ই-পেপার সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪
সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪

ফাইলবন্দি অভিযোগ
প্রকাশ: বুধবার, ২ অক্টোবর, ২০২৪, ১২:৩৮ এএম  (ভিজিট : ৩৮৪)
দেশের টেলিকম সেবার মান নিয়ে গ্রাহকেদর অভিযোগ ও অসন্তুষ্টির যেন শেষ নেই। ফোনে কথা বলার মধ্যে কলড্রপ, ইন্টারনেটের ধীরগতি, ভ্যালু অ্যাডেড সার্ভিসের (ভাস) নামে অজান্তে গ্রাহকের ব্যালেন্স থেকে টাকা কেটে নেওয়াসহ অসংখ্য অভিযোগ রয়েছে দেশের পাঁচ মোবাইল অপারেটরের বিরুদ্ধে। প্রতি বছরই এসব ভোগান্তির কথা তুলে ধরে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) দ্বারস্থ হচ্ছেন সচেতন গ্রাহকরা। এর মধ্যে কিছু অভিযোগের নিষ্পত্তি হলেও বেশিরভাগই থাকছে ফাইলবন্দি।

বিটিআরসির সবশেষ তথ্য অনুযায়ী, গত এক (জুলাই ২০২৩ থেকে জুন ২০২৪ পর্যন্ত) বছরে বিটিআরসির শর্টকোর্ড (১০০) নাম্বারে সেবার মান নিয়ে ১১ হাজার ২২৫টি অভিযোগ করেছেন গ্রাহকরা। এসব অভিযোগের মধ্যে শুধু কোয়ালিটি অব সার্ভিস বা সেবার মান সম্পর্কিত অভিযোগই পড়েছে ৪ হাজার ৫৭৯টি। এ ছাড়া ডাটা স্পিড সংক্রান্ত অভিযোগ ১ হাজার ১১টি, বিবিধ ৮৫১টি, ভ্যালু অ্যাডেড সার্ভিস সংক্রান্ত ৭৯৩টি, ডাটা ভলিউম সংক্রান্ত ৬০৯টি, সংযোগ বিচ্ছিন্ন বা কলড্রপ সংক্রান্ত ২১১টি, প্রতারণামূলক কার্যক্রম সংক্রান্ত ৯৩টি, ইনকামিং-আউটগোয়িং কল ও এসএমএস সংক্রান্ত ৫৮৫টি, লাইসেন্স সংক্রান্ত ৭২টি, এমএফএস ব্যাংকিং সংক্রান্ত ১০৪টি, এমএনপি সংক্রান্ত ৩৬৬টি, প্যাকেজ মাইগ্রেশন সংক্রান্ত ৪২৭টি, কুইজ প্রাইজ ইস্যু সংক্রান্ত ৪৬টি, রিচার্জ ও বিলিং সংক্রান্ত ৪৩২টি, সিমবার সংক্রান্ত ২৪৩টি, সিমের মালিকানা সম্পর্কিত ৬২টি, সিম নিবন্ধন সম্পর্কিত ৭৮টি, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সাইবার অপরাধ সংক্রান্ত ২২টি, ট্যারিফ সম্পর্কিত অভিযোগ ৩৪৪টি, পরীক্ষামূলক কল সম্পর্কিত ৫৯টি, অননুমোদিত হ্যান্ডসেট সম্পর্কিত ৪০টি, লাইসেন্সবিহীন আইএসপি সম্পর্কিত অভিযোগ ১৪১টি ও অযাচিত ফোনকল ও এসএমএস সংক্রান্ত অভিযোগ জমা পড়েছে ৫৭টি। উল্লিখিত এসব অভিযোগের মধ্যে ৮ হাজার ৯২০টি বা ৭৬ দশমিক ২২ শতাংশ নিষ্পত্তি করা হয়েছে বলে জানান বিটিআরসি। এ ছাড়া পেন্ডিং রয়েছে আরও ২ হাজার ৩০৫টি অভিযোগ।

বিটিআরসি সূত্রে জানা যায়, প্রতি বছর ভয়েস কল ও ইন্টারনেট সেবা নিয়ে ১০ থেকে ৩০ হাজার বা তারও বেশি অভিযোগ করেন গ্রাহকরা। যেমনÑসেবার মান নিয়ে ২০২১ সালে ২৩ হাজার ১৬টি অভিযোগ পড়ে বিটিআরসিতে। আর ২০২২ সালে অভিযোগ জমা পড়েছিল ১৫ হাজার ৭৪৯টি। আর ২০২৩ সালে দেশের চারটি মোবাইল অপারেটরের বিরুদ্ধে বিটিআরসিতে ১০ হাজার ৪৫৭টি অভিযোগ করেছিলেন গ্রাহকরা। আর ২০২৪ সালে এ অভিযোগের সংখ্যা দাঁড়ায় ১১ হাজার ২২৫টিতে।

এর আগে ২০২৩ সালের জানুয়ারি থেকে চলতি বছরের (২০২৪ সাল) জুন মাস পর্যন্ত দেড় বছরের এক পরিসংখ্যানে দেখা যায়, মোবাইল সেবার মান নিয়ে গ্রামীণফোন, রবি, বাংলালিংক ও টেলিটকের বিরুদ্ধে ১৩ হাজার ৭৬১টি অভিযোগ করেছিলেন গ্রাহকরা। এসব অভিযোগের মধ্যে সবচেয়ে বেশি গ্রামীণফোনের বিরুদ্ধে। অপারেটরটির বিরুদ্ধে ৪ হাজার ৬৬৮টি অভিযোগ করা হয়। রবির বিরুদ্ধে ৩ হাজার ৮৩৫টি, বাংলালিংকের বিরুদ্ধে ১ হাজার ৯৩৯টি ও রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান টেলিটকের বিরুদ্ধে ৩ হাজার ৩১৯টি অভিযোগ করেন গ্রাহকরা। তবে এটি শুধু বিটিআরসির হেল্পলাইন (১০০) এবং ওয়েব বক্স থেকে পাওয়া অভিযোগ। এটি শেষ নয়, এর বাইরেও অনেক ভুক্তভোগী গ্রাহক অভিযোগ করছেন সংশ্লিষ্ট অপারেটরদের কলসেন্টারে। গ্রাহকদের এসব অভিযোগের মধ্যে ছিল- ডাটা  স্পিড, ডাটা ভলিউম সংক্রান্ত, কলড্রপ, ইনকামিং ও আউটগোয়িং কল, এসএমএস, এমএনপি, প্যাকেজ মাইগ্রেশন, কোয়ালিটি অব সার্ভিস, রিচার্জ, সিম রেজিস্ট্রেশন ও মালিকানা পরিবর্তন, প্রতারণামূলক কার্যক্রম ইত্যাদি।

এসব অভিযোগের বিষয় জানতে চাইলে বাংলাদেশ মুঠোফোন গ্রাহক অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মহিউদ্দিন আহমেদ সময়ের আলোকে বলেন, দেশে সক্রিয় সিমধারীর সংখ্যা ১৯ কোটির বেশি। সবাই প্রতিনিয়ত কোনো না কোনোভাবে ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। সে তুলনায় এই অভিযোগ অনেক কম। কারণ অনেকেই জানেন না কোন মাধ্যমে অভিযোগ জানাতে হবে। শুধু তাই নয়, অভিযোগ করে প্রতিকার পাওয়া নিয়েও অনেক সংশয় রয়েছে। তাই প্রকৃত অভিযোগ আরও বেশি হবে। এই যে এত অভিযোগ জমা পড়ল কারণটা কী? এখানে এক বছরের অভিযোগ জমা পড়ে আছে, ছয় মাসের অভিযোগ আছে অথচ নিষ্পত্তির কোনো অগ্রগতি নেই।

তিনি বলেন, বিটিআরসির আইন অনুযায়ী সাত দিনের মধ্যে গ্রাহকের অভিযোগ নিষ্পত্তি করতে হবে এবং যদি অভিযোগে কোনো অপারেটর দোষী প্রমাণিত হয় তা হলে ওই অপারেটরকে ৩০০ কোটি টাকা জরিমানা করতে হবে। এ ছাড়া যদি সে এই জরিমানা পরিশোধ না করে প্রতিদিনের জন্য তাকে ১ কোটি টাকা ফাইন করবে বিটিআরসি। আমরা সম্প্রতি চেয়ারম্যানের সঙ্গে দেখা করে বললাম, এই হাস্যকর আইন কেনো রাখা হয়েছে। এখন পর্যন্ত বিটিআরসি গঠন হওয়ার পরে একটা জরিমানাও করা হয়নি। গ্রাহকের কোনো অভিযোগেরও নিষ্পত্তি নেই। আমরা বলেছি, প্রয়োজনবোধে শাস্তির পরিমাণ কমান এবং ওই জরিমানার একটা অংশ গ্রাহককে দেন। কারণ গ্রাহক তো সাফারার।

মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, কয়েক দিন আগে আমরা প্রেস ক্লাবের সামনে গণশুনানি করলাম। সেখানেও গ্রাহকরা অনেক অভিযোগ করেছেন। ঢাকা শহরেও নেটওয়ার্ক পাওয়া যায় না। ঘরে ঢুকলেও নেট থাকে না। সারা দেশে নেটওয়ার্কেও কোনো উন্নতি নেই। কথা বললে কলড্রপ হয়। এক পাশের কথা আর এক পাশে শোনা যায় না। কলড্রপ, মিউটকল এ ধরনের অভিযোগ তো আছেই। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে কথা বললে শোনা যায় না। গড়গড় শব্দ হয়। এ রকমের অসংখ্য অভিযোগ আছে। গ্রাহকরা আসলে হতাশ। তিনি আরও বলেন, নতুন যে উপদেষ্টা দায়িত্ব নিয়েছেন তিনি তো এখনও গ্রাহকদের সঙ্গে বসলেনও না বা কোনো অভিযোগ শুনলেনও না। এটি খুবই দুঃখজনক। আমরা আশা করছিলাম তিনি গ্রাহকদের কথা শুনবেন।

এ বিষয়ে রবির চিফ করপোরেট অ্যান্ড রেগুলেটরি অফিসার সাহেদ আলম বলেন, ওয়্যারলেস কমিউনিকেশন কখনোই ত্রুটিমুক্ত নয়। যেহেতু আমরা ওয়্যারলেস মোবাইল অপারেটর, বিভিন্ন জায়গায় কাস্টমররা অভিযোগ দেন বা দেবেন এটিই স্বাভাবিক। সবসময় কিছু সমস্যা পাওয়া যায়। কখনোই মোবাইল নেটওয়ার্ক সার্ভিসে জিরো অভিযোগ হবে না। এটি হতে পারে না। কাস্টমাররা যখন অভিযোগ দেন তখন আমরা সমাধান করার চেষ্টা করি। দিন দিন আমাদের সার্ভিসটাকে উন্নত করার চেষ্টা করি। তিনি বলেন, আমরা এই মুহূর্তে প্রায় ৫ কোটি ৯০ লাখ গ্রাহককে সার্ভিস দিচ্ছি। গ্রাহক তুলনায় এই অভিযোগ খুবই নগণ্য। তবে প্রতিটি অভিযোগই আমাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ। শুধু বিটিআরসি নয় আমাদের কল সেন্টারের যে অভিযোগ আসে সেগুলো মূল্যায়ন করে আমরা ব্যবস্থা নেই।

এ বিষয়ে জানতে ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মো. নাহিদ ইসলাম ও বিটিআরসির চেয়ারম্যান অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল এমদাদ উল বারীকে একাধিকবার ফোন করলেও তারা রিসিভ করেননি। তবে বিটিআরসির মহাপরিচালক (সিস্টেমস অ্যান্ড সার্ভিসেস) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ খলিলুর রহমান সময়ের আলোকে বলেন, আগে থেকে জানিয়ে রাখলে সেগুলোর উত্তর দিতে পারি। আমরা সরাসরি কারও সঙ্গে কথা বলি না। যতক্ষণ পর্যন্ত না আমাদের মিডিয়া উইং কানেক্ট না করে। আপনি তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে আসেন। অন দ্য ফ্লাই কোনো বক্তব্য দিতে পারি না। মিডিয়া ইউংয়ের মাধ্যমে আমার কাছে আসেন। ওভারফোনে কোনো বক্তব্য দিই না।

বিটিআরসির তথ্য অনুযায়ী, দেশে মোট মোবাইল গ্রাহক রয়েছে ১৯ কোটি ৫০ লাখ ৯০ হাজার। এর মধ্যে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা রয়েছে ১৪ কোটি ১২ লাখ ৮০ হাজার।

সময়ের আলো/জিকে




https://www.shomoyeralo.com/ad/1698385080Google-News-Update.jpg

সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সৈয়দ শাহনেওয়াজ করিম, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ
নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।

ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫ | ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com
close