বহুল প্রত্যাশিত এইচএসসি পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশিত হয়েছে মঙ্গলবার (১৫ অক্টোবর)। ফলাফল ঘোষণার পর থেকেই অনেকের পরিবার রয়েছে আনন্দে। কিন্তু আনন্দ করতে পারছে না বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন করা শহীদ রায়হানের পরিবার। রায়হানের পরীক্ষার ফল শোনার পর কান্না থামছে না মা-বাবা ও বোনের।
৫ আগস্ট শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর ঢাকার বাড্ডাতে বিজয় মিছিল বের হয়। সেই মিছিলে যোগ দিয়েছিল রায়হান। মিছিল আনন্দ উল্লাস করার সময় হঠাৎ একটি বুলেট এসে তার জীবন প্রদীপ নিভিয়ে দেয়।
মঙ্গলবার (১৫ অক্টোবর) এইচএসসি পরীক্ষার ফল প্রকাশিত হয়েছে। সেই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন বিজয় মিছিলে পুলিশের গুলিতে শহীদ হওয়া মো. রায়হান।
মো. রায়হান নোয়াখালীর সদর উপজেলার নোয়ান্নই ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডের পূর্ব দুর্গানগর গ্রামের আমজাদ হাজী বাড়ির মো. মোজাম্মেল হোসেন ও আমেনা দম্পতির একমাত্র ছেলে। সে রাজধানীর গুলশান কমার্স কলেজ থেকে এইচএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেন।
মঙ্গলবার (১৫ অক্টোবর) সকাল সাড়ে ১১ টায় ফল জানতে পারে তার পরিবার। রায়হানের উত্তীর্ণ হওয়ার খবর শুনে কান্নায় ভেঙে পড়েন পরিবারের সদস্যরা।
জানা যায়, গত সোমবার (৫ আগস্ট) বাড্ডায় বিজয় মিছিলে যোগদান করলে গুলিবিদ্ধ হন রায়হান। এরপর ৬ আগস্ট (মঙ্গলবার) দুপুরে জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়। তার বাবা মো. মোজাম্মেল হোসেন বাড্ডায় একটা বাড়িতে কেয়ারটেকারের চাকরি করতেন। রায়হান পাশেই একটা মেসে থাকতেন।
রায়হানের একমাত্র বোন উর্মি আক্তার বলেন, আমার ভাইয়ের জন্য বাবা-মা সব সময় কান্না করেন। ফলাফল দেওয়ার খবর শুনে বাবা-মা আরও বেশি কান্না করছেন। আমার ভাই বেঁচে থাকলে আজ অনেক খুশি হতেন।
রায়হানের মা আমেনা খাতুন বলেন, এই পাশ দিয়ে আমি কি করবো আমার ছেলেই তো পৃথিবীতে নেই। তার বাবা অনেক কষ্ট করে তাকে পড়ালেখা করিয়েছে। আমরা না খেয়ে আমাদের সন্তানদেরকে খাইয়েছি। একটি বুলেটে সব স্বপ্ন শেষ হয়ে গেছে।
রাহানের বাবা মোহাম্মদ মোজাম্মেল হোসেন বলেন, আমি ঢাকায় একটি বাড়িতে কেয়ারটেকারের চাকরি করি। যা পাই তা দিয়ে কোন রকমে সংসার ও ছেলে মেয়ের পড়ালেখার খরচ চালাই। রায়হান ঢাকাতেই বাড্ডাতে একটি মেসে থাকতো। তার অনেক স্বপ্ন ছিল পড়ালেখা শেষ করে পরিবারের হাল ধরবে। কিন্তু পাঁচ আগস্ট বাড্ডা এলাকায় একটি বিজয় মিছিলে গিয়েছিলো রায়হান। সেই মিছিলে হঠাৎ একটি বুলেট এসে তার জীবনটি নিয়ে নেয়।
রায়হানের সহপাঠীরা বলেন, রায়হান মেধাবী শিক্ষার্থী ছিল। সে এ প্লাস পাওয়ার কথা। এবার সব পরীক্ষা হয় নাই। তার রেজাল্ট দেখে আমরা মর্মাহত হয়েছি।
রায়হানের কলেজ গুলশান কমার্স কলেজের অধ্যক্ষ এম এ কালাম বলেন, আমাদের কলেজ থেকে বাণিজ্য বিভাগ থেকে এইচএসসি পরীক্ষায় ৩৮১ জন পাশ করেছে। রায়হান জিপিএ ২.৯২ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছে। তার ফলাফল আরও ভালো হওয়ার কথা। কিভাবে এত খারাপ হলো তা আমাদের জানা নাই। তবে তার মৃত্যু আমাদের এখনও কাঁদায়। সরকার যেনো তার পরিবারের সঙ্গে থাকে সে আশা করছি।
সময়ের আলো/এম