হবিগঞ্জ কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের ১৫ মাসের নির্মাণকাজ পাঁচ বছরেও শেষ হয়নি। প্রায় ২৫ কোটি টাকার এই প্রকল্পের কাজ করছে বিডিএলএসএন ইঞ্জিনিয়ারিং প্রতিষ্ঠান। কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের সীমানা প্রাচীরের কাজ শেষ হলেও বিভিন্ন অংশ ইতিমধ্যে ড্যামেজ হতে শুরু করেছে। ৩ কোটি ১৯ লাখ টাকায় নির্মিত সীমানা প্রাচীরের প্লাস্টার ড্যামেজ হয়ে যাওয়ার কারণে খসে পড়তে শুরু করেছে বালু-সিমেন্ট। সবশেষ চলতি বছরের ৩০ জুন কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কাজ শেষ না হওয়ায় আরও ছয় মাস সময় বৃদ্ধি করা হয়েছে। এরই মধ্যে কাজের মান নিয়ে বিভিন্ন মহলে প্রশ্ন উঠেছে।
এ বিষয়ে নির্বাহী প্রকৌশলী একেএম সাকিবুর রহমান বলেন, আগামী ডিসেম্বর মাসের মধ্যে প্রকল্পের কাজ শেষ হবে বলে আশা করা যায়। আমরা চেষ্টা করছি কাজের গুণগত মান বজায় রেখে কাজ বাস্তবায়ন করতে। তবে হবিগঞ্জে লোকবল সংকট থাকার কারণে নির্ধারত প্রকল্প মনিটরিং করা কষ্টসাধ্য হয়ে যায়। ছোটখাটো যেসব সমস্যা হয়েছে সেগুলো শিগগিরই মেরামত করা হবে।
এ বিষয়ে জানার জন্য যোগাযোগ করা হলে বিডিএলএসএন ইঞ্জিনিয়ারিং প্রতিষ্ঠানের সাইট ইঞ্জিনিয়ার আবুল কালাম আজাদ বলেন, আশা করছি ডিসেম্বরের মধ্যে ভবনের নির্মাণকাজ পুরোপুরি শেষ করতে পারব। সীমানা প্রাচীরের কাজ আমাদের না। এটি অন্য প্রতিষ্ঠানের কাজ। তিনি আরও বলেন, প্লাস্টার ড্যামেজ হওয়ার মূল কারণ হলো বালু ও সিমেন্টের মিশ্রণ সঠিকভাবে না হওয়া। তা ছাড়া ছোট দানা ও বড় দানার বালুর কারণে এসব সমস্যা হতে পারে। তবে যেখানে এসব সমস্যা দেখা দিচ্ছে সেগুলো আমরা মেরামত করে দিচ্ছি।
প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের অধ্যক্ষ মো. আজাহার আলী বলেন, গণপূর্ত অধিদফতর যদি নিয়মিত কাজের মনিটরিং করত তা হলে এমনটা হতো না। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কাজ শেষ না হওয়ার কারণে পাঠদানে অনেক সমস্যা হচ্ছে। সরকারের বরাদ্দকৃত লজিস্টিক রাখার মতো জায়গা না থাকার কারণে ফেরত দিতে হচ্ছে। এ ছাড়া শিক্ষার্থীরা মনোযোগসহকারে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করতে পারছে না।
প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের অধ্যক্ষ জানান, সঠিকভাবে সুপারভিশন ও মনিটরিং না করার কারণে এমনটা হয়েছে। বিষয়টি স্বীকার করে গণপূর্ত বিভাগ বলছে, পর্যাপ্ত জনবল না থাকার কারণে অনেক সময় মনিটরিং করা সম্ভব হয় না। অন্যদিকে সরকারের বেঁধে দেওয়া সময়ের কারণে তিনটি বিভাগে পাঠদান শুরু করেছে প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ। কিন্তু এখন পর্যন্ত লজিস্টিক সাপোর্ট না পাওয়ার কারণে ব্যবহারিক দক্ষতা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন শিক্ষার্থীরা। এর মধ্যেই প্রতিষ্ঠানের জন্য ৫০টি কম্পিউটার বরাদ্দ এলেও ফেরত দিয়েছেন অধ্যক্ষ। এ প্রসঙ্গে তিনি জানান, নিরাপত্তার কারণে ৫০টি কম্পিউটার ফেরত দিতে হয়েছে। চলতি বছরের আগস্ট মাস থেকে তিনটি ব্যাচে প্রশিক্ষণ শুরু হয়েছে। ইলেকট্রিক্যাল ইনস্টলেশন অ্যান্ড মেইনটেনেন্স, রেফ্রিজারেশন অ্যান্ড এয়ার কন্ডিশনিং এবং সিভিল কনস্ট্রাকশন-এই তিনটি ব্যাচে মোট ৭৫ জন শিক্ষার্থী প্রশিক্ষণ গ্রহণ করছেন। বর্তমানে ছয়জন প্রশিক্ষক ও একজন অধ্যক্ষ কর্মরত আছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, হবিগঞ্জসহ সারা দেশে ৪০টি কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের নির্মাণকাজের টেন্ডার হয় ২০১৮ সালে। কাজ শুরু হয় ২০১৯ সালে। এরই মধ্যে ৩৯টি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের নির্মাণকাজ শেষ হয়ে পরিপূর্ণ পাঠদান শুরু হয়ে গেছে।
হবিগঞ্জ সদর উপজেলার লাখাই রোডের পাশে সুলতান মাহমুদপুর এলাকায় ২০১৯ সালে হবিগঞ্জ কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র নির্মাণের কাজ শুরু হয়। ২৫ কোটি টাকার মধ্যে ১৭ কোটি ৮৯ লাখ টাকায় হচ্ছে একাডেমিক ভবন, আবাসিক ভবন এবং অধ্যক্ষের ভবন নির্মাণের কাজ। আর ৩ কোটি ১৯ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মিত হয়েছে সীমানা প্রাচীর। ১৫ মাসের মধ্যে কাজ শেষ করা কথা থাকলেও পাঁচ বছরেও শেষ হয়নি নির্মাণকাজ। ইতিমধ্যে কাজের ধীরগতির কারণে প্রায় ৪ কোটি টাকা ফেরত চলে গেছে। এখনও প্রায় ৩০ শতাংশ কাজ বাকি রয়েছে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট দফতর। এরই মধ্যে কয়েক দফা নির্মাণকাজের মেয়াদ বৃদ্ধি করা হয়েছে।
সরেজমিন দেখা যায়, একাডেমিক ভবনের একাধিক স্থানে সীমানা প্রাচীর ড্যামেজ হয়ে প্লাস্টার খসে পড়ছে। হাতের আঙুলের চাপেই প্রাচীর থেকে সিমেন্ট ও বালু খসে পড়ছে। বিদ্যুতের কাজ, পাইপ ফিটারের কাজ, দেয়াল পলিশ, রঙের কাজসহ বেশ কিছু কাজ বাকি রয়েছে। এ ছাড়া নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন যন্ত্রপাতির বিকট শব্দের কারণে শিক্ষার্থীরা পাঠ গ্রহণে মনোযোগী হতে পারছেন না। তারা জানান, সারা দিন বিভিন্ন মেশিনের শব্দের কারণে ক্লাসে মনোযোগী হওয়া সম্ভব হয় না। এদিকে অধ্যক্ষ বলছেন, সবশেষ মেয়াদ বৃদ্ধি করা হয়েছে চলতি বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত। কিন্তু এই সময়ের মধ্যেও কাজ শেষ হবে বলে মনে হচ্ছে না।
সময়ের আলো/আরএস/