ই-পেপার রোববার ৬ অক্টোবর ২০২৪
রোববার ৬ অক্টোবর ২০২৪

প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সংলাপ
বিএনপি চাইল রোডম্যাপ, সংস্কারে জোর জামায়াতের
প্রকাশ: রবিবার, ৬ অক্টোবর, ২০২৪, ২:২২ এএম  (ভিজিট : ১৪২)
প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সংলাপ করেছে বিএনপি, জামায়াতসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল। বিএনপি অবিলম্বে নির্বাচন কমিশন গঠন করে নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণার দাবি জানিয়েছে। আর জামায়াত জোর দিয়েছে রাষ্ট্র সংস্কারে। আগে সংস্কার পরে নির্বাচন চান দলটির নেতারা।

শনিবার বিকালে রাজধানীর হেয়ার রোডে প্রধান উপদেষ্টার সরকারি বাসভবন যমুনায় এ সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়। সেখান থেকে বের হয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন দলের নেতারা। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, নির্বাচন কমিশন নিয়োগ আইন স্থগিত করে প্রধান রাজনৈতিক দলের ঐকমত্যের ভিত্তিতে অনতিবিলম্বে নির্বাচন কমিশন গঠন করতে হবে। আমরা একটা রোডম্যাপ দিতে বলেছি। নির্বাচন কমিশন কবে নির্বাচন করবে সে ব্যাপারে একটা রোডম্যাপ দিতে বলেছি। ইউনূসের সঙ্গে সংলাপ শেষে বিএনপির এই নেতা বলেন, প্রধান উপদেষ্টা আমাদের বলেছেন, নির্বাচন অনুষ্ঠান উনাদের এক নম্বর অগ্রাধিকার।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, বিতর্কিত কোনো ব্যক্তি যাতে নির্বাচন সংস্কার কমিশনে না যায়, সে কথা আমরা প্রধান উপদেষ্টাকে বলেছি। আমরা ফ্যাসিস্ট সরকারের ভুয়া ভোটে নির্বাচিত সব ইউনিয়ন পরিষদ বাতিল করতে বলেছি। ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ সালে যেসব প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং কমিশনারদের আইনের আওতায় আনার কথা বলেছি।

তত্ত্বাবধায়ক সরকার অসাংবিধানিক উল্লেখ করে রায় দেওয়ার কারণে অবসরপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি এবিএম খায়রুল হকের বিরুদ্ধে ‘রাষ্ট্রদ্রোহের’ অভিযোগ আনার দাবিও জানিয়েছে বিএনপি। ফখরুলের অভিযোগ, বিচারপতি খায়রুলই ‘সংবিধান ধ্বংস ও তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতি বাতিলের ‘মূল হোতা’। প্রশাসনে ‘ফ্যাসিবাদের অনেক দোসর’ কর্মরত আছেন অভিযোগ করে তাদের অপসারণ, ডিসি নিয়োগে নতুন ফিট লিস্ট এবং যেসব ডিসির বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে তাদের নিয়োগ বাতিল, আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ের চুক্তিভিত্তিক সব নিয়োগ বাতিলের দাবি তোলার কথাও জানান বিএনপি মহাসচিব। সাবেক মন্ত্রীরা দেশ ছেড়ে চলে যাচ্ছেন উল্লেখ করে বিএনপি নেতা বলেন, কীভাবে পালিয়ে যাচ্ছে, কার সহযোগিতায় পালাচ্ছে, এই বিষয়গুলো দেখার জন্য বলেছি। ২০০৭ সালে থেকে শেখ হাসিনার শাসনামলে সব মিথ্যা, ‘গায়েবি’ মামলা প্রত্যাহারের জন্য নীতিগত সিদ্ধান্ত ঘোষণা ও প্রত্যাহারের ব্যবস্থা গ্রহণের কথা বলেছি।

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর তৃতীয় দফা সংলাপ এটি। সর্বশেষ গত ৩১ আগস্ট রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে মতবিনিময় করেন ইউনূস। বেলা আড়াইটা থেকে এক ঘণ্টা ফখরুলের নেতৃত্বে ছয় সদস্যের প্রতিনিধি দল হেয়ার রোডে প্রধান উপদেষ্টার সরকারি বাসভবনে সংলাপ করে। সংলাপে বিএনপির প্রতিনিধি দলের ছিলেন-স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মির্জা আব্বাস, আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান ও সালাহউদ্দিন আহমেদ। এক ঘণ্টা বৈঠকের পর জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে সংলাপ শুরু হয়।

নির্বাচনের আগে সংস্কার বেশি গুরুত্বপূর্ণ বলে মন্তব্য করে জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, জামায়াত সরকারকে দুটি রোডম্যাপ দিয়েছে। একটি সংস্কারের, অন্যটি নির্বাচনের। ভোটের আগে সংস্কার চায় জামায়াত। আগে সংস্কার, পরে নির্বাচন। এ জন্য অনেক প্রস্তাব দিয়েছে জামায়াত। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাতে যেসব সংস্কার প্রস্তাব উপস্থাপন করা হয়েছে এবং যেসব পরামর্শ রয়েছে তা ৯ অক্টোবর জাতির সামনে উপস্থাপন করা হবে বলে জানান জামায়াতে ইসলামীর আমির।

শফিকুর রহমান বলেন, এই অন্তর্বর্তী সরকার দেশ শাসনের জন্য আসেনি, তারা একটা ভোটের পরিবেশ তৈরির জন্য এসেছে। তাদের নানা রকম সংস্কারের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। জামায়াতের পক্ষ থেকে ৯ অক্টোবর রাষ্ট্র সংস্কারের রূপরেখা তুলে ধরা হবে। নির্বাচন থেকে সংস্কার বেশি গুরুত্বপূর্ণ। এই সরকারকে নিরপেক্ষ থেকে একটি ভালো নির্বাচন উপহার দেবে জাতিকে। আমরা সরকারকে যৌক্তিক সময় দিতে চাই, সেটা কত দিনের সেটা আমরা জানাব। গত ৩টা নির্বাচনে জাতি বঞ্চিত হয়েছে। 

আগামীতে জাতির সামনে একটা গ্রহণযোগ্য, সুষ্ঠু এবং শান্তিপূর্ণ নির্বাচন উপহার দেওয়ার পরিবেশ তৈরি করে দেওয়া মূল কাজ। সেজন্য মৌলিক বিষয়ে তাদের কিছু সংস্কার করতেই হবে। কী কী মৌলিক বিষয়ে সংস্কার করা উচিত সে বিষয়ে আমরা কথা বলেছি। তিনি বলেন, দুর্গাপূজায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ঠিক রাখার জন্য করণীয় কী এমন একটি প্রশ্ন এসেছিল। আমরা এ বিষয়ে আলোচনা করেছি। জনগণের সঙ্গে সরকারের পার্টনারশিপ লাগবে। জনগণের সম্পৃক্ততা প্রয়োজন হবে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও জনগণ যদি একসঙ্গে কাজ করে একটা অভূতপূর্ব দুর্গাপূজা সনাতন ধর্মের ভাইবোনরা উদযাপন করতে পারবেন।

সংলাপে ডা. শফিকুর রহমানের সঙ্গে জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির অধ্যাপক মুজিবুর রহমান, ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ মো. তাহের, আ ন ম শামসুল ইসলাম ও সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মোহাম্মদ আবদুল হালিমসহ বেশ কয়েকজন নেতা অংশ নেন।

গণতন্ত্র মঞ্চের নেতারা অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সংলাপে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক আরও বেশি এবং নিয়মিত করার কথা বলেছেন। তারা বলেছেন, দরকার হলে তাদের সঙ্গে নিয়মিত বৈঠকের একটা কাঠামো তৈরি করা যেতে পারে। এটা সাপ্তাহিক, পাক্ষিক হতে পারে। এ প্রস্তাবে ওনারা একমত হয়েছেন। মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, আমরা বলেছি আবার যাতে ফ্যাসিবাদ ফিরে না আসে সেজন্য সংস্কার প্রয়োজন। সংস্কারের জন্য প্রয়োজনে সব ধরনের সহযোগিতা করব আমরা। আমরা প্রশাসনের কিছু দুর্বলতা দেখছি, ব্যর্থতা দেখছি, সীমাবদ্ধতা দেখছি। সিভিল পুলিশসহ প্রশাসনে এমন কিছু দেখছি যা উদ্বেগ প্রকাশ করার মতো।

ইসলামি আন্দোলন বাংলাদেশ ৭ দফা সংস্কার প্রস্তাবনা প্রদান করেছে। এ ছাড়া আমার বাংলাদেশ পার্টির (এবি) পক্ষ থেকে ৬ দফা পর্যবেক্ষণ ও ১১ দফা প্রস্তাবনা পেশ করা হয়েছে। দেড় থেকে দুই বছরের মধ্যে প্রয়োজনীয় সংস্কার করে একটি অবাধ, সুষ্ঠু, গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন আয়োজনের আহ্বান জানান নেতারা। 

প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সংলাপে বাম গণতান্ত্রিক জোটের নেতারা বলেছেন, আগের সরকারের মতো এই সরকারও যেন জনগণকে উদ্বিগ্ন করে না রাখে। জিনিসপত্রের দাম, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি এখনও রোধ হয়নি। এগুলোকে জরুরি কর্তব্য হিসেবে নিতে হবে, কারণ জনগণ যদি আশাহত হয় তা হলে কোনো ভালো কাজ বা সংস্কারের কথা শুনবে না।


সময়ের আলো/আরএস/





https://www.shomoyeralo.com/ad/1698385080Google-News-Update.jpg

সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সৈয়দ শাহনেওয়াজ করিম, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ
নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।

ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫ | ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com
close