ই-পেপার সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪
সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪

ঢাকা বিভাগীয় পাসপোর্ট অফিসে এক দিন
লাইনেই বেলা কেটে যায়
প্রকাশ: মঙ্গলবার, ১ অক্টোবর, ২০২৪, ১:৩৫ এএম  (ভিজিট : ২৩৬)
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে প্রধানমন্ত্রিত্ব ছেড়ে দিয়ে দেশত্যাগে বাধ্য হন শেখ হাসিনা। এতে পতন ঘটে আওয়ামী লীগ সরকারের। অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের মধ্য দিয়ে সরকারি-বেসরকারি সব প্রতিষ্ঠানেই পরিবর্তনের হাওয়া বইছে। সাধারণ মানুষের প্রত্যাশা, আগে যে ভোগান্তিতে পড়তেন তার যেন পুনরাবৃত্তি না ঘটে।

এ প্রত্যাশা নিয়েই গত রোববার তেজগাঁও থেকে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বিভাগীয় পাসপোর্ট অফিসে আসেন মুন্না নামে এক তরুণ। তার চাওয়া ছিল কোনো ভোগান্তি এবং দালালদের দৌরাত্ম্য ছাড়াই অফিসে নতুন পাসপোর্ট তৈরি করবেন। কিন্তু অফিসের সামনে গিয়ে হতভম্ব হয়ে যান মুন্না। ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়েও সেবা না পেয়ে রীতিমতো হতাশ হন তিনি। এমন পরিস্থিতিতে রোদ-বৃষ্টি উপেক্ষা করে ভোগান্তি মেনে নিয়েই পাসপোর্ট করতে দেন। পাসপোর্ট করতে এসে এদিন তার মতোই ভোগান্তির শিকার হয়েছেন অনেক নারী-পুরুষ। তবে তারা বলেন, আগে দালালদের যে দৌরাত্ম্য ছিল তার তুলনায় এখন সেটি কম।

ভুক্তভোগী কয়েকজনের অভিযোগ, শেখ হাসিনা সরকারের সময় কোনো কিছু করতে গেলেই দালালদের দ্বারস্থ হতে হতো। দালাল ছাড়া সব ধরনের সেবা পাওয়া বাধাগ্রস্ত হতো। টাকা ছাড়া কাগজপত্র আটকে থাকত কোনো না কোনো টেবিলে। এসব বিষয় কিছুটা কমলেও হয়রানি ও ভোগান্তি রয়েছে বলে জানান সেবাগ্রহীতারা। আর এ কারণ সেবা প্রদানকারীদের মানসিকতার পরিবর্তন না হওয়া।

রোববার সকাল ১০টা থেকে বেলা ৩টা পর্যন্ত সরেজমিন দেখা যায়, বিভাগীয় পাসপোর্ট অফিসের প্রধান ফটকের পাশে একাধিক আনসার সদস্য কড়াকড়ি দায়িত্ব পালন করছেন। কোনো ধরনের প্রতারক বা দালাল যেন কাউকে হয়রানি করতে না পারে সে জন্য তারা সতর্ক অবস্থায় রয়েছেন। ভেতরে ঢুকতেই চোখে পড়ে পাসপোর্টপ্রত্যাশী শত শত মানুষের দীর্ঘ লাইন। তাদের চেহারায় স্পষ্ট বিরক্তির ছাপ। কেউ কেউ তিন থেকে চার ঘণ্টা ধরে লাইনের দাঁড়িয়ে আছেন বলে জানান। এতটা দীর্ঘ সময় লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে না পেরে পাশের চেয়ারে বসে একটু বিশ্রাম নিচ্ছিলেন কেউ কেউ। বৃদ্ধ ও শিশুদের পৃথকভাবে সেবা দেওয়ার ব্যবস্থা থাকলেও সেখানেও দেখা মেলে লম্বা সারির। ভোগান্তি থেকে বাদ যাননি তারাও। পরিস্থিতি এতটাই বিশৃঙ্খল ছিল যে আনসারদের পক্ষেও তা সামাল দেওয়া সম্ভব হচ্ছিল না।

তিন তলায় নারীদের সেবা দেওয়া হয়। সেখানে দেখা যায়, ছোট একটি জায়গায় শতাধিক নারী লাইন ধরে দাঁড়িয়ে আছেন। তাদের কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, নারীদের জন্য আলাদা ব্যবস্থা থাকলেও কাক্সিক্ষত সেবা পাচ্ছেন না তারা। দাঁড়িয়ে থাকতে হচ্ছে ঘণ্টার পর ঘণ্টা।

দফতরের আরও কিছু সেকশন ঘুরে দেখা যায়, প্রতিটি ক্ষেত্রে দীর্ঘসূত্রতা ও নিয়মের বেড়াজালে আটকে আছেন সেবাগ্রহীতারা। তবে সবথেকে বেশি পরিলক্ষিত হয়েছে কর্মকর্তাদের কাজের ধীরগতি। এ ছাড়া প্রতিটি সেক্টরে যে পরিমাণে কর্মকর্তা থাকা প্রয়োজন সেটিও ছিল না। দেখা যায়, প্রায় কয়েকশ মানুষের জন্য মাত্র এক থেকে দুজন কর্মকর্তা নিয়োজিত রয়েছেন। এ কারণে ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন সেবাগ্রহীতারা। স্থান সংকুলান না হওয়ায় বাধ্য হয়ে যেখানে-সেখানে বসে পড়েন ক্লান্ত সেবাগ্রহীতাদের অনেকে। গরমেও হাঁসফাঁস অবস্থা ছিল তাদের।

সেবাগ্রহীতাদের মতে, পাসপোর্ট অফিসে আরও জনবল বৃদ্ধি ও সব কার্যক্রমকে আরও আধুনিকায়ন করা জরুরি। কারণ একটি পাসপোর্ট করতে বা তা মেয়াদ বাড়াতে গেলে বিভিন্ন জায়গায় ঘুরতে হয়। বিশেষ করে ঢাকার আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে কাজের ধীরগতির কারণে সবাই ভোগান্তির শিকার হচ্ছে। প্রতিটি ক্ষেত্রে অ্যানালগ পদ্ধতিতে কাজ করা হয়। এর ফলে সময় বেশি লাগছে। কারণ রাজধানীর মতো এলাকায় অল্প জায়গায় বিপুল পরিমাণ মানুষের সেবা দেওয়ায় সেবাগ্রহীতাদের কষ্ট ভোগ করতে হয়। নতুন সরকারের উচিত ঢাকার পাসপোর্ট অফিসের সব কার্যক্রমকে আরও আধুনিকায়ন ও গতিশীল করা।

পাসপোর্ট করাতে আসা তরুণ মুন্না সময়ের আলোকে বলেন, আমি ভেবেছিলাম সকাল সকাল এলে হয়তো সিরিয়াল কম থাকবে। কিন্তু এসে দেখি, আমার আগেই অনেকে এসে দাঁড়িয়ে আছে। পাসপোর্ট অফিসে যারা কাজ করেন, তাদের কাজের গতি খুবই ধীর। এভাবে একজনের কাজ শেষ করতেই অনেক সময় লাগে। এতে দীর্ঘ লাইনের সৃষ্টি হয়। শুধু এখানেই শেষ নয়, প্রতিটি জায়গায় বিড়ম্বনার শিকার হতে হচ্ছে। ছবি তুলতে গেলেও অনেকক্ষণ অপেক্ষা করে তারপর তুলতে হয়। আমার মনে হচ্ছে এখানে যে পরিমাণে লোকবল থাকা প্রয়োজন তা নেই।

পাসপোর্টের আবেদন ফরম জমা দিতে তিন ঘণ্টা দীর্ঘ লাইনের দাঁড়িয়ে থাকেন শাহজাদপুর থেকে আসা আবিদ নামের একজন। তিনি বিরক্তির সুরে বলেন, পাসপোর্টের অফিসের এ হয়রানি কখনো শেষ হবে না। আমি তিন ঘণ্টা ধরে লাইনে দাঁড়িয়ে আছি; কিন্তু এখনও কাগজ জমা দিতে পারিনি। আগের সরকারের সময় মানুষ বিভিন্নভাবে হয়রানির শিকার হতো। সবাই আশা করেছিল, সরকার পরিবর্তন হলে হয়তো সমস্যাগুলো থাকবে না। হয়তো কিছু কমেছে; কিন্তু ভোগান্তি রয়েই গেছে।

মিরপুর থেকে আসা সাজিদ নামের একজন সময়ের আলোকে বলেন, পাসপোর্ট অফিসের ভোগান্তি নতুন কিছু নয়। গত সরকারের সময় হয়রানি ও বিভিন্নভাবে হেনস্থা ছিল ব্যাপকমাত্রায়। তবে এটি বলাই যায়, বর্তমানে কিছুটা কমেছে। তবে দীর্ঘ লাইন ও রুমে রুমে ঘোরার বিষয়টি এখনও রয়ে গেছে। আগে বিভিন্ন ক্ষেত্রে দালালের কাজে যেতে হতো। নয়তো দায়িত্বরত কর্মকর্তারা কোনো কাগজ জমা নিত না। এ ছাড়া কোনো ধরনের সাধারণ ভুল হলেও টাকা ছাড়া কোনো কাজ হতো না। এর জন্য বিভিন্নভাবে হয়রানির শিকার হতে হতো। কিন্তু অন্তর্বর্তীকালীন সরকার আসার পর থেকে দালালদের আগাগোনা কমে গেছে। তবে সাধারণ মানুষ যেন কোনো ধরনের ভোগান্তি পোহাতে না হয় সেদিকে লক্ষ রাখতে হবে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ঢাকা বিভাগীয় পাসপোর্ট অফিসের এক কর্মকর্তা বলেন, বিভাগীয় পাসপোর্ট অফিস হিসেবে সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত শেরেবাংলা নগর, মিরপুর, কাফরুল, রূপনগর, গুলশান, বনানী, শাহবাগ, ধানমন্ডি, কলাবাগান, রমনা, তেজগাঁও, তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল ও ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট থানা এলাকার বাসিন্দাদের সেবা দিয়ে থাকে। আবেদনপত্র জমা গ্রহণ ও প্রয়াজনীয় তথ্য চাওয়া হলে আমরা বিরক্ত না হয়ে সহায়তা সেবা দিয়ে থাকি। এ ছাড়া সাধারণ মানুষ যেন কোনো ধরনের ভোগান্তির শিকার না হন সেদিকে লক্ষ রাখা হয়।

ঢাকা বিভাগীয় পাসপোর্ট অফিসের কার্যক্রম ও সার্বিক বিষয় সম্পর্কে জানতে উপ-পরিচালক মো. ইসমাইল হোসেনের সঙ্গে দেখা করতে চাইলে তার অফিস সহকারী বাধা দেন। এ ছাড়া তার মোবাইল নম্বরে একাধিকবার কল দিলেও তিনি সাড়া দেননি। এ ছাড়া উপ-সহকারী পরিচালক জগদীশ চন্দ্র তাঁতী ও সহকারী পরিচালক সালমা আঁখির সঙ্গে যোগাযোগ করেও সাড়া পাওয়া যায়নি।


সময়ের আলো/আরএস/





https://www.shomoyeralo.com/ad/1698385080Google-News-Update.jpg

সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সৈয়দ শাহনেওয়াজ করিম, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ
নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।

ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫ | ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com
close