ই-পেপার রোববার ৬ অক্টোবর ২০২৪
রোববার ৬ অক্টোবর ২০২৪

নিজেই অর্থ পাচার করেন সাবেক বিএফআইইউ প্রধান
মাসুদের অবৈধ সম্পদের খোঁজে ১১ দেশে চিঠি দুদকের
প্রকাশ: শুক্রবার, ৪ অক্টোবর, ২০২৪, ৩:১৩ এএম  (ভিজিট : ৩৬৬)
বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) সাবেক প্রধান মাসুদ বিশ্বাসের অবৈধ সম্পদের খোঁজে নেমেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এ লক্ষ্যে তথ্য চেয়ে আমেরিকা, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, দুবাই, মালয়েশিয়া ও সিঙ্গাপুরসহ ১১টি দেশে চিঠি দিয়েছে দুদক। ক্ষমতার অপব্যবহার, ঘুষ গ্রহণ, বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে কোটি কোটি টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগ রয়েছে মাসুদের বিরুদ্ধে।

বৃহস্পতিবার দুদকের প্রধান কার্যালয় থেকে অনুসন্ধান কর্মকর্তা উপ-পরিচালক গুলশান আনোয়ার প্রধানের স্বাক্ষর করা পৃথক চিঠিতে এসব তথ্য জানানো হয়েছে। সংস্থাটির জনসংযোগ কর্মকর্তা আক্তারুল ইসলাম বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। একই সঙ্গে মাসুদ বিশ্বাস যাতে দেশত্যাগ করতে না পারেন সে বিষয়ে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চের অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক বরাবর চিঠিও পাঠানো হয়েছে।

এর আগে ২৫ সেপ্টেম্বর বিএফআইইউর সাবেক প্রধান মাসুদ বিশ্বাসের বিরুদ্ধে অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেয় দুদক। দুদকের গোয়েন্দা ইউনিটের অনুসন্ধানে প্রাথমিক সত্যতা পাওয়ার পর তার বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, অর্থ পাচার ঠেকানোর দায়িত্ব বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের। কিন্তু ঠেকাননি, উলটো বিএফআইইউর সদ্যপদত্যাগী প্রধান মাসুদ বিশ্বাসের বিরুদ্ধে অর্থ পাচারে সহায়তা ছাড়াও নানাভাবে ঘুষ নেওয়ার বিস্তর অভিযোগ উঠেছে। বিগত দিনে হলমার্ক ও বিসমিল্লাহসহ ২৪টি বড় কেসে ৯২ হাজার কোটি টাকার আর্থিক কেলেঙ্কারির মাধ্যমে সংঘটিত মুদ্রা পাচারের ঘটনায় অনেকটা নীরব ভূমিকা পালন করেন তিনি। অভিযোগ রয়েছে, ক্যাশ ট্রানজেকশন রিপোর্ট (সিটিআর) বিএফআইইউর পক্ষ থেকে যাচাই করা হয়নি, এর পেছনের খলনায়ক ছিলেন মাসুদ বিশ্বাস। এ ছাড়াও তার বিরুদ্ধে ব্যাংকগুলোকে চাপ দিয়ে প্রশিক্ষণ প্রোগ্রাম, বিভিন্ন অপ্রয়োজনীয় ইভেন্ট আয়োজন ও বিদেশ সফরের মাধ্যমে অর্থ অপব্যয় করার অভিযোগ রয়েছে। গত কয়েক বছর বিএফআইইউর পক্ষ থেকে বছরে গড়ে ১০টি বড় তদন্ত দায়সারাভাবে করে সেসব পক্ষ থেকে আর্থিক সুবিধা নেন তিনি।

অভিযোগে দেখা যায়, বিএফআইইউ প্রধান চট্টগ্রামভিত্তিক একটি ব্যবসায়ী গ্রুপ ও আবদুল কাদির মোল্লার থার্মেক্স গ্রুপ থেকে অনৈতিক সুবিধা নিয়ে বিদেশে তাদের অর্থ পাচার বিষয়ে জেনেও পাচার ঠেকাতে কোনো ব্যবস্থা নেননি।

জিনাত এন্টারপ্রাইজের বিরুদ্ধে পাচারের কেসে ৫০ লাখ টাকা ঘুষের বিনিময়ে কেসটি ধামাচাপা দেন। পাশাপাশি ইউসিবি ব্যাংকের বিভিন্ন শাখার মাধ্যমে থার্মেক্স গ্রুপের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে মঞ্জুরি করা ঋণের অর্থ ব্যাংকটির চেয়ারম্যানের স্বার্থসংশ্লিষ্ট কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের হিসাবে স্থানান্তর করার গুরুতর অনিয়ম বিএফআইইউর তদন্তে ধরা পড়লেও এ বিষয়ে ঘুষ নিয়ে কোনো ব্যবস্থা নেননি।
এ ছাড়া একটি বেসরকারি ব্যাংকের অবজারভার থাকা অবস্থায় ওই ব্যাংকের কাছ থেকে নিয়মবহির্ভূতভাবে ২ হাজার স্কয়ার ফিটের একটি ফ্ল্যাট ঘুষ হিসেবে নিয়েছেন মাসুদ বিশ্বাস। অভিযোগে আরও বলা হয়, রূপালী ব্যাংকের গ্রাহক ডলি কনস্ট্রাকশনের অনুকূলে একক গ্রাহক ঋণসীমা অতিক্রম করে ৪০০ কোটি টাকার আর্থিক সুবিধা দিয়েছে সংশ্লিষ্ট ব্যাংক। বিষয়টি বিএফআইইউর তদন্তে ধরা পড়লেও মাসুদ বিশ্বাস ঘুষ নিয়ে যথাযথ ব্যবস্থা নেননি।

পাশাপাশি ন্যাশনাল ব্যাংকের গ্রাহক সান্ত¡না এন্টারপ্রাইজসহ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে ব্যাংকটির চারটি শাখা থেকে প্রায় ১ হাজার ৫০০ কোটি টাকা প্রধান কার্যালয়ের অনুমোদন ছাড়াই বিতরণ করা হয়। মাসুদ বিশ্বাস শাখা ব্যবস্থাপকদের থেকে অবৈধ সুবিধা নিয়ে ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের দায়মুক্তির ব্যবস্থা করেন। এ ছাড়া সাদ-মুসা গ্রুপ একাধিক ব্যাংক থেকে নেওয়া প্রায় ১ হাজার কোটি টাকার ঋণের অনিয়ম যাচাইকালে বিভিন্ন ব্যাংকের গাফিলতি, দুর্নীতি ও অনিয়ম উদঘাটিত হলেও তিনি দাফতরিক ক্ষমতাবলে অবৈধ সুবিধা নিয়ে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া থেকে বিরত থাকেন।

অভিযোগে আরও বলা হয়, ব্র্যাক ব্যাংকের গ্রাহক সাজেদা ফাউন্ডেশনের চুয়া ডেবিট ইনস্ট্রাকশনের বিপরীতে ২০২১ সালে ৮২ হাজার ৪১৬ ডলার আইএনজি ব্যাংক এল-এর গ্রাহক এফএমও এনভি আইএনএল এমএএসএসআইএফের অনুকূলে পাঠানোর মাধ্যমে পাচার করে। মাসুদ বিশ্বাস ব্যাংকটির কাছ থেকে অবৈধ সুবিধা নেওয়ার বিনিময়ে এ অনিয়ম ধামাচাপা দিয়েছেন। এ ছাড়া যমুনা ব্যাংকের ধানমন্ডি শাখার গ্রাহক শিরিন স্পিনিং মিলসের অনুকূলে ১০ কোটি ডলার রেমিট্যান্স পাঠানো এবং এনআরবিসি ব্যাংকের গ্রাহক বিশ^ব্যাংকের কালো তালিকাভুক্ত কোম্পানি টাইগার আইটির নামে ১ হাজার কোটি টাকার ব্যাংক গ্যারান্টি দিতে অনুমোদনের জন্য মাসুদ বিশ্বাস অবৈধভাবে প্রভাব বিস্তার করেন। এ ছাড়া মার্কেট সিস্টেমস ও নগদের আর্থিক কেলেঙ্কারি ধামাচাপা দিতে বিদেশ সফরের জন্য সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান থেকে অর্থ নিয়েছেন তিনি।


সময়ের আলো/আরএস/




https://www.shomoyeralo.com/ad/1698385080Google-News-Update.jpg

সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সৈয়দ শাহনেওয়াজ করিম, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ
নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।

ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫ | ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com
close