ই-পেপার রোববার ৬ অক্টোবর ২০২৪
রোববার ৬ অক্টোবর ২০২৪

তিন বন্ধুর গল্প
প্রকাশ: শনিবার, ৫ অক্টোবর, ২০২৪, ২:০৪ এএম  (ভিজিট : ২৮৬)
রাতুল, রবিন আর রিয়ন তিন বন্ধু। তিন জনের সখ্য ক্লাসের প্রথম দিন থেকে। তিন জনের বাড়ি তিন জেলায়। বাবার চাকরিসূত্রে তারা সবাই একই স্কুলে ভর্তি হয়। শহরের নামকরা স্কুল। পরিবেশ বেশ সুন্দর। রাতুল যেদিন স্কুলে আসে, তার বাবাই ভর্তি করতে নিয়ে আসে। রবিনের বাবা খুব ব্যস্ত তাই তাকে নিয়ে আসে বাবার অফিসের মোজাম্মেল কাকা। রিয়নকে নিয়ে আসে তার মা। রবিন যখন স্কুলে আসে ঠিক গেটের লাগোয়া কৃষ্ণচূড়া ফুল গাছটায় চোখ আটকে যায়। আহ কী সুন্দর! প্রকৃতির এক উচ্ছ্বাসমাখা রূপ, দেখেই বিমোহিত হয়। আর চোখ বুজে বড় করে শ্বাস নিয়ে কেমন যেন একটা অনুভূতি পায় সে। এই কথা পর্যায়ক্রমে বাকি বন্ধুদের সাথে আলাপচারিতায় বলে। অন্য বন্ধুরাও ফুল পছন্দ করে। তবে রাতুলের মতো করে তাদের পছন্দ হয় না। রবিনের শখ পাখি পোষা। কারণ সে পাখি পছন্দ করে। তাকে তার বাবা একটা ময়না পাখি কিনে দিয়েছিল। পাখি কেনার বায়না ধরেছিল জন্মদিনে। অন্য আর দশজন যখন জন্মদিনে নতুন নতুন জামা কাপড় পেলে খুশির অন্ত থাকে না। সেদিক দিয়ে রবিন পুরো উল্টো। তার চাই শখের পাখি। সে পোষ মানিয়ে স্কুল এবং পড়া আর খেলার বাইরে এই পাখিকেই সময় দেয়। সে পাখির মনের ভাষা বুঝতে পারে খুব সহজেই। রিয়ন পছন্দ করে ঝরনা। অপর দুই বন্ধুকে তার পছন্দের কথা বলতেই চোখ ছলছল করে ওঠে। অন্য দুই বন্ধু রাতুল এবং রবিন তাদের শখ পূরণে সব হাতের কাছেই পেয়ে যায়। রিয়নের জন্য সেটা অনেক কঠিন এবং কষ্টসাধ্যও বটে।
একদিন রাতুল আর রবিন মিলে পরিকল্পনা করে যে করেই হোক রিয়নকে ঝরনা দেখাতে নিয়ে যাবে। তাদের পরিকল্পনার অংশ হিসেবে তারা দুজন মিলে প্রতিদিনের টিফিনের টাকা জমিয়ে রাখতে শুরু করে যার যার মতো করে। বছর গড়িয়ে যেতেই দুজন মিলে টিফিনের টাকা, ঈদ বখশিশের টাকা মিলে মোট চার হাজার তিনশ টাকা জমায়। কিন্তু এত অল্প টাকায় তো হবে না। সবাই মিলে চিন্তা করতে থাকে কীভাবে ঝরনা দেখতে যাবে। একদিন রবিন তার বাবার অফিস থেকে একটা ট্যুর আয়োজন করার কথা জানতে পারে। রবিন বুদ্ধি খাটিয়ে বলে, বাবা আমি তোমার সঙ্গে ট্যুরে যেতে পারব না। সে জানে বাবা তাকে ফেলে কোনোভাবেই ট্যুরে যাবে না। বাবা রবিনকে জিজ্ঞেস করে, কেন যেতে পারবে না বাবা?
বাবা, আমার দুই বন্ধুকে না নিলে আমি কীভাবে সময় কাটাবো?
বাবা চিন্তায় পড়ে যায়। সত্যিই তো, এখন রবিন বড় হচ্ছে। তার একটা আলাদা জগৎ আছে। রবিন নিজের আর রাতুলের জমানো টাকার কথা চেপে গিয়ে বলে, জানো বাবা, রাতুল আর রিয়ন মিলে চার হাজার টাকা দেবে।
বাবা জিজ্ঞেস করে, কীসের টাকা দেবে তারা?
ট্যুরের জন্য বাবা।
বাবা তখন বলে, তুমি কী বলছো? আমি তোমার বাবা। আর আমি থাকতে, তারা তোমার বন্ধু। তারা টাকা দিবে? এটা কঅ বলছো! তুমি ওদের বলে দাও প্রস্তুতি নিতে। তারাও আমাদের সঙ্গেই যাবে। এটাই ফাইনাল।
রবিন তখন বাবাকে জড়িয়ে ধরে চুমু খেয়ে বলল, আমার প্রিয় বাবা। তুমি পৃথিবীর সবচেয়ে ভালো বাবা। আমার বাবা। বাবা রবিনকে আদর দিয়ে নিজের রুমে চলে যায়।
একদিন ভোরবেলা রাতুল রবিন রিয়ন সবাই মিলে ট্যুরের উদ্দেশ্যে একত্রিত হয়। বাস ছেড়ে দিলে সবার মধ্যে এক ধরনের রোমাঞ্চ অনুভূত হতে শুরু করে। সবাই গুনগুন করে গান গাইতে থাকে। দেখতে দেখতে পিকনিক বাস এসে থামল মোটেলের সামনে। সবাই যে যারযার রুমে যায়। ফ্রেশ হয়ে নেয়। ক্লান্তি ঝেড়ে খাবার খেয়ে মোটেলের মিনিবাসে করে ঝরনা দেখতে রওনা হয়। গাড়ি কিছুদূর যাওয়ার পর ঝরনা দেখে রিয়ন চিৎকার দিয়ে বলে- ‘ওই তো ঝরনা’!


সময়ের আলো/আরএস/





https://www.shomoyeralo.com/ad/1698385080Google-News-Update.jpg

সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সৈয়দ শাহনেওয়াজ করিম, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ
নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।

ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫ | ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com
close