ই-পেপার বুধবার ১৬ অক্টোবর ২০২৪
বুধবার ১৬ অক্টোবর ২০২৪

একদিকে ক্ষুধা অন্যদিকে হামলা
প্রকাশ: বুধবার, ১৬ অক্টোবর, ২০২৪, ১:৪০ এএম  (ভিজিট : ৯০)
গাজাজুড়ে ইসরাইলের বিমান হামলায় অন্তত ৫০ জন নিহত হয়েছে। অপরদিকে গাজা উপত্যকা ত্রাণের ক্ষেত্রে সবচেয়ে কঠোর নিষেধাজ্ঞার মুখোমুখি রয়েছে বলে মঙ্গলবার জাতিসংঘ জানিয়েছে। গাজার উত্তরাঞ্চলে জাবালিয়া ঘিরে মঙ্গলবার শক্ত অবরোধ গড়ে তুলেছে ইসরাইল। কয়েকটি এলাকায় ট্যাঙ্ক পাঠিয়ে অভিযান চালাচ্ছে তারা। আলজাজিরা, এএফপি।

ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, গাজার আটটি ঐতিহাসিক শরণার্থী শিবিরের মধ্যে বৃহত্তম জাবালিয়ার আল-ফালুজার কাছে ইসরাইলি বাহিনীর গুলিতে কমপক্ষে ১৭ জন নিহত হয়েছে। তাছাড়া দক্ষিণে খান ইউনিসের পূর্বাঞ্চলীয় বানি সুহাইলা এলাকায় একটি বাড়িতে ইসরাইলি ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ১০ জন নিহত হয়।

এর আগে মঙ্গলবার গাজা সিটির সাবরা শহরতলিতে ইসরাইলি বিমান হামলায় তিনটি বাড়ি ধ্বংস হয়ে যায়। স্থানীয় বেসামরিক জরুরি সেবা বিভাগ জানায়, তারা ঘটনাস্থল থেকে দুটি মৃতদেহ উদ্ধার করেছে। মধ্য গাজার নুসেইরাত শিবিরে একটি বাড়িতে হামলায় আরও ৮ নিহত হয়েছে।

জাবালিয়া ১০ দিনেরও বেশি সময় ধরে ইসরাইলি আক্রমণের কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল। এ অভিযান ফিলিস্তিন এবং জাতিসংঘ সংস্থাগুলোর মধ্যে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। ইসরাইল গাজার উত্তরাঞ্চল থেকে বাসিন্দাদের সরিয়ে দিতে চায়, যদিও এমন অভিযোগ অস্বীকার করেছে দেশটি। মঙ্গলবার জাতিসংঘের মানবাধিকার দফতর বলেছে, ইসরাইলি সামরিক বাহিনী গাজার বাকি অংশ থেকে উত্তর গাজাকে পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন করে ফেলছে বলে মনে হচ্ছে। সংগঠনটির মুখপাত্র অ্যাড্রিয়ান জিমারম্যান বলেছেন, অসুস্থ ও প্রতিবন্ধীসহ অনেকে বাইরে যেতে পারছে না এবং তারা আন্তর্জাতিক মানবিক আইনের অধীনে সুরক্ষিত রয়েছে। তারা যাতে অক্ষত থাকে তা নিশ্চিত করার জন্য সব সম্ভাব্য সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। বাস্তুচ্যুত প্রত্যেক মানুষের নিরাপদে ঘরে ফেরার অধিকার রয়েছে।

ইসরাইলি সামরিক বাহিনী জাবালিয়া শিবির ঘিরে ফেলেছে এবং নিকটবর্তী বেইত লাহিয়া এবং বেইত হানুন শহরে ট্যাঙ্ক পাঠিয়েছে, সেখানে পুনরায় সংগঠিত হওয়ার চেষ্টা করা হামাস যোদ্ধাদের নিশ্চিহ্ন করে দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে তারা। ইসরাইলি সামরিক বাহিনী বাসিন্দাদের বাড়িঘর ছেড়ে দক্ষিণ গাজার নিরাপদ আশ্রয়ে সরে যেতে বলেছে। কিন্তু ফিলিস্তিনি ও জাতিসংঘ কর্মকর্তারা বলছেন, গাজায় নিরাপদ কোনো জায়গা নেই। ইসরাইলি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, হামাস যোদ্ধাদের বেসামরিক নাগরিকদের থেকে আলাদা করার লক্ষ্যে সরিয়ে নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। জাবালিয়া বা উত্তরাঞ্চলের অন্যান্য এলাকা থেকে বেসামরিক লোকজনকে সরিয়ে নেওয়ার কোনো নিয়মতান্ত্রিক পরিকল্পনা ছিল বলে অস্বীকার করেছে ইসরাইল।

হামাসের সশস্ত্র শাখা জানিয়েছে, যোদ্ধারা জাবালিয়া ও এর আশপাশে ইসরাইলি বাহিনীর সঙ্গে তীব্র লড়াইয়ে লিপ্ত রয়েছে। জিমারম্যান উত্তরাঞ্চলের স্বাস্থ্যসেবা রক্ষার আহ্বান জানিয়ে বলেন, সেখানকার হাসপাতালগুলো চিকিৎসা সেবা দিতে হিমশিম খাচ্ছে।

গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, সেনাবাহিনী সেখানে পরিচালিত তিনটি হাসপাতাল খালি করার নির্দেশ দিয়েছে, কিন্তু চিকিৎসা কর্মীরা বলেছেন, তারা ক্রমবর্ধমান হতাহতের সংখ্যায় বিস্মিত হলেও তাদের পরিষেবা চালিয়ে যেতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। সোমবার জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস গাজার উত্তরাঞ্চলে বেসামরিক মানুষ হতাহতের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় নিন্দা জানিয়েছেন।

এদিকে ইসরাইলের সঙ্গে যুদ্ধ শুরুর পর থেকে গাজা উপত্যকা ত্রাণের ক্ষেত্রে সবচেয়ে কঠোর নিষেধাজ্ঞার মুখোমুখি হচ্ছে বলে মঙ্গলবার জানিয়েছে জাতিসংঘ। এই নিষেধাজ্ঞার ফলে বিশেষভাবে শিশুদের ওপর মারাত্মক প্রভাব পড়ছে। 

জাতিসংঘের শিশুবিষয়ক সংস্থা ইউনিসেফের মুখপাত্র জেমস এল্ডার বলেন, প্রতিদিনই শিশুদের পরিস্থিতি আগের দিনের চেয়ে আরও খারাপ হয়ে যাচ্ছে। ত্রাণ সহায়তা বাড়ানোর তীব্র প্রয়োজন থাকা সত্ত্বেও পরিস্থিতি ক্রমেই খারাপ হচ্ছে বলে এল্ডার উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন, আগস্ট মাসে গাজায় যে পরিমাণ মানবিক সহায়তা পৌঁছেছে, তা যুদ্ধ শুরুর পর থেকে যে কোনো মাসের তুলনায় সবচেয়ে কম। গত সপ্তাহে এমন কয়েকটি দিন ছিল, যখন কোনো বাণিজ্যিক ট্রাককে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। এখন আমরা সম্ভবত ইতিহাসের সবচেয়ে কঠোর মানবিক সহায়তা নিষেধাজ্ঞা দেখছি।
এ বছর শুরুর দিকে জাতিসংঘ গাজায় সম্ভাব্য দুর্ভিক্ষের সতর্কতা দিয়েছিল এবং নতুন রুট ও প্রবেশপথ খোলার চেষ্টা করা হয়েছিল। কিন্তু এল্ডার জানান, এখন আমরা পুরোপুরি বিপরীত চিত্র দেখছি। মে মাস থেকে নিয়মিত প্রবেশপথগুলো বন্ধ হয়ে যাচ্ছে।

উত্তর গাজার পরিস্থিতি আরও শোচনীয়। এল্ডার বলেন, অক্টোবরজুড়ে সেখানে কোনো খাদ্য সহায়তা পৌঁছয়নি। ত্রাণের ঘাটতি, ক্রমাগত বিমান হামলা এবং গাজার ৮৫ শতাংশ এলাকা থেকে উচ্ছেদের নির্দেশের কারণে অঞ্চলটি এখন কার্যত ‘বাসযোগ্য নেই’ বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

গাজার উত্তরাঞ্চলে এই অঞ্চলের ২৩ লাখ মানুষের অর্ধেকেরও বেশি বাস করে এবং এ অঞ্চলে ইসরাইলের আক্রমণের প্রথম পর্যায়ে ভারী বোমা হামলার মধ্যে কয়েক লাখ বাসিন্দা তাদের বাড়িঘর ছেড়ে পালাতে বাধ্য হয়। জাতিসংঘের হিসাব অনুযায়ী, সেখানে প্রায় চার লাখ মানুষ রয়ে গেছে। গাজার স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষের মতে, এ অভিযানে এখন পর্যন্ত ৪২ হাজার ২৮৯ জন নিহত এবং ৯৮ হাজার ৬৮৪ জন ফিলিস্তিনি আহত হয়েছেন।


সময়ের আলো/আরএস/




https://www.shomoyeralo.com/ad/1698385080Google-News-Update.jpg

সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : সৈয়দ শাহনেওয়াজ করিম, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ। নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।
ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫ | ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com
close