ই-পেপার সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪
সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪

সংস্কার ও যন্ত্রাংশ ক্রয়
রেলে ২৪ কোটি লোপাট
প্রকাশ: বৃহস্পতিবার, ৩ অক্টোবর, ২০২৪, ১:০২ এএম  (ভিজিট : ৩৩১)
বাংলাদেশ রেলওয়ে চট্টগ্রাম, ঢাকা, পাকশী ও লালমনিরহাট বিভাগীয় প্রকৌশলীর কার্যালয় আবাসিক ভবন মেরামত না করা সত্ত্বেও বিল পরিশোধ করেছে ১১ কোটি ৯ লাখ টাকা। রেলওয়ের বাসা মেরামতের বিষয়ে সংশ্লিষ্ট ব্যবহারকারীর কোনো চাহিদাপত্র ছাড়াই অর্থবছরের শেষে জুন মাসেই বেশি কাজ দেখানো হয়েছে। এর মধ্যে চট্টগ্রাম বিভাগীয় প্রকৌশলী-২-এর কার্যালয় ৫০টি কার্যাদেশের মাধ্যমে ৬ কোটি ১৪ লাখ টাকা ও বিভাগীয় প্রকৌশলী-৩-এর কার্যালয় ৬টি কার্যাদেশের মাধ্যমে ১ কোটি ২৬ লাখ টাকা এবং ঢাকা বিভাগীয় প্রকৌশলী-১ ও ২-এর কার্যালয় ১৯টি কার্যাদেশের মাধ্যমে ২ কোটি ৭৩ লাখ বিল পরিশোধ করলেও বাস্তবে কোনো মেরামত কাজ করা হয়নি বলে নিরীক্ষা প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। রেলওয়ের ২০১৯-২০ ও ২০২০-২১ অর্থবছরের হিসাব সম্পর্কিত নিরীক্ষা প্রতিবেদনে রেলের সংস্কার ও যন্ত্রাংশ ক্রয়ের নামে ২৪ কোটি টাকা লোপাটের চিত্র ধরা পড়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, বিধি অনুযায়ী রেলওয়ের সব স্থাপনা পূর্ত শাখার ঊর্ধ্বতন উপ-সহকারী প্রকৌশলী নিয়মিত পরিদর্শন করবেন এবং কোনো স্থাপনা মেরামতের প্রয়োজন হলে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা অনুযায়ী মেরামত কাজের সংক্ষিপ্তসার তৈরি করে বিভাগীয় কর্মকর্তা বরাবর চাহিদা পাঠাবেন। কিন্তু উল্লিখিত মেরামত কাজগুলো ইতিপূর্বে কখন করা হয়েছে তার ওপর নির্ভর করবে আদৌ মেরামতের প্রয়োজন আছে কি না। কত বছর আগে বাসাগুলো মেরামত করা হয়েছে সে সম্পর্কে কোনো কাগজপত্র নথিতে পাওয়া যায়নি। তা ছাড়া মেরামত সম্পন্ন হওয়ার পর বাড়িতে বসবাসকারী ব্যক্তি কর্তৃক মেরামত সম্পন্ন হয়েছে এ মর্মে কোনো প্রত্যয়নপত্র গ্রহণ করা হয়নি। তাগিদপত্র ইস্যু করা সত্ত্বেও সংশ্লিষ্ট দফতর চাহিদাপত্র ও প্রত্যয়নপত্রের কোনো কপি নিরীক্ষা বিভাগকে সরবরাহ করেনি। আবাসিক ও অফিস ভবন তথা কোনো স্থাপনা মেরামত করার প্রাথমিক ক্রাইটেরিয়া হিসেবে চাহিদাপত্র না থাকা এবং মেরামত কার্য সম্পাদন-পরবর্তী ওই বাড়িতে বসবাসকারী ব্যক্তি কর্তৃক মেরামত কার্য সম্পন্ন হয়েছে মর্মে কোনো প্রত্যয়ন না থাকায় প্রমাণিত হয় ভবনগুলোতে কোনো মেরামত কাজ করা হয়নি। সুতরাং আবাসিক ও অফিস ভবনগুলোর মেরামত কাজ না করেই বিল পরিশোধ করায় সরকারের ১১ কোটি ৯ লাখ টাকা ক্ষতি হয়েছে। নিরীক্ষা প্রতিবেদনে বলা হয়, ওই সময়ে অফিস প্রধান হিসেবে দায়িত্বে ছিলেন বাংলাদেশ রেলওয়ের প্রধান প্রকৌশলী (পূর্ব) চট্টগ্রাম মো. সুবক্ত গীন এবং প্রধান প্রকৌশলী (পশ্চিম) রাজশাহী আল ফাত্তাহ মো. মাসউদুর রহমান ও মো. মনিরুল ইসলাম ফিরোজী। 

অভিযোগের বিষয়ে রেলওয়ের সংশ্লিষ্ট দফতরগুলো নিরীক্ষা বিভাগকে লিখিত জবাবে জানিয়েছে বাসাগুলো জরুরি মেরামতের  প্রয়োজন হওয়ায় বিধি মোতাবেক দরপত্রের মাধ্যমে ঠিকাদার নিয়োগপূর্বক মেরামত করা হয়েছে। প্রাক্কলন যাচাই-বাছাই করে যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমোদনের পরে দরপত্র আহ্বান ও চুক্তিপত্র করা হয়। পরবর্তীতে ঠিকাদার কর্তৃক কাজ সম্পাদনের পর বিল পরিশোধ করা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে কোনো অনিয়মিত ব্যয় হয়নি। ভবিষ্যতে চাহিদাপত্র ও প্রত্যয়ন-সংশ্লিষ্ট নথিতে সংরক্ষণের ব্যত্যয় যাতে না হয় সে বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে। 

এদিকে সৈয়দপুরের কারখানায় লোকো, কোচ ও ওয়াগনগুলোর অবস্থান না থাকা সত্ত্বেও এর বিপরীতে মালামাল খরচ দেখানোর ফলে ৮১ লাখ টাকা ক্ষতি হয়েছে। একইভাবে রেলওয়ের প্রধান যন্ত্র প্রকৌশলী, পূর্ব-এর নিয়ন্ত্রণাধীন বিভাগীয় যন্ত্র প্রকৌশলী, লোকো, চট্টগ্রাম, বিভাগীয় যন্ত্র প্রকৌশলী, লোকো, কমলাপুর, ঢাকা এবং বিভাগীয় যন্ত্র প্রকৌশলী, ক্যারেজ অ্যান্ড ওয়াগন, কমলাপুর, ঢাকা কার্যালয়ে ২০১৯-২০ অর্থবছরে নিরাপত্তা সামগ্রীর মালামাল ক্রয় না করা সত্ত্বেও ভুয়া বিল প্রদানের মাধ্যমে ১ কোটি ৫৭ লাখ টাকা লোপাট করা হয়েছে। নিরীক্ষা প্রতিবেদনে বলা হয়, রেলওয়ের স্টোর বিভাগ বিল পরিশোধ করা সত্ত্বেও ভোক্তা বিভাগ কোনো মালামাল বুঝে পায়নি। এ বিষয়ে  ভোক্তা বিভাগের পক্ষ থেকে লিখিত জবাবে বলা হয়েছে যেসব মাল সরবরাহের কথা উল্লেখ করা হয়েছে তা তাদের দফতর কর্তৃক গ্রহণ করা হয়নি। এতে প্রমাণিত হয় মালামাল ক্রয় না করেই সরকারি কোষাগার থেকে অর্থ উত্তোলন করা হয়েছে।  

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, বাংলাদেশ রেলওয়ের প্রধান সরঞ্জাম নিয়ন্ত্রক, পাহাড়তলী, চট্টগ্রাম, জেলা সরঞ্জাম নিয়ন্ত্রক (ডিপো), পাহাড়তলী ও সৈয়দপুর এবং রেলওয়ের প্রধান বাণিজ্যিক ব্যবস্থাপক, পশ্চিমের অধীন বিভিন্ন স্টেশনে ও বিভাগীয় চিকিৎসা কর্মকর্তা, পাকশী, জেলা সরঞ্জাম নিয়ন্ত্রক (শিপিং), চট্টগ্রাম এবং সরঞ্জাম নিয়ন্ত্রক পূর্ব ও পশ্চিম কার্যালয়ের ২০১৯-২০ অর্থবছরে ক্রয়কৃত ৭ কোটি ৪১ লাখ টাকার করোনাকালে সামগ্রী ক্রয় করা হলেও বাস্তব প্রাপ্তি ও মজুদ হিসেবে না পাওয়ায় এই টাকা সরকারের আর্থিক ক্ষতি করা হয়েছে। ডিপোগুলোয় মালামালের বাস্তব প্রাপ্তি এবং লেজারসহ আনুষঙ্গিক রেজিস্টারের মজুদ হিসাবে পাওয়া যায়নি। মালামাল ক্রয়ের চুক্তি সম্পাদনপূর্বক আর নোট জারি করায় প্রতীয়মান হয় যে, ওই ক্রয় চুক্তিগুলোর বিপরীতে সমুদয় অর্থ পরিশোধ করা হয়েছে। তথাপি নিরীক্ষা চলাকালীন পর্যন্ত মালামাল পাওয়া যায়নি। এতে প্রতীয়মান হয়, ক্রয়ের নামে সরকারি অর্থ আত্মসাৎ করা হয়েছে।  

অন্যদিকে রেলওয়ের প্রধান যন্ত্র প্রকৌশলী, পশ্চিমের অধীন এসএসএই, ইনচার্জ, লোকো, পার্বতীপুর কার্যালয়ে ২০২০-২১ অর্থবছরে করোনাকালে ডেমু ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকা সত্ত্বেও জ্বালানি ও যন্ত্রাংশ ক্রয় বাবদ সরকারের ২ কোটি ৪৬ লাখ টাকা ব্যয় দেখিয়ে লোপাট করা হয়েছে। নিরীক্ষায় ডেমু ট্রেন চলাচল-সংক্রান্ত নথি এবং তেল ইস্যু-সংক্রান্ত রেজিস্টার পর্যালোচনায় দেখা যায় যে, বিভাগীয় রেলওয়ে ম্যানেজার, লালমনিরহাটের ২০১৯ সালের ১০ জুন পত্রের সূত্রে ২ সেট ডেমু ট্রেনের মধ্যে ১ সেট দীর্ঘদিন ধরে যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে লোকোশেড, পার্বতীপুরে অবস্থান করে। অন্য ১ সেট বিভিন্ন সময়ে চলাচল করার পর যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে ২০২০ সালের ২৫ মার্চ বন্ধ হয়ে যায়। কিন্তু বন্ধ থাকার পরও দুই সেট ডেমু ট্রেনের জন্য ১৭১২ লিটার জ্বালানি তেল এবং ৩২২ লিটার লুবঅয়েল ইস্যু করা হয়েছে, যার মূল্য ২ লাখ টাকা। এভাবে দীর্ঘদিন বন্ধ থাকা ডেমু ট্রেন দুটির বিপরীতে প্রধান সরঞ্জাম নিয়ন্ত্রক, পাহাড়তলী, চট্টগ্রাম কার্যালয় কর্তৃক ২ কোটি ৪৪ লাখ টাকার বিভিন্ন যন্ত্রাংশ ক্রয় দেখানো হয়েছে। এ বিষয়ে রেলওয়ের পক্ষ থেকে নিরীক্ষা বিভাগকে লিখিত জবাবে জানিয়েছে কোভিড-১৯-এর কারণে ডেমু ট্রেন চলাচল না করলেও ব্যাটারি চার্জিং এবং ট্রায়াল রানে ১০২২ লিটার জ্বালানি খরচ হয়। তবে দীর্ঘদিন বন্ধ থাকা ডেমু ট্রেন মেরামতের জন্য মালামাল ক্রয়ের কোনো ব্যাখা দিতে পারেনি রেলওয়ে। 
রেলপথ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান বলেন, রেলের দুর্নীতির নানা তথ্য-উপাত্ত আসছে। এগুলো খতিয়ে দেখা হচ্ছে। দুদকও দুর্নীতির বিষয়টি খতিয়ে দেখছে। তিনি বলেন, আগে মাথা থেকে দুর্নীতি হতো, এখন কোনো মাথা নেই সুতরাং দুর্নীতির জায়গাও কম। ফলে রেলের দুর্নীতি কমে যাবে। কেউ দুর্নীতি করলে বাঁচতে পারবে না। সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠক করে বিষয়টি জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।


সময়ের আলো/আরএস/




https://www.shomoyeralo.com/ad/1698385080Google-News-Update.jpg

সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সৈয়দ শাহনেওয়াজ করিম, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ
নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।

ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫ | ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com
close