলে বাংলাদেশের বাণিজ্য গতিশীল হবে।

সময়ের আলো/আরএস/




https://www.shomoyeralo.com/ad/1698385080Google-News-Update.jpg

সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : সৈয়দ শাহনেওয়াজ করিম, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ। নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।
ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫ | ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com
close