ই-পেপার বুধবার ১৬ অক্টোবর ২০২৪
বুধবার ১৬ অক্টোবর ২০২৪

খুশি তবে অত না
প্রকাশ: বুধবার, ১৬ অক্টোবর, ২০২৪, ১২:৪৮ এএম আপডেট: ১৬.১০.২০২৪ ১২:৫৩ এএম  (ভিজিট : ২১১)
মাধ্যমিক (এসএসসি) বা উচ্চ মাধ্যমিক (এইচএসসি) পরীক্ষার ফল প্রকাশ কার্যক্রম আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করতেন সরকারপ্রধান। তার হাতে ফলাফল তুলে দিতেন বিভিন্ন শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যানরা। ওই অনুষ্ঠানে শিক্ষামন্ত্রীসহ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা উপস্থিত থাকতেন। সরকারপ্রধানের আনুষ্ঠানিকতা শেষে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, ওয়েবসাইট ও মোবাইলে ফল জানার সুযোগ মিলত।

মঙ্গলবার এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষার ফল প্রকাশে চিরায়ত নিয়মে ছন্দপতন ঘটেছে। ছাত্র-জনতার আন্দোলন এবং সরকার পতনের পরের ঘটনাপ্রবাহে এবার উচ্চ মাধ্যমিকের সাতটি বিষয়ে পরীক্ষা নেওয়ার পর বাকিগুলো আর নেওয়া সম্ভব হয়নি। বাতিল পরীক্ষাগুলোর নম্বর নির্ধারণ করা হয়েছে এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফলের ভিত্তিতে (বিষয় ম্যাপিং করে)। এ পদ্ধতি অনুসরণ করে ফল প্রকাশ করেছে শিক্ষা বোর্ডগুলো।

এই প্রক্রিয়ায় প্রকাশিত ফলে অনেকের ধারণা ও আশা ছিল পাসের হার অনেক বেড়ে যাবে। কিন্তু বাস্তবে তা হয়নি। উল্টো নয়টি সাধারণ শিক্ষা বোর্ডের অধীনে এইচএসসি পরীক্ষায় গড় পাসের হার গতবারের চেয়ে কমে গেছে। তবে ফলাফলের সর্বোচ্চ সূচক জিপিএ-৫ পাওয়ার সংখ্যা অনেক বেড়েছে। 

মাদরাসা ও কারিগরি শিক্ষা বোর্ড মিলিয়ে গড় ফলাফলেও একই ধরনের প্রবণতা দেখা গেছে অর্থাৎ পাসের হার কমেছে। কিন্তু জিপিএ-৫ বেড়েছে। অনেক শিক্ষার্থী আশানুরূপ ফল পায়নি, অনেকেই পেয়েছে আশাতীত ফল। বিভিন্ন কলেজের শিক্ষার্থী, তাদের অভিভাবক ও শিক্ষকরা নিজেদের অনুভূতি ও মতামত তুলে ধরেছে। ফল প্রকাশে খুশি হলেও অতটা খুশি নন তারা।

আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটির সভাপতি ও ঢাকা মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক তপন কুমার সরকার সাংবাদিকদের কাছে ফলাফলের তথ্য তুলে ধরেন। এবার ৯টি সাধারণ শিক্ষা বোর্ডের অধীন এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিল ১১ লাখ ৩১ হাজার ১১৮ জন পরীক্ষার্থী। এর মধ্যে পাস করেছে ৮ লাখ ৫৪ হাজার ৬৪৪ জন। গড় পাসের হার ৭৫ দশমিক ৫৬। গতবার গড় পাসের হার ছিল ৭৬ দশমিক ৯। এবার এইচএসসিতে জিপিএ ৫ পেয়েছে ১ লাখ ৩১ হাজার ৩৭৬ জন, যা গতবার ছিল ৭৮ হাজার ৫২১ জন।

মাদরাসা শিক্ষা বোর্ডের অধীনে আলিম পরীক্ষায় ৮৫ হাজার ৫৫৮ জন পরীক্ষার্থী অংশ নিয়েছিল। উত্তীর্ণ হয়েছে ৭৯ হাজার ৯০৯ জন। ৪৬ হাজার ৪৩৩ জন ছাত্রের মধ্যে পাস করেছে ৪২ হাজার ৭৯৩ জন। পাসের হার ৯২ দশমিক ১৬ শতাংশ। অন্যদিকে ৩৯ হাজার ১২৫ জন ছাত্রীর মধ্যে পাস করেছে ৩৭ হাজার ১১৬ জন। পাসের হার ৯৪ দশমিক ৮৭।

বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের অধীন এইচএসসি ভোকেশনাল, বিএম, ডিপ্লোমা ইন কমার্স পরীক্ষার ফল মঙ্গলবার প্রকাশ করা হয়েছে। এতে পাসের হার ৮৮ দশমিক শূন্য ৯ শতাংশ। এ বছর কারিগরি বোর্ডের অধীন জিপিএ-৫ পেয়েছে ৪ হাজার ৯২২ জন।

এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষায় গত কয়েক বছরের মতো এবারও পাসের হার ও জিপিএ-৫ প্রাপ্তিতে এগিয়ে আছে মেয়েরা। এ বছর ১১টি শিক্ষা বোর্ডে গড় পাসের হার ৭৭ দশমিক ৭৮। ছাত্রীদের পাসের হার ৭৯ দমশিক ৯৫। ছাত্রদের পাসের হার ৭৫ দশমিক ৬১। জিপিএ-৫ পাওয়ার দিক দিয়েও এগিয়ে মেয়েরা। মোট ১ লাখ ৪৫ হাজার ৯১১ জন জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থীর মধ্যে ৮০ হাজার ৯৩৩ জন ছাত্রী। আর জিপিএ-৫ পাওয়া ছাত্রের সংখ্যা ৬৪ হাজার ৯৭৮।

এ বিষয়ে অধ্যাপক তপন কুমার সরকার বলেন, যে বিষয়গুলোর পরীক্ষা বাতিল করা হয়েছিল, সেগুলোর ফল উচ্চ মাধ্যমিকে গড় পাসের হারে বড় রকমের প্রভাব পড়ে না। উচ্চ মাধ্যমিক পাসের হারটি মূলত নির্ভর করে ইংরেজি এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) বিষয়ের ওপর। কিন্তু এবার এই দুটি বিষয়ের পরীক্ষা হয়েছিল। ফলে গড় পাসের হারটি স্বাভাবিক সময়ের মতো হয়েছে।

জিপিএ-৫ বেড়ে যাওয়ার পেছনে অন্যতম প্রভাব হিসেবে বিষয় ম্যাপিং কাজ করেছে বলে মনে করেন তপন কুমার সরকার। তিনি বলেন, এসএসসিতে বিজ্ঞান বিভাগে পড়ে যে শিক্ষার্থী জিপিএ-৫ পেয়েছিল, উচ্চ মাধ্যমিকে সে মানবিকে পড়েছে। ফলে এসএসসির বিজ্ঞানের বিষয়গুলোর নম্বর এইচএসসিতে এসে মানবিকের বিষয়গুলোর বিপরীতে যোগ হয়েছে। এভাবে বিভাগ পরিবর্তনের কারণে জিপিএ-৫ বেড়ে যাওয়ার অন্যতম কারণ।

এবারই প্রথমবার বিষয় ম্যাপিং করে ফল প্রকাশ করা হয়নি। এর আগেও করোনাকালে পরীক্ষা নিতে না পারায় কিংবা কম বিষয়ে পরীক্ষা নিতে গিয়ে এ বিষয় ম্যাপিং করে ফল প্রকাশ করা হতো। এ জন্য কোন পরীক্ষার কোন বিষয়ের নম্বর যুক্ত হবে, সে বিষয়ে একটি নীতিমালাও আছে। এবার যেসব বিষয়ের পরীক্ষা হয়নি, সেগুলোর ফল প্রকাশ করা হয় এসএসসি বা সমমানের পরীক্ষার ফলের ভিত্তিতে বিষয় ম্যাপিং করে। এ প্রক্রিয়ায় একজন পরীক্ষার্থী এসএসসিতে একটি বিষয়ে যত নম্বর পেয়েছিল, এইচএসসিতে সেই বিষয় থাকলে তাতে এসএসসিতে প্রাপ্ত পুরো নম্বর বিবেচনায় নেওয়া হবে। আর এসএসসি, এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় বিষয়ে ভিন্নতা থাকলে বিষয় ম্যাপিংয়ের নীতিমালা অনুযায়ী নম্বর বিবেচনা করে ফল প্রকাশ করা হয়েছে।

এবার এইচএসসি বা সমমানের পরীক্ষা শুরু হয়েছিল গত ৩০ জুন। মোট অংশগ্রহণকারী পরীক্ষার্থী ১৩ লাখ ৩১ হাজার ৫৮ জন। সাতটি পরীক্ষা হওয়ার পর সরকারি চাকরিতে কোটাব্যবস্থা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে। এ পরিস্থিতিতে কয়েক দফায় পরীক্ষা স্থগিত করা হয়। তখন পর্যন্ত ছয়টি বিষয়ের পরীক্ষা বাকি ছিল। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতন হয়। পরে সিদ্ধান্ত হয় যে ১১ আগস্ট থেকে নতুন সময়সূচিতে পরীক্ষা নেওয়া হবে; যদিও তা হয়নি। এ অবস্থায় ১১ আগস্টের পরিবর্তে ১১ সেপ্টেম্বর থেকে স্থগিত পরীক্ষাগুলো নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছিল। কিন্তু বাংলাদেশ সচিবালয়ে আন্দোলনের মুখে স্থগিত পরীক্ষাগুলো বাতিল করা হয়।


সময়ের আলো/আরএস/




https://www.shomoyeralo.com/ad/1698385080Google-News-Update.jpg

সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : সৈয়দ শাহনেওয়াজ করিম, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ। নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।
ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫ | ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com
close