ই-পেপার সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪
সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ারের বিশেষ সাক্ষাৎকার
সময় বেশি নিলে চ্যালেঞ্জে পড়তে পারে সরকার
প্রকাশ: বৃহস্পতিবার, ৩ অক্টোবর, ২০২৪, ২:৪৩ এএম  (ভিজিট : ৫১৬)
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার। অন্তর্বর্তী
সরকারের সংস্কার উদ্যোগ, নির্বাচন, বিএনপির সঙ্গে সম্পর্ক, ইসলামি দলগুলোর সঙ্গে জোটের প্রক্রিয়া,একাত্তরে জামায়াতের ভূমিকাসহ নানা বিষয়ে সময়ের আলোর সঙ্গে খোলামেলা কথা বলেছেন তিনি।

মঙ্গলবার রাজধানীর মগবাজারে জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সাক্ষাৎকার নেন নিজস্ব
প্রতিবেদক সাব্বির আহমেদ।

সময়ের আলো : সংস্কার কাজ কত দিনের মধ্যে শেষ করা সম্ভব বলে বলে মনে করছেন?
মিয়া গোলাম পরওয়ার : সরকার ৬টি কমিশনের মাধ্যমে সংস্কার করতে যাচ্ছে। কমিশন ডিসেম্বরের মধ্যে রিপোর্ট দেবে। জামায়াতে ইসলামীর তরফ থেকে সংস্কার প্রস্তাব দেওয়া হবে। খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে জনসম্মুখে তুলে ধরব।

সংসদ নির্বাচন কত দিনের মধ্যে হওয়া উচিত বলে মনে করছেন?
মিয়া গোলাম পরওয়ার : নির্বাচন খুব কম সময়ের মধ্যেও না, আবার বেশি সময়ের মধ্যে না। বেশি সময় নিলে অন্তর্বর্তী সরকার দেশি-বিদেশি নানা চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে পারে। এ জন্য আমরা বলেছি ন্যূনতম সংস্কারের কাজ করতে হবে। গোটা রাষ্ট্রের সংস্কার তো অন্তর্বর্তী সরকার করতে পারবে না। কারণ তারা নির্বাচিত নয়। সংসদ ছাড়া আইনি ও সাংবিধানিক বিধানে সব কাজ করা সম্ভব নয়। তাই কমপক্ষে প্রশাসন, নির্বাচন কমিশন, বিচার বিভাগসহ কয়েকটি জায়গায় সংস্কার দরকার। এরপর দ্রুত নির্বাচনের পরিবেশ নিশ্চিত করে ভোটের আয়োজন করতে হবে। সেটা ৬ মাসেও হতে পারে, ৮ মাসেও হতে পারে। আবার এক বছরেও হতে পারে। আমরা মনে করি এখানে সময়ের চেয়ে পরিস্থিতি মূল বিষয়। দুই বছরেও যদি পরিবেশ ঠিক না হয় তা হলে এত সময় দিয়ে লাভ কী? তবে হ্যাঁ, আমরা একটি সময়সীমা বেঁধে দেব। সেটা আরও পরে, সরকারের কার্যক্রম, অগ্রগতি পরিবেশ পরিস্থিতি দেখে।

প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব নির্বাচন আয়োজনের সময়সীমা নিয়ে একটি ব্যাখ্যা দিয়েছেন। তিনি সংস্কার-পরবর্তী ১৮ মাসের মধ্যে নির্বাচন আয়োজনের কথা বলেছেন। এই বক্তব্য প্রসঙ্গে কী বলবেন?
মিয়া গোলাম পরওয়ার : প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব কী বলেছেন, তার ব্যাখ্যা ওনি দেবেন। এটি ওনার কথা নাকি প্রধান উপদেষ্টার কথা, তা পরীক্ষা-নিরীক্ষার ব্যাপার আছে। অন্যের মন্তব্য নিয়ে কথা বলাটা রাজনৈতিক দর্শন থেকে সঠিক নয়। ওই ব্যাপারে আমরা এখনই কোনো মন্তব্য করতে চাই না। এতে মানুষের মধ্যে ভুল বার্তা যেতে পারে।

সংসদবিহীন সরকারের পক্ষে সংবিধান সংস্কার সম্ভব?
মিয়া গোলাম পরওয়ার : হ্যাঁ, সংবিধান সংশোধনে সংসদের প্রয়োজন। তবে বিধি-বিধান হচ্ছে রাষ্ট্রপতির অধ্যাদেশের মাধ্যমে কিছু জরুরি আইন প্রণয়ন করা যায়, যা পরে সংসদের মাধ্যমে অনুমোদন করে নিতে হয়। সংবিধানের যেসব জায়গায় সংশোধন দরকার তা আমরা চিহ্নিত করছি।

সংবিধানে রাষ্ট্রধর্মের বিষয় নিয়ে জামায়াতের কোনো পর্যবেক্ষণ আছে কি না?
মিয়া গোলাম পরওয়ার : এটাকে আমরা বড় করে দেখছি না। সংবিধানে তো এটি অন্তর্ভুক্ত হয়ে গেছে। এটার পক্ষে-বিপক্ষে কথা আছে। মুসলিমপ্রধান দেশে রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম থাকলে অসুবিধা কী? একজন রাষ্ট্রপতি (এইচ এম এরশাদ) এটা করে গেছেন, এখন অহেতুক বিতর্ক করে লাভ নেই।

আওয়ামী লীগ আগামী নির্বাচনে আসতে পারবে? দলটির সভাপতি শেখ হাসিনার বিচারের বিষয়ে আপনাদের অবস্থান কী?
মিয়া গোলাম পরওয়ার : আওয়ামী লীগ মানবতাবিরোধী অপরাধ করেছে। হাজার লোকের খুনের হুকুমদাতা ছিল শেখ হাসিনা। সরকারপ্রধান হিসেবে গুম খুনের জন্য সে-ই দায়ী। ফলে অপরাধীদের বিচার করতে হবে। ইতিমধ্যে ট্রাইব্যুনাল গঠিত হয়েছে। আর যারা এত অপকর্ম করতে পারে, ছাত্র-জনতাকে হত্যা করতে পারে তাদেরকে জনগণ রাজনীতি করতে দেবে না। তাই আওয়ামী লীগের মৌলিক ও নৈতিক অধিকার নেই রাজনীতি করার।

সম্প্রতি কিছু পাল্টাপাল্টি বক্তব্যে বিএনপির সঙ্গে জামায়াতের সম্পর্কের জল ঘোলা হয়েছিল। এখন সম্পর্ক কেমন?
মিয়া গোলাম পরওয়ার : আমি মনে করি, বিএনপির সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক আগের মতোই আছে। দেখাদেখি, কথাবার্তা হচ্ছে, মতবিনিময়ও হচ্ছে। রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যেমন সৌহার্দপূর্ণ সম্পর্ক থাকা উচিত তেমনই আছে। অনেক সময় রাজনীতিতে ‘সিøপ অব টাং’ (অনিচ্ছাকৃত ভুল) হয়ে থাকে। অথবা কথা বের করার জন্য কেউ আরেকটা বলে ফেলে। আমরা চাই না কোনো কথাবার্তার মাধ্যমে দলগুলোর মধ্যে দূরত্ব বাড়ুক। ধৈর্যের সঙ্গে, উদারতার সঙ্গে কথা বলার দিকে রাজনীতিবিদদের মনোযোগ থাকা উচিত। কেননা কোনো কারণে ফ্যাসিবাদবিরোধী ঐক্য ভেঙে গেলে বিরোধীরা সুযোগ নেবে।

জামায়াত বরাবরই বিএনপির সঙ্গে জোটবদ্ধভাবে নির্বাচন করেছে। এবারের চিন্তাভাবনা...
মিয়া গোলাম পরওয়ার : জোট যদি হয়, আমরা প্রস্তুত আছি। সমঝোতা হলেও রাজি। এমনকি ইসলামি দলগুলোর সঙ্গে ঐক্য হলেও রাজি। দেশের কল্যাণে ফ্যাসিবাদী দোসরদের হাত থেকে রক্ষা পেতে যেভাবে ভালো হয়, জামায়াত তাই করবে।

এককভাবে নির্বাচন করলে কেমন আসন পাবেন বলে প্রত্যাশা করছেন?
মিয়া গোলাম পরওয়ার : আসন কত পাওয়া যাবে তা এখন কেউ বলতে পারবে না। নির্বাচন তো এখনও অনেক দূর। ৩০০ আসনেই নির্বাচন করার জন্য জামায়াত প্রস্তুত। আমাদের প্রার্থী আছে। নির্বাচনের সময় ঘনিয়ে এলে দলের অবস্থা দেখে বোঝা যাবে কোথায় কী করতে হবে।

জামায়াত ইসলামী দলগুলোর সঙ্গে যে জোট করার চেষ্টা করছে, তা কতদূর এগোল? জামায়াতের সঙ্গে তো অনেক দলের মতপার্থক্য রয়েছে।
মিয়া গোলাম পরওয়ার : হ্যাঁ, মতপার্থক্য আছে বলেই তো এত দল। পার্থক্য না থাকলে দেশে একটি দল থাকত। জোট গঠনের ক্ষেত্রে পার্থক্যগুলো কমিয়ে আনার চেষ্টা করা হচ্ছে। পার্থক্যগুলো নিজেদের জায়গায় রেখে ন্যূনতম সাধারণ কিছু ইস্যুতে ঐক্যের ফর্মুলা বের করা হচ্ছে।

সম্প্রতি জামায়াতের ছাত্র সংগঠন ছাত্রশিবির হঠাৎ প্রকাশ্যে রাজনীতিতে আসল। আন্দোলনে তাদের ভূমিকা নিয়ে সমালোচনা হচ্ছে। কী বলবেন?
মিয়া গোলাম পরওয়ার : কিছু নিন্দুক সমালোচনা করছে। দেখুন শিবির ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ে সবচেয়ে মজলুম সংগঠন। তাদের ওপর সীমাহীন নির্যাতন হয়েছে। আগে প্রকাশ্যে সংগঠন করা তো দূরের কথা, শিবির সন্দেহ হলেই নির্যাতন চলত। বুয়েটের শিক্ষার্থী আবরারকে মারা হলো শিবির সন্দেহে। পুরান ঢাকায় সনাতন ধর্মের বিশ্ব জিৎকে শিবির সন্দেহে কুপিয়ে মেরেছে। অন্য কোনো ছাত্র সংগঠনের নামে সন্দেহের বশে মারার ঘটনা নেই। যেখানে পরিচয় দেওয়া মানে জীবন বিপন্ন সেখানে পরিচয় লুকিয়ে সংগঠন করেছে। কৌশল অবলম্বন করে তৎপরতা চালিয়েছে। রণক্ষেত্রে অনেকেই এটি করে থাকে। এখন অনেকে বলার চেষ্টা করছেন শিবির ছাত্রলীগের সঙ্গে যুক্ত ছিল। এটা মিথ্যা তথ্য। শিবিরের ছেলেরা কখনও ছাত্রলীগের সঙ্গে জড়িত ছিল না।

একাত্তরের জামায়াত ও বর্তমান জামায়াতের মধে পার্থক্য আছে?
মিয়া গোলাম পরওয়ার : অনেক পার্থক্য। সংগঠনের তখনকার ও বর্তমান গঠনতন্ত্র আলাদা। তখন বাংলাদেশ ছিল না, আরেকটি দেশ ছিল। সেই দেশের প্রেক্ষিতে সংগঠনের কর্মনীতি ও পদ্ধতি ছিল। এখন আমাদের গঠনতন্ত্রে মুক্তিযুদ্ধ স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব সংরক্ষণ ও দেশ গড়ার প্রতি অঙ্গীকারবদ্ধ। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস আমরা স্কুলে পড়তাম। রাজনীতি বুঝি না। জামায়াতের তখনকার ভূমিকার কথা আমি বলতে পারব না। যারা তখন ছিলেন, তারা এখন বেঁচে নেই। তখন তারা ওই সময়ের জন্য যেটা ভালো মনে করেছেন, করেছেন। সেই ব্যাখ্যা তারা দিতে পারবেন। এখনকার ব্যাখ্যা আমি দিতে পারব। এখনকার দায়িত্ব আমাদের।

দলের নিবন্ধন কবে ফিরে পাবেন বলে আশা করছেন?
মিয়া গোলাম পরওয়ার : হাইকোর্ট এখন বন্ধ। খুললেই শুনানি হবে। রায়ের অপেক্ষায় আছি। নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধন ও দলীয় প্রতীক দাঁড়িপাল্লা একসঙ্গে ফিরে পাব, এমন ন্যায়বিচারের প্রত্যাশা করছি।

৫ আগস্টের পর মানবিক ও সামাজিক কাজের মাধ্যমে মানুষের দুয়ারে যাচ্ছে জামায়াতের নেতাকর্মীরা। মানুষ কীভাবে নিচ্ছে?
মিয়া গোলাম পরওয়ার : মানুষের মনের কথা আমরা বুঝতে পারি। কার অন্তরে কী কথা আছে তা সব জানি না। তবে মানুষের যে ভালোবাসা, সমর্থন, তা চোখে পড়ার মতো। ব্যতিক্রমধর্মী কিছু কাজ করেছে, যেমন ছাত্র-জনতার আন্দোলনে নিহত এক হাজার পরিবারের পাশে দাঁড়িয়েছে জামায়াত। বন্যার্তদের পাশে দাঁড়ালাম। এগুলো করতে গিয়ে সব জেলায় সফর করছেন দায়িত্বশীল নেতারা। এর মাধ্যমে সংগঠনের জনসংযোগ কার্যক্রম বাড়ছে। আগে অনেক সাংগঠনিক কার্যক্রম সরকারের বাধার কারণে হতো না, তা এখন নির্বিঘ্নে হচ্ছে। আগে সমাবেশের অনুমতি লাগত। এখন আলহামদুলিল্লাহ তা কেটে গেছে। এর ফলে মানুষ জামায়াতের সরাসরি কাছে আসতে পারছে। সংগঠনকে জানার সুযোগ পাচ্ছে। কৌতূহল বাড়ছে। ফলে তাদের ধারণাও বদলে যাচ্ছে। যার ফলে দেশ জাতি নিয়ে আমাদের পরিকল্পনাগুলো মানুষের সামনে তুলে ধরার সুযোগ পাচ্ছি।

জামায়াতের এত অর্থের জোগান আসে কোথা থেকে?
মিয়া গোলাম পরওয়ার : সব অর্থের উৎস হচ্ছে সংগঠনের কর্মীদের পকেট। জামায়াতে ইসলামীর সদস্যরা প্রতি মাসে তার আয়ের ৫ শতাংশ সংগঠনে জমা দেয়। এই নিয়ম অন্য কোনো দলের মধ্যে নেই। আর কর্মী তো আছে লাখ লাখ। তারাও টাকা দেয়। কিন্তু নির্দিষ্ট করা নেই। সংগঠনে অর্থ না দিলে কর্মীর যোগ্যতা হারাবে। প্রতি মাসে সংগঠনে যা টাকা আসে, সব খরচও করতে পারি না। এটা আল্লাহর বরকত।

আপনাদের বিরুদ্ধে বহু মামলা ছিল। সবশেষ কী অবস্থা?
মিয়া গোলাম পরওয়ার : মামলায় হাজিরা দিচ্ছি। কিছু খালাস পাচ্ছি সরকারের নির্বাহী আদেশে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার রাজনৈতিক হয়রানিমূলক মামলা প্রত্যাহার করবে বলে আশা করি।


সময়ের আলো/আরএস/




https://www.shomoyeralo.com/ad/1698385080Google-News-Update.jpg

সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সৈয়দ শাহনেওয়াজ করিম, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ
নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।

ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫ | ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com
close