ই-পেপার সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪
সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪

ভবদহের জলাবদ্ধতা
কৃষি ও মৎস্য খাতে ক্ষতি ১২৯ কোটি টাকা
প্রকাশ: সোমবার, ৭ অক্টোবর, ২০২৪, ১:৩৪ এএম  (ভিজিট : ৫০)
সম্প্রতি দুই দফা টানা বৃষ্টিপাত ও নদ-নদীর পানি ঢুকে পড়ায় যশোরের অভয়নগরে ভবদহ এলাকায় ব্যাপক জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। এ জলাবদ্ধতায় কৃষি ও মৎস্যে প্রায় ১২৯ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। ১ হাজার ৮২৬ হেক্টর জমির ধান ও ১৪৭ হেক্টর জমির সবজি সম্পূর্ণ নষ্ট হয়ে গেছে। ভেসে গেছে ছোট-বড় ৪ হাজার ৯শ মাছের ঘের। পানিবাহিত বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক ও ঘের মালিকরা। 

উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, দুই দফা টানা বৃষ্টির কারণে অভয়নগরের ভবদহ অঞ্চলে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। এই জলাবদ্ধতার কারণে উপজেলার প্রেমবাগ ইউনিয়নে ৫৩৩ হেক্টর জমির আমন ধান ও ৪৭ হেক্টর জমির সবজি নষ্ট হয়েছে। সুন্দলী ইউনিয়নে ৮৩৫ হেক্টর জমির আমন ধান ও ১৯ হেক্টর জমির সবজি পানির নিচে তলিয়ে থাকা অবস্থায় পচতে শুরু করেছে। চলিশিয়া ইউনিয়নে ৬০ হেক্টর জমির আমন ধান ও ২৮ হেক্টর সবজি ক্ষেত নষ্ট হয়ে গেছে। পায়রা ইউনিয়নে ৮৮ হেক্টর জমির আমন ধান ও ১৫ হেক্টর জমির সবজি ক্ষেত এখনও পানির নিচে তলিয়ে রয়েছে।

এ ছাড়া উপজেলা পর্যায়ে ১৪ হেক্টর জমির গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ ও ৫ হেক্টর জমির কাঁচামরিচ নষ্ট হয়েছে। নওয়াপাড়া পৌর এলাকার ৩১০ হেক্টর জমির আমন ধান ও ২০ হেক্টর জমির সবজি ক্ষেত ক্ষতি হয়েছে। সব মিলিয়ে ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ৩৮ কোটি ৩৬ লাখ টাকা। 

উপজেলা মৎস্য অফিস সূত্রে জানা গেছে, জলাবদ্ধতার কারণে ভেসে যাওয়া ৪ ইউনিয়নের পুকুর, দীঘি ও খামারের সংখ্যা ১ হাজার ২৫০টি। ক্ষতিগ্রস্ত মাছের ঘেরের সংখ্যা ৩ হাজার ৬৫০টি। যার ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ৯০ কোটি ৮৬ লাখ টাকা।

চলিশিয়া ইউনিয়নের কোটা গ্রামের মৎস্যঘের মালিক কামরুজ্জামান তরফদার বলেন, কোটা গ্রামের চাতরা বিলে ২টি ও সুন্দলী ইউনিয়নে ৩টি মাছের ঘের রয়েছে তার। এ ৫টি ঘেরের জমির পরিমাণ ১১০ বিঘা। ঘেরগুলো থেকে প্রায় সাড়ে ৫ কোটি টাকার মাছ ভেসে গেছে। এছাড়া ঘেরপাড়ের সবজি ক্ষেতও নষ্ট হয়েছে। এ ক্ষতি মেনে নিতে কষ্ট হচ্ছে। জলাবদ্ধতার স্থায়ী সমাধান না হলে প্রতি বছর আমার মতো অসংখ্য ঘের মালিক ও কৃষক চাষাবাদ ছেড়ে অন্য ব্যবসা করতে বাধ্য হবেন। 

উপজেলার গুয়াখোলা গ্রামের কৃষক মহর আলী বলেন, বাড়ির পাশে ৬ বিঘা (৪২ শতক) জমিতে আমন ধান রোপণ করা হয়েছিল। দুই দফা টানা বৃষ্টিপাতের কারণে সৃষ্ট জলাবদ্ধতায় ধানগাছ মরতে শুরু করেছে। এনজিও থেকে নেওয়া ঋণের টাকা পরিশোধ করব কিভাবে। 

এ ব্যাপারে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা লাভলী খাতুন বলেন, ‘অভয়নগরের ভবদহ অঞ্চলের ৪টি ইউনিয়ন ও নওয়াপাড়া পৌরসভার কয়েকটি ওয়ার্ডে জলাবদ্ধতার কারণে কৃষিতে ব্যাপক ক্ষতি রয়েছে। গত মৌসুমে আমন ধানের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হলেও এবার জলাবদ্ধতার কারণে তা সম্ভব হবে না। কারণ ৭ হাজার ৬৪০ হেক্টর জমিতে আবাদ করা আমন ধানের মধ্যে ১ হাজার ৮২৬ হেক্টর জমির ধান নষ্ট হতে শুরু করেছে। তিনি আরও বলেন, চরম এ ক্ষতি পুষিয়ে নিতে সরকারিভাবে ৪৭৫ জন কৃষককে বিনামূল্যে টমেটো, বেগুন, শিম, লাউ, মিষ্টিকুমড়া, লাল শাক, গিমা কলমি শাকের বীজ ও নগদ এক হাজার করে টাকা ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকের কাছে মোবাইল ব্যাংকিং অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে দেওয়া হবে।’ 

উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা মো. আমিনুল হক বলেন, ‘চলতি মাসের প্রথম দিকে বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট লঘুচাপ ও ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের ভারি বৃষ্টিসহ নদ-নদীর পানি বেড়ে যাওয়ার কারণে অভয়নগরে মাছের ঘের মালিকরা ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। পায়রা, চলিশিয়া, সুন্দলী ও প্রেমবাগ ইউনিয়নসহ নওয়াপাড়া পৌর এলাকার ১ হাজার ২৫০টি পুকুর, দীঘি ও খামারের মাছ ভেসে গেছে। 

এছাড়া ৩ হাজার ৬৫০টি ছোট-বড় মাছের ঘেরের একই অবস্থা হয়েছে। সবমিলিয়ে ক্ষতির পরিমাণ ৯০ কোটি ৮৬ লাখ টাকা। এ বিষয়ে একটি প্রতিবেদন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নিকট পাঠানো হয়েছে। তাদের নির্দেশনা মোতাবেক পরবর্তী করণীয় গ্রহণ করা হবে।’


সময়ের আলো/আরএস/






https://www.shomoyeralo.com/ad/1698385080Google-News-Update.jpg

সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সৈয়দ শাহনেওয়াজ করিম, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ
নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।

ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫ | ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com
close