ই-পেপার সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪
সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪

বৃষ্টি-বন্যায় ধানের চারার হাহাকার
প্রকাশ: সোমবার, ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০২৪, ২:৪২ এএম  (ভিজিট : ২৫৮)
অতিবৃষ্টি ও আকস্মিক বন্যায় বীজতলা তলিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি বিভিন্ন রোগ-বালাইয়ের কারণে বাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর উপজেলায় রোপা আমন ধানের অনেক বীজতলা নষ্ট হয়ে গেছে। চারদিকে চলছে চারার হাহাকার। চারার সন্ধানে হন্যে হয়ে ছুটছেন স্থানীয় চাষিরা। মৌসুমের শেষ সময়ে রোপা আমন ধানের চারা রোপণের জন্য চারার সন্ধানে চষে বেড়াচ্ছেন তারা। এমন পরিস্থিতিতে স্থানীয় কৃষকদের কাছে ভরসাস্থল হয়ে উঠেছে নবীনগর-কোম্পানীগঞ্জ সড়ক সংলগ্ন বাঙ্গরা চারা বিক্রির হাট। এই হাট থেকে চারা কিনে নিয়ে জমিতে রোপণ করছেন তারা।

এ বিষয়ে নবীনগর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. জাহাঙ্গীর আলম লিটন বলেন, নবীনগর উপজেলায় অনেক কৃষক বীজতলায় চারা প্রস্তুত করে বিভিন্ন হাটে বিক্রি করে থাকেন। বিশেষ করে যাদের বীজতলা করার জায়গার অভাব রয়েছে তাদের জন্য এই হাট আস্থার জায়গা। এসব চারার গুণগত মান অনেক ভালো। তবে বেশি বয়সের চারা না কেনার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে কৃষকদের। উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তাদের মাধ্যমে সঠিকভাবে চারা প্রস্তুত করার কৌশল শেখানো হচ্ছে বলেও জানান নবীনগর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. জাহাঙ্গীর আলম লিটন।

উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, প্রতি বছর সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহে শুরু হয়ে অক্টোবরের মাসের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত বাঙ্গরা হাটে চারা বেচাকেনা চলে। বিনাধান-১৭, বিনাধান-০৭, বিআর-২২, বিআর-২৩, ব্রিধান-৭৫সহ স্থানীয় বিভিন্ন রোপা আমন ধানের চারা পাওয়া যায় এখানে। প্রতিদিন ১৫ থেকে ২০ গাড়ি ধানের চারা বেচাকেনা হয় এই হাটে। এতে ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়েই লাভবান হন।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, প্রতি বছর বাঙ্গরা হাটে প্রায় কোটি টাকার চারা ক্রয়-বিক্রয় হয়। চলতি বছর সীমান্তবর্তী কুমিল্লা জেলার গোমতী বাঁধ ভেঙে যাওয়ায় বুড়িচং ও ব্রাক্ষণপাড়া উপজেলায় শতভাগ রোপা আমন ধান ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তাই বর্তমানে চারার চাহিদা আকাশচুম্বী। অন্যদিকে ফেনী, লক্ষ্মীপুর ও নোয়াখালী জেলায় বন্যার কারণে সেসব অঞ্চলেও চারার চাহিদা বেড়ে গেছে। তাই চারা কেনার জন্য বাঙ্গরা হাটে ভিড় করছেন বিভিন্ন জেলা থেকে আসা কৃষকসহ অনেক সামাজিক সংগঠন। প্রতিদিন সকাল থেকে রাত পর্যন্ত ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার বিভিন্ন এলাকাসহ আশপাশের জেলা থেকেও চাষিরা বাঙ্গরা হাটে ধানের চারা কিনতে আসছেন। ক্রেতা ও বিক্রেতাদের পদচারণে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত মুখরিত থাকে এই হাট। প্রতিদিন ভোরে বিক্রেতারা চারা নিয়ে এসে আঁটি হিসেবে গড়ে ১০ থেকে ১৫ টাকায় বিক্রি করেন। এক বিঘা জমি আবাদের জন্য ১০০ থেকে ১১০টি আঁটি প্রয়োজন হয়। এতে গড়ে খরচ পড়ে ১ হাজার ৫০০ থেকে ১ হাজার ৭০০ টাকা।

বাঙ্গরা হাটে চারা কিনতে আসা বুড়িচং উপজেলার জগতপুর গ্রামের ইয়াছিন ভূঁইয়া নামের একজন কৃষক জানান, প্রতি বছরই তিনি এই হাট থেকে ধানের চারা কেনেন। বিআর-২২ জাতের ১০০ আঁটি চারা ১ হাজার ৫০০ টাকায় কিনেছেন। এক কানি (৩০ শতাংশ) জমিতে এই চারা রোপণ করবেন তিনি। গত বছরের তুলনায় এবার চারার দাম একটু বেশি।

রোপা আমন আবাদের জন্য বাঙ্গরা হাটে চারা কিনতে আসা মো. গিয়াস মাহমুদ বলেন, আমাদের যে চারা ছিল তা নষ্ট হয়ে যাওয়ায় হাট থেকে চারা কিনতে হচ্ছে। ৪৫ শতক জমিতে রোপণের জন্য চারা কিনতে এসেছি। মো. মহসিন আলী নামের আরেক কৃষক বলেন, অন্যান্য কাজের ব্যস্ততা থাকায় চারা তৈরি করা আমার জন্য কঠিন। এ জন্য প্রতি বছরই বাঙ্গরা হাট থেকে ধানের চারা ক্রয় করি। বরাবরের মতো এবারও হাটে এসেছি চারা কিনতে। আমার পছন্দের জাত বিনা-১৭ এবং বিআর-২২। 

ইব্রাহিম ইউনিয়ন থেকে আসা চারা বিক্রেতা মো. কাউছার বলেন, আমার জমিতে মৌসুমে তিনবার বীজতলা তৈরি করা হয়। চারার বয়স ১৮ থেকে ২০ দিন হলেই বিক্রির উপযোগী হয়ে যায়। প্রতি বিঘা বীজতলা থেকে খরচ বাদে দেড় মাসেই ৩৫ থেকে ৪০ হাজার টাকা আয় করা যায়। চারা বিক্রি করতে আসা জিনোদপুর ইউনিয়নের আবদুল মান্নান বলেন, এবার দুই কানি জমিতে ধানের চারা করেছি। এই হাটে বিআর-২২, খাসা, বিনা ধান-৭সহ বিভিন্ন জাতের ধানের চারা বিক্রি করি।

সময়ের আলো/আরএস/






https://www.shomoyeralo.com/ad/1698385080Google-News-Update.jpg

সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সৈয়দ শাহনেওয়াজ করিম, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ
নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।

ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫ | ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com
close