ঐতিহাসিক ৭ মার্চ, ১৭ মার্চ, ১৫ আগস্টসহ আটটি জাতীয় দিবস বাতিল করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। বুধবার (১৬ অক্টোবর) প্রধান উপদেষ্টার ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে দেওয়া এক পোস্টে এ তথ্য জানানো হয়। এ ছাড়া প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের একজন কর্মকর্তা সাংবাদিকদের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
ফেসবুক পোস্টে বলা হয়, অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদ সম্প্রতি এক বৈঠকে আটটি জাতীয় দিবস বাতিলের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। শিগগির এসব দিবস বাতিল করে পরিপত্র জারি করবে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। যেসব দিবস বাতিল হচ্ছে, সেগুলো হলো ঐতিহাসিক ৭ মার্চ, ১৭ মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মদিবস ও জাতীয় শিশু দিবস, ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার ভাই শহীদ ক্যাপ্টেন শেখ কামালের জন্মবার্ষিকী, ৮ আগস্ট শেখ হাসিনার মা বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের জন্মবার্ষিকী, ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুর মৃত্যুবার্ষিকী ও জাতীয় শোক দিবস, ১৮ অক্টোবর শেখ হাসিনার ছোট ভাই শেখ রাসেল দিবস, ৪ নভেম্বর জাতীয় সংবিধান দিবস, ১২ ডিসেম্বর স্মার্ট বাংলাদেশ দিবস।
আওয়ামী লীগের দলীয় দিবসকে জাতীয় দিবস হিসেবে চাপিয়ে দেওয়া হয়েছিল মন্তব্য করে তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম বলেন, এসব দিবস বাদ দেওয়া হচ্ছে।
বুধবার দুপুরে সচিবালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ৭ মার্চ গুরুত্বপূর্ণ তবে জাতীয় দিবসের মতো গুরুত্বপূর্ণ নয়। আরও কোনো দিবস বাতিলের প্রয়োজন মনে হলে করা হবে। এছাড়া জুলাই অভ্যুত্থানের গুরুত্ব হিসেবে কোনো কোনো দিবস প্রতিষ্ঠিত করা হবে বলেও জানান তিনি।
অন্য এক প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে জাতির পিতা মনে করে না অন্তর্বর্তী সরকার। বঙ্গবন্ধুকে জাতির পিতা মনে করে আওয়ামী লীগ। বঙ্গবন্ধুকে আওয়ামী লীগ বিতর্কিত করেছে। আওয়ামী লীগ দল হিসেবে ফ্যাসিস্টভাবে ক্ষমতায় ছিল। মানুষের ভোটাধিকার হরণ ও গুম-খুন করে এবং গণহত্যা করে তারা ক্ষমতায় ছিল। কাজেই তারা কাকে জাতির পিতা বললো, তারা কোন দিবসকে জাতীয় দিবস ঘোষণা করলো, নতুন বাংলাদেশে সেটার ধারাবাহিকতা থাকবে না।
তিনি বলেন, আমরা বাংলাদেশকে নতুনভাবে গঠন করতে চাচ্ছি। ফলে ইতিহাসের প্রতি আমাদের নতুন দৃষ্টিভঙ্গি আনতে হবে।
তাহলে আমাদের কোনো জাতির পিতা থাকবে না, এম প্রশ্নে নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘আমাদের এই ভূখণ্ডের লড়াইয়ের ইতিহাসে বহু মানুষের অবদান রয়েছে। আমাদের ইতিহাস কিন্তু কেবল ৫২-তেই শুরু হয়নি। আমাদের ব্রিটিশবিরোধী লড়াই আছে, ৪৭ ও ৭১-এর লড়াই আছে, ৯০ ও ২৪ আছে। আমাদের অনেক ফাউন্ডিং ফাদারস রয়েছেন। তাদের লড়াইয়ের ফলে আমরা স্বাধীনতা পেয়েছি।’
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা বলেন, আওয়ামী লীগ ইতিহাসকে নষ্ট করে ফেলেছে। শেখ মুজিবুর রহমানকেও তো আওয়ামী লীগই নষ্ট করে ফেলেছে। যেভাবে তার মূর্তি করে পূজা বাংলাদেশে শুরু করেছে, এটা একটা ফ্যাসিস্ট আইডিওলজির অংশ হয়ে গেছে। একটা গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে যে সরকার, যে নতুন বাংলাদেশ, সেখানে তো আমরা এই ফ্যাসিস্ট প্রবণতাগুলো রাখতে পারি না।
তিনি বলেন, আমরা তো ৭ মার্চকে ইতিহাস থেকে নাই করে দিচ্ছি না। আমরা শেখ মুজিবুর রহমানের গুরুত্বকে ইতিহাস থেকে নাই করে দিচ্ছি না। যেটা আওয়ামী লীগ করেছিল, সেটা নির্মোহভাবে ইতিহাস নতুন করে লেখা হবে। দিবস হিসেবে পালনের চর্চা, এটার একটা রাজনীতি আছে। গণঅভ্যুত্থানের সরকারে সেই রাজনীতিটা চলতে দিতে পারি না। এটা ধারাবাহিকভাবে নতুন বাংলাদেশে থাকবে না।
সময়ের আলো/জেডআই