ই-পেপার সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪
সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪

কুরআনের গল্প
ঈমান রক্ষায় জীবন দিল যারা
প্রকাশ: শুক্রবার, ৪ অক্টোবর, ২০২৪, ১:৫৮ এএম  (ভিজিট : ২১৮)
পবিত্র কুরআনের পঁচাশি নম্বর সুরার নাম ‘আল বুরুজ’। এই সুরায় মহান আল্লাহ বলেন, ‘অভিশপ্ত হয়েছে গর্তওয়ালারা, অনেক ইন্ধনের অগ্নিসংযোগকারীরা-যখন তারা তার কিনারায় বসেছিল। তারা বিশ্বাসীদের সঙ্গে যা করেছিল, তা নিরীক্ষণ করছিল। তারা তাদেরকে শাস্তি দিয়েছিল শুধু এ কারণে যে, তারা প্রশংসিত ও পরাক্রান্ত আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করেছিল’ (সুরা বুরুজ, আয়াত : ৪-৮)। আয়াতগুলোর তাফসিরে একটা চমৎকার ঘটনা বর্ণিত হয়েছে। ঘটনাটি হাদিসে এসেছে, রাসুল (সা.) সাহাবিদের শুনিয়েছেন।

প্রাচীনকালে এক জাতির বাদশাহর একজন বিশেষ জাদুকর ছিল। রাজা তার বিভিন্ন কাজে সেই জাদুকরের সাহায্য গ্রহণ করত। সেই জাদুকর যখন বৃদ্ধ হয়ে গেল, তখন বাদশাহকে বললেন, আমার কাছে এক বুদ্ধিমান বালককে পাঠিয়ে দিন। আমি তাকে আমার জাদুবিদ্যা শিক্ষা দিয়ে যাব, যাতে আমার মৃত্যুর পর সে আপনার প্রয়োজন পূর্ণ করতে পারে। বাদশাহ একজন বালক নির্বাচন করলেন এবং তাকে জাদুকরের কাছ থেকে শিক্ষাগ্রহণের আদেশ দিলেন। বালক নিয়মিত জাদুকরের কাছে আসা-যাওয়া শুরু করল। তার যাতায়াত পথে একটি আশ্রম ছিল। সেখানে হজরত ঈসা (আ.)-এর ধর্মের অনুসারী ও তাওহিদে বিশ্বাসী একজন আবেদ ছিলেন। এই আবেদ ছিলেন সংসারজীবন থেকে বিমুখ, যাদের তাদের ধর্মীয় পরিভাষায় রাহিব বলা হয়। বালক যাতায়াত পথে রাহিবের কাছে বসত এবং তার কথাবার্তা মনোযোগ দিয়ে শুনত। রাহিবের কথাগুলো বালককে খুব আকর্ষণ করত।

একদিন বালক তার পথ ধরে যাচ্ছিল। হঠাৎ দেখল, একটি হিংস্র প্রাণী রাস্তা বন্ধ করে রেখেছে।লোকজন চলাচল করতে পারছে না। কয়েকটা বর্ণনায় উল্লিখিত হিংস্র প্রাণীর নাম সিংহ বলা হয়েছে। বালক এগিয়ে গিয়ে একটি পাথর তুলে নিল এবং আল্লাহ তায়ালার কাছে দোয়া করল-হে আল্লাহ! তোমার কাছে যদি জাদুকর অপেক্ষা রাহিবের কথা বেশি পছন্দ হয়, তবে এই পাথর দ্বারা হিংস্র প্রাণীর মৃত্যু দাও। এই বলে পাথর ছুড়ে মারার সঙ্গে সঙ্গে প্রাণীটা মারা গেল। মানুষের চলাচলের রাস্তা স্বাভাবিক হয়ে গেল।

এ ঘটনায় মানুষের অন্তরে বালকের প্রতি ভক্তি-বিশ্বাস জন্ম নিল। তারা মনে করল তার বিশেষ কোনো বিদ্যা জানা আছে, যার কারণে সে এটা করতে পেরেছে। এরপর একজন অন্ধ ব্যক্তি তাকে অনুরোধ করল যেন তার দৃষ্টিশক্তি ফিরে পাওয়ার ব্যবস্থা করে দেয়। বালক বলল, রোগবালাই আল্লাহ তায়ালাই দেন এবং ভালোও তিনিই করেন। কাজেই আপনি যদি ওয়াদা করেন আল্লাহ তায়ালার প্রতি ঈমান আনবেন এবং আল্লাহর একত্ববাদ স্বীকার করবেন, তা হলে আমি আপনার ব্যাপারে আল্লাহর কাছে দোয়া করব। লোকটি শর্ত মেনে নিল। ফলে বালকের দোয়ায় আল্লাহ তায়ালা তার দৃষ্টিশক্তি ফিরিয়ে দিলেন। লোকটি ইমান আনল।

এসব ঘটনার খবর যখন বাদশাহর কানে পৌঁছল তিনি ভীষণ ক্ষিপ্ত হলেন। তার নির্দেশে সেই অন্ধ, রাহিব ও বালককে বন্দি করা হলো। বাদশাহ তাদের তাওহিদ ও ঈমান পরিত্যাগ করার জন্য চাপ দিলেন। কিন্তু তারা অস্বীকার করল। ফলে বাদশাহর নির্দেশে অন্ধ ও রাহিবকে শূলে চড়ানো হলো। বাদশাহ বালকের ব্যাপারে কর্মচারীদের হুকুম দিলেন, তারা যেন তাকে কোনো উঁচু পাহাড়ে নিয়ে যায় এবং তার চূড়া থেকে নিচে নিক্ষেপ করে। তারা বালককে উঁচু পাহাড়ে নিয়ে গেল। বালক আল্লাহ তায়ালার কাছে ফরিয়াদ করল। ফলে পাহাড়ে প্রচ- কম্পন শুরু হলো এবং বাদশাহর কর্মচারীদের মৃত্যু হলো। কিন্তু বালকের কিছুই হলো না। সে নিরাপদে ফিরে এলো। দ্বিতীয়বার বাদশাহ হুকুম দিলেন, তাকে নৌকায় চড়িয়ে সাগরে নিয়ে যাওয়া হোক এবং তাকে গভীর সাগরে ডুবিয়ে দেওয়া হোক। 

রাজকর্মচারীরা তাকে সাগরে নিয়ে গেল। বালক আবার আল্লাহ তায়ালার কাছে দোয়া করল। ফলে নৌকা উল্টে গেল এবং কর্মচারীরা সবাই ডুবে মারা গেল। এবারও বালক নিরাপদ থাকল। বাদশাহ যখন কোনোভাবেই বালককে মারতে সক্ষম হলো না, তখন বালক নিজেই বাদশাহকে বলল, আপনি যদি আমাকে মারতে চান তবে আমার পরামর্শ মেনে কাজ করুন। আপনি একটা উন্মুুক্ত ময়দানে জনসাধারণকে সমবেত হতে বলুন এবং তাদের সামনে আমাকে শূলে চড়ান। তারপর ধনুকে তীর সাজিয়ে ‘এই বালকের প্রতিপালক আল্লাহর নামে’ বাক্যটি বলে আমার প্রতি তীর নিক্ষেপ করুন। বাদশাহ তাই করল। তীর বালকের কান ও মাথার মাঝখানে বিদ্ধ হলো এবং সে শহিদ হয়ে গেল। এ দৃশ্য উপস্থিত দর্শকদের অন্তরে বিরাট প্রভাব সৃষ্টি করল। সমবেত লোকজন ঈমান আনল। বাদশাহ প্রচ- ক্ষিপ্ত হয়ে উঠলেন।

তাদের শাস্তি দেওয়ার জন্য সড়কের পাশে গর্ত খুঁড়ে তাতে আগুন জ্বালানো হলো এবং ঘোষণা করে দেওয়া হলো, যারা ঈমান পরিত্যাগ করবে না তাদের আগুনের এ গর্তগুলো নিক্ষেপ করা হবে। কিন্তু মুমিনগণ তাতে একটুও পিছপা হলো না। ফলে তাদের বহু সংখ্যককে সেই সব অগ্নিকু-ে ফেলে জীবন্ত পুড়িয়ে ফেলা হলো। তীর নিক্ষেপে শহিদ হওয়ার পরে বালককে কবরস্থ করা হয়েছিল। বর্ণিত আছে, হজরত ওমর (রা.)-এর যুগে সেই বালককে কবর থেকে তোলা হয়। মারা যাওয়ার সময় তার হাত যেভাবে তার কান ও মাথার মধ্যবর্তী জায়গায় রাখা ছিল, সেভাবেই তাকে পাওয়া যায়।

(তথ্যসূত্র : সুরা বুরুজ, আয়াত : ৪-৮; তিরমিজি, হাদিস : ৩৩৪০; তাফসিরে তাবারি; তাফসিরে ইবনে কাসির)

শিক্ষক, মাদরাসাতুল হেরা, মিরপুর-২, ঢাকা


সময়ের আলো/আরএস/




https://www.shomoyeralo.com/ad/1698385080Google-News-Update.jpg

সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সৈয়দ শাহনেওয়াজ করিম, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ
নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।

ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫ | ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com
close