ই-পেপার রোববার ৬ অক্টোবর ২০২৪
রোববার ৬ অক্টোবর ২০২৪

দল ও ধর্মের ভিত্তিতে কোনো বিভাজন মানা হবে না: জামায়াত আমির
প্রকাশ: শুক্রবার, ৪ অক্টোবর, ২০২৪, ৫:৪২ পিএম আপডেট: ০৪.১০.২০২৪ ৫:৪৬ পিএম  (ভিজিট : ২৩১)
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, এখন থেকে আগত এবং অনাগত যারা আছে শেখ হাসিনার পরিণতি থেকে আমাদের যেন শিক্ষা হয়। জাতির সেবক হয়ে এসে মালিক বনে গেলে কি শিক্ষা হয় তা আমরা দেখেছি। যারা জনগণের টাকায় অস্ত্র গুলি কিনে আবার তা জনগণের উপর প্রয়োগ করবে এমন কোন সরকার আমরা দেখতে চাই না। তার জন্য আমাদের দেশের ১৮ কোটি মানুষের হাত একত্রিত করে বিশ্বকে জানান দিতে হবে দেশ ও জাতির স্বার্থে আমাদের মধ্যে কোন বিভাজন নেই। আর আমরা কাউকে জাতিকে বিভক্ত করার সুযোগ দিবো না। দলের ভিত্তিতে, জাতির ভিত্তিতে, গুষ্টির ভিত্তিতে আর আমরা কাওকে জাতিকে বিভক্ত করার সুযোগ দিবো না। জাতিকে তারাই ভাগ করে যারা জাতির দুষমন। আমরা মতলব বাজদের বলে দিতে চাই, অতীতে তোমরা যা করেছো আগামিতে তোমাদের আর তা করতে দিবো না।

শুক্রবার (৪ অক্টোবর) সকালে গাজীপুর মহানগরীর রাজবাড়ি মাঠে বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনে শাহাদাতবরণকারী পরিবারের সাথে মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

জামায়াত আমির বলেন, আমরা জানিয়ে দিবো এখন থেকে বাংলাদেশের মানুষ সাদাকে সাদা আর কালো বলবে। আমরা চাই এমন একটি দেশ হবে যেখানে কোন বৈষম্য থাকবে না। আমরা কোন সাধারণ শ্রমিককে অবহেলা করবো না। আমাদের দেশে মতলব বাজরা মালিক এবং শ্রমিকের মাঝে সংঘর্ষ বাঁধিয়ে রাখে। শিল্প যদি না বাঁচে তাহলে শ্রমিকের কর্মসংস্থান কোথায় হবে। যারা এই সমাজের দুশমন তারাই শিল্পকে ধ্বংস করতে চায়। তারা শ্রমিকদের আবেগকে উস্কি দিয়ে রাস্তায় নামায়। রাস্তায় মরে শ্রমিকরা বেনিফিট নেয় ঘরে বসে মতলব বাজরা। আমরা চাই দেশের শিল্প বাচুক শ্রমিকও বাচুক। আমরা এমন একটি সমাজ চাই যেখানে শিক্ষিত মানুষ কলমের খোঁচায় হাজার হাজার কোটি টাকা লুটপাট করবে না। আমরা গ্রামের মেম্বার থেকে পার্লামেন্টের মেম্বার পর্যন্ত, অফিসের পিয়ন থেকে অফিস প্রধান পর্যন্ত খোদাভিরু শাসক চাই। খোদাভিরু শাসক আমাদের এই সমাজ থেকেই বাছাই করে নিতে হবে।

তিনি আরও বলেন, আমরা দফায় দফায় আন্দোলন করেছি স্বৈরাচারকে হঠাতে পারি নি। কিন্তু ২০২৪ সালে এসে তাদের দফারফা হয়েছে। আর এই কাজ সম্ভব হয়েছে আমাদের যুবক বা তরুণদের হাতে। ২০১৩ সালের ৫ মে শাপলা চত্বরে আলেম ওলামাদের সাথে কি আচরণটা করা হয়েছে। সেদিন চতুর দিকের আলো নিভিয়ে ব্রাশ ফায়ার করে কত জনকে হত্যা করেছে আল্লাহ জানেন। তাদের মরদেহটাও পাওয়া যায় নি। সাবেক এক মন্ত্রী পতনের কয়েকদিন আগে বলেছেন বড়াবাড়ি করবেন না শাপলা চত্বর ভুলে যাবেন না। রাতে ১২টার পরে আমরা সব গুলোকে সাফ করে দিয়েছে। এখন আপনি কোথায়? কোন জঙ্গলে লুকিয়ে আছো? এখন বিভিন্ন যায়গায় তোমরা পাল্লাচ্ছো কেন? এটা না তোমাদের বাবার দেশ, আমরা না তোমাদের প্রজা, তোমরা দেশের মালিক ছিলা, তো মালিকগুলো কোথায় গেলা। আসো সাহস করে, মানুষ তোমাদের অবস্থান জানতে যায়। তোমারা যাদের সাথে নিকৃষ্ট আচরণ করেছো তাদের একজন মানুষও এদেশ থেকে পালানো চেষ্টা করেনি। হাসি মুখে ফাঁসি বরণ করেছন কিন্তু অন্যায়ের কাছে আল্লাহ তাদের মাথা নত করান নি।

ডা. শফিকুর রহমান বলেন, আমরা শহীদদেরকে কোন দলীয় ভিত্তিতে ভাগ করতে চাই না। এই শহীদরা জাতির সম্পদ, ইজ্জতের চুড়ান্ত সীমায় আমরা তাদের রাখতে চাই, দেখতে চাই। এতে কিন্তু রাস্ট্রের দায়িত্ব আছে। যার লড়াই করে বুকের রক্ত দিয়ে জীবন দিয়েছে তাদের সন্তানেরা, তাদের স্বামীরা যাদের বাবারা এ সমাজকে মুক্তি এনে দিয়ে গেছেন এ পরিবারগুলোর প্রতি সরকারকে অবশ্যই তার নৈতিক দায়িত্ব পালন করতে হবে। জাতিকেও দায়িত্ব পালন করতে হবে। জাতির অংশ হিসেবে আমরা এটুকু দায়িত্ব পালনে চেষ্ট করেছি।

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী গাজীপুর মহানগর শাখার সভাপতি অধ্যাপক মুহাঃ জামাল উদদীনের সভাপতিত্বে সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নির্বাহী পরিষদের সদস্য অধ্যক্ষ মুহাম্মদ ইজ্জত উল্লাহ।

বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কর্ম পরিষদ সদস্য ড. খলিলুর রহমান, ঢাকা উত্তর অঞ্চল টিমের সদস্য আবুল হাসেম খান, মাওলানা দেলাওয়ার হোসেন, গাজীপুর জেলা জামায়াতের আমীর ড. জাহাঙ্গীর আলম, গাজীপুর মহানগর জামায়াতের নায়েবে আমীর মুহাম্মদ খায়রুল হাসান, মহানগর জামায়াতের সেক্রেটারী আবু সাঈদ মোহাম্মদ ফারুক, বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্র শিবিরের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি মো. সালাউদ্দিন আইউবী প্রমুখ।

তিনি শহীদ পরিবারের উদ্দেশ্যে বলেন, আমরা আপনাদের কাছে গিয়েছি। আপনাদের অনুগ্রহ করার জন্য নয়। বরং আপনাদের দোয়াকে নিয়ে আমাদের দ্বিলটা বুকটা শীতল করার জন্য। আপনারা আমাদের অহংকারের পাত্র। আমাদের
মর্যাদার পাত্র। আমাদের সম্মানের পাত্র।

তিনি বলেন, আমরা সরকারের কাছে দাবি জানাবো তাদের সঠিক স্বীকৃতিটা যেন দেওয়া হয়। পাঠ্যপুস্তক কারিকুলামে আগামী দিনের নাগরিকরা যেন জানে তাদেরও আবু সাঈদরা ছিল। সারা বাংলার শহীদরা ছিল। প্রতিটা শহীদ পরিবার থেকে কমপক্ষে একজনকে যেন সরকার সম্মানজনক চাকরি তাদের হাতে তুলে দেয়। লড়াই করে যারা আহত হয়েছে পঙ্গু হয়েছে তাদেরকেও যেন সম্মানজনক চাকরি দেওয়া হয়। তারা যেন আজীবন কারো করুনার পাত্র হয়ে না থাকে। তার যোগ্যতার বলেই যেন আল্লাহর সাহায্য নিয়ে সামলাতে পারে। আমরা ন্যায় বিচার চাই। যারাই যেখান থেকে এ জাতির উপর জুলুম করেছে তাদের সকলের বিচার এ জাতি দেখতে চায়।

জামায়াতে আমির হুশিয়ারী দিয়ে বলেন, আমাদের নেতাকর্মীদের যারা হত্যা করেছে তাদের সকলের বিচাই চাই। তারা শুধু আমাদের নেতাকর্মীদের নয় গোটা জাতিকে হত্যা করতে চেয়েছিল। সেনাবাহিনীর ৫৭ জন চৌকোষ অফিসারকে তারা হত্যা করেছে। বিডিআর বাহিনীকে তারা ধ্বংস করেছে। নিজেদের ক্ষমতা দীর্ঘস্থায়ী করার সিঁড়ি হিসেবে তাদেরকে বলির পাঠা
বানানো হয়েছে। এ সমস্ত হত্যাকাণ্ডের বিচার চাই আমরা। যত আলেম-ওলামা জেলে বন্দী আছে তাদের সবার মুক্তি চাই। দেশের এত পরিবর্তনের পরেও জামাতের নেতাকর্মীরা ধৈর্যের পরিচয় দিয়েছে। দেশের ৫৬ হাজার বর্গ মাইলের মধ্যে কেউ বলতে পারবেনা কাউকে নির্যাতন করা হয়েছে। কারো কাছে চাঁদা দাবি করা হয়েছে। কারও ইজ্জতে টান দেয়া হয়েছে।

সময়ের আলো/জিকে




https://www.shomoyeralo.com/ad/1698385080Google-News-Update.jpg

সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সৈয়দ শাহনেওয়াজ করিম, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ
নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।

ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫ | ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com
close