ই-পেপার সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪
সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪

শেরপুরে বন্যায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৮
ডুবছে বাড়ি, ডুবছে ঘর
প্রকাশ: সোমবার, ৭ অক্টোবর, ২০২৪, ৩:৪৯ এএম  (ভিজিট : ৯৪)
বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে শেরপুরে। প্লাবিত হয়েছে নতুন নতুন এলাকা। রোববার পর্যন্ত এ জেলায় বন্যার পানিতে ডুবে মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে আটজনে। এ ছাড়া পানিবন্দি হয়ে পড়েছে নেত্রকোনার কয়েকটি ইউনিয়নের ৫০ হাজার মানুষ। বন্যাকবলিত এলাকাগুলোতে দুর্ভোগ বেড়েছে মানুষের। সংকট দেখা দিয়েছে শুকনা খাবার ও সুপেয় পানির। প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর-

শেরপুর প্রতিনিধি জানান, বৃহস্পতিবার রাত থেকে শুরু হওয়া শেরপুরের নদ-নদীতে পাহাড়ি ঢলের তীব্রতা কিছুটা কমলেও বেড়েছে নদীভাঙন, বেড়েছে নদী তীরবর্তী বন্যাকবলিত এলাকার মানুষের দুর্ভোগ। অন্যদিকে পাহাড়ি ঢলের পানি প্রবেশ করে বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি ঘটেছে ভাটি এলাকায়। প্লাবিত হতে শুরু করেছে নতুন নতুন এলাকা। ইতিমধ্যেই জেলা সদরের দুই ইউনিয়ন, শ্রীবরদী উপজেলার চার ইউনিয়ন, নকলা উপজেলার দুই ইউনিয়নে ঢলের পানি প্রবেশ করে বন্যা পরিস্থিতি অবনতির দিকে গেছে। বন্যার পানিতে ডুবে এ পর্যন্ত আটজন মারা যাওয়ার খবর পাওয়া গেছে।

তবে বন্যায় সাতজনের মৃত্যুর তথ্য নিশ্চিত করেছেন নকলা থানার ওসি হাবিবুর রহমান। তিনি জানান, শনিবার রাতে নকলায় একজনের মৃত্যু হয়েছে। এ ছাড়া বন্যায় জেলার নালিতাবাড়ী উপজেলায় পাঁচজন ও ঝিনাইগাতীতে একজনের মৃত্যু হয়েছে।

স্থানীয় ও প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, বৃহস্পতিবার রাত থেকে টানা দুদিনের ভারী বৃষ্টি, শুক্রবার সকাল থেকে পুরাতন ব্রহ্মপুত্র, সোমেশ্বরী, মহারশি, ভোগাই ও চেল্লাখালী নদীতে উজানের পাহাড়ি ঢলে বাঁধ ভেঙে ও উপচে লোকালয়ে প্রবল বেগে বানের পানি প্রবেশ করে। এতে শুক্রবার দুুপুরের মধ্যেই বন্যাকবলিত হয়ে পড়ে জেলার নালিতাবাড়ী উপজেলার অন্তত ৮টি ইউনিয়ন ও ঝিনাইগাতী উপজেলার অন্তত ৪টি ইউনিয়ন। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গেই এ দুটি উপজেলার বন্যাকবলিত ইউনিয়নের সংখ্যা বাড়তে থাকে। শনিবার সকাল পর্যন্ত অন্তত ১৫টি ইউনিয়ন আকস্মিক বন্যার কবলে পড়ে। 

শনিবার থেকে এ দুটি উপজেলার অন্যান্য ইউনিয়নের পাশাপাশি শেরপুর সদর উপজেলার ২টি, শ্রীবরদী উপজেলার ৪টি ও নকলা উপজেলার ২টি ইউনিয়ন বন্যাকবলিত হয়ে পড়ে। রোববার পর্যন্ত জেলার অন্তত ২৫টি ইউনিয়ন বন্যার কবলে পড়ে। ভেসে যায় এসব এলাকার হাজার হাজার পুকুর ও শত শত মাছের খামারের মাছ, ধসে পড়ে বহু কাঁচা ঘরবাড়ি, ভেসে যায় অনেকের গবাদিপশু, তলিয়ে যায় জেলার অন্তত ১৫টি প্রধান পাকা সড়কসহ বহু কাঁচা-পাকা গ্রামীণ সড়কপথ। ডুবে যায় ছোট ছোট অনেক ব্রিজ-কালভার্ট। ফলে কার্যত যোগাযোগব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে এসব এলাকার। এ ছাড়াও নালিতাবাড়ী-নাকুগাঁও স্থলবন্দর মহাসড়ক, নালিতাবাড়ী-ঢাকা মহাসড়ক, নালিতাবাড়ী-শেরপুর সড়কের ওপর দিয়ে প্রবল বেগে বন্যার পানি বয়ে যায়।

বন্যাকবলিত এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, মানুষ চরম দুর্ভোগে পড়েছে। অনেকে বাড়িঘরে আটকা পড়েছেন। কেউবা পরিবার-পরিজন নিয়ে ছুটছেন আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে আশ্রয়ের খোঁজে। 

বানভাসিরা জানান, সেনাবাহিনী, বিজিবি, জেলা প্রশাসন,  বিএনপি, জামায়াত, ইসলামী ছাত্র শিবিরসহ বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ত্রাণ কার্যক্রম চালালেও তা ছিল প্রয়োজনের তুলনায় কম। প্রয়োজনীয় নৌযানের অভাবে উদ্ধার তৎপরতায়ও বেগ পেতে হচ্ছে উদ্ধারকারী দলগুলোকে। এ ছাড়াও সুপেয় পানি, স্যালাইন ও শুকনা খাবারের সংকট দেখা দিয়েছে বন্যাকবলিত এলাকাগুলোতে। শনিবার বিকাল থেকে জেলার উত্তরের গ্রামগুলোতে বন্যার পানি কমতে শুরু করলেও বেড়েছে দুর্ভোগ। বেড়েছে নদীভাঙনের তীব্রতা। শনিবার থেকে জেলার দক্ষিণে ভাটি এলাকাগুলোতে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি ঘটেছে। এসব এলাকার বাড়িঘর পানিতে তলিয়ে যেতে শুরু করেছে।

নালিতাবাড়ী উপজেলার যোগানিয়া গ্রামের কৃষক রেজোয়ান মিয়া জানান, আটাশির বন্যার চেয়েও এবারের বন্যার ভয়াবহতা বেশি। যোগানিয়া কাচারীপাড়া এলাকার গৃহবধূ খালেদা বেগম জানান, দুদিন ধরে ভেজা কাপড়ে আছি। বাড়িঘরে পানি উঠেছে। পানির টিউবওয়েল পর্যন্ত ডুবে গেছে। রান্না বন্ধ। ফলে খুব কষ্টে আছি। ঝিনাইগাতী উপজেলার হাসলিগাঁও গ্রামের আবদুল মোতালেব জানান, দুদিন ধরে বাড়িঘরে পানি উঠেছে। রান্না-বান্না বন্ধ রয়েছে। চিড়া-মুড়ি খেয়ে দিন কাটাতে হচ্ছে। যে পরিমাণ ত্রাণ আসছে তা একেবারেই কম।

এদিকে শুক্রবার থেকে জেলার নালিতাবাড়ী উপজেলায় বন্যার পানিতে ডুবে ও প্রবল স্রোতে ভেসে গিয়ে পাঁচজনের মৃত্যু ঘটেছে। নকলায় বন্যার পানিতে ডুবে মারা গেছে দুজন। ঝিনাইগাতীতে বন্যার পানিতে ভেসে এসেছে এক অজ্ঞাতপরিচয় নারীর লাশ। সবমিলিয়ে জেলায় শুক্রবার থেকে রোববার পর্যন্ত বন্যায় মারা গেছে আটজন।

এদিকে শেরপুরের সেনা ক্যাম্প থেকে জানানো হয়েছে, সোমবার সকালে সেনাবাহিনী প্রধান ওয়াকার-উজ-জামান নালিতাবাড়ীর বন্যা পরিস্থিতি পরিদর্শনে আসবেন এবং এদিন তিনি বন্যার্তদের ত্রাণ সহায়তা দেবেন।

শেরপুরে বন্যার সবশেষ পরিস্থিতি নিয়ে জেলা প্রশাসক তরফদার মাহমুদুর রহমান বলেন, জেলার বেশ কয়েকটি নদীর পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। জেলা প্রশাসন ও উপজেলা প্রশাসন সতর্ক অবস্থায় রয়েছে। দুর্গতদের উদ্ধার ও শুকনা খাবার পৌঁছে দিতে আমরা কাজ করে যাচ্ছি।
নেত্রকোনা প্রতিনিধি জানান, পাহাড়ি ঢলের পানিতে নেত্রকোনার দুর্গাপুর উপজেলার সাত ইউনিয়নের মধ্যে পাঁচ ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। এতে প্রায় ৪০টি গ্রামের মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। চারদিক পানিতে থইথই করছে। বাড়ি থেকে বের হওয়ার রাস্তাও রয়েছে পানির নিচে। ঘরের চারদিকেই পানি আর পানি, বাড়ছে দুর্ভোগ।

নেত্রকোনা পানি উন্নয়ন বোর্ডে সূত্রে জানা গেছে, গত কয়েক দিনের টানা ভারী বর্ষণ আর উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে সোমেশ্বরী নদীর পানি বেড়ে বিভিন্ন ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। সোমেশ্বরী নদীর দুর্গাপুর পয়েন্টে শনিবার বিকাল থেকে রোববার সকাল ৯টা নাগাদ ১৫ ঘণ্টায় ৫০ সেন্টিমিটার পানি বেড়েছে। নদীর পানি বিপদসীমার শূন্য দশমিক ৩০ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। নদীতে গড়ে ঘণ্টায় সাড়ে তিন সেন্টিমিটার পানি বেড়ে চলছে।

সরেজমিন রোববার সকালে গিয়ে দেখা গেছে, সোমেশ্বরী ও পার্শ্ববর্তী নেতাই নদীর পানি প্রবেশ করে উপজেলার গাঁওকান্দিয়া ইউনিয়নের জাগিরপাড়া, বন্দউষান, মুন্সিপাড়া, আটলা, পূর্বনন্দেরছটি, হাতিমারাকান্দা, ভাদুয়া, নাওধারা, দক্ষিণ জাগিরপাড়া, কুল্লাগড়া ইউনিয়নের বিলকাঁকড়াকান্দা, দৌলতপুর, পলাশগড়া, বংশীপাড়া, গাইমারা, কাকৈরগড়া ইউনিয়নের, গোদারিয়া, বিলাশপুর, লক্ষ্মীপুর, রামবাড়ি, দুর্গাশ্রম ও চন্ডীগড় ইউনিয়নের সাতাশি, চারিখাল, নীলাখালী, ফুলপুর এবং বাকলজোড়া ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামসহ প্রায় ৪০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এসব ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামের প্রায় ৫০ হাজার মানুষ পানিবন্দি অবস্থায় জীবনযাপন করছেন। রাস্তা, মাঠ-ঘাট পানিতে তলিয়ে গেছে। স্কুল, মাদরাসা, ঘরবাড়ির চারপাশেই পানি। পানিতে তলিয়ে গেছে ফসলি জমি। পুকুর তলিয়ে ভেসে গেছে লাখ লাখ টাকার মাছ। গবাদিপশু নিয়েও বিপাকে পড়েছেন মানুষের। অন্যদিকে এসব এলাকায় দেখা দিয়েছে বিশুদ্ধ পানি ও খাদ্যের সংকট।

গাঁওকান্দিয়া ইউনিয়নের ব্যবসায়ী আহাম্মদ আলী বলেন, আমাদের চলাচলের রাস্তায় কোমর পানি, যেভাবে পানি বাড়ছে তাতে ভয় হচ্ছে। পরিবার-পরিজন নিয়ে কোথায় যাব। চণ্ডিগড় ইউনিয়নের বাসিন্দা মাসুদুর রহমান ফকির বলেন, আমাদের গ্রামে অনেক মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। হাট-বাজারেও যাওয়া যাচ্ছে না। বাকলজোড়া গ্রামের ইউপি সদস্য মো. আবুল কাশেম বলেন, ফসলি জমি ৮০ ভাগ পানির নিচে এখন।

দুর্গাপুর উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা শিরিন আক্তার বলেন, পাহাড়ি ঢলে ৫টি ইউনিয়নের প্রায় শতাধিক পুকুর তলিয়ে গেছে। এতে বিভিন্ন প্রজাতির মাছ ভেসে গেছে। ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ৫০ লাখ টাকা হবে।
দুর্গাপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নীপা বিশ্বাস বলেন, আমন ধান. মাশকলাই ও শীতকালীন সবজির প্রায় ১০ হাজার হেক্টর জমি পানিতে নিমজ্জিত রয়েছে। এর মধ্যে ৬ হাজার ২০০ হেক্টর জমির ফসল ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে।

নেত্রকোনা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সারোয়ার জাহান বলেন, বৃষ্টি আর উজানের ঢলের কারণে জেলার নদ-নদীর পানি বেড়ে চলেছে।

দুর্গাপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ভারপ্রাপ্ত) মো. মোস্তাফিজুর রহমান জানান, নিম্নাঞ্চলের অনেক মানুষ পানিবন্দি। প্রশাসনের পক্ষ থেকে শনিবার কাকৈরগড়া ইউনিয়নের পানিবন্দি এলাকায় ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করা হয়েছে। অন্যান্য ইউনিয়নেও ত্রাণ বিতরণ অব্যহত রয়েছে। পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে এমন খবর সব জায়গা থেকেই আসছে। ত্রাণ বিতরণ ও আশ্রয়কেন্দ্র খোলা নিয়ে জরুরি সভা ডাকা হয়েছে।

হালুয়াঘাট প্রতিনিধি জানান, ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট ও ধোবাউড়া টানা ২৪ ঘণ্টার ভারী বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে তলিয়ে গেছে হালুয়াঘাট পৌরশহর ও বেশ কয়েকটি ইউনিয়ন। শহরের বিভিন্ন বাসা-বাড়ি ও দোকানপাটে পানি উঠেছে। এ ছাড়া হালুয়াঘাট-ময়মনসিংহ আঞ্চলিক সড়কের বিভিন্ন স্থান তলিয়ে যাওয়ায় সড়কে যান চলাচল ব্যাহত হচ্ছে। ফলে চরম ভোগান্তিতে পড়েছে হাজারো পরিবার। এ ছাড়া ভারী বৃষ্টিপাতে তলিয়েছে উপজেলার কয়েক হাজার একরের সদ্য রোপণ করা আমন ধানের ক্ষেত। কৃষি অফিসের তথ্য মতে, প্রায় ২২৮ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়।

সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, আঞ্চলিক মহাসড়কের পাশে হালুয়াঘাট থানা, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, উপজেলা পরিষদ, খাদ্য গুদাম, ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের সামনের অংশ, জয়িতা প্রাঙ্গণসহ পৌর শহরের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পানিতে তলিয়ে আছে। পানি ওঠায় ব্যাহত হচ্ছে যান চলাচল। মানুষজন পানি মাড়িয়ে চলাচল করছে। আবার অনেকেই পানি কবলিত এলাকা ছেড়ে পরিবার-পরিজন নিয়ে আশ্রয়কেন্দ্রসহ আত্মীয়-স্বজনদের কাছে ঠাঁই নিয়েছেন। তাৎক্ষণিক পরিস্থিতি মোকাবিলায় উপজেলা প্রতিটি স্কুল-কলেজ, মাদরাসা, আশ্রয়কেন্দ্রের ব্যবস্থা করেছেন। সহযোগিতায় পাশে থাকতে গঠন করা হয়েছে বিভিন্ন টিম। প্লাবিত এলাকাগুলোতে পানিবন্দি মানুষদের উদ্ধার করতে হালুয়াঘাট ফায়ার সার্ভিস ও পুলিশ কাজ করে যাচ্ছে। সামাজিক প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তি সহায়তায় দেওয়া হচ্ছে শুকনা খাবার। সবমিলিয়ে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে উপজেলাবাসীকে।

উপজেলা কৃষি অফিস সূত্র জানায, উপজেলার ১২টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভাসহ মোট রোপা আমন আবাদ করা হয়েছিল ২৪ হাজার ৯০৫ হেক্টরে জমিতে। এর মধ্যে বন্যা পরিস্থিতিতে পূর্ণ নিমজ্জিত হয়েছে ৪ হাজার ১০০ হেক্টর ও অর্ধ নিমজ্জিত ৩ হাজার ৫০০ হেক্টর। পাশাপাশি ভেসে গেছে মাছের ঘেরসহ সবজি আবাদ।

রূপগঞ্জ (নারায়ণগঞ্জ) প্রতিনিধি জানান, গত চার দিনের টানা বৃষ্টিতে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের বিভিন্ন এলাকায় বাড়ি ও হাটবাজারে পানি ঢুকে লাখো মানুষ ভোগান্তিতে পড়েছেন। বৃষ্টির কারণে বসতবাড়ি হাটবাজার, দোকানপাটে পানি ঢুকেছে ও রাস্তায় হাঁটু পর্যন্ত পানি উঠেছে। বৃষ্টির কারণে বাঁধের ভেতরের কিছু কিছু এলাকায় অস্থায়ী বন্যায় পরিণত হওয়ার উপক্রম হয়েছে। দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন এখানকার মানুষ।

সরকারি নিয়মকানুন না মেনে অপরিকল্পিতভাবে ক্যানেল ভরাট, অপরিকল্পিত ড্রেনেজ ব্যবস্থা, খাল দখল, ভবন ও বাড়িঘর নির্মাণ এ জলাবদ্ধতার প্রধান কারণ বলে মনে করেন স্থানীয়রা। পানি নিষ্কাশনে যাত্রামুড়া ও বানিয়াদির পাম্প হাউসগুলো কোনো কাজে আসছে না বলে স্থানীয়দের অভিযোগ রয়েছে।
সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, সেচ প্রকল্পের মাসাব, বরপা বাগানবাড়ি, সুতালড়া, আড়িয়াবো, তেতলাব, কর্ণগোপ, মৈকুলী, মিয়াবাড়ী, ভায়েলা, পাঁচাইখা, মোগড়াকুল, পবনকুল, বরাব, খাদুন, যাত্রামুড়া, গোলাকান্দাইল, বিজয় নগর, বলাইখা, উত্তরপাড়া, মিয়াবাড়ি, নামাপাড়া, দক্ষিণপাড়া, নাগেরবাগ, ৫নং ক্যানেল, রূপসী, গন্ধর্বপুরসহ বেশ কয়েকটি নিচু এলাকায় প্রায় লাখো মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ১৯৮৪ সালে ৯ কোটি ৮২ লাখ টাকা ব্যয়ে ২ হাজার ৩০০ হেক্টর জমি নিয়ে অগ্রণী নারায়ণগঞ্জ-নরসিংদী অগ্রণী সেচ প্রকল্প-১ ও পরে ১৯৯৩ সালে ১০১ কোটি টাকা ব্যয়ে শীতলক্ষ্যার পূর্ব পাড়ে প্রায় ৫ হাজার হেক্টর জমি ঘিরে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ নির্মাণ করা হয়। নির্মাণ হওয়ার কয়েক বছরের মধ্যেই এ প্রকল্পের ভেতরে শুরু হয় জলাবদ্ধতা। জনবসতি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়তে থাকে জনদুর্ভোগও। 

স্থানীয়রা অভিযোগ করে বলেন, অগ্রণীর ভেতরে অপরিকল্পিতভাবে মিল-কারখানা গড়ে উঠে অগ্রণী পরিণত হয় আবাসিক ও শিল্প এলাকায়। সেই থেকে দুর্ভোগ বেড়ে চলেছে অগ্রণী এলাকার মানুষের। এ ছাড়া গত কয়েক বছরে সরকারদলীয় প্রভাবশালী নেতারা খালগুলো ভরাট করে মার্কেট, ঘরবাড়ি, দোকানপাটসহ বিভিন্ন স্থাপনা নির্মাণ করেছেন। এতে করে সামান্য বর্ষণ হলেই জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। এসব অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হলে এসব এলাকায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হতো না বলে মনে করেন স্থানীয়রা।

আতলাশপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মমিনুল ইসলাম বলেন, টানা বৃষ্টির পানিতে বিদ্যালয়ের মাঠ ডুবে গেছে। বিদ্যালয়ের কয়েকটি কক্ষেও পানি ঢুকে পড়েছে। এ অবস্থায় ক্লাস নিতে পারছি না। পানি সরে গেলে পরে ক্লাস শুরু করতে হবে।

গোলাকান্দাইর ইউনিয়ন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান নাছির উদ্দিন বলেন, আমার ইউনিয়নের সবচেয়ে বেশি মানুষের বসবাস ৫নং ক্যানেল ও নতুন বাজার এলাকাটি। এখানে বিভিন্ন শিল্প-কারখানার হাজার হাজার মানুষ বসবাস করেন। জলাবদ্ধতা ঠেকাতে আমরা বৃষ্টির আগেই পানি যাতায়াতের ক্যানেলগুলো পরিষ্কার করেছি। সকাল থেকেই পানি সরানোর কাজ করছি। ক্যানেল পরিষ্কার করা না হলে পানি স্থায়ী রূপ নিত।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার সাইফুল ইসলাম বলেন, আমি সবেমাত্র রূপগঞ্জ উপজেলায় ইউএনও হিসেবে যোগদান করেছি। যোগদানের পরেই উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় এলাকাবাসীর কাছ থেকে জলাবদ্ধতার বিষয়ে পরিদর্শন করে খোঁজখবর নিয়েছি। জলাবদ্ধতা নিরসনে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে কাজ চলমান রয়েছে।


সময়ের আলো/আরএস/





https://www.shomoyeralo.com/ad/1698385080Google-News-Update.jpg

সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সৈয়দ শাহনেওয়াজ করিম, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ
নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।

ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫ | ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com
close