ই-পেপার সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪
সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪

সবার জন্য বসতি
প্রকাশ: সোমবার, ৭ অক্টোবর, ২০২৪, ২:১২ এএম  (ভিজিট : ৬৬)
বিশ্বের অষ্টম জনবসতিপূর্ণ দেশ বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান সমস্যা হলো বসতি। জনসংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে বাসস্থানের চাহিদাও বেড়ে চলেছে। তবে আবাসনের চাহিদা ও সরবরাহের মধ্যে আছে বিশাল ফারাক। এর পেছনে মূল কারণ হলো, জমির মূল্য ও আবাসন নির্মাণ ব্যয়ের অস্বাভাবিক বৃদ্ধির ফলে সব শ্রেণি-পেশার মানুষের পক্ষে সাশ্রয়ী মূল্যে আবাসন কেনা বা ভাড়া নেওয়া সম্ভব হয়ে ওঠে না। তাই বাধ্য হয়ে সাধারণ মানুষ স্বাস্থ্যকর আবাসনের বিষয়টিতে ছাড় দিয়ে চলেছে যার প্রকৃষ্ট উদাহরণ ঢাকাসহ বিভাগীয় ও উপজেলা শহরগুলোতে প্রতিনিয়ত বৃদ্ধি পাচ্ছে বস্তির পরিমাণ। নিতান্ত বাধ্য হয়ে নিম্ন আয়ের মানুষ বাস করছে সেই অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে। অথচ আবাসন মানুষের মৌলিক চাহিদা যা পূরণ করার জন্য আমাদের সংবিধানে সুনির্দিষ্ট আইন রয়েছে, সে আইনের অধীনে রয়েছে বহু নীতিমালা।

জাতীয় আবাসন নীতিমালা, ২০১০-এর বর্ণিত তথ্য অনুযায়ী, সরকারের মূল লক্ষ্য হলো ২০৩০ সালের মধ্যে সবার জন্য নিরাপদ, সুবিধাজনক এবং সাশ্রয়ী আবাসন নিশ্চিত করা। বাংলাদেশে সাশ্রয়ী আবাসন নিশ্চিত করার জন্য সরকার বিভিন্ন নীতিমালা ও তথ্য প্রকাশ করেছে। এর মধ্যে রয়েছে : জাতীয় আবাসন নীতিমালা, ২০১০ : এই নীতিমালা অনুসারে, সরকারের লক্ষ্য হলো ২০৩০ সালের মধ্যে সবার জন্য নিরাপদ, সুবিধাজনক এবং সাশ্রয়ী আবাসন নিশ্চিত করা। এই নীতিমালার কিছু মূল দিক হলো : আবাসনকে একটি মৌলিক মানবাধিকার হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া, আবাসনের চাহিদা ও সরবরাহের মধ্যে ব্যবধান কমানো, সাশ্রয়ী আবাসনের সুযোগ বৃদ্ধি করা ও বস্তিবাসীদের পুনর্বাসন। 

বস্তিবাসীর সাধারণ সমস্যাগুলোর মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য হলো বাসস্থানের  অনিশ্চয়তা, নিরাপত্তাহীনতা ও জনবহুলতা। জীবনযাত্রার সাধারণ যে চাহিদা তা নিশ্চিত করা তো দূরের কথা সেখানকার পরিবেশ নিতান্তই অস্বাস্থ্যকর ও অনিরাপদ। তারা সাধারণত টিনের শিট, কাঠ বা বাঁশ দিয়ে তৈরি এক তলা বাড়িতে বাস করে। এই বাড়িগুলো প্রায়ই ছোট এবং অন্ধকার যেখানে পর্যাপ্ত বায়ু চলাচল এবং আলোর ব্যবস্থাও নেই। তারা সাধারণ স্বাস্থ্যসেবা ও শিক্ষা থেকেও বঞ্চিত। এ ধরনের পরিবেশে থাকতে থাকতে মানুষের মাঝে যে বঞ্চনার মনোভাব তৈরি হয় তা অনেক সময়ই তাকে অপরাধ প্রবণতার দিকে ধাবিত করে ফেলে। এ কারণেই বস্তি এলাকাগুলোতে অপরাধ প্রবণতা খুব সাধারণ একটি বিষয়। এ অপরাধ কার্যক্রমের প্রভাব শুধু বস্তি এলাকা না পুরো সমাজেই পড়ে। সুতরাং সামাজিক জীবনে বসতির ভূমিকা আরও বিশদে বলতে গেলে মানসম্পন্ন বসতি সুবিধার গুরুত্ব অপরিসীম। এ জায়গায় এসে পরিকল্পনাবিদ ও স্থপতিদের একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা আছে।

বিশ্বের বিশেষ করে এশিয়ার দেশগুলোর উদাহরণ যদি আমরা দেখি, তা হলে সাশ্রয়ী আবাসন প্রকল্পের প্রচুর উদাহরণ দেখতে পাই। এ ক্ষেত্রে পরিকল্পনা মাথায় রাখতে হবে সাশ্রয়ী আবাসনের স্থানিক অবস্থান। এটি সম্পূর্ণই চাহিদার ওপর নির্ভর করে। যেমন ইপিজেড এলাকাগুলোতে শ্রমিকদের জন্য বিপুলসংখ্যক আবাসনের প্রয়োজন হয়। সেখানে একটি পরিকল্পিত সাশ্রয়ী আবাসনের ব্যবস্থা করা অত্যন্ত জরুরি। এ ক্ষেত্রে মোংলা পৌরসভার উদাহরণ দেওয়া যেতে পারে। মোংলা ইপিজেডের শ্রমিকদের আবাসন চাহিদা পূরণে সরকারের তেমন নীতিমালা বা প্রকল্প হাতে না থাকায় স্থানীয় জনগণ তাদের নিজস্ব মালিকানাধীন পুকুর ভরাট করে ছোট ইউনিটের বাড়ি বানিয়ে ভাড়া দেওয়া শুরু করে। 

বিগত দশ বছর ধরে এই কার্যক্রম চলে আসতে থাকে। এর ফলে বর্তমানে মোংলায় সুপেয় পানির অভাব প্রকট আকার ধারণ করেছে। কারণ জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে পশুর নদীর পানির লবণাক্ততা বেড়ে গেছে বহুগুণ। ইপিজেডকে কেন্দ্র করে একটি পরিকল্পিত আবাসনের ব্যবস্থা যদি করা যেত তবে খুব পরিবেশগত এ বিপর্যয়ের এ খড়গ মোংলাবাসীকে অতটা পোহাতে হতো না। ঢাকার আশপাশে প্রচুর পরিমাণে গার্মেন্ট ফ্যাক্টরি রয়েছে। কিন্তু তাদের আবাসন সংকুলানের জন্য তেমন কোনো ব্যবস্থা না থাকায় বাধ্য হয়েই তাদের স্বল্পমূল্যের আবাসন বা বস্তি এলাকাগুলোতে ঘর ভাড়া করে থাকতে হচ্ছে। নারী শ্রমিকরা সারা দিন বাইরে থাকার দরুন তাদের সন্তানদের স্থানীয় মাদরাসাগুলোতে দিতে বাধ্য হচ্ছে। এসব মাদরাসা সরকার কর্তৃক সনদপ্রাপ্ত না হওয়ায় প্রায়শই নানা অনিয়মের খবর সামনে চলে আসে যা মধ্যে অন্যতম হলো শিশু নির্যাতন। সুতরাং আবাসনের চাহিদা মেটানোর সঙ্গে কতগুলো বিষয় জড়িত এটি সহজেই অনুমেয়।

এ ক্ষেত্রে সরকারকে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিতে হবে। তাদের আবাসন বরাদ্দ কীভাবে হবে, ভাড়া বাড়ি হবে নাকি সহজ শর্তে ঋণ প্রদানের মাধ্যমে তারা সে বাড়ির মালিক হবে এসব পরিকল্পনা ও নীতিমালা সরকারের পক্ষে থেকে আসতে হবে।

এ ধরনের আবাসন প্রকল্পে জমির প্রয়োজন আবার আমাদের এই ছোট্ট ব-দ্বীপে জমির পরিমাণও কম। এ ক্ষেত্রে স্থপতি ও প্রকৌশলীদের এগিয়ে আসতে হবে। উন্নত বিশ্বের বিশেষ করে এশিয়ার উন্নত দেশপগুলোর সাশ্রয়ী আবাসন প্রকল্পগুলো যদি দেখা যায় তবে দেখব সেগুলো সুউচ্চ ও ছোট ইউনিট সম্পন্ন। আমাদের এদিকে নজর দেওয়ার সময় এসেছে। বলা ভালো পেরিয়ে যাচ্ছে সময়। একটি সাশ্রয়ী আবাসন নকশার ক্ষেত্রে প্রথমেই মনে রাখতে হবে স্বল্প খরচের আবাসনের কথা। সেখানে সস্তা ও টেকসই উপকরণ ব্যবহার করতে হবে। ভবনের মূল কাঠামো টেকসই করে অভ্যন্তরীণ দেয়ালে ব্যবহার করা যেতে পারে ভিন্ন নির্মাণ উপকরণ। উদাহরণস্বরূপ একেবারে প্রথমদিকে সিঙ্গাপুরে এ ধরনের আবাসনে পার্টিশন দেওয়ার জন্য এমনকি বাইরের দেয়ালেও ঢেউটিন ব্যবহার করা হতো। তারা সবার আগে আবাসনের চাহিদা মেটানোর বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। সেখানে প্রাকৃতিক আলো-বাতাসের সুবিধা নিশ্চিত করেছে। কিন্তু ব্যয়বহুল উপাদানের দিকে যায়নি। আমাদেরও এভাবে ভাবতে হবে। কারণ একটি দেশে বা সমাজে শুধু একশ্রেণির মানুষই সব সুবিধা পেয়ে এলে সামাজিক বৈষম্য সমাজে এমন এক অরাজকতার জন্ম দেয় যা পরবর্তীতে সমাজকে অন্ধকারের দিকে ঠেলে দেয়।

তাই এ কথা সহজেই অনুমেয় যে সাশ্রয়ী আবাসন এখন সময়ের দাবি। এ ক্ষেত্রে সর্বাগ্রে এগিয়ে আসতে হবে সরকারকে। সরকারের সদিচ্ছাই পারে আবাসন সমস্যার সমাধানে অগ্রণী ভূমিকা রাখতে। আর এ সংশ্লিষ্ট পেশাজীবীদের হতে হবে যথেষ্ট সংবেদনশীল। একজন পরিকল্পনাবিদ, একজন স্থপতি বা একজন প্রকৌশলী সবাকেই মাথায় রাখতে হবে এ আবাসনের সুবিধাভোগী ও তাদের অর্থনৈতিক অবস্থার বিষয়টি। সঙ্গে নিশ্চিত করতে হবে সব নাগরিক সুবিধা। সবার জন্য বসতি নিশ্চিত করলে তবেই আমরা একটি সাম্যময় সমাজের আশা করতে পারি।



স্থপতি


সময়ের আলো/আরএস/





https://www.shomoyeralo.com/ad/1698385080Google-News-Update.jpg

সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সৈয়দ শাহনেওয়াজ করিম, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ
নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।

ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫ | ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com
close