ই-পেপার সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪
সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪

রেল বাণিজ্য
ঠিকাদার চাচার আনুকূল্যে হাজার কোটির মালিক
প্রকাশ: সোমবার, ৭ অক্টোবর, ২০২৪, ১:২৯ এএম  (ভিজিট : ১২২)
বরিশাল সদর উপজেলার চর্বারিয়া ইউনিয়নের বাটনা গ্রামের কৃষক আবদুল মান্নান হাওলাদারের ছেলে সালাউদ্দিন রিপন। স্বরূপকাঠির নেছারাবাদ মাদরাসায় লেখাপড়া শেষে এলাকায় দিয়েছিলেন মুরগির ফার্ম। তাতে লাভবান না হলে ২০০৫ সালে ঢাকায় পাড়ি জমান। 

সেখানে তার চাচা বাংলাদেশ রেলওয়ের ঠিকাদার রফিকুল ইসলামের কাজ দেখাশোনা শুরু করেন। এরপর ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসলে ২০১৪ সালের মধ্যেই কয়েকশত কোটি টাকার মালিক হয়ে যান সালাউদ্দিন রিপন। 

আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা উপ-কমিটির সদস্যপদ নিয়ে ফিরে আসেন বরিশালে। নিজ নামে গঠন করেন সালাউদ্দিন রিপন (এসআর) সমাজকল্যাণ সংস্থা। ২০১৪ সাল থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত ওই সংস্থা থেকে কোটি কোটি টাকা বিলাতে থাকেন বরিশাল সদর উপজেলা ও সিটি করপোরেশনের বাসিন্দাদের মধ্যে। ২০১৮ সালে সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন না পেয়ে নিরাশ হলেও দমে যাননি। ২০১৮ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত রিপন তার সংস্থার মাধ্যমে অর্থ বিলান। 

২০২৪ সালের ৭ জানুয়ারির নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চেয়ে বঞ্চিত হলেও স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে সংসদ সদস্য পদে নির্বাচন করেন। ওই নির্বাচনে তিনি শত কোটি টাকার ওপরে খরচ করলেও পরাজিত হন আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী জাহিদ ফারুক শামীমের কাছে। 

এর পরপরই তিনি উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে তার চাচা স্কুল শিক্ষক আবদুল মালেক হাওলাদারকে বরিশাল সদর উপজেলা চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করান। বিপুল অর্থ খরচ করে রিপন তার চাচাকে নির্বাচনে বিজয়ী করিয়েছেন। বরিশালে চাউর রয়েছে, ওই নির্বাচনে তার চাচার জন্য প্রতিটি ভোট ৫ হাজার টাকায় কিনেছেন রিপন। তবে ৫ আগস্টের পর থেকে খোঁজ নেই সালাউদ্দিন রিপনের। তার নামে প্রতিষ্ঠিত সংস্থারও কোনো কার্যক্রম নেই বরিশাল সদর উপজেলা ও সিটি করপোরেশনে। সামান্য মুরগি ব্যবসায়ী থেকে হাজার কোটি টাকার মালিক বনে যাওয়া সালাউদ্দিন রিপন এখন কোথায় রয়েছেন, এই প্রশ্ন এখন জনমনে। বরিশাল সদর উপজেলার চরবাড়িয়া ইউনিয়নের ১ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য হাফিজুর রহমান বলেন, রিপনের বাড়ি এবং আমার বাড়ি পাশাপাশি। তার বাবা আবদুল মান্নান হাওলাদার কৃষিকাজ করতেন। রিপন নিশারাবাদ মাদরাসার লেখাপড়া করে বাড়িতে একটি মুরগির ফার্ম দিয়েছিলেন। এরপর আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসলে ২০০৯ সালের দিকে তিনি তার চাচার রফিকুল ইসলামের সঙ্গে ঢাকায় পাড়ি জমান। পরবর্তীতে দেখি তিনি হাজার কোটি টাকার মালিক। বরিশাল সদর উপজেলা ও সিটি করপোরেশনে কয়েকশত কোটি টাকা বিলিয়েছেন। এ টাকার উৎস কোথায়? তা আমাদের কারওই জানা নেই। মূলত রিপনের পুরো জীবন রহস্যেঘেরা।

২০২৪ সালের ৭ জানুয়ারির নির্বাচনে সালাউদ্দিন রিপনের দেওয়া হলফনামায় দেখা যায়, তার ঢাকা, বরিশাল ও নারায়ণগঞ্জে ৪৪৯.৩২ শতাংশ জমি রয়েছে। তিনি ওই জমির বাজার মূল্য দেখিয়েছেন ৪১ কোটি ১৮ লাখ ৮২ হাজার ৫৮৩ টাকা। তবে ওই জমির বর্তমান মূল্য ৫০০ কোটি টাকারও বেশি বলে তার ঘনিষ্ঠজনরা জানিয়েছেন। রিপন তার হলফ নামায় উল্লেখ করেছেন ঢাকা ও চট্টগ্রামে তার চারটি ফ্ল্যাট রয়েছে যার মূল্য প্রায় ৫ কোটি টাকা। তবে ওই ফ্ল্যাটের বর্তমান বাজার মূল্য তার তিনগুণেরও বেশি। সালাউদ্দিন রিপন তার নিজ ও স্ত্রীর নামে সঞ্চয়পত্র এবং এফডিআর দেখিয়েছেন ২০ কোটি টাকার বেশি। এ ছাড়া ব্যবসা থেকে তিনি ও তার স্ত্রীর বার্ষিক আয় দেখিয়েছেন প্রায় দেড় কোটি টাকা। তবে তিনি ও তার স্ত্রী কি ব্যবসা করেন তা হলফনামার কোথাও উল্লেখ করেননি। 

বরিশাল সদর উপজেলার চর্বারিয়া ইউনিয়নের বাটনা গ্রামে সালাউদ্দিন রিপনের দাদার নামে করা ধলু হাওলাদার বাড়িতে দেখা যায়, সেখানে প্রায় ১০ শতক জমির ওপর দুই তলা ভবন, যেটি এস আর সমাজ কল্যাণ সংস্থার কার্যালয় হিসেবে ব্যবহার হয়। ওই এলাকায় তিনি মেসার্স হাওলাদার ব্রিকস নামের ইটভাটা করেছেন, যা তার বড় ভাই সালাউদ্দিন বিপ্লব পরিচালনা করছেন। ওই ইটভাটা ঘিরে কয়েক একর জমি কিনেছেন তিনি। 

রিপনের প্রতিবেশী শহিদুল ইসলাম জানান, ঢাকা থেকে বরিশালে এসে রিপন নিজেকে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা পরিচয় দিতেন। যখন আসতেন তখন সঙ্গে অন্তত চার পাঁচটি দামি গাড়িও থাকত। ২০১৪ থেকে ২০২৪ সালের ৫ আগস্টের পূর্ব পর্যন্ত তিনি কয়েকশত কোটি টাকা বিলিয়েছেন সংসদ সদস্য হওয়ার আশায়। কিন্তু ৫ আগস্টের পর তিনিসহ তার পরিবারের কোনো হদিস নেই।
এ বিষয়ে রিপনের ব্যক্তিগত দুটি নম্বরে ফোন দিলে বন্ধ পাওয়া যায়। গ্রামের বাড়ি বাটনায় গিয়ে তার ভাই বিপ্লবেরও কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি। তার চাচা সদ্য সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আবদুল মালেক হাওলাদারের নগরীর বাটারগলি বাসভবনে গেলে তিনি এ বিষয়ে কোনো কথা বলতে রাজি হননি। 

সচেতন নাগরিক কমিটি (সনাক) বরিশাল শাখার সভাপতি অধ্যক্ষ গাজী জাহিদ হোসেন বলেন, রিপনের চাচা সদ্য সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আবদুল মালেক হাওলাদারকে আমি চিনি। তিনি একজন স্কুল শিক্ষক ছিলেন। যখন আমি শুনেছি সদর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে তিনি অংশগ্রহণ করেছেন এবং বিজয়ী হয়েছেন তখন বিস্মিত হয়েছি। ওই নির্বাচনে তাকে কোটি কোটি টাকা ব্যয় করতে হয়েছে। আমরা যখন বিষয়টি নিয়ে অনুসন্ধান করলাম তখন জানতে পেরেছি তার ভাইয়ের ছেলে রিপন তার নির্বাচনি সব ব্যয় বহন করেছেন। পরবর্তীতে আরও জানতে পারি রিপনের নিজের নামে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন রয়েছে যা থেকে তিনি কোটি কোটি টাকা বিলিয়ে থাকেন। বিষয়টি অত্যন্ত বিস্ময়ের। একজন মানুষ ক্ষুদ্র ব্যবসা থেকে হঠাৎ কিভাবে কোটি কোটি টাকার মালিক হন, তা অবশ্যই তদন্ত করা উচিত। এখানে নিশ্চিত দুর্নীতি রয়েছে। তদন্ত করলেই আসল সত্য বেরিয়ে আসবে।



সময়ের আলো/আরএস/





https://www.shomoyeralo.com/ad/1698385080Google-News-Update.jpg

সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সৈয়দ শাহনেওয়াজ করিম, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ
নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।

ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫ | ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com
close