প্রকাশ: সোমবার, ১৪ অক্টোবর, ২০২৪, ১১:২০ পিএম (ভিজিট : ২০৮)
ঢাকা জেলার দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানাধীন আগানগর এলাকায় ভাড়াটিয়া বাসায় স্বামী ও তিন পুত্র সন্তান নিয়ে বসবাস করেন সাকিলা এনাম (৩২)। তিন পুত্র সন্তানের মধ্যে আদিফ মজুমদার (১৩), আহনাফ মজুমদার (৬) ও সাইফান মজুমদার (৮ মাস)। গত ১২ অক্টোবর সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে সাকিলার বাসায় গিয়ে অসহায়ত্বের কথা বলে শুধু থাকা-খাওয়ার বিনিময়ে গৃহকর্মী হিসেবে আশ্রয় চান মোছা. তানজিলা আক্তার পারভীন (৩৫) নামে এক নারী। অনেক আকুতি-মিনতির পর সরল বিশ্বাসে মানবিক দিক বিবেচনা করে পারভীনকে বাসায় আশ্রয় দেন সাকিলা। এরপর দিন রোববার (১৩ অক্টোবর) বেলা ১১টার দিকে সাকিলার মেজো ছেলে আহনাফ আইসক্রিম খাওয়ার জন্য কান্নাকাটি করে। এই সুযোগে আশ্রয় নেওয়া পারভীন আহনাফ ও আট মাস বয়সী সাইফানকে নিয়ে আইসক্রিম আনার কথা বলে বাসার বাইরে যান। দোকান থেকে আহফানকে একটি আইসক্রিম কিনে দিয়ে তাকে বাসায় পাঠিয়ে দেন এবং আট মাস বয়সী সাইফানকে কোলে নিয়ে পালিয়ে যান পারভীন।
কিছুক্ষণ পর আহনাফ আইসক্রিম হাতে বাসায় ফিরলে তার মা তাকে জিজ্ঞাসা করেন পারভীন ও সাইফান কোথায়? উত্তরে আহনাফ তার মাকে জানান পারভীন তাকে আইসক্রিম কিনে দিয়ে বাসায় যাওয়ার জন্য বলে এবং সাইফানকে নিয়ে তিনি আসছেন।
অনেকক্ষণ অপেক্ষার পরও পারভীন ও সাইফানের কোন খোঁজখবর না পেয়ে ওই এলাকায় খোঁজাখুঁজি করে কোথাও সাইফান ও পারভীনের সন্ধান না পেয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েন এই মা। পরে সাকিলা বুঝতে পারেন তার সন্তান সাইফানকে অপরহণ করা হয়েছে।
সন্তানকে উদ্ধার ও ফিরে পাওয়ারে চেষ্টায় সোমবার (১৪ অক্টোবর) ঢাকার দক্ষিণ কেরাণীগঞ্জ থানায় তানজিলা আক্তার পারভীন এবং অজ্ঞাত আরো ৪/৫ জনের বিরুদ্ধে একটি অপহরণ মামলা (নম্বর-১৯) দায়ের করেন।
চাঞ্চল্যকর এই ঘটনায় অভিযোগের প্রেক্ষিতে ঢাকার দক্ষিণ কেরাণীগঞ্জ থেকে অপহৃত ৮ মাসের শিশু সাইফানকে শরীয়তপুর জেলার পালং এলাকা থেকে উদ্ধার করেছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব-১০)। এ ঘটনায় তানজিলা আক্তার পারভীন (৩৫) নামে এক অপহরণকারীকে গ্রেফতার করেছে র্যাব।
এ বিষয়ে র্যাব-১০ এর সহকারী পরিচালক (মিডিয়া) সিনিয়ল সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) তাপস কর্মকার বলেন, সোমবার সকাল সাড়ে ৭টার দিকে গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে ও র্যাব-৮ এর সহায়তায় শরীয়তপুর জেলার পালং থানাধীন চরলক্ষী নারায়ন এলাকায় একটি যৌথ অভিযান পরিচালনা করে অপহরণকারী পারভীনকে গ্রেফতার খরা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে পারভীন শিশুটিকে অপহরণের বিষয়টি স্বীকার করে। পরে তার দেখানো মতে অপর একটি বাসা থেকে অক্ষত অবস্থায় ৮ মার বয়সী অপহৃত শিশু কে উদ্ধার করা হয়।
র্যাবের এই কর্মকর্তা আর বলেন, জিজ্ঞাসাবাদে আসামি পারভীন আরও জানায়, প্রায় ১২ বছর আগে ময়মনসিংহে এক ব্যক্তির সাথে পারভীনের বিয়ে হয়। ঐ স্বামীর ঘরে আরেকজন স্ত্রী ছিল। সতীনের সঙ্গে সংসারে পারভীন মা হতে পরেনি। এই কারণে তার ওই স্বামীর সাথে বিচ্ছেদ হয়। পরে ঢাকার দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের আগানগর এলাকায় প্রবাসী আশরাফুল আলমের সাথে তার দ্বিতীয় বিয়ে হয়ে। আশরাফুলের প্রথম স্ত্রীর একটি প্রতিবন্ধী ছেলে সন্তানকে দেখাশোনা করতো পারভীন। দ্বিতীয় বিয়ের পরও পারভীন মা না হতে পারলে সংসারে প্রায়ই ঝগড়া-বিবাধ হত। আশরাফুল বিদেশ চলে গেলে এর কয়েক মাস পর স্বামীকে জানায় তিনি গর্ভবতী। এরপর তার স্বামী দেশে ফিরে আসার কথা জানালে পারভীন মিথ্যাবাসী হয়ে যাবে এবং সংসার ভেঙে যাবে। এই ভয়ে পারভীন ৮ থেকে ১০ মাস বয়সী একটি শিশু অপহরণ করার মতো জঘন্য সিদ্ধান্ত নেয় বলে জানায়।
গ্রেফতার আসামির বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ ও সংশ্লিষ্ট থানায় হস্তাস্তর করা হয়েছে বলেও জানান র্যাবের এই কর্মকর্তা।
সময়ের আলো/জেডআই