ই-পেপার সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪
সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪

ছুটি ছাড়াই পার তিন দশক
প্রকাশ: সোমবার, ৭ অক্টোবর, ২০২৪, ৫:১৫ এএম  (ভিজিট : ৫৪)


স্কুলের নাম আমদাবাদ মাধ্যমিক বিদ্যালয়। যশোর শহর থেকে ৮ থেকে ১০ কিলোমিটার দূরে। গ্রামের স্কুল বলা যায়। এ স্কুলের শিক্ষার্থীদের জন্য নিজের সব শখ, আহ্লাদ ও ইচ্ছা সবকিছু বিলিয়ে দিয়েছেন তিনি। শিক্ষার্থীদের কথা ভেবে নিজে বিয়ে পর্যন্ত করেননি। ৩১ বছর চলমান চাকরি জীবনে একদিনও ছুটি নেননি এই শিক্ষক। হোক তা অর্জিত কিংবা বার্ষিক। কাটাননি অসুস্থতাজনিত ছুটিও। এ ছাড়া নাম ডাকা থেকে শুরু করে সম্পূর্ণ ক্লাস নেন দাঁড়িয়ে। অবিশ্বাস্য শোনালেও এটাই সত্য যে, ৩১ বছরের সুদীর্ঘ শিক্ষকতা জীবনে কখনোই তিনি বসে ক্লাস নেননি। তিনি যশোরের আমদাবাদ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা সুফিয়া ইয়াসমিন।

সুফিয়া ইয়াসমিন যশোর সদর উপজেলার ছিলুমপুর গ্রামের মৃত আদম আলী সরদারের মেয়ে। ব্যতিক্রমী আপাদমস্তক এই শিক্ষাগুরু আর কদিন বাদেই যাবেন অবসরে। রোদ কিংবা ঝড়-বৃষ্টি যা-ই হোক না কেন, স্কুলে আসেননি সুফিয়া ইয়াসমিনের এমন রেকর্ড নেই। গেল প্রায় ৩২ বছরের শিক্ষকতা জীবনে সরকার নির্ধারিত ছুটির বাইরে বাড়তি একদিনও ছুটি কাটাননি তিনি।

সুফিয়া ইয়াসমিন জানান, ১৯৮৭ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলায় স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। পাসের ছয় বছর পর ১৯৯৩ সালে সহকারী শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন আমদাবাদ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে। কর্মজীবনে কখনো ফাঁকি দেবেন নাÑ এটাই ব্রত ছিল তার। সে অনুযায়ী কাজ করতে করতে স্কুলই হয়ে ওঠে তার জীবনের ধ্যান-জ্ঞান। আপনজন মারা গেলেও ক্লাস বন্ধ করেননি কখনো। তার কথায়, মাঝে মধ্যে মনে হয় শরীরটা একটু অসুস্থ। কিন্তু যখন স্কুলে আসি তখন আমার আর তেমন কিছু মনে হয় না। ছোট থেকেই ইচ্ছা ছিল সামাজিক কাজ করার। শিক্ষকতা করার পাশাপশি সামাজিক কাজ করে চলেছেন তিনি। ইচ্ছা শক্তি ও তার কোন পিছুটান না থাকায় এটা হওয়া সম্ভব হয়েছে। ১৯৯৬ সালের ১ অক্টোবর তার বাবা ও ২০০৮ সালের ১২ এপ্রিল তার মা মারা যাওয়ার দিনেও স্কুলে পাঠদান করেছেন তিনি।

বিয়ে কেন করেনি এবং কেন কোনোদিন বসে ক্লাস নেননি জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিয়ে করলে সমাজসেবা করতে পারব না এবং অসহায় শিক্ষার্থীদের সেবা করতে পারব না। এ জন্য বিয়ে করিনি। আমি এই স্কুলেরই শিক্ষার্থী। তাই কখনো বসে ক্লাস নিইনি। কারণ ওই চেয়ারে বসে আমার শিক্ষকরা ক্লাস নিতেন। তাই আমি ওই চেয়ারে কোনোদিন বসিনি।

স্কুলের অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী রাইসা কবি রোজার কথায়, ম্যাম আমার দেখা সেরা শিক্ষকের একজন। আমাদের কোনো বিষয় বুঝতে সমস্যা হলে ম্যামের কাছে গেলে তিনি আমাদের আবার ভালো করে বুঝিয়ে দেন। ম্যাম আমার আইডল। বিদ্যালয়ে দশম শ্রেণির ছাত্র রমজান আলী বলেন, ম্যাম অন্যরকম মানুষ। আমাদের বাংলা ২য় পত্র পড়ান। কোনো কিছু না বুঝলে বারবার বুঝিয়ে দেন। চাকরি শেষে ম্যাম আমাদের ছেড়ে চলে যাবেন এটা ভাবলে খুবই কষ্ট হয়। আমরা গর্ববোধ করি ম্যামের কাছ থেকে কিছুটা হলেও শিখতে পেরেছি। ম্যাম একদিন ক্লাসে এসে বললেন, আমি ক্লাস কামাই না দেওয়ার জন্য পুরস্কৃত হচ্ছি। স্বীকৃতিস্বরূপ কিছু পাচ্ছি। তোমরাও স্কুল কামাই করবে না। আমি নিজ থেকে তোমাদের স্বীকৃতি দেবো।  

এমন একজন ব্যক্তিকে সহকর্মী হিসেবে পেয়ে গর্বিত অন্য শিক্ষকরাও। তারা বলছেন, সুফিয়া ইয়াসমিন শিক্ষক সমাজের জন্য অনুকরণীয়।

সাবেক শিক্ষার্থী সাদ্দাম হোসেন বলেন, ম্যাম তার ভাই ও বোনদের মোট ১৫ জন ছেলে-মেয়েকে পড়াশোনা করানোর পর প্রতিষ্ঠিত করেছেন। এ ছাড়া অনেক অসহায় শিক্ষার্থীদের স্কুলের বেতন দিয়ে দিতেন তিনি। অনেক শিক্ষার্থীকে বই কিনে দিয়েছেন তিনি। সাদ্দাম হোসেন আরও বলেন, পরীক্ষার আগে আমাদের নিয়ে বিভিন্ন শিক্ষার্থীদের বাসায় গিয়ে খোঁজ-খবর নিতেন। আর সবচেয়ে বড় বিষয় হলো, তিনি একজন নারী হলেও জীবনে কখনো অলংকার ব্যবহার করেননি। সহজ সরল জীবনযাপন পছন্দ তার।

এ বিষয়ে আমদাবাদ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক পারভেজ মাসুদ বলেন, আমি ১৪ বছর ধরে প্রতিষ্ঠানের প্রধান হিসেবে কর্মরত আছি। আমার শিক্ষকতা জীবনে এমন শিক্ষক কখনো দেখিনি। আমি তাকে নিয়ে গর্ববোধ করি। এ ছাড়া আমি আমার বন্ধুদের কাছে তাকে নিয়ে গল্প করি। আমি এ প্রতিষ্ঠানে আসার পর তাকে কখনো দেরি করে আসতে দেখিনি।

সময়ের আলো/আরএস/ 




https://www.shomoyeralo.com/ad/1698385080Google-News-Update.jpg

সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সৈয়দ শাহনেওয়াজ করিম, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ
নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।

ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫ | ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com
close