ই-পেপার রোববার ৬ অক্টোবর ২০২৪
রোববার ৬ অক্টোবর ২০২৪

গোবিন্দগঞ্জের সাবেক এমপি আবুল কালাম আজাদ
দুর্নীতিই ছিল তার ধ্যানজ্ঞান
প্রকাশ: রবিবার, ৬ অক্টোবর, ২০২৪, ১:৩২ এএম  (ভিজিট : ৪৩২)
সদ্যপতিত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে প্রশাসন ও দলীয় প্রভাব খাটিয়ে অবৈধ সম্পদের পাহাড় গড়ে তোলেন তিনি। রাজনীতির অন্তরালে বিভিন্ন অপকৌশলে কোটি কোটি টাকা লুটপাট করে বিশাল বিত্ত-বৈভবের মালিক বনে যান। তিনি গাইবান্ধা-৪ (গোবিন্দগঞ্জ) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আবুল কালাম আজাদ। তৃণমূল থেকে রাজনীতি শুরু করে জনপ্রতিনিধি হিসেবে ইউপি চেয়ারম্যান, পৌরসভার মেয়র, উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান এবং সবশেষ সংসদ সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। অথচ রাজনীতি এবং জনপ্রতিনিধিত্বের আড়ালে দুর্নীতিই ছিল তার ধ্যানজ্ঞান, আর দুর্নীতির মাধ্যমে সম্পদ গড়ে তুলতে ভয়ংকর সন্ত্রাসী রূপ ধারণ করতে তিনি। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট সরকার পরিবর্তনের পর তার সেই কদর্য চেহারা বের হতে শুরু করেছে। আবুল কালাম আজাদ ও তার পরিবারের সদস্যদের দুর্নীতির অনুসন্ধান শুরু করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে সরকারি অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ এবং অবৈধভাবে নিজ ও পরিবারের সদস্যদের নামে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগ আনা হয়েছে তার বিরুদ্ধে।

দুদকের উপ-পরিচালক আকতারুল ইসলাম গণমাধ্যমকে জানান, অর্থ পাচারের পাশাপাশি দুর্নীতি ও অনিয়মের মাধ্যমে নামে-বেনামে অঢেল অবৈধ সম্পদ গড়েছেন আবুল কালাম আজাদ। এসব অভিযোগে গত ২৭ আগস্ট দুদকের নিয়মিত কমিশন সভায় আবুল কালাম আজাদ ও তার পরিবারের সদস্যদের দুর্নীতি অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

স্থানীয়রা বলছেন, দুর্নীতির কারিগর দুবারের নির্বাচিত সংসদ সদস্য আবুল কালাম আজাদ নামে-বেনামে গড়ে তোলেন অঢেল সম্পদ। সরকারি খাস জমিসহ ব্যক্তি মালিকানাধীন জমি দখল-বাণিজ্যের অভিযোগ আছে তার বিরুদ্ধে। শুধু তাই নয়, আবুল কালাম আজাদ তার স্ত্রী ও মেয়ের নামে ঢাকায় ফ্ল্যাট কেনাসহ একাধিক বাসাবাড়ি গড়েছেন। এ ছাড়া ভাতিজার নামে রয়েছে মিল-চাতাল ও গরুর ফার্মসহ একাধিক বাস-ট্রাকের ব্যবসা। ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী, সংখ্যালঘু, আওয়ামী লীগ, বিএনপি-জামায়াত কেউই রক্ষা পায়নি তার হাত থেকে। সাবেক এ সংসদ সদস্যের বিরুদ্ধে রয়েছে ভয়ভীতি দেখিয়ে কম দামে জমি বিক্রিতে বাধ্য করা, সাধারণ মানুষকে নির্যাতন, হত্যা, চাঁদাবাজিসহ মাদক ব্যবসা নিয়ন্ত্রণের অভিযোগও।

রাজনীতির মাধ্যমে ক্ষমতাধর নেতা হয়ে ওঠার লিপ্সা থেকেই ১৯৭৬ সালে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) সমর্থিত বাংলাদেশ ছাত্রলীগ গোবিন্দগঞ্জ শাখার সভাপতি হন আবুল কালাম আজাদ। এরপর ১৯৮০ সালে বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দলের (বাসদ) ছাত্র সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগে যুক্ত হয়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শাখার আহ্বায়ক ও কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য এবং ১৯৮৪ সালে সংগঠনটির কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৮৬ সালে তিনি আবারও জাসদে ফিরে দলটির গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা শাখার সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব নেন এবং ওই বছর ১৯৮৬ সালে একটি হত্যা মামলায় কারাগারে যান আবুল কালাম আজাদ। কারাগারে থাকা অবস্থায় ১৯৮৮ সালে গোবিন্দগঞ্জের গুমানীগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। ব্যালট ছিনতাইয়ের মাধ্যমে তিনি ওই নির্বাচনে জয়ী হন বলে অভিযোগ রয়েছে। ১৯৯২ সালে তিনি আবারও ওই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। ১৯৯৪ সালে জাসদ গাইবান্ধা জেলা কমিটির সভাপতি হন। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পর আবুল কালাম আজাদ জাসদ ছেড়ে এ দলের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হন। ১৯৯৭ সালে গাইবান্ধা জেলা কমিটির সদস্য এবং ২০০৮ সালে গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা কমিটির সদস্য হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হওয়ার পর ২০১৬ সাল থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত দলটির গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা সভাপতির চেয়ার নিজের দখলে রাখেন।

এর আগে ২০০৪ সালে দলের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে প্রার্থী হয়ে গোবিন্দগঞ্জ পৌরসভার মেয়র নির্বাচিত হন তিনি। অভিযোগ আছে, এই জয়ের জন্য তিনি স্থানীয় বিএনপি-জামায়াতের সঙ্গে গোপন আঁতাত করেছিলেন। এরপর এমপি মনোয়ার হোসেন চৌধুরীর সমর্থন নিয়ে ২০০৯ সালে তিনি গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। ২০১৪ সালের দশম সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন না পেয়ে বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশ নিয়ে নৌকার মনোনয়নপ্রাপ্ত মনোয়ার হোসেন চৌধুরীকে পরাজিত করে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এ সময় তিনি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। সবশেষ ২০২৪ সালে তিনি আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়ে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে অংশ নিয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। কিন্তু শপথ গ্রহণের মাত্র ৬ মাস ২৭ দিনের মাথায় গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে শেখ হাসিনার দেশে ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার পর থেকে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে লাপাত্তা আবুল কালাম আজাদ।

নির্বাচনি হলফনামায় আবুল কালাম আজাদ ও তার স্ত্রীর নামে জমি, বাড়ি ও গাড়িসহ সম্পদের যে তথ্য দিয়েছেন তার সঙ্গে বাস্তবে কোনো মিল নেই। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের হলফনামায় আবুল কালাম আজাদ ও তার স্ত্রীর স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তির মূল্য দেখিয়েছেন ১১ কোটি ১৫ লাখ ২ হাজার ৫০ টাকা। যদিও হলফনামায় দেওয়া তথ্যের চেয়ে কয়েকগুণ বেশি সম্পদের মালিক তিনি।

গোবিন্দগঞ্জ পৌর শহরের উপজেলা পরিষদ সংলগ্ন কুঠিবাড়ি মৌজার ৮ শতাংশ জমিতে নির্মিত দোতলা বাড়িটিতে স্কুলশিক্ষক স্ত্রীকে নিয়ে বসবাস করতেন তিনি। সরকার পতনের পরপরই এ বাড়িতে হামলা-ভাঙচুরসহ জনমানুষের ক্ষোভের আগুনে পুড়ে ছাই হয় দুটি গাড়ি। জনরোষ থেকে বাঁচতে অপরাধমূলক কাজের সহযোগীদের ছেড়ে কালামও সটকে পড়েন। মামলা-হামলার ভয়ে এখন তার সহযোগী নেতাকর্মীরাও পালিয়ে বেড়াচ্ছেন।

অনুসন্ধানে জানা যায়, রাজনীতির অন্তরালে সাবেক সংসদ সদস্য আবুল কালাম আজাদ একের পর এক জমি, বাড়ি-গাড়ি ও মার্কেটসহ অঢেল সম্পদের মালিক বনে যান। পৌর এলাকার গালর্স স্কুলের পাশে চাষকপাড়ায় আবুল কালাম আজাদ দুটি প্লটে ২৬ ও ৩৮ শতাংশসহ মোট ৬৪ শতাংশ জমি কিনে এক তলা ভবনের একটি গোডাউন নির্মাণ করেন। বর্তমানে এ জমির বাজারমূল্য প্রায় ৪ কোটি টাকা। তিন বছর আগে এ জমিসহ গোডাউনটি চুক্তিভিত্তিক লিজ নিয়ে ‘গ্রিন ভিলেজ মডেল স্কুল’ নামে একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা হয় বলে জানিয়েছেন স্কুলের এক পরিচালক।

এ ছাড়া পৌর এলাকার গরুহাটিসংলগ্ন এলাকায় রয়েছে ‘কালাম মার্কেট’ নামের একটি দোতলা মার্কেট। ১০ শতাংশ জমির ওপর নির্মিত মার্কেটসহ জমির বর্তমান বাজারমূল্য কয়েক কোটি টাকা বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।

এখানেই শেষ নয়, গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার ইসলামপুর মৌজার (বাল্লা) গ্রামে পার্ক করার জন্য আবুল কালাম আজাদ অন্তত ৩০ বিঘা জমি কেনেন। আর গ্রামের বাড়ি জীবনপুর, পিয়ারাপুর ও ফুলপুকুরিয়াসহ বিভিন্ন এলাকায় কয়েকশ বিঘা জমি কেনেন বলে জানান শাখাহার ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) এক সদস্য।

স্থানীয়দের অভিযোগ, হুমকি-ধমকিসহ কম দামে জমি ক্রয়ের পাশাপাশি আবুল কালাম আজাদ সরকারি একাধিক খাসজমি ও পুকুরসহ ব্যক্তি মালিকানাধীন জমিও দখল করেন। আবুল কালাম আজাদের লালসা থেকে রক্ষা পায়নি শারীরিক প্রতিবন্ধী জাহাঙ্গীর আলমের পৈতৃক সূত্রে পাওয়া জমিও।

এসব ছাড়াও পতিত আওয়ামী লীগ দলীয় এ সংসদ সদস্যের ভাতিজার নামে রয়েছে গোবিন্দগঞ্জ স্পেশাল ও ফ্রেন্ডসশিপ ৯৯ নামের যাত্রীবাহী অর্ধশতাধিক বাস ও ট্রাক। আছে দোকান-দালান, জমি, মিল-চাতাল ও গরুর ফার্মসহ বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। সবকিছুই দেখাশোনা করেন তার ভাতিজা। এ ছাড়া স্ত্রী ও মেয়ের নামে একাধিক বাড়ি-জমি, ব্যাংক-বীমায় নগদ টাকা জমা রাখাসহ ফ্ল্যাট ও অ্যাপার্টমেন্ট।

রংপুর বিভাগের প্রবেশদ্বার এবং বাণিজ্যিক এলাকা হিসেবে পরিচিত গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ। রংপুর অঞ্চলের দূরপাল্লার বাস থেকে শুরু করে সব ধরনের যানবাহন উপজেলার ওপর দিয়ে ঢাকা-রংপুর মহাসড়ক ধরে যাতায়াত করে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় বাসিন্দারা জানায়, এসব যানবাহন থেকে প্রতিদিন টোলের নামে লক্ষাধিক টাকা চাঁদা আদায়, অন্যের জমি দখল এবং মাদক ব্যবসার সিন্ডিকেট ছিল কালামের নিয়ন্ত্রণে। ২০১৮ সালের ১৭ মে দৈনিক যুগান্তরে ‘গাইবান্ধায় ৬৫ মাদক স্পট ১২১ জনের নিয়ন্ত্রণে’ শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদনে মাদক কারবারি হিসেবে এমপি আবুল কালাম আজাদের নাম ছিল। উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কমিটির সভাপতি হওয়ার সুবাদে আবুল কালাম আজাদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ২৫০ জন দফতরি-কাম নৈশপ্রহরী নিয়োগে প্রায় ১০ কোটি টাকা হাতিয়ে নেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এ ছাড়া প্রায় ২২ কোটি টাকার চাল আত্মসাতের ঘটনায় দুদকের তদন্তে তার নাম আসে। পুলিশ ও প্রশাসন তার বাইরে যাওয়ার কোনো সুযোগ ছিল না। কেউ কোনো প্রতিবাদ করলেই তাকে লাঞ্ছিত করা হতো। পরে তার সুবিধাভোগী লোকজনদের ওই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মানববন্ধন-বিক্ষোভে লেলিয়ে দেওয়া হতো।

সংসদ সদস্যের পরিচয় ছাপিয়ে ভোটকেন্দ্র দখল, সাঁওতাল উচ্ছেদ, টেন্ডারে হস্তক্ষেপ, নিয়োগ বাণিজ্য এবং জুয়ার পৃষ্ঠপোষক হিসেবে জনমানুষের কাছে পরিচিতি তিনি। এলাকা থেকে এসব বিষয়ে তার বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রীর দফতর ও দুর্নীতি দমন কমিশনে অভিযোগ দায়ের করা হলেও কোনো প্রতিকার হয়নি। বরং আবুল কালাম আজাদ জাতীয় সংসদের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত স্থায়ী কমিটির সদস্য নির্বাচিত হয়ে তার প্রভাব আরও বিস্তৃত করেছেন।

আবুল কালাম আজাদের সঙ্গে যোগসাজশে বা তার প্রশ্রয়ে সংঘটিত বিভিন্ন দুর্বৃত্তায়নের খবর স্থানীয় কাটাখালী পত্রিকায় প্রকাশিত হলে এর সম্পাদক ও তৎকালীন স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা মোয়াজ্জেম হোসেনকে প্রকাশ্যে নির্যাতনের ঘটনাও ঘটে। এমপির বিরুদ্ধে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়সহ বিভিন্ন দফতরে অভিযোগ করেও কোনো প্রতিকার পাননি মোয়াজ্জেম।

আবুল কালাম আজাদের বিরুদ্ধে নামে-বেনামে কয়েকশ বিঘা জমি ক্রয়সহ ১১টি অভিযোগ এনে গোবিন্দগঞ্জের আওয়ামী লীগ কর্মী ও শিক্ষক গৌতম কুমার ২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারিতে দুর্নীতি দমন কমিশনে তদন্তের আবেদন করেন। দুদক ছাড়াও তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বরাবর কালামের বিরুদ্ধে ১৭ ধরনের অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ করেন তিনি। দুদক এবং সরকারের বিভিন্ন দফতরে অভিযোগ করেও কোনো প্রতিকার না পেয়ে গৌতম হাইকোর্টে রিট পিটিশন করেন। এরই পরিপ্রেক্ষিতে আবুল কালাম আজাদের বিরুদ্ধে দুদকে করা দুর্নীতির অভিযোগ কেন তদন্ত ও আমলে নেওয়া হবে না তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেন হাইকোর্ট। হাইকোর্টের বিচারপতি শেখ হাসান আরিফ ও বিচারপতি আহমেদ সোহেলের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বরে এ রুল জারি করেন। এ ঘটনার পর এমপি ও তার অপকর্মের সঙ্গীদের প্রাণনাশের হুমকিতে এলাকা ছাড়তে বাধ্য হন গৌতম কুমার।
আবুল কালাম আজাদ শক্তভাবে জামায়াত-শিবিরের অপতৎপরতা মোকাবিলা করে অনেকের সমর্থন পেলেও সাঁওতালদের ওপর নিপীড়নের ঘটনায় নেতৃত্ব দেওয়ায় দেশে-বিদেশে বিভিন্ন মহলে সমালোচিত হন। ২০১৬ সালে গোবিন্দগঞ্জে তিন সাঁওতাল হত্যা, ২০১৪ সালে এসি ল্যান্ড অবিদীয় মার্ডি হত্যা এবং ১৯৮৬ সালে ছাত্রনেতা রুবেল হত্যা মামলার আসামি তিনি। তার বিরুদ্ধে প্রবীণ রাজনীতিক তোজাম্মেল হোসেন প্রধানের ওপর হামলা, নাকাই ইউপি চেয়ারম্যান মো. সাহারুল হুদাকে মারধর, গোবিন্দগঞ্জ নাগরিক কমিটির উপদেষ্টা আ ফ ম মজিবর রহমান ফুল মিয়াকে মারধর, নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক আবদুল মতিন মোল্লাকে পুলিশি নির্যাতন ও মিথ্যা মামলায় হয়রানি, অসংখ্য সাধারণ মানুষকে নির্যাতন, এলাকা ছাড়া করা, সাংবাদিক নির্যাতন, আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের মিথ্যা মামলায় হয়রানি, দলে গ্রুপিং ও উপদলীয় কোন্দল সৃষ্টি, আওয়ামী লীগবিরোধীদের তুলে নিয়ে অত্যাচার-নির্যাতন, বিএনপি-জামায়াতের দলীয় অফিস ভাঙচুর-দখল, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কমিটি বাণিজ্য, সরকারি কর্মকর্তাদের হয়রানি ও বদলি, ভূমি অফিসে চাঁদাবাজিসহ নানা অভিযোগ রয়েছে। এ ছাড়া এলাকার বালু দস্যুদের পৃষ্ঠপোষকতা এবং জিনের বাদশা প্রতারক চক্রের সদস্যদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দেওয়ার অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে।

১৯৮৬ সালের ১১ নভেম্বর বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা সম্মেলনে সন্ত্রাসী হামলায় আহত হন মইনুল হাসান রুবেল। সম্মেলনে সন্ত্রাসীদের ছুরিকাঘাতে গুরুতর আহত রুবেলকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হলে ১২ নভেম্বর তার মৃত্যু হয়। তখন থেকে ছাত্র ইউনিয়ন দিনটিকে ‘শহিদ রুবেল হত্যা দিবস’ হিসেবে পালন করে আসছে। গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা ছাত্র ইউনিয়নের সাংগঠনিক সম্পাদক ছাত্রনেতা মইনুল হাসান রুবেল হত্যা মামলার আসামি আবুল কালাম আজাদ। এ মামলায় তিনি ১৯৮৬ সালে কারাগারে যান। মামলাটি এখন হাইকোর্টে বিচারাধীন।

২০১৪ সালের ১১ জানুয়ারি গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জের এসি ল্যান্ড অবিদীয় মার্ডি নওগাঁর ধামুইরহাট থেকে মোটরসাইকেলে গোবিন্দগঞ্জে কর্মস্থলে ফিরছিলেন। পথে উপজেলার সাহেবগঞ্জ-বাগদাফার্ম ইক্ষু খামারের কাটা-ফাঁসিতলা সড়কের মাঝামাঝি পৌঁছালে তার মোটরসাইকেলের গতিরোধ করে দুর্বৃত্তরা। এরপর তাকে ইক্ষু খামারের ভেতরে নিয়ে লোহার রড দিয়ে পিটিয়ে হত্যার পর রাস্তায় ফেলে রেখে সড়ক দুর্ঘটনা বলে চালানো হয়। আবুল কালাম আজাদ সহকারী কমিশনার (ভূমি) অবিদীয় মার্ডি হত্যা মামলার আসামি। মামলাটি এখন আদালতে বিচারাধীন। এসি ল্যান্ড অবিদীয় মার্ডির বড় বোন ইমেলডা মার্ডি বলেন, ‘আমার ছোট ভাই অবিদীয় মার্ডিকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে।

সরকারের পক্ষ থেকে এ হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের গ্রেফতার করে বিচারের মুখোমুখি করার কথা। অথচ তা না হওয়ায় বিচারের দাবি নিয়ে ১০ বছর ধরে আদালতের দ্বারে ঘুরছি, কোনো বিচার পাচ্ছি না। যদিও অবিদীয় মার্ডিকে সুপরিকল্পিতভাবে হত্যা করে দুর্ঘটনা বলে চালিয়ে দেওয়া হয়েছে।’

২০১৬ সালের ৬ নভেম্বর রংপুর চিনিকল কর্তৃপক্ষ ও স্থানীয় প্রভাবশালীরা সাঁওতালদের বসতবাড়ি থেকে উচ্ছেদ করতে গেলে সাঁওতালদের সঙ্গে দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়। এতে পুলিশসহ উভয় পক্ষের অন্তত ৩০ জন আহত হন। পুলিশের গুলিতে শ্যামল হেমব্রম, মঙ্গল মার্ডি ও রমেশ টুডু নামে তিনজন সাঁওতাল নিহত হন। এ ঘটনায় সাঁওতালদের পক্ষে ২৬ নভেম্বর থোমাস হেমব্রম বাদী হয়ে তখনকার সংসদ সদস্য আবুল কালাম আজাদসহ ৩৩ জনের নাম উল্লেখ করে এবং ৫০০ থেকে ৬০০ জনকে অজ্ঞাতনামা দেখিয়ে মামলা করেন।

গোবিন্দগঞ্জের সাহেবগঞ্জ-বাগদাফার্ম ভূমি উদ্ধার সংগ্রাম কমিটির সভাপতি আদিবাসী নেতা ডা. ফিলিমন বাস্কে বলেন, ‘আবুল কালাম আজাদ এসি ল্যান্ড অবিদীয় মার্ডি ও তিন সাঁওতাল হত্যা মামলার আসামি। এসব মামলা এখনও চলমান। দলীয় মনোনয়ন নিয়ে তিনি কীভাবে এমপি হয়েছেন, তা আমাদের বোধগম্য নয়। আবুল কালাম আজাদ এখন পালিয়ে আছেন। কিন্তু তার লোকজন এখনও হুমকি-ধমকি দিচ্ছেন। আমরা এ ভূমিদস্যু সন্ত্রাসীর বিচার চাই।’


সময়ের আলো/আরএস/




https://www.shomoyeralo.com/ad/1698385080Google-News-Update.jpg

সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সৈয়দ শাহনেওয়াজ করিম, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ
নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।

ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫ | ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com
close