ই-পেপার সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪
সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪

সাক্ষাৎকারে রিহ্যাব প্রেসিডেন্ট ও জাপান গার্ডেন সিটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. ওয়াহিদুজ্জামান
মানুষের নিরাপদ আশ্রয় নিশ্চিতে কাজ করছি
প্রকাশ: সোমবার, ৭ অক্টোবর, ২০২৪, ২:৩৩ এএম আপডেট: ০৭.১০.২০২৪ ২:৩৫ এএম  (ভিজিট : ৮৭)
জন্মগতভাবেই প্রত্যেক মানুষের একটি আবাসনের অধিকার রয়েছে। সংবিধান বলেই এটি একটি মৌলিকঅধিকার। সেই মৌলিক অধিকারকে ঘিরে প্রতি বছরের মতো এবারও পালন করা হচ্ছে বিশ্ব বসতি দিবস।এবারের প্রতিপাদ্য ‘তরুণদের সম্পৃক্ত করি, উন্নত নগর গড়ি’। বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেওযথাযোগ্য মর্যাদায় আজ দিবসটি পালিত হবে। এ দিবসকে ঘিরে সময়ের আলোর মুখোমুখি হয়েছেনদেশের আবাসন খাতের উদ্যোক্তাদের সংগঠন রিহ্যাব প্রেসিডেন্ট ও জাপান গার্ডেন সিটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. ওয়াহিদুজ্জামান। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন এসএম আলমগীর


সময়ের আলো : বিশ্ব বসতি দিবস সোমবার। মানুষের মৌলিক অধিকারের একটি আবাসন। সেই মৌলিক অধিকার পূরণে কাজ করছেন আবাসন খাতের উদ্যোক্তারা। এ শিল্পের মালিকদের সংগঠন রিহ্যাবের সভাপতি হিসেবে বিশ্ব বসতি দিবস উপলক্ষে আপনার অভিমত কী? 
মো. ওয়াহিদুজ্জামান : প্রথমত বিষয় হলো-আমরা যারা রিহ্যাবের সদস্য তারা বাংলাদেশের মানুষের আবাসনের সুব্যবস্থাপনা নিয়ে কাজ করি। দেশের মানুষের মাথা গোঁজার ঠাঁই করে দেওয়া এবং নিরাপদ আবাসন গড়ে দেওয়ার লক্ষ্যে রিহ্যাবের সদস্যরা ১৯৯১ সাল থেকে কাজ করে যাচ্ছে। আবাসন হচ্ছে সংবিধান স্বীকৃত ও জাতিসংঘের সনদের বিষয়টি উল্লেখ রয়েছে। প্রতিটি মানুষেরই একটি আশ্রয়ের জায়গার দরকার হয়, মাথা গোঁজার ঠাঁই লাগে। পৃথিবীর সৃষ্টিলগ্ন থেকেই এর চাহিদা। আর নিজস্ব একটি আবাসন বাস করলেই মানুষের বুদ্ধিবৃত্তিক বিকাশ ঘটে, মেধা-মনন গড়ে ওঠে। একটি আশ্রয়স্থল থাকলেই ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা করা যায়। আগামী দিনে কীভাবে ভবিষ্যৎ গড়া যাবে এবং চিন্তা-চেতনার কীভাবে বিকাশ ঘটবে-সেটা সম্ভব হবে একটি নিজস্ব আশ্রয়স্থল থাকলে। ভাসমান মানুষের ক্ষেত্রে সেটা সম্ভব হয় না। তাই বিশ্ব বসতি দিবস খুবই গুরুত্বপূর্ণ। জাতিসংঘের স্বীকৃত ও ঘোষিত একটি দিবস। এই দিনে আমাদের প্রত্যাশা থাকবে বাংলাদেশের প্রতিটি মানুষের জন্য যেন নিরাপদ আশ্রয় নিশ্চিত করা যায়। এ জন্য বাংলাদেশ সরকারের পাশাপাশি আমরা যারা প্রাইভেট খাতের উদ্যোক্তা আছি তারাও যেন দেশের মানুষের বাসস্থানের সুব্যবস্থা করতে পারি সে প্রত্যাশা করছি এবং আমাদের সর্বাত্মক প্রচেষ্টাও থাকবে। মানুষের জন্য নিরাপদ আবাসস্থল করতে যে প্রত্যয় ও প্রচেষ্টা সেটা যেন অব্যাহত থাকে তার জন্য প্রত্যেকে প্রত্যেকের জায়গা থেকে কাজ করতে হবে। আমরা যদি আরও উদার হয়ে কাজ করি তা হলে সবার জন্য বাসস্থানের সুব্যবস্থা করে দেওয়া সম্ভব। 

সময়ের আলো : দেশের মানুষের আবাসনের সুব্যবস্থা করতে রিহ্যাব সদস্যরা কতটা অবদান রাখছে?
মো. ওয়াহিদুজ্জামান : দেশের প্রতিটি মানুষের আবাসনের সুব্যবস্থা করার কথা যেহেতু সংবিধানে বলা আছে, সেহেতু সরকারকেই এ ক্ষেত্রে মূল দায়িত্ব পালন করতে হবে। তবে সরকারের একার পক্ষে সবার আবাসনের ব্যবস্থা করা সম্ভব না, এ জন্য এখানে এগিয়ে এসেছে আমাদের মতো বেসরকারি খাতের উদ্যোক্তারা। এ খাতের উদ্যোক্তারা হাজার হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছে মানুষের মাথা গোঁজার সুব্যবস্থা করে দিতে। আমরা শুধু যে একটা বিল্ডিং বা বাসা বানাচ্ছি তা কিন্তু নয়। এর সঙ্গে মানুষের আবেগ-ভালোবাসাসহ অনেক কিছু জড়িত। একটি বাসা করতে গেলে প্রায় ২০০টির অধিক লিংকেজ প্রতিষ্ঠান বা ব্যবসা জড়িত রয়েছে তাদের নিয়ে একটা বিরাট কর্মযজ্ঞ করতে হয়। দেশের জিডিপিতে আবাসন খাতের অবদান ১২ থেকে ১৫ শতাংশ। সুতরাং এই খাতকে অবহেলা করার কোনো সুযোগ নেই। বিশ্বের যেকোনো দেশে আবসান খাতে যদি সমস্যা দেখা দেয় বা এ খাতটি ক্ষতিগ্রস্ত হয় তা হলে ওই দেশের সামগ্রিক অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। কারণ এই একটি ব্যবসার সঙ্গে অনেক শিল্প জড়িত। হাজার হাজার মানুষের কর্মসংস্থান করে এই খাত। আমরা যারা এ খাতের উদ্যোক্তা-তারা যে শুধু নিজেদের আয়ের জন্য বা নিজে ভালো থাকার জন্য এ ব্যবসা করি তা কিন্তু না। দেশের মানুষের প্রতি আমাদের দায়বদ্ধতাও রয়েছে। আমরা রিহ্যাব সদস্যরা যেমন ব্যবসা করি তেমনি আমাদের অনেক সামাজিক দায়বদ্ধতাও রয়েছে।

সময়ের আলো : পদে পদে এ খাতের উদ্যোক্তাদের হোঁচট খেতে হয়। সরকারি অনেক সিদ্ধান্তও এ শিল্পের পথচলা কঠিন করে দিয়েছে অতীতে। এখন এ ধরনের কোনো প্রতিবন্ধকতা রয়েছে কি না?
মো. ওয়াহিদুজ্জামান : আসলে দেশের আবাসন ব্যবসা জটিলতায় পড়েছে ২০২২ সালে তৎকালীন সরকার যখন ডিটেইল এরিয়া প্ল্যান বা ড্যাপের গেজেট প্রকাশ করে, এরপর থেকেই। আগে হয়তো বিভিন্ন সময় অনেক সমস্যায় পড়তে হয়েছে, তবে ২০২২ সালের এই ড্যাপ আবাসন শিল্পের পথচলা খুবই কঠিন করে তুলেছে। এই সমস্যা থেকে উত্তরণে রিহ্যাবের বর্তমান পর্ষদ কাজ করছে। রিহ্যাবের প্রত্যেক সদস্যকে এই অবস্থা থেকে পরিত্রাণ দিতে কাজ করছি। বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গেও এ বিষয়ে আমরা কাজ করছি। এ সরকারের কাছেও আমরা বলেছি-ড্যাপকে সংশোধন করে যুগোপযোগী ও আবসান শিল্পবান্ধব আকারে চূড়ন্ত করতে। আমরা যাতে নিয়ম মেনে ঠিকমতো বাড়িঘর বানাতে পারি এবং ভূমির মালিকও যাতে তাদের জমির উন্নয়নে আবাসন খাতের উদ্যোক্তাদের পাশে এসে দাঁড়ায়। তাই বর্তমান সরকারের কাছে আমরা অনুরোধ জানাব-ড্যাপ যেন ব্যবসাবান্ধব করে চূড়ান্ত করে।

সময়ের আলো : আবাসন খাতের উচ্চ রেজিস্ট্রেশন ফিসহ আনুষঙ্গিক ব্যয় অনেক বেশি কি না?
মো. ওয়াহিদুজ্জামান : আবাসন খাতের রেজিস্ট্রেশন ফিসহ আনুষঙ্গিক ব্যয় এখনও অনেক বেশি আমাদের দেশে। এ জন্য চলতি অর্থবছরের বাজেটের আগেই রেজিস্ট্রেশন ফিসহ অন্যান্য চার্জ কমানোর প্রস্তাব দিয়েছিলাম। আবাসন খাতের রেজিস্ট্রেশন ফি সার্কভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি। রেজিস্ট্রেশন ফিসহ সবকিছু মিলে আমাদের দেশে ৩৩ শতাংশ ফি কর্তন করা হয়। ফ্ল্যাটের মূল্যের ওপরই এই হারে ফি কর্তন করা হয়। এত উচ্চহারে ফি দিয়ে কতজন লোক ফ্ল্যাট কিনতে পারবে। অথচ সার্কভুক্ত দেশগুলোতে রেজিস্ট্রেশনসহ সব ফি কর্তন করা হয় মাত্র ৭ থেকে ৮ শতাংশ। এই উচ্চ ফি কমিয়ে আনলে ক্রেতার যেমন সাশ্রয় হবে, তেমনি সরকারও লাভবান হবে। কারণ খরচ কমলে ফ্ল্যাট বিক্রি বাড়বে। এতে দেখা যাবে বেশি হারে ফি কর্তনের মাধ্যমে সরকার যত রাজস্ব পাবে তার চেয়ে বেশি রাজস্ব পাবে ফ্ল্যাট বিক্রির হার বাড়লে। অথচ রেজিস্ট্রেশন ফিসহ সব খরচ এমন পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে যে, ক্রেতারা ফ্ল্যাট কিনতে নিরুৎসাহিত হচ্ছেন।

সময়ের আলো : আবাসন খাতের উদ্যোক্তা বা ক্রেতারা কি ব্যাংক থেকে চাহিদা মতো বা সময়মতো সহযোগিতা পাচ্ছে?
মো. ওয়াহিদুজ্জামান : ব্যাংকিং খাতে সুশাসনের ব্যাপক অভাব দেখা দিয়েছে। এর জন্য দেশের সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে আমরা যারা উদ্যোক্তা তাদের সবাইকে ভুগতে হচ্ছে। তাই ব্যাংক খাতে সুশাসন ফিরিয়ে আনতে হবে। আসলে ব্যাংকিং খাতকে একেবারে ঢেলে সাজাতে হবে। এই খাতের অব্যবস্থাপনার কারণেই ব্যাংক ইন্টারেস্টের হার বেড়ে গেছে। আবাসন খাতের ক্রেতারা ব্যাংক থেকে যারা ঋণ নিয়ে ফ্ল্যাট কেনেন তাদের উচ্চ হারে সুদ দিতে হচ্ছে। তাই আমি মনে করি ব্যাংকিং খাত নিয়ে সরকারকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়ে সংকটগুলো সমাধান করা দরকার। আবাসন খাতের জন্য একটি বিশেষ তহবিলের দাবি জানিয়েছি আমরা। এই খাতের জন্য হোম লোন স্কিম চলু ছিল। এখান থেকে ঋণ নিয়ে মধ্যবিত্ত বিশেষ করে যারা ফিক্সড ইনকামের লোক তারা ঋণ নিয়ে ফ্ল্যাট কিনতেন। এখান থেকে স্বল্পসুদে দীর্ঘমেয়াদি ঋণ নিতে পারতেন তারা। এক হাজার কোটি টাকার একটি ফান্ড ছিল ওই হোম লোন স্কিমের জন্য। পরে সেটি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। আবারও আমরা এক হাজার কোটি টাকার ওই ফান্ড চালুর দাবি জানিয়েছি।

সময়ের আলো : আবাসন খাতের বর্তমান অবস্থা কেমন?
মো. ওয়াহিদুজ্জামান : আসলে ২০২০-২২ সালের মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত করোনার ধাক্কা গেছে। এরপর ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ, ফিলিস্তিন-ইসরাইল যুদ্ধের কারণে বিশ্বব্যাপী একটি অস্থিরতা চলছে। এর নেতিবাচক প্রভাব আমাদের আবাসন শিল্পের ওপরও পড়েছে। বলা যায়, এই খাতটি লম্বা একটা ক্রান্তিকাল পাড়ি দিয়ে এসেছে। সেই অবস্থা থেকে এখন আমরা ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টায় আছি। এ অবস্থায় আবাসন খাতকে আরও মজবুত অবস্থায় নিতে সরকারের সহযোগিতা প্রয়োজন। বিশেষ করে ড্যাপের মাধ্যমে যে নতুন বিধিবিধান তৈরি করা হচ্ছে সেগুলো আবাসন খাতের ঘুরে দাঁড়ানোর পথে বাধার সৃষ্টি করছে। তাই আমি মনে করি ড্যাপের সংশোধনী প্রয়োজন। এতে ফারের যে বিধান রাখা হয়েছে সেটিই এখন আবাসন খাতের বড় বাধা। ফারের বৈষম্যের কারণে কোনো এলাকায় দশ তলা বিল্ডিং করছে, আবার কোনো এলাকায় চার-পাঁচ তলার বেশি বিল্ডিং করা যাচ্ছে না। এই বৈষম্যকে দূর করা দরকার। তা না হলে আগামী দিনে আবসান খাতের উদ্যোক্তাদের ব্যবসা করা দুষ্কর হয়ে পড়বে এবং দেশের আবাসন খাতও বেশ সংকটে পড়বে।

সময়ের আলো : প্রতি বছর রিহ্যাব মেলার আয়োজন করেন আপনারা। সামনে শীতকাল আসছে। এবারের মেলার প্রস্তুতি সম্পর্কে যদি কিছু বলেন
মো. ওয়াহিদুজ্জামান : এবারের শীতকালীন রিহ্যাব মেলা আমরা আগামী ডিসেম্বরে আয়োজন করব বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে। এবারের মেলাকে ঘিরে আমরা ইতিমধ্যেই প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছি। গত শনিবারই রিহ্যাবের ফেয়ার স্ট্যান্ডিং কমিটির বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। মেলাকে ঘিরে কর্মপরিকল্পনা কি হবে-সে বিষয়ে আমরা আলোচনা করেছি। আবাসন খাতের উদ্যোক্তাদের প্রতি আমি আহ্বান জানাব-রিহ্যাবের সব সদস্য যেন এবারের মেলায় অংশ নেয় এবং মেলাকে প্রাণবন্ত করে তোলে।


সময়ের আলো/আরএস/





https://www.shomoyeralo.com/ad/1698385080Google-News-Update.jpg

সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সৈয়দ শাহনেওয়াজ করিম, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ
নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।

ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫ | ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com
close