ই-পেপার সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪
সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪

রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ নিয়ন্ত্রণ করছে দালাল চক্র
প্রকাশ: সোমবার, ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০২৪, ৫:১৯ এএম  (ভিজিট : ৩৯৬)
মিয়ানমারের জান্তা সরকারের সঙ্গে বিদ্রোহী গোষ্ঠীর সংঘাত-সহিংসতার তোপের মুখে ফের বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে অন্তত ১২ হাজার রোহিঙ্গা। তাদের নতুন করে তালিকায় না রাখায় অবৈধভাবেই জীবনযাপন করছে তারা। চলতি মাসের শুরুতে সীমান্তের ওপারে মিয়ানমারের মংডুতে তীব্র সংঘাতের কারণে জনপ্রতি ২০ হাজার টাকায় চুক্তিতে দালালদের মাধ্যমে ঢুকে পড়ছে রোহিঙ্গারা। প্রায় অর্ধশত দালাল চক্র রোহিঙ্গাদের অনুপ্রবেশ নিয়ন্ত্রণ করছে বলে স্থানীয় একাধিক সূত্র জানিয়েছে।

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা বলছে, কক্সবাজারের টেকনাফ ও উখিয়া এলাকায় অপরাধীদের অভয়ারণ্য হয়ে উঠেছে পুরোনো রোহিঙ্গাদের কারণে। যারা নতুনভাবে এসেছে তারা পুশব্যাকের আতঙ্কে রয়েছে। তারা এখনও অপরাধের সঙ্গে তেমন জড়াতে পারেনি। 

তবে রোহিঙ্গাদের কয়েকজন মাঝি নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, যারা নতুন করে আশ্রয় নিয়েছেন তাদের মধ্যে কেউ রোহিঙ্গা ক্যাম্পে স্বজনদের কাছে আশ্রয় নিয়েছে। আবার কেউ আশপাশে ঝুপড়িঘর বানিয়ে থাকছেন। ওপার থেকে আসার সময় তারা সঙ্গে নিয়ে এসেছেন মাদক ও শরীরে থাকা স্বর্ণালংকার। এসব বিক্রি করেই জীবন-জীবিকা চালিয়ে আসছেন তারা। যারা দালালদের মাধ্যমে এসেছেন তাদের কাউকেই চিনতে পারছেন না। যার কারণে আরও বিপাকে পড়েছে নতুনভাবে অনুপ্রবেশ করা রোহিঙ্গারা।

 স্থানীয়দের ভাষ্য-যেসব রোহিঙ্গা নতুন করে আশ্রয় নিয়েছে তারা মাদকসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কাজে জড়িয়ে যাচ্ছে। অবৈধভাবে ঘর তুলে থাকছে। এই পরিস্থিতিতে একপ্রকার আতঙ্ক তৈরি হয়েছে স্থানীয়দের মধ্যে।

রোহিঙ্গা অধ্যুষিত এলাকায় শনিবার শামলাপুর-টেকনাফ রোডে ডাকাতির পর ৪ জনকে অপহরণ করে দুর্বৃত্তরা। এ ঘটনার এক দিন পেরিয়ে গেলেও এখনও তাদের উদ্ধার করতে পারেনি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। অভিযোগ উঠেছে অপহরণকারীরা ওই চারজনকে রোহিঙ্গা ক্যাম্পের মধ্যে আটকে রাখতে পারে। রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীরা খুন, গুম, অপহরণের মতো ঘটনা ঘটিয়ে মুক্তিপণ নিয়ে ছেড়ে দেয়। 
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও স্থানীয় সূত্র জানায়, মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা ১২ হাজার রোহিঙ্গা সদস্য সম্প্রতি বাংলাদেশের অভ্যন্তরে অনুপ্রবেশ করেছে স্থানীয় দালালদের সহযোগিতায়। এই দালালদের মধ্যে রোহিঙ্গা সদস্যও রয়েছে। এর মধ্যে কয়েকজন দালালের নাম পেয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
তারা হলেন-টেকনাফের শাহ পরীর দ্বীপ ঘোলা পাড়া ও দক্ষিণ পাড়ার করিম উল্লাহ, ছলামত উল্লাহ, মোহাম্মদ জোবাইর, আজম উল্লাহ, নুর মোহাম্মদ, মোহাম্মদ আইয়াজ, মোহাম্মদ রুবেল, ছৈয়দ হোসেন মাঝি, মোজালম কাল বাঁশি। এ ছাড়া শাহ পরীর দ্বীপ জালিয়া পাড়ার রশিদ মাঝি, মোহাম্মদ জুবায়ের।
টেকনাফের বদি আলম, হেলাল উদ্দিন, মো. রহিম বাদশা, মো. বলি, নুর মোহাম্মদ, মোহাম্মদ শালমান, মো. শামসুল আলম, মো. জাবেদ, ইমান হোসেন ইউচুপ, মো. ইউনুছ, মো. সিরাজ, নুর হোসেন ও মো. সাদ্দামের নাম পাওয়া গেছে। এদের মাধ্যমেই মূলত সাগরপথে ও সীমান্ত পারি দিয়ে অনুপ্রবেশ করেছে রোহিঙ্গারা। ওই দালালদের রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে যোগাযোগ রয়েছে। 

অনুপ্রবেশ করা কয়েকজন রোহিঙ্গা নাম প্রকাশ না করার শর্তে সময়ের আলোকে বলেন, ওপারে সংঘাতের কারণে বহু রোহিঙ্গা নিহত হয়েছে। তাদের বাড়িঘর জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে। বাবা, মা এবং স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে কোনোরকম পালিয়ে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করেছে। এপারের রোহিঙ্গা ক্যাম্পে তাদের আত্মীয়স্বজন রয়েছে। দালালদের সঙ্গে জনপ্রতি ২০ হাজার টাকা চুক্তিতে তারা সাগরপথে এবং সীমান্ত পারি দিয়ে অনুপ্রবেশ করেছে। কয়েকজন বলেন, বাড়িঘর সব জ্বালিয়ে দেওয়ার কারণে সঙ্গে কোনো মালামাল তারা আনতে পারেনি। তাই সেখান থেকে মাদক নিয়ে এখানে দালালদের কাছে বিক্রি করেছে। একই সঙ্গে নারীদের স্বর্ণের গলার চেইন ও কানের দুল বিক্রি করে দালালদের টাকা পরিশোধ করা হয়েছে। 

 রোহিঙ্গা মাঝিদের কয়েকজন সময়ের আলোকে বলেন, বাংলাদেশের রোহিঙ্গা শিবির থেকে প্রশিক্ষণ দিয়ে দুই হাজারের বেশি রোহিঙ্গাকে জোরপূর্বক মিয়ানমারে যুদ্ধে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। জান্তার পক্ষে যুদ্ধে যোগ দিলে তাদের নিজ দেশে ফিরে যাওয়ার সুযোগ করে দেওয়া হবে এমন প্রতিশ্রুতি দিয়ে তারা তাদের নিয়ে যায়। সেখানে সশস্ত্র অবস্থায় সেখানকার একটি মুসলিমপ্রধান গ্রামের পাহারার দায়িত্ব দেওয়া হয়। তুমুল লড়াইয়ের পর অনেকে পালিয়ে এলেও বেশিরভাগ রোহিঙ্গা সেখানে আটকা পড়েছে। বাংলাদেশ সরকারের ও জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থার তথ্যমতে, সীমান্তবর্তী অঞ্চলে বিদ্রোহী গোষ্ঠীর সঙ্গে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর তীব্র সংঘাত শুরু হলে সাম্প্রতিক মাসগুলোতে প্রায় ১৪ হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে।

টেকনাফ ও উখিয়া ক্যাম্পের কয়েকজন মাঝি সময়ের আলোকে বলেন, রোহিঙ্গা শিবিরে সক্রিয় দুটি সশস্ত্র সংগঠন আরাকান রোহিঙ্গা সালভেশন আর্মি (আরসা) এবং রোহিঙ্গা সলিডারিটি অর্গানাইজেশন (আরএসও) সঙ্গে দালালদের যোগসূত্র রয়েছে। ওই দালালদের মাধ্যমে ইয়াবা, আইসসহ মাদক কেনাবচা হয়। এরপর মাদক বিক্রির টাকায় সশস্ত্র সন্ত্রাসী গোষ্ঠী অবৈধ অস্ত্র ক্রয় করে।

এ প্রসঙ্গে কক্সবাজারে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি-২) ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল মো. মহিউদ্দিন আহমেদ সময়ের আলোকে বলেন, মিয়ানমারঘেঁষা বিশাল সীমান্ত এলাকায় সার্বক্ষণিক পাহারায় থাকছে বিজিবি সদস্যরা। জলপথেও টহল বৃদ্ধি করা হয়েছে। সেখানে থেকে এখনও গুলি ও বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যায়। এই পরিস্থিতিতেও বিজিবি সদস্যরা দায়িত্ব পালন করে আসছে। তিনি বলেন, সম্প্রতি অনেক রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ করেছে বলে আমরা খবর পেয়েছি। তবে তারা নিজেদের চিন্তায় এখন বেশি ব্যস্ত। কখন তারা পুশব্যাক হয় এই ভয়ে আছে। তিনি আরও বলেন, যেসব রোহিঙ্গা মাদক বা চোরাকারবারিদের সঙ্গে জড়িত এবং সন্ত্রাসী কার্যকলাপ করছে তারা সবাই পুরোনো বাসিন্দা। এই পরিস্থিতে নতুনরা কোনো অপরাধের সঙ্গে জড়িয়ে যাওয়ার বিষয়টি স্থানীয়দের হয়তো মন্তব্য। এখন পর্যন্ত তাদের বিষয়ে কোনো অপরাধমূলক কাজের সঙ্গে জড়িত থাকার তথ্য পাওয়া যায়নি।

এ প্রসঙ্গে র‌্যাব-১৫ অধিনায়ক লে. কর্নেল সাজ্জাদ হোসেন সময়ের আলোকে বলেন, রোহিঙ্গা ক্যাম্প এবং সীমান্ত এলাকায় র‌্যাবের তৎপরতা কম। শুধু রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীদের নিয়ে র‌্যাব কাজ করছে। 

ক্যাম্পের ভেতরে শুধু সন্ত্রাসীদের গ্রেফতারের বিষয়ে কাজ করছে র‌্যাব। রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলো আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন (এপিবিএন) সমন্বয় করে। সেখানে বেশিরভাগ সময় কাজ করছে এপিবিএন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে এপিবিএন প্রধান অতিরিক্ত আইজিপি সেলিম মো. জাহাঙ্গীরের মোবাইল নম্বরে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি। কক্সবাজারের ১৪ এপিবিএন ক্যাম্প কমান্ডার অতিরিক্ত ডিআইজি মো. ইকবালের সঙ্গে কথা হলে তিনি ব্যস্ত আছেন বলে পরে যোগাযোগ করতে বলেন।



সময়ের আলো/আরএস/




https://www.shomoyeralo.com/ad/1698385080Google-News-Update.jpg

সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সৈয়দ শাহনেওয়াজ করিম, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ
নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।

ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫ | ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com
close