ই-পেপার সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪
সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪

কীভাবে পালালেন সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জানে না বিজিবি, হচ্ছে তদন্ত
প্রকাশ: বৃহস্পতিবার, ৩ অক্টোবর, ২০২৪, ১০:৪৩ পিএম  (ভিজিট : ২৯২)
দেশের সীমান্ত দিয়ে পালানোর সময় তালিকাভুক্ত বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন বিরোধী ২২ একটিভিস্টকে গ্রেফতার করেছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশে বিজিবি। এরপরও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালসহ আওয়ামী লীগের প্রচুর সংখ্যক নেতাকর্মী পালিয়েছেন। আসলে তারা কীভাবে, কোন সীমান্ত দিয়ে দেশ থেকে পালালেন তা জানে না সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিবি। 

এবসিয়ে বিজিবি বলছে, ‘এর দায় শুধু বিজিবির কেন? আর অবশ্যই তদন্ত হবে, তদন্ত হচ্ছে। কোন বিওপি'র আওতাভুক্ত সীমান্ত এলাকা দিয়ে তারা পালিয়েছেন তা তদন্ত করা হচ্ছে।’

বৃহস্পতিবার ( ৩ অক্টোবর) দুপুরে পিলখানায় বিজিবি সদর দফতরে কনফারেন্স হলে সমসাময়িক বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিবদের এক প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন সীমান্তরক্ষী বাহিনীর মহাপরিচালক (ডিজি) মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান সিদ্দিকী।

বিজিবি ডিজি বলেন, ‘দেশ থেকে পালানোর ঘটনায় বিজিবির দায় আছে। তো শুধু কি বিজিবিই দায়বদ্ধ? কোন সীমান্ত দিয়ে কে গেলেন, তা অবশ্যই তদন্ত করা হবে। এবিষয়ে কোনো ছাড় দেয়া হবে না। গত ৬ আগস্ট থেকে যে স্ক্রল দেখেছেন যে, সীমান্ত পথে পালানো রোধে বিজিবিকে সহায়তা করুন, এই কাজ৷ নির্দেশনা কেউ বিজিবিকে দেয়নি। নিজ উদ্যোগে করেছি। তখন থেকে আমরা চেষ্টা করছি। তথ্য দেয়ার যে সব সংস্থা আছে তারাও যদি তথ্য দেন তাহলে কাজটা সহজ হয়।’

সবাই কি পালিয়ে গেছে? প্রশ্ন রেখেই বিজিবি তিনি বলেন, ‘আমার মনে হয় না। জনবহুল এই দেশে কেউ কেউ আত্মগোপনে আছেন। মাদক ব্যবসায়ী বদিকে ধরার জন্য বেশ ক’টি অভিযান পরিচালনা করেছি। শোনা গেলো! তিনি ট্রলারে করে মিয়ানমার গেছেন। কিন্তু গ্রেফতার হলেন শীতাকুন্ড থেকে। এরকম একদিকে যাবার আওয়াজ দিয়ে অন্য দিক থেকে পালানোর চেষ্টা করছে অনেকে।’ তিনি সাংবাদিকদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, আপনাদের কাছেও তথ্য থাকে। বিজিবি-কে জানান, আমরা ব্যবস্থা নিবো। আমরা পালানো রোধে বদ্ধপরিক’ যোগ করেন বিজিবি ডিজি। 

বিজিবি মহাপরিচালক দাবি করে বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নানামুখি চাপ স্বত্ত্বেও র‍্যাবের মতো বিজিবি হেলিকপ্টা ব্যবহার করেনি, গণগ্রেফতারেও অংশ নেয়নি। তিনি বলেন, ‘আন্দোলনে পুলিশ যে ভূমিকা পালন করেছে সেরকম বিজিবি করতে পারছে না-এরকম জবাব আমাকে দিতে হয়েছে। পরিস্থিতি পরিবর্তিত না হলে আমি এখানে থাকতে পারতাম কিনা তার নিশ্চয়তা দিতে পারতাম না। সরকারি বাহিনীর প্রধান হয়ে সরাসারি আদেশ অমান্য করা দুষ্কর। পরিস্থিতি আপনারা জানেন। আমি যদি তখন সরকারের অর্ডার ডিনাই বা অমান্য করি তাহলে কি আমি আমার কর্মস্থলে ফেরত আসতে পারবো কি-না তার গেরান্টি আপনি বা আমি কেউ দিতে পারতাম? তবে অনেক ক্ষেত্রে আমরা ডিনাই করেছি। আবারো বলছি, পরিস্থিতি পরিবর্তিত না হলে আমি এখানে (বিজিবি) থাকতে পারতাম কি-না তার নিশ্চয়তা দিতে পারতাম না।’

বিজিবি মহাপরিচালক বলেন, ৫ আগস্টে বিজিবিকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল ঢাকার ১৪টি এন্ট্রি (প্রবেশপথ) পয়েন্টে নিরাপত্তায় নিয়োজিত থেকে নির্দেশ দেয়া হয়। যাতে করে বাইরে থেকে ছাত্র-জনতা ঢাকায় প্রবেশ না পারে। কারণ সেদিন গণভবন ঘেরাও কর্মসূচি ছিল। আদেশ একটা জায়গা থেকে পাইনি, দেশের সর্বোচ্চ জায়গা, মন্ত্রী, সিনিয়র ব্যক্তি নাম বলছি না, তারা আমাদের প্রেসারের মধ্যে রেখে ১৪টি জায়গায় পাঠায়। টঙ্গী, যাত্রাবাড়ী, শনিরআখড়া, পোস্তগোলা, আশুলিয়াসহ ১৪টা জায়গায় ৮০/৯০ জনকে মোতায়েন করা হয়। ৫ আগস্ট দুপুরে যখন খবর নিতে ফোন করি, জানতে পারি, প্রত্যেকটি এন্ট্রি পয়েন্টে ১০ থেকে ১৫ হাজার করে ছাত্র-জনতা আসছে। আমি বলেছি সবাই পোস্ট ছেড়ে দিয়ে সরে যাও।

বিজিবি মহাপরিচালক দাবি করে বলেন, অনেকক্ষেত্রে এমন অনেক জায়গায় বিজিবি মোতায়েনই করা হয়নি, কিন্তু বিজিবি’র কথা বলা হয়েছে। একজন রিকশাচালক বলছেন, তার ছেলে বিজিবির গুলিতে মারা গেছে। আমরা খোঁজ নিয়ে তাকে অনুদান দিয়েছি, জানতে চেয়েছি যে তিনি নিজে দেখেছেন কিনা? তিনি বলেছেন, আমি তো দেখিনি। একটা বাহিনীর কথা বলেন যে, তাদের একজন এসে বিজিবি’র গুলিতে মারা যাওয়ার বিষয়টি বলে গেছেন। তখন কেউ এটা চাইছে কিনা জানি না যে, সেসব ঘটনায় বিজিবিকে জড়াতে। তিনি বলেন, কখনো যদি প্রমাণিত হয় যে, আন্দোলনে বিজিবির হাতে কিছু ঘটেছে বা কেউ মারা গেছে তাহলে তার সুবিচার নিশ্চিতে যা করা দরকার তা করা হবে। এটা শুধু আপনাদেরই বলছি না, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের গঠিত বিভিন্ন তদন্ত কমিশনকেও আমরা একই কথা বলেছি।

বিজিবি মহাপরিচালক বলেন, ছাত্র-আন্দোলনের ঘটনায় একজন বিজিবি সদস্য নিহত হয়েছেন। র‍্যাবে দুজন বিজিবি সদস্য ডেপুটেশনে ছিল তারা নিহত হয়েছেন। বিজিবির মোত ১০৩ জন সদস্য আহত হয়। দুর্ভাগ্যজনকভাবে ১০৩ জন সদস্যের মধ্যে বেশকিছু সদস্য আহত হয়েছে পুলিশের গুলিতে। একই জায়গায় ডিউটি করাকালীন এমন ঘটনা ঘটে। তবে ভাগ্য ভালো ছিল এগুলো সব ছররা গুলি ছিল। বাকি সদস্য আহত যারা ছিলেন তারা খুব বেশি গুরতর আহত নয়। বেশিরভাগই সুস্থ হয়েছেন।

পুলিশের মতো বিজিবির কোনো সদস্য পলাতক আছেন কি-না? জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিজিবির কোনো সদস্য পলাতক নেই। বিজিবির কোনো অস্ত্র-গোলাবারুদ লুট হয়নি। তবে আমাদের বেশকিছু গাড়ি পুড়ে গেছে। বিজিবির জনবল প্রায় ৫৭ হাজার। পুরো বিজিবি সদস্যের ৬ শতাংশের কিছু বেশি ছাত্র-জনতার আন্দোলনে মোতায়েন ছিল। কেন এতো কম মোতায়েন হয়েছে সেজন্য আগের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও আগের রাষ্ট্রীয় পর্যায়ের নেতাদের কাছে কৈফিয়ত ও জবাবদিহি দিতে হয়েছে অসংখ্যবার। পুলিশ যে ভূমিকা পালন করছে সেই ভূমিকা বিজিবি অনেকক্ষেত্রে ইচ্ছে করে পালন করছে না সে বিষয়ে আমাকে দোষারোপ করা হয়েছে।

সীমান্তে পিঠ দেখাবে না বিজিবি উল্লেখ করে বাহিনীর মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান সিদ্দিকী বলেন, বিজিবির পক্ষ থেকে আশ্বাস-নিশ্চিত করছি, সীমান্ত রক্ষার জন্য আমরা বদ্ধপরিকর। নিয়ম-নীতির বাইরে আমরা বিএসএফ বা ভারতকে ছাড় দেবো না। কারণ, 'বিএসএফের চাইতে বিজিবি কোনো অংশে কম নয়।'

৫ আগস্টের পর অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব নেয়ার পর শোনা গেছে ভারতের সঙ্গে টানাপোড়েন সম্পর্ক চলছে। বর্তমানে ভারত সম্পর্কে বাংলাদেশের অবস্থানটা আসলে কি? জানতে চাইলে বিজিবি মহাপরিচালক বলেন, আমি সীমান্ত ও বিজিবির প্রেক্ষাপট থেকে বলতে পারি, সীমান্তে যারা মাইনোরিটি আছে তারা চলে যেতে পারে, এই ধরণের অপপ্রচারণা অতিরঞ্জিতভাবে প্রচার করা হচ্ছিল। সেসময় বিএসএফ তাদের ক্যাম্পগুলোতে জনবল বাড়িয়েছে। তারা অত্যন্ত সতর্ক অবস্থায় দেখা গেছে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে তাদের (ভারতের) সেনাবাহিনী আসার কথা নয়, কিন্তু সেসময়ে আমরা ভারতীয় সেনাবাহিনীর গাড়ির মুভমেন্ট সে পর্যন্ত দেখেছি, যেখানে তাদের আসার কথা না। হয়তো তারা শঙ্কায় ছিল যে বড় সংখ্যক একটা অংশ বাংলাদেশ থেকে ভারতে যায় কি-না। আমরা এটার লিখিত ও মৌখিক প্রতিবাদ করেছি। পরবর্তীতে ডিজি পর্যায়ে বিএসএফের সঙ্গে যে মিটিং হবে সেখানে উত্থাপন করা হবে। তবে তারা (বিএসএফ) জানিয়েছে, তাদের সেনাবাহিনী সেখানে ছিল না। তবে তারা নিরাপত্তা বাড়িয়েছে। তারা নানাভাবে এদিকে খেয়াল রাখার চেষ্টা করছে। আমাদের দেশের কিছু কিছু অপরাধী চক্র বিএসএফকে তথ্য দিচ্ছে দাবি করে বিজিবি মহাপরিচালক বলেন, আমরা এরকম কয়েকজনকে শনাক্ত করে এনটিএমসি’র মাধ্যমে পুলিশে সোপর্দ করেছি।

৫ আগস্টের পর ভারত বিরোধী মনোভাব আরও বেড়েছে। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেছেন আমরা আর সীমান্তে পিঠ দেখাবো না। এরমধ্যে বিজিবি কর্তৃক বিএসএফ সদস্যও আটক হয়েছে।

কিছুদিন আগে কুলাউড়ায় স্বর্ণা দাস, ঠাকুরগাঁওয়ে জয়ন্ত মারা গিয়েছে সীমান্তে, যারা সাবালকই নয়। তাহলে তাদের হত্যা করতে হবে কেন? তারা তো নিরস্ত্রও ছিল। এদুটি ঘটনার পরই ওই বিএসএফ সদস্য ঢুকে পড়লে আমরা আটক করি। আমরা বলেছি, বিওপি পর্যায়ের বৈঠকে আমরা ফেরত দেবো না। ব্যাটালিয়ন পর্যায়ের বৈঠকের প্রস্তাবেও আমরা বলেছি হবে না, সেক্টর কমান্ডার পর্যায়ে বৈঠক করে তাকে ফেরত দিয়েছি।

ওই বিএসএফ সদস্য লিখিত দিয়েছে সে বাকি জীবনে আর এ ধরণের কাজ করবে না। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে, পরদিন কিছু ভারতীয় পত্রিকায় লেখা হয়, বাংলাদেশী কৃষক নিরস্ত্র অবস্থায় বিএসএফ সদস্যকে পেয়ে ধরে নিয়ে আসছে। সেটা নিয়ে আমাদের দেশে কোনো খবর হয়নি। আমরাই প্রতিবাদ পাঠিয়েছি তাদের পত্রিকায়।

সময়ের আলো/এম 




https://www.shomoyeralo.com/ad/1698385080Google-News-Update.jpg

সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সৈয়দ শাহনেওয়াজ করিম, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ
নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।

ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫ | ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com
close