সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে সিকিউরিটি গার্ডের চাকরির লোভনীয় বিজ্ঞাপন দিয়ে জিম্মি করে চাঁদা আদায়ের অভিযোগে প্রতারক চক্রের ৭ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
প্রতারক চক্রের গ্রেফতার আসামিরা হলো-নাসির উদ্দিন ওরফে পিটার নাসির (২৮), আনোয়ার ওরফে তন্ময় ওরফে আকতারুজ্জামান (২৬), রোকসানা রহমান ওরফে রোকসানা (৩৫), সীমা ওরফে রোকসানা আক্তার (৩২), জেসমিন ওরফে জেসমিন বেগম (২০), লিজা (২৫) ও শাহানাজ আক্তার (২০)। গত ৯ অক্টোবর থেকে ১৪ অক্টোবর পর্যন্ত খিলগাঁও এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেফতার করে পুলিশ।
ঢাকা মহানগর পুলিশের মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) মুহাম্মদ তালেবুর রহমান জানান, প্রতারণার শিকার নাসির উদ্দীন গত ৯ অক্টোবর খিলগাঁও থানায় একটি মামলা করেন। ওই মামলার পরিপ্রেক্ষিতে তাদের গ্রেফতার করা হয়।
তিনি জানান, মামলার এজাহারে বলা হয়, গত ৪ অক্টোবর বাদী ঢাকার নবাবগঞ্জের মো. নাসির উদ্দীন ফেসবুকে সিকিউরিটি গার্ডের চাকরির বিজ্ঞাপন দেখে ৬ অক্টোবর দুপুরে সীমা ওরফে রোকসানা আক্তার নামের একজনের সঙ্গে হোয়াটসঅ্যাপে যোগাযোগ করেন। ওই দিন সন্ধ্যায় সীমার কথামতো ভুক্তভোগী খিলগাঁও টেম্পোস্ট্যান্ডের ১৩৬ দক্ষিণ গোড়ানের একটি বাসায় যান। কিছুক্ষণ পর সীমা ওরফে রোকসানা আক্তার ও আনোয়ার ওরফে তন্ময়সহ আরও কয়েকজন ওই বাসায় আসেন। ভুক্তভোগী নাসির উদ্দীন কিছু বুঝে ওঠার আগেই তাকে বিবস্ত্র করে মারধর শুরু করে প্রতারকরা। এরপর বিবস্ত্র অবস্থায় মোবাইল ফোনে অশ্লীল ভিডিও ধারণ করে এবং ওই ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দেয় প্রতারকরা।
এ সময় সীমা ওরফে রোকসানা আক্তার নিজেকে ডিবি পুলিশের ইন্সপেক্টর পরিচয় দিয়ে ভুক্তভোগীর মাকে মোবাইলে ফোন করে ১ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে। পরে তাদের দেওয়া বিকাশ নম্বরে ভুক্তভোগীর মা পাঁচ হাজার টাকা পাঠান। এরপর তারা ভুক্তভোগীর কাছে থাকা দুটি স্বর্ণের আংটি, একটি এন্ড্রয়েড মোবাইল ফোন ও নগদ ৩২ হাজার ৫০০ টাকা নিয়ে নেয়। পরে ওই দিন রাত সাড়ে ১১টার দিকে আনোয়ার ওরফে তন্ময় ভুক্তভোগীর চোখ বেঁধে মোটরসাইকেলে করে খিলগাঁও ফ্লাইওভারের ওপর তাকে ফেলে যায়।
তিনি আরও জানান, গত ৯ অক্টোবর মামলা করার পরপরই ভুক্তভোগীর দেখানো খিলগাঁও এলাকার ওই বাসা থেকে ঘটনার সঙ্গে জড়িত নাসির উদ্দিন, তন্ময়, রোকসানা, সীমা, জেসমিন ও লিজা নামের ৬ প্রতারককে গ্রেফতার করে। তাদের তথ্য অনুযায়ী গত সোমবার বিকালে খিলগাঁও থানা এলাকায় অভিযান চালিয়ে শাহানাজ আক্তার নামের আরও একজনকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
পুলিশের এই কর্মকর্তা জানান, গ্রেফতার আসামিরা প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানায়, তারা দীর্ঘদিন ধরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিভিন্ন চাকরির বিজ্ঞাপন দিয়ে, বিশেষজ্ঞ ডাক্তার সেজে বা প্রেমের প্রস্তাব দেওয়ার মতো বিভিন্ন উপায়ে মানুষকে প্রলুব্ধ করে প্রতারিত করে আসছিল। তাদের এসব লোভনীয় বিজ্ঞাপন দেখে কেউ ফাঁদে পা দিলে তাকে জিম্মি করে অর্থ ও মূল্যবান দ্রব্যাদি হাতিয়ে নিত। গ্রেফতার নাসির উদ্দিন ওরফে পিটার নাসিরের নামে হত্যা ও চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন থানায় ৮টি মামলা থাকার তথ্য পাওয়া গেছে বলেও জানান তিনি।