ই-পেপার সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪
সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪

বোঝা হয়ে থাকতে চান না তারা
আজ আন্তর্জাতিক প্রবীণ দিবস
প্রকাশ: মঙ্গলবার, ১ অক্টোবর, ২০২৪, ২:০৬ এএম  (ভিজিট : ২৮৮)
অগ্রণী ব্যাংকের চট্টগ্রাম শাখার পরিচালক ছিলেন মো. নূরুল ইসলাম। সম্মানের সঙ্গে বাকি জীবনটা কাটাতে চান বলে গত ফেব্রুয়ারি মাসে চলে আসেন বাংলাদেশ প্রবীণ হিতৈষী সংঘ ও জরাবিজ্ঞান প্রতিষ্ঠানের প্রবীণ নিবাসে। আট মাস ধরে এখানেই অবস্থা করছেন তিনি। ছেলেদের সঙ্গে মনোমালিন্য হওয়ায় পরবর্তী সময়টা সুন্দরভাবে বাঁচার জন্য বাসা ছেড়ে প্রবীণ নিবাসে থাকেন বলে সময়ের আলোকে জানান তিনি। বলেন, নবীনরা প্রবীণ হলে তবেই আমাদের গুরুত্ব বুঝবে। আমি ছেলের ওপর বোঝা হয়ে থাকতে চাই না বলেই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছি।

মো. নূরুল ইসলামের গ্রামের বাড়ি নোয়াখালীর জেলার বেগমগঞ্জ উপজেলার বাবুনগর এলাকায়। তার স্ত্রী কিডনি রোগে ভুগছেন। খুবই অসুস্থ। তাই বাধ্য হয়ে প্রবীণ নিবাসে আশ্রয় নেন। ‘স্ত্রী সুস্থ থাকলে হয়তো এখানে আসতাম না। কিন্তু তাকে অধিকাংশ সময় তার বাবার বাড়ি ও হাসপাতালের বেডে কাটাতে হয়।’

নূরুল ইসলামের বড় ছেলে কানাডায় থাকে আর ছোট ছেলেটি ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্স বিভাগের শিক্ষক। ছোট ছেলেও বিদেশে চলে যাবে বলে ঠিক করেছে। তাই সব কিছু ছেড়ে দিয়ে প্রবীণ নিবাসে থাকছেন। ‘আমাকে একটা রুমের জন্য ২০ হাজার টাকা দিতে হয়। আর খাবারের জন্য ৪ হাজার টাকা। আর এই খরচ চলে আমার পেনশনের টাকা দিয়ে। আমি এখানে অনেক ভালোই আছি। তবে একটু সমস্যা হলো, কোনো সমস্যা হলে কর্মচারীদের কাছে গিয়ে বলতে হয়। আর অসুস্থ হলেও ডাক্তারের কাছে গিয়ে চিকিৎসা নিতে হয়। রুমে এসে কোনো ধরনের চিকিৎসার ব্যবস্থা নেই। কর্তৃপক্ষ কর্মচারীদের ভালো সুবিধা দিলে তারাও সেই রকমের সেবা দিতে পারবে।  

কেবল নূরুল ইসলাম নয়, তার মতো আরও ২৭ জন প্রবীণ আছেন রাজধানী ঢাকার আগারগাঁওয়ের ওই প্রবীণ নিবাসে। প্রত্যেকেই পারিবারিক ও ব্যক্তিগত কারণে সেখানে থাকছেন। 

জাতিসংঘ সব দেশে প্রতি বছরই প্রবীণদের স্মরণে ১ অক্টোবর ‘আন্তর্জাতিক প্রবীণ দিবস’ পালনে করে। তাই প্রতি বছরের মতো আজ মঙ্গলবার সারা দেশে পালিত হবে দিবসটি। এ বছরের প্রতিপাদ্য বিষয় হলো, মর্যাদাপূর্ণ বার্ধক্য বিশ্বব্যাপী প্রবীণ পরিচর্যা ও সহায়তা ব্যবস্থা শক্তিশালীকরণ।

৩২ বছর ধরে প্রবীণ নিবাসের থাকছেন প্রায় ৮০ বছর বয়সের শেখ মোহাম্মদ মুজিবুল হক। তার শরীর বয়সের ভারে অনেকটাই নুয়ে পড়েছে। লাঠি তার চলার একমাত্র অবলম্বন। শ্রবণশক্তি কমে গেছে। তার সঙ্গে জোরে কথা বলতে হয়। তিনি সময়ের আলোকে বলেন, আমি দীর্ঘদিন একটি কলেজের অধ্যক্ষের দায়িত্ব পালন করেছি। ইংরেজিতে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর। কিন্তু সন্তানদের সঙ্গে নানা বিষয়ে দ্বন্দ্বের এক পর্যায়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে প্রবীণ নিবাসে অবস্থান করছি। আমার ছেলেমেয়ে সবাই আছে কিন্তু তাদের কাছে থাকি না। এখানেই ভালো আছি। কারণ সন্তানরা আমার যত্ন ও দেখাশোনার জন্য অনেক সমস্যা করছিল তাই এখানে চলে এসেছি। মানুষের বয়স বাড়লে অনেকের কাছেই বোঝা হয়ে যায়।

১১ বছর ধরে প্রবীণ নিবাসে আছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) শিক্ষিকা রাশিদা জামান। তার স্বামীও ছিলেন ঢাবির শিক্ষক। তবে পরিবারে কোন্দলের কারণে সবাইকে ছেড়ে চলে আসেন প্রবীণ নিবাসে। তার সন্তানরা অনেকবার তাকে ফিরিয়ে নিয়ে যেতে চাইলেও তিনি রাজি হননি। তিনি এখানে থাকতেই স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন। ১১ বছরের কোনো দিনও বাসায় যাওয়ার নাম নেননি তিনি। এখানেই ভালো আছে বলেও জানান সেখানের দায়িত্বে থাকা কর্মচারীরা। তারা বলেন, তার বড় ছেলে প্রতি শুক্রবার একবার এসে দেখে যায়। তাকে নিতে জোড়াজুড়ি করলেও কখনো রাজি হননি। 

আবদুস ছাত্তার ২৮ বছর ধরে প্রবীণদের দেখাশোনার দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি সময়ের আলোকে জানান, সেখানকার প্রত্যেক প্রবীণকে যথেষ্ট পরিমাণে সেবা দেওয়ার চেষ্টা করা হয়। ‘তবে আমাদের তেমন কোনো সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হয় না। অনেক কর্মচারী প্রায় দুই বছর ধরে বেতন পাচ্ছে না। স্বাস্থ্য অধিদফতর থেকে বছরে চার থেকে পাঁচ কোটি টাকার ফান্ড দিত। সেটিও এখন বন্ধ রয়েছে। আওয়ামী লীগ সরকারের সময় সমাজসেবামন্ত্রী ও বর্তমানের সমাজসেবা উপদেষ্টা এসে আশ্বাস দিলেও তেমন কোনো কাজ হয়নি।’ 

আবদুস ছাত্তার জানান, প্রবীণদের অনেকে বাড়ি ও এখানে মিলে থাকেন। প্রত্যেকে কোনো না কোনো সমস্যার কারণে আসছেন। তারা সবাই উচ্চশিক্ষিত ও ধনী পরিবারের। এখানে সাধারণত থাকার জন্য প্রতিজনকে ৭ হাজার টাকা ও খাবারের জন্য ৪ হাজার টাকা দিতে হয়। তবে বিশেষ রুম নিলে ভিন্ন কথা।

বাংলাদেশ প্রবীণ হিতৈষী সংঘ ও জরাবিজ্ঞান প্রতিষ্ঠান এবং প্রবীণ নিবাসের পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল লোকমান আলী সময়ের আলোকে বলেন, ৩৪তম আন্তর্জাতিক প্রবীণ দিবসটি আমরা প্রবীণ সব সদস্যকে নিয়ে বিশেষভাবে পালন করব। দেশব্যাপী আমাদের সাড়ে ৩ হাজার সদস্য হয়েছে। তা ছাড়া দেশব্যাপী ৯২টি শাখা রয়েছে যেখানে প্রবীণদের জন্য বিশেষ সুযোগ-সুবিধার ব্যবস্থা রয়েছে। আমাদের এই প্রবীণ নিবাসে ২৭ জন প্রবীণ রয়েছেন। এর মধ্যে ১২ জন পুরুষ ও ১৫ জন নারী।

লেফটেন্যান্ট কর্নেল লোকমান আলী আরও বলেন, আগে কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের মধ্যে কিছু কোন্দল ছিল। যার কারণে বেতন-ভাতা ও সেবার ক্ষেত্রে ঘাটতি তৈরি হয়েছিল। আমি এই প্রতিষ্ঠানে ৮ সেপ্টেম্বর পরিচালক হিসেবে নিযুক্ত হওয়ার পর থেকে কিছু স্বাভাবিক অবস্থায় এসেছে।



সময়ের আলো/আরএস/




https://www.shomoyeralo.com/ad/1698385080Google-News-Update.jpg

সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সৈয়দ শাহনেওয়াজ করিম, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ
নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।

ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫ | ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com
close