ই-পেপার সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪
সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪

চার শর্তে ফার্ম করার অনুমতি দিয়েছে উপজেলা প্রশাসন রাতের আঁধারে এস্কেভেটর দিয়ে চালানো হচ্ছে ধ্বংসযজ্ঞ
ডেইরি ফার্মের নামে টিলা কেটে সাবাড়
প্রকাশ: বৃহস্পতিবার, ৩ অক্টোবর, ২০২৪, ২:২৩ এএম আপডেট: ০৩.১০.২০২৪ ২:২৬ এএম  (ভিজিট : ১৭২)
চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি উপজেলার পাইন্দং ইউনিয়নে বিশাল একটি টিলা কেটে সাবাড় করে ফেলা হচ্ছে। এরই মধ্যে টিলার উপরিভাগ থেকে ৩-৪ ফুট কেটে ফেলা হয়েছে। ডেইরি ফার্মের নামে এই ধ্বংসযজ্ঞ চালাচ্ছেন মো. জমীম উদ্দীন নামের স্থানীয় এক ব্যবসায়ী। স্থানীয়রা জানান, গত কয়েক দিন ধরে দৈনিক রাতের আঁধারে এস্কেভেটর দিয়ে টিলা কাটা হচ্ছে। বাইরের লোকজন গেলেই এস্কেভেটর সরিয়ে ফেলা হয়।

টিলা কাটার বিষয়ে জানতে চাইলে জসীম উদ্দীনের ছেলে মো. আসাদুজ্জামান মারুফ বলেন, এসব আমাদের নিজস্ব সম্পত্তি। এখানে একটি ডেইরি ফার্ম করার জন্য উপজেলা প্রশাসন অনুমতি দিয়েছে। আপনারা চাইলে কাগজপত্রও দেখাতে পারি। টিলা কাটা সম্পূর্ণ বেআইনি একটি কাজ হওয়ার পরও তারা কেন এভাবে টিলা কাটছেন জানতে চাইলে জসীম উদ্দীনের ছেলে মো. আসাদুজ্জামান মারুফ বলেন, বিষয়টি দেখার দায়িত্ব প্রশাসনের। তারাই দেখবে।

অন্যদিকে ফটিকছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, চারটি শর্তের ভিত্তিতে প্রশাসন সেখানে ডেইরি ফার্ম করার অনুমতি দিয়েছে। তার মধ্যে অন্যতম প্রধান একটি শর্ত হচ্ছে, কোনোভাবেই টিলা কাটা যাবে না। এর ব্যত্যয় ঘটলে পরিবেশ আইনে যথাযথ আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কোনো অবস্থাতেই ছাড় দেওয়া হবে না।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, অভিযুক্ত ব্যবসায়ী মো. জসীম উদ্দীন উপজেলার ফটিকছড়ি পৌরসভার উত্তর ধুরুং এলাকার জোহরা বাপের বাড়ির বাসিন্দা। তিনি উপজেলার বিবিরহাট বাজারের একজন প্রবীণ ব্যবসায়ী। তার সন্তানরা স্থানীয় বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে জড়িত বলে স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে।

স্থানীয়দের কাছ থেকে পাহাড় কাটার খবর পেয়ে বুধবার সরেজমিনে দেখা যায়, চট্টগ্রাম-খাগড়াছড়ি আঞ্চলিক মহাসড়কের আশরাফাবাদ দরবার শরিফ-সংলগ্ন এলাকায় বিশালাকার টিলাটি কেটে ফেলা হচ্ছে। টিলাটির উপরিভাগ থেকে প্রায় ৩-৪ ফুট করে কেটে সমান করে ফেলা হয়েছে। আরো কয়েক ফুট গভীর করে কাটার কাজ চলছে। গত দুদিন ধরে আঞ্চলিক এ মহাসড়কের পাশে টিলা কাটার মহোৎসব চললেও দেখার যেন কেউ নেই! এ সময় আশপাশের লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ঘটনাস্থলে গণমাধ্যমকর্মীদের যাওয়ার খবর পেয়েই এস্কেভেটরটি সরিয়ে ফেলা হয়েছে। এ সময় এগিয়ে আসেন জসীমের ছেলে মারুফ। তিনি সেখানে উপস্থিত সব গণমাধ্যমকর্মীকে গালমন্দ করেন। 

স্থানীয় বাসিন্দা মো. শহীদুল আকবর বলেন, কয়েক দিন থেকে বিশালাকার টিলাটি অবাধে কাটা হচ্ছে। কখনো দিনের বেলায়, আবার কখনো রাতে কাটা হয়। তবে এস্কেভেটরটি দিনের বেলায় দেখা যায় না। লুকিয়ে রাখা হয়। 

টিলা কাটার বিষয়ে জানার জন্য মো. জসীম উদ্দীনের মুঠোফোনে কয়েকবার কল করেও তাকে পাওয়া যায়নি। তার মুঠোফোনটি বন্ধ। 

এ বিষয়ে জানার জন্য যোগাযোগ করা হলে পাইন্দং ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মো. সরোয়ার হোসেন স্বপন বলেন, বিষয়টি কেউ আমাকে অবগত করেনি। তবে লোকজনের কাছে শুনেছি। টিলা কাটার ঘটনাটি অবশ্যই দুঃখজনক। পরিবেশ রক্ষা করা আপনার আমার সবার দায়িত্ব।
উত্তর জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক মো. সরোয়ার আলমগীর বলেন, বিষয়টি আমার জানা নেই। টিলা কাটা সম্পূর্ণ বেআইনি। বিষয়টি প্রশাসন দেখবে। বিএনপি সব ধরনের বেআইনি কাজের বিরুদ্ধে।

ফটিকছড়ি উপজেলার পরিবেশ সাংবাদিক সমিতির সভাপতি মো. সোলায়মান আকাশ বলেন, এর আগেও সেখানে কয়েকবার টিলা কাটার ঘটনা ঘটেছে। সরকার পরিবেশ সুরক্ষায় জিরো টলারেন্স নীতিতে অটল। তাই টিলা কাটা বন্ধ করতে এবং অপরাধীকে বিচারের আওতায় আনতে প্রশাসন প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে বলে আমরা প্রত্যাশা করি।


সময়ের আলো/আরএস/




https://www.shomoyeralo.com/ad/1698385080Google-News-Update.jpg

সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সৈয়দ শাহনেওয়াজ করিম, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ
নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।

ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫ | ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com
close