ই-পেপার রোববার ৬ অক্টোবর ২০২৪
রোববার ৬ অক্টোবর ২০২৪

যেভাবে ঘুরে দাঁড়ান আত্মপ্রত্যয়ী সুবর্ণা
প্রকাশ: বুধবার, ২ অক্টোবর, ২০২৪, ৪:০৮ এএম  (ভিজিট : ১৫৪)
জামালপুরে বেড়ে ওঠার সুবাদে পারিবারিকভাবেই হস্তশিল্পের সঙ্গে জড়িয়ে আছেন সুবর্ণা। বাবা আবদুল আলীম ও মা খোরশেদা বেগমের ছিল হাতের কাজের পণ্যসামগ্রীর ব্যবসা। বাবা ঢাকা থেকে শোরুম ঘুরে ঘুরে অর্ডার আনতেন আর মা সেসব তৈরি করতেন। এভাবেই আশির দশকে পারিবারিক হস্তশিল্পের ব্যবসায় কাজের মাধ্যমে হাতেখড়ি হয় সুবর্ণার। মায়ের কাছেই কাজ শেখেন তিনি। 

শহরের বানিয়াবাজার উচ্চ বিদ্যালয়ে পড়াশোনা করতেন সুবর্ণা আক্তার। ছাত্রী হিসেবেও ছিলেন বেশ মেধাবী ও বুদ্ধিমতী। সুবর্ণা আক্তার যখন অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী ঠিক সেই সময় বাবা-মায়ের ইচ্ছায় মাত্র ১৫ বছর বয়সে বিয়ের পিঁড়িতে বসেন তিনি। পার্শ্ববর্তী শেরপুরের মো. সাইদুর রহমানের সঙ্গে ২০০৬ সালে বিয়ে হয় সুবর্ণার। বিয়ের পর মো.সাইদুর রহমান শ্বশুরবাড়ির পাশেই একটি ফিশারি ফার্মে চাকরি করতে শুরু করেন। এভাবে বাবা-মা আর বর মো. সাইদুর রহমানকে নিয়ে বেশ সুখেই দিন কাটছিল সুবর্ণার। ২০২০ সালে হঠাৎ করেই বর সাইদুর রহমান হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। সুবর্ণার মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়ল। ছোট ছোট তিন ছেলেকে নিয়ে সুবর্ণা কী করবেন ভেবে পাচ্ছিলেন না। পরে বাবা আবদুল আলীম আর মা খোরশেদা বেগমই নতুন করে বেঁচে থাকার প্রেরণা জোগান সুবর্ণার। বাবা-মায়ের অনুপ্রেরণায় সুবর্ণা আবারও নব উদ্যমে শহরের ডাকপাড়া বানিয়া বাজার এলাকায় হস্তশিল্পের একটি শোরুম খুলে বসেন। শুরুতে অল্প অল্প করে কাপড় কিনে, পোশাক তৈরি করে বিক্রি করতে থাকেন সুবর্ণা। 

ধীরে ধীরে তার ব্যবসায় সফলতা আসতে শুরু করে। ওই সময় সুবর্ণা তার শোরুমে তৈরি করেন থ্রিপিস, পাঞ্জাবি, কটি, কুশনকভার, বেডশিট, চাদর, ওয়ালম্যাট, ফতুয়াসহ নানা রকমের পণ্য। ধীরে ধীরে ব্যবসায় সফলতা আসার পর জামালপুর পৌরশহরের তমালতলা এলাকায় বাবা আবদুল আলীমের কাপড়ের দোকানের একপাশে আরও একটি হস্তশিল্পের শোরুম খুলে বসেন সুবর্ণা। মূলত ওই সময় থেকেই সুবর্ণার তৈরি বিভিন্ন পোশাকের সুখ্যাতি ছড়িয়ে পরে গোটা জেলায়। জাঁকজমক হয়ে ওঠে বাবা-মেয়ের কুটির শিল্প ব্যবসা। বাবা আবদুল আলীম আর মেয়ে সুবর্ণার ব্যবসা যখন তুঙ্গে ঠিক সেই সময়ই বিশ^জুড়ে দেখা দেয় মহামারি করোনাভাইরাস। করোনার ভয়াল থাবায় অনেকটাই স্থবির হয়ে যায় বাবা-মেয়ের ব্যবসা। ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে ব্যাংক থেকে নেওয়া ঋণের সুদের পরিমাণ। ঋণের বোঝা কোনোভাবেই যেন স্বস্তি দিতে পারছিল না অসহায় বাবা আর মেয়েকে। জানা যায়, ব্যবসা প্রসারের লক্ষ্যে ২০১২ সালে বাবা আবদুল আলীম স্থানীয় জনতা ব্যাংক থেকে ১০ লাখ টাকা ঋণ নেন। পরবর্তী সময়ে ব্যবসা মন্দার কারণে সময়মতো ব্যাংক ঋণের কিস্তি পরিশোধ করতে না পারায় ঋণের পরিমাণ সুদ-আসলে বেড়ে বিশাল আকার ধারণ করেছে। 

বতর্মানে সেটি বিশাল অঙ্ক ধারণ করেছে বলে জানান সুবর্ণা আক্তার। উপায়ান্তর না দেখে ব্যাংকঋণ পরিশোধের জন্য বাবা আবদুল আলীম শহরের ডাকপাড়া এলাকায় তার বসতবাড়িটি বিক্রির সিদ্ধান্ত নেন। কিন্তু এখনও পর্যন্ত বাড়িটি বিক্রি না হওয়ায় ব্যাংকঋণ পরিশোধে ব্যর্থ হয়েছেন আবদুল আলীম। 

তিনি জানান, বসতবাড়িটি বিক্রি করতে পারলে দ্রুত সময়ের মধ্যে তিনি পরিশোধ করতে পারবেন ঋণ। সুবর্ণা আক্তার বলেন, আমাদের মাথার ওপর থেকে ব্যাংকঋণের বোঝাটা নেমে গেলে আমি পুরো উদ্যমে আমার হস্তশিল্পের ব্যবসাটি আরও ব্যাপকভাবে শুরু করতে পারব। 

যুব উন্নয়ন অধিদফতরের সেলাই প্রশিক্ষক মোছা. শামীমা বেগম বলেন, সুবর্ণা আক্তার ২০২৩ সালে জামালপুর যুব উন্নয়ন অধিদফতর থেকে তিন মাসের জন্য পোশাক তৈরির প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। তিনি আমার কাছ থেকে সেলাইয়ের ওপর তিন মাসের একটি কোর্স সম্পন্ন করেছেন। তিনি বলেন, ওর হাতের কাজ খুবই ভালো। সুবর্ণা আগে থেকেই পোশাক তৈরির কাজে বেশ অভিজ্ঞ বলেও জানান এই যুব কর্মকর্তা। তিনি বলেন, সুবর্ণাকে প্রতিষ্ঠিত করতে যুব উন্নয়ন অধিদফতর থেকে অনুদান প্রদানের ব্যবস্থা করা হবে।

আত্মপ্রত্যয়ী সুবর্ণা আক্তার বলেন, অভাব আর দরিদ্রতাকে পেছনে ফেলে আমি নিজের শ্রম, ইচ্ছাশক্তি আর মেধাকে কাজে লাগিয়ে প্রতিষ্ঠিত হয়েছি। বাকি দিনগুলোতেও এভাবে এগিয়ে যেতে আমি সবার কাছে দোয়া চাই।

সময়ের আলো/জিকে




https://www.shomoyeralo.com/ad/1698385080Google-News-Update.jpg

সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সৈয়দ শাহনেওয়াজ করিম, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ
নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।

ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫ | ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com
close