ই-পেপার রোববার ৬ অক্টোবর ২০২৪
রোববার ৬ অক্টোবর ২০২৪

মেরামত হচ্ছে যাত্রাবাড়ী থানা
প্রকাশ: শনিবার, ৫ অক্টোবর, ২০২৪, ১২:৫৮ এএম  (ভিজিট : ২০৮)
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন এক পর্যায়ে সরকার পতনের আন্দোলনে রূপ নেয়। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর সারা দেশে চার শতাধিক থানা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ভাঙচুর, লুটপাট ও আগুন দেওয়া হয় এসব থানায়। পুড়ে ছাই হয় হাজার হাজার মামলার নথি ও আলামত। রাজধানীর মধ্যে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত থানার মধ্যে অন্যতম যাত্রাবাড়ী থানা। আন্দোলন চলাকালে এই থানা এলাকায় দফায় দফায় ভয়াবহ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। বিশেষ করে ৫ আগস্ট যাত্রাবাড়ী থানা ও এর আশপাশের এলাকা পরিণত হয় রণক্ষেত্রে। থানার অস্ত্র থেকে শুরু করে বাথরুমের দরজা কিছুই লুটপাট হতে বাকি থাকে না। 

লুটপাট-ভাঙচুরের পাশাপাশি থানার সামনে থাকা গাড়ি ও ভেতরে পুলিশ সদস্যদের ব্যক্তিগত ও থানার পার্কিং করা এবং জব্দ করা গাড়িতেও দেওয়া হয় আগুন। পুলিশ হেডকোয়ার্টারের তথ্যমতে, যাত্রাবাড়ী থানার সামনে থেকে ছয়জন ও থানা এলাকা থেকে দুইজন পুলিশ সদস্যের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। এর আগে পুলিশের গুলিতে বেশ কয়েকজন আন্দোলনকারী নিহত ও আহতের ঘটনা ঘটে। বর্তমানে থানা ভবনের সংস্কার কাজ চলছে। তবে ব্যবহার উপযোগী না হওয়ায় পাশর্^বর্তী ডেমরা থানা থেকে সীমিত পরিসরে পরিচালিত হচ্ছে এই থানার কার্যক্রম।

রোববার (২৯ সেপ্টেম্বর) বেলা সোয়া ১১টা। যাত্রাবাড়ী থানায় প্রবেশ করার আগেই চোখে পড়ে দুইজন শ্রমিক থানার বাউন্ডারি দেয়ালে পলেস্তারা দিচ্ছেন। পাশের দেয়ালে শিক্ষার্থীদের দেয়াল লিখনি এখনও রয়েছে। থানার প্রধান ফটকে বসানো হয়েছে নতুন লাল রঙের গেট। গেট দিয়ে প্রবেশ করে থানার চারদিকে তাকিয়ে মনে হচ্ছিল  সম্প্রতি এখানে যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছে। থানা মেরামতের কাজ চললেও, সংঘর্ষের ক্ষত এখনও রয়ে গেছে। থানার ভেতরে ঢুকে ডান দিকে তাকালে বড় একটি ট্রাকসহ ২০টির পোড়া গাড়ি, বামে সাতটি পোড়া গাড়ি পড়ে থাকতে দেখা গেছে। থানার সামনের পোড়া গাড়িগুলো সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। থানা ভবনে ঢুকতে প্রধান ফটকে আবছা লেখা রয়েছে ‘যাত্রাবাড়ী থানা, ডিএমপি’।  ভবনটির বাইরে থেকে বোঝার উপায় নেই এটি একটি থানা। থানায় ৫-৬ ধরনের কাজের জন্য অর্ধশতাধিক শ্রমিক কাজ করছিলেন। কেউ বৈদ্যুতিক লাইন ঠিক করছিলেন, কেউ দেয়ালে রং করছিলেন, কেউ করছিলেন টাইলসের কাজ। থানার নিচ তলায় কয়েকজনকে পলেস্তারার কাজ করতে দেখা যায়। দোতলায় ওঠার জন্য সিঁড়িতে গিয়ে দেখা যায়, সিঁড়িতে সংযুক্ত প্রতিটি লোহা খুলে নিয়ে গেছে।

খবর নিয়ে জানা যায়, থানার কিছুই অবশিষ্ট রাখা হয়নি ৫ আগস্টে। দোতলায় পাঁচটি গারদখানার বাথরুম বাদে বাকি কাজ শেষ হয়েছে। গারদখানার লোহার গ্রিলে করা হয়েছে রং। এই ফ্লোরে ছোট-বড়  মোট ১১ কক্ষের কাজ চলছে। এখানে কথা হয় রং মিস্ত্রি সজীব মোল্লার সঙ্গে। সময়ের আলোকে তিনি বলেন, আরও ১০ দিন লাগবে রঙের কাজ শেষ হতে। সংস্কারের কাজ চলছে এক মাসের বেশি দিন ধরে। এই সপ্তাহের মধ্যে পুলিশ থানায় উঠতে চাচ্ছে। তবে সব কাজ শেষ হতে ২০ দিন থেকে এক মাস সময় লাগবে। 

তৃতীয় তলায় একটি বড় রুমসহ সাতটি কক্ষের কাজ চলছিল। তার এক রুমে সারি সারি চুলা দেখে বোঝা যায় এটা রান্নাঘর। তিন তলার একটি বাথরুমে এখনও পোড়া কালির দাগ দেখা যায়। তবে থানার ভেতরে বেশিরভাগ দেয়ালে প্রথম ধাপের রং পড়েছে। কিছু দেয়ালে পুডিং করতে দেখা যায়।  এ কাজ শেষে দ্বিতীয় ধাপে রং করা হবে বলে জানা যায়। চার তলায় গিয়ে দেখা যায়, ঢালাই ও টাইলসের কাজ চলছে। পাশেই দুইজন কাঠের দরজা বসাচ্ছিলেন। নাম প্রকাশ না করে একজন জানান, থানায় কাঠের কাজ শেষ হতে আরও ৮ থেকে ১০ দিন সময় লাগবে। চার তলায় পুলিশ সদস্যদের থাকার ব্যারাক। 

পঞ্চম তলায় ব্যারাকে নতুন ফ্যান বসানো হয়েছে। দেয়ালের সঙ্গে লাগানো পোশাক ও গুরুত্বপূর্ণ মালামাল রাখার পুরাতন বক্সগুলো মেরামতের কাজ চলছে। ষষ্ঠ তলায় গিয়েও একই চিত্র দেখা যায়। থানার ভেতরে বাইরে সব জায়গাতেই কাজ চলছে। থানা লুটের সময় বাথরুমগুলোর দরজা পর্যন্ত নিয়ে গেছে। থানার ভেতরে আরও দুইটি ভবন রয়েছে। একটিতে প্রশাসনিক কাজের জন্য, অপরটি কর্মকর্তাদের থাকার স্থান। এই দুই ভবনও সমানভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৫ আগস্ট। এই দুই ভবনের কাজও চলছে সমান তালে। এ ছাড়া থানার পূর্ব পাশে বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশনস কোম্পানি লিমিটেড (বিটিসিএল) ভবনের দেয়ালেও আগুনের ধোঁয়ার কালো দাগ এখনও দৃশ্যমান।   

থানার নিচ তলায় নেমে সাধারণ পোশাকে এক ব্যক্তিকে মোবাইল ফোনে বলতে শোনা যায়, ‘মুহিবুল্লাহ ভাই থানার কাজটা শেষ করবেন কবে? দুনিয়ার ফ্রেমিং বাকি রয়েছে। কোথায় লাগাচ্ছেন?’ তবে ফোনের বিপরীত পাশ থেকে কী উত্তর দিয়েছেন সেটা জানা যায়নি। কাছে গিয়ে ওই ব্যক্তির পরিচয় পাওয়া যায়, তিনি পুলিশ হেডকোয়ার্টার থেকে এসেছেন কাজের তদারকি করতে। তিনি জানান, ৫ আগস্টের ঘটনার পর ধ্বংসস্তূপে পরিণত হওয়া যাত্রাবাড়ী থানা মেরামতের কাজ শুরু হয় আগস্ট মাসের ২২ তারিখ থেকে। এখনও সপ্তাহ দুয়েক লাগবে থানার কাজ শেষ হতে। আগামী সপ্তাহ-নাগাদ পুলিশ সদস্যরা থানায় উঠবেন। এখন ডেমরা থানা থেকে যাত্রাবাড়ী থানার কাজ পরিচালনা করা হচ্ছে।
ওই পুলিশ সদস্যের সঙ্গে কথা শেষ করে থানা থেকে বের হওয়ার সময় হঠাৎ চোখ যায় থানার ভেতরের একটি পোড়া গাছের দিকে। এর পর একে একে থানা বাউন্ডারির ভেতরে গুনে দেখা যায়, ২০টি গাছ পুড়ে কঙ্কাল হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। এক শ্রমিক জানালেন, আরও কয়েকটি পোড়া গাছ কেটে ফেলা হয়েছে। থানার ভেতরে রাখা গাড়িতে আগুন দেওয়া হলে সেই আগুনে এই গাছগুলোও পুড়ে যায়। যে পোড়া গাছটিতে প্রথম চোখ আটকায়, সেই গাছটির শরীরে নতুন করে পাতা গজিয়েছে। পোড়া ধ্বংসস্তূপের মধ্য থেকে বের হওয়া প্রাণ দেখে প্রখর রোদেও কিছুটা স্বস্তি মিলেছে। তথ্য মতে, সপ্তাহ খানেকের মধ্যে ধ্বংসস্তূপ হওয়া থানায় ফিরবেন পুলিশ সদস্যরা। তাদের উপস্থিতিতে প্রাণ ফিরে পাবে যাত্রাবাড়ী থানা।  

থানায় পুলিশ সদস্যরা না থাকায় কথা হয় স্থানীয়দের সঙ্গে। তারা জানান, শেখ হাসিনার পদত্যাগের খবর ছড়িয়ে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে কয়েক হাজার বিক্ষুব্ধ জনতা যাত্রাবাড়ী থানা ঘেরাও করে। এ সময় থানার ভেতর থেকে জনতাকে লক্ষ্য করে গুলি চালানো হয়। এতে শতাধিক মানুষ গুলিবিদ্ধ হয়। প্রাণ হারানোসহ আহত হন অনেকে। স্থানীয় মো. আকাশ বলেন, থানা পুলিশের মারমুখী আচরণের কারণে তারা বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। জনতা থানায় ঢুকে ভাঙচুর, লুটপাট ও আগুন দেয়। এর পর থেকেই এখানে থানার কাজ বন্ধ হয়ে যায়। ডেমরা থানা থেকে এখন কাজ করছেন তারা।

যাত্রাবাড়ী থানা পুলিশ সূত্রে জানা যায়, জব্দ করা গাড়ি ও পুলিশ সদস্যদের ব্যক্তিগত গাড়ির বাইরে থানার ৭টি গাড়ি, তৎকালীন একজন এসি ও এডিসির গাড়িসহ মোট ৯টি গাড়িতে আগুন দেওয়া হয়।
থানার কার্যক্রমের বিষয়ে জানতে চাইলে যাত্রাবাড়ী থানার ওসি ফারুক আহমেদ দৈনিক সময়ের আলোকে বলেন, ‘থানার কাজ চলছে। কাজ শেষ হলেই থানায় উঠব। ডেমরা থানা থেকে স্বল্প পরিসরে যাত্রাবাড়ী থানার কার্যক্রম পরিচালনা করছি। পোস্টিংয়ের কারণে একটু সমস্যা হচ্ছে। যেমন, ১০ জন বদলি হলে, সেখানে পাঁচজন এসেছেন। তবে জনবল মোটামুটি আছে। বাড়তি ডিউটি করে পুষিয়ে নিচ্ছি।’


সময়ের আলো/আরএস/




https://www.shomoyeralo.com/ad/1698385080Google-News-Update.jpg

সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সৈয়দ শাহনেওয়াজ করিম, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ
নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।

ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫ | ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com
close