ই-পেপার সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪
সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪

নির্বাচনের রোডম্যাপ চাইবে দলগুলো
প্রকাশ: শনিবার, ৫ অক্টোবর, ২০২৪, ৭:৫০ এএম  (ভিজিট : ২৬৬)
রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে অন্তর্বর্তী সরকারের তৃতীয় দফার সংলাপ শুরু হতে যাচ্ছে আজ শনিবার থেকে। আগের দুই দফা সংলাপে বেশিরভাগ দল ‘আগে সংস্কার, পরে নির্বাচন’, এমন মত দিলেও এবার গুরুত্ব পাচ্ছে নির্বাচন। অন্তর্বর্তী সরকার কত দিনের মধ্যে সংস্কার কাজ শেষ করতে পারবে এবং নির্বাচন আয়োজনে কেমন সময় লাগবে তার রোডম্যাপ চাইবেন নেতারা। 

নির্বাচনকে অগ্রাধিকার দিয়ে দলগুলোর তরফ থেকে থাকবে সুনির্দিষ্ট লিখিত প্রস্তাবনা। উপদেষ্টাদের বক্তব্যে যাতে নির্বাচন নিয়ে কোনো ধোঁয়াশা তৈরি না হয়-সেদিকে খেয়াল রাখার আহ্বানও জানাবেন বৈঠকে অংশগ্রহণকারী রাজনৈতিক দলগুলোর নেতৃবৃন্দ। 

আজ দুপুর আড়াইটায় রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় বড় দল বিএনপিকে দিয়েই শুরু হবে সরকারের তৃতীয় পর্বের আলোচনা। এরপর জামায়াত ইসলামী, ইসলামী আন্দোলন, গণতন্ত্র মঞ্চ ও এবি পার্টিসহ কয়েকটি বাম রাজনৈতিক দল আলাদাভাবে বৈঠকে অংশ নেবে। প্রত্যেক দলের জন্য সময় নির্ধারণ করা হয়েছে ৩০ মিনিট করে। প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম শুক্রবার সময়ের আলোকে জানান, সিরিজ বৈঠক নিয়ে উপদেষ্টারা কাজ করছেন। বিএনপিসহ আরও বড় কয়েকটি দল বৈঠকে অংশ নেবে আজ। এ পর্বের আলোচনার মুখ্য বিষয় হবে যে ছয়টি কমিশন হয়েছে, তাদের কাজের অগ্রগতি সম্পর্কে অবহিত করা। দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষার বিষয়েও তাদের সঙ্গে কথা হবে, তাদের পরামর্শ নেওয়া হবে।

বিএনপির বৈঠকে মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেবেন। 
এ প্রসঙ্গে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ সময়ের আলোকে বলেন, দলের পক্ষ থেকে সংস্কার প্রস্তাব দেব। গুরুত্বপূর্ণ কিছু সংস্কার শেষ করে দ্রুত নির্বাচনে মনোযোগ দেওয়ার দাবি জানাব। নির্বাচনের জন্য সুনির্দিষ্ট সময় বলব না। তবে স্বল্প সময়ের মধ্যে নির্বাচন দিতে বলব। আগামী জাতীয় নির্বাচনের বিষয়কে গুরুত্ব দিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কার কাজ করা উচিত। এ ক্ষেত্রে নির্বাচন ব্যবস্থা, আইনশৃঙ্খলা, জনপ্রশাসন এবং বিচার বিভাগ এই চার ক্ষেত্রে রাষ্ট্রীয় সংস্কার অত্যন্ত জরুরি।

জামায়াতে ইসলামীর তরফ থেকেও সংস্কার প্রস্তাব দেওয়া হবে জানিয়ে সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার সময়ের আলোকে বলেন, নির্বাচন খুব কম সময়ের মধ্যেও না আবার বেশি সময়ের মধ্যে না। বেশি সময় নিলে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দেশি-বিদেশি নানা চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে পারে। এ জন্য আমরা বলেছি ন্যূনতম সংস্কারের কাজ করতে হবে। গোটা রাষ্ট্রের সংস্কার তো অন্তর্বর্তী সরকার করতে পারবে না। কারণ তারা নির্বাচিত নয়। সংসদ ছাড়া আইনি ও সাংবিধানিক বিধানে সব কাজ করা সম্ভব নয়। তাই কমপক্ষে প্রশাসন, নির্বাচন কমিশন ও বিচার বিভাগসহ কয়েকটি জায়গায় সংস্কার করা দরকার। এরপর দ্রুত নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি করে ভোটের আয়োজন করতে হবে। সেটা ৬ মাসেও হতে পারে, ৮ মাসেও হতে পারে। আবার এক বছরেও হতে পারে। তবে হ্যাঁ, আমরা একটা সময়সীমা বেঁধে দেব। সেটা আরও পরে এবং তা সরকারের কার্যক্রম ও অগ্রগতির পরিবেশ-পরিস্থিতি দেখে।
৬ দলের সমন্বয়ে গঠিত গণতন্ত্র মঞ্চের নেতারা বেলা সাড়ে ৩টায় প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক করবেন। 

মঞ্চের সমন্বয়ক সাইফুল হক সময়ের আলোকে বলেন, আমরা নির্বাচনের সময়সীমা নির্ধারণ করে দেব না। তবে দ্রুত সময়ের মধ্যে নির্বাচন চাইব। সরকারের কাছে জানতে চাইব তারা যে অন্তর্বর্তী যাত্রা শুরু করেছে, সেটি কবে কোথায় গিয়ে শেষ হবে। এর একটি সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ দরকার। আর সংস্কারের মধ্যে কোনগুলো অনির্বাচিত সরকার করবে আর কোনগুলো নির্বাচিত সরকার করবে, তাও পরিষ্কার করতে হবে। 

তিনি বলেন, নির্বাচন করতে যেসব সংস্কার অতীব জরুরি তা আগে শুরু করতে হবে। আর এখন থেকেই নির্বাচন আয়োজনের কাজ যেমন ভোটাধিকার হালনাগাদ ও নির্বাচন কমিশন গঠনসহ বড় কাজগুলো শুরু করতে হবে। এতে করে দ্রুত নির্বাচন দেওয়া সম্ভব হবে। রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের দূরত্ব কমিয়ে আনতে হবে। পাশাপাশি আহ্বান থাকবে সংস্কার কমিশনগুলো যাতে রাজনীতিবিদদের সঙ্গে আলাপ করে সিদ্ধান্ত নেয়। এতে বিতর্ক কম হবে। 

বিকাল ৫টায় সংলাপে বসবে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমির মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীম চরমোনাই পীরের নেতৃত্বে প্রতিনিধি দল।

এ প্রসঙ্গে ইসলামী আন্দোলনের যুগ্ম মহাসচিব গাজী আতাউর রহমান সময়ের আলোকে বলেন, রাজনৈতিক দল হিসেবে নির্বাচনকে অবশ্যই গুরুত্ব দেব। আলোচনায় সামনে থাকবে নির্বাচন। নির্বাচনের বাইরে সংস্কার নিয়ে আলোচনা হবে। সংস্কারের অগ্রগতি জানতে চাইব। সরকার সংস্কারের জন্য কমিশন গঠন করেছে, কিন্তু নির্বাচনের পরিবেশ তৈরির কোনো পদক্ষেপ দেখছি না। নির্বাচন অনেক বড় কর্মযজ্ঞ। ভোটার হালনাগাদ, সংসদীয় আসনের সীমানা নির্ধারণ ও নির্বাচন সংশ্লিষ্ট পুরোনো কর্মকর্তাদের বাতিলের নানা কাজ বাকি আছে। এগুলো শুরু করতে হবে। 

নির্বাচনের জন্য কোনো সময়সীমা উল্লেখ করবেন কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, আগে সরকারের কাছ থেকে শুনব তারা কত দিনের মধ্যে নির্বাচন দিতে চান। যদি অযৌক্তিক সময় বলেন তাহলে আমরা যৌক্তিক সময় বেঁধে দেব। নির্বাচন নিয়ে প্রধান উপদেষ্টা ও সেনাপ্রধান দুই ধরনের কথা বলেছেন; এমন বিভ্রান্তি যাতে না থাকে সেদিকে নজর দিতে হবে।

সিপিবির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন (প্রিন্স) সময়ের আলোকে বলেন, প্রথমেই আমরা নির্বাচনের জন্য দ্রুত রোডম্যাপ চাই। আগে নির্বাচন নিয়ে সরকার কী বলে সেটি শুনে আমরা একটি সময়সীমা নির্ধারণ করে দেব। এর আগে নির্বাচন কমিশন সংস্কার করতে হবে। সংস্কার কমিশন নিয়েও অনেক কথা আছে। সংবিধান সংস্কার কীভাবে করবে জানতে চাই। কোনোভাবে মুক্তিযুদ্ধকে বিতর্কিত করা যাবে না। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতির মাধ্যমে জনমনে আস্থা ফেরাতে হবে। জিনিসপত্রের দাম কমাতে হবে। রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে গুরুত্বপূর্ণ সবকিছুর সিদ্ধান্ত নিতে হবে। 
আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, মব জাস্টিসের নামে আগস্ট ও সেপ্টেম্বর মাসে সারা দেশে গণপিটুনিতে প্রাণ গেছে ৪৯ জনের। 

এ বিষয়ে বৈঠকে কথা বলবেন জানিয়ে বাম নেতা প্রিন্স বলেন, মব জাস্টিস (বিচারবহির্ভূত হত্যা) বন্ধ করতে হবে। এ বিষয়ে সরকারকে কঠোর হতে হবে। 

আমার বাংলাদেশ (এবি) পার্টির যুগ্ম সদস্য সচিব ব্যারিস্টার আসাদুজ্জামান ফুয়াদ সময়ের আলোকে বলেন, নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণে প্রয়োজনীয় সংস্কারের জন্য বেশ কিছু কমিটি করা হয়েছে। আমরা এগুলোকে স্বাগত জানাই। নির্বাচনকে সুষ্ঠু করার জন্য কিছু প্রস্তুতির কথা আমরা ইতিমধ্যেই শুনলাম প্রধান উপদেষ্টার মুখ থেকে। ওনাদের ওপর ভরসা রাখতে চাই; ওনাদের থেকে ভালো বিকল্প এই মুহূর্তে আমরা দেখতে পাচ্ছি না। তাই আমি সময়ের ব্যাপারে উদার থাকতে চাই। তবে ওনাদের কাজের দৃশ্যমান সফলতাও দেখতে চাই, যা প্রতি এক/দুই মাস পরপর পুনর্মূল্যায়ন করা হবে। ওনারা কাজের ব্যাপারে বেশ কিছু রূপকল্প দিয়েছেন, যা যথেষ্ট নয়। আমরা আশা করব-ওনারা অগ্রাধিকার ঠিক করবেন এবং গতি বাড়াবেন কাজের।

তিনি বলেন, সংবিধান সংস্কার কমিটি তো সবার সঙ্গে পরামর্শ করে একটা মতামত দেবে। তারপরে এটার ওপর গণভোট হতে পারে। প্রয়োজনে ঐকমত্যের চার্টার করতে হবে-যেটা জনগণের সম্মুখে প্রকাশ করতে হবে।

প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ১১ সেপ্টেম্বর জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে নির্বাচনব্যবস্থা, পুলিশ, বিচার বিভাগ, জনপ্রশাসন, সংবিধান ও দুর্নীতি দমন বিষয়ে সংস্কারের জন্য ছয়টি কমিশন গঠনের কথা জানিয়েছেন। নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন বদিউল আলম মজুমদার, পুলিশ সংস্কার কমিশনের প্রধান সফর রাজ হোসেন, বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশনের প্রধান হিসেবে বিচারপতি শাহ আবু নাঈম মমিনুর রহমান, দুর্নীতি দমন সংস্কার কমিশনের প্রধান ইফতেখারুজ্জামান, জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন আবদুল মুয়ীদ চৌধুরী। আর সংবিধান সংস্কার কমিশনের প্রধান হিসেবে অধ্যাপক আলী রীয়াজকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।

সময়ের আলো/আরএস/ 




https://www.shomoyeralo.com/ad/1698385080Google-News-Update.jpg

সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সৈয়দ শাহনেওয়াজ করিম, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ
নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।

ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫ | ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com
close