ই-পেপার রবিবার ১৫ ডিসেম্বর ২০২৪
রবিবার ১৫ ডিসেম্বর ২০২৪
ই-পেপার

রবিবার ১৫ ডিসেম্বর ২০২৪

রূপাইছড়ায় পরিবেশবৈরী উৎসব
পাহাড় ও রাবার বাগান উজাড় করছেন তাঁতী লীগ নেতা
প্রকাশ: সোমবার, ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০২৪, ২:৩৩ এএম  (ভিজিট : ৩৯৪)
রাতের আঁধারে কেটে নেওয়া হচ্ছে পাহাড়ি টিলার গাছ। এমনকি নির্বিচারে কেটে ফেলা হচ্ছে পাহাড়ও। বাহুবলে রূপাইছড়া রাবার বাগানের সেগুন টিলায় রাতে লেগেছে গাছ ও পাহাড় কাটার মহোৎসব। এ পরিবেশবৈরী উৎসবে ইতিমধ্যেই বেশ কয়েকটি পাহাড় রূপান্তরিত হয়েছে বড় বড় পুকুরে। তবে মাঝেমধ্যে প্রশাসনের অভিযান হলে সাময়িকভাবে বন্ধ থাকে পাহাড় বিনাশের উৎসব। আবার প্রশাসন ঝিমিয়ে পড়লে ফের শুরু হয় এ মহোৎসব।

পাহাড় আর গাছ কাটার এ উৎসবের আয়োজক কোনো সাধারণ কেউ নন। নিজের বাড়ি বানাবেন বলে পাহাড়ের গাছ কেটে নিচ্ছেন চেয়ারম্যান। এতে বাধা দেওয়ার সাহস হয় না কারও। এভাবেই বালু, মাটি ও গাছ কেটে সমৃদ্ধ করে চলেছেন নিজের সম্পদের ভান্ডার। বানিয়ে নিচ্ছেন কোটি কোটি টাকা।
আওয়ামী তাঁতী লীগ হবিগঞ্জ জেলা সভাপতি ও স্থানীয় পুটিজুরি ইউপি চেয়ারম্যান মুদ্দত আলীর নেতৃত্বে চলছে এসব কর্মকাণ্ড। ১ হাজার ৯৬৩ একর রাবার বাগানের মধ্যে ইতিমধ্যে চেয়ারম্যান ২৩.৭৪ একর জায়গা দখল করে নিয়েছেন।

স্থানীয়রা বলছেন, দলীয় ও স্থানীয় প্রভাব খাটিয়ে চেয়ারম্যান রাবার বাগান দখল করে ধ্বংস করছেন। অন্যদিকে রাবার বাগান কর্তৃপক্ষ দীর্ঘদিন ধরে বাগান উদ্ধারের চেষ্টা করছে। মামলা আর কাউন্টার মামলার জটিলতায় হারিয়ে যাচ্ছে বাগানের বৈচিত্র্য। তারা বলছেন, রিজার্ভ ফরেস্ট পাহাড় ও রাবার বাগান উজাড় করছেন তাঁতী লীগ নেতা এলাকা দখল করে অবৈধ কাগজপত্র তৈরি করে পাহাড় ও গাছ কেটে নিচ্ছেন তাঁতী লীগ সভাপতি ও ইউপি চেয়ারম্যান মুদ্দত আলী। তবে অন্তর্বর্তীকালীন প্রশাসনের ভয়ে এখন রাতের বেলা পাহাড় কাটা শুরু করেছেন।

সরেজমিন দেখা যায়, রাবার বাগানের রিজার্ভ ফরেস্ট এলাকায় পাহাড় কেটে মাটি ও বালু উত্তোলনের ফলে বড় বড় পুকুর তৈরি হয়েছে। এতে করে একের পর এক রাবার বাগান ধসে পড়ছে। বাগানের ভেতরে কাঁঠাল এবং জামসহ বিভিন্ন ফলজ ও বনজ গাছ কাটা চলছে। যে শ্রমিকরা গাছ ও পাহাড় কাটছেন তাদের এ বিষয়ে প্রশ্ন করলে জবাব পাওয়া যায়, ‘চেয়ারম্যান আমাদের গাছ ও পাহাড় কাটতে বলেছেন, তাই আমরা কাটছি।’

এ বিষয়ে তার বক্তব্য জানতে তাঁতী লীগ সভাপতি ও ইউপি চেয়ারম্যান মুদ্দত আলীর সঙ্গে যোগাযোগের অনেক চেষ্টা করেও তার বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি। তবে তার ম্যানেজার মো. নুরুল আমীন এ প্রতিবেদককে বলেন, এসব এলাকা চেয়ারম্যান মুদ্দত আলীর। তা ছাড়া বালু উত্তোলনের জন্য চেয়ারম্যানের লাইসেন্স আছে। ২০১৪ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত বালু উত্তোলনের লাইসেন্স দেওয়া হয়েছে। তাই তিনি মাটি ও বালু উত্তোলন করছেন। এ ছাড়া গাছগুলো চেয়ারম্যান মুদ্দত আলী নিজে রোপণ করেছেন। এখন তার বাড়িতে কাঠের প্রয়োজন, তাই গাছ কাটা হচ্ছে। তবে এর জন্য সরকারি অনুমোদন আছে কি না সেটি তিনি জানেন না।

বাগানের ব্যবস্থাপক মো. মনিরুল ইসলাম সময়ের আলোকে বলেন, যে জায়গা থেকে বালু, মাটি ও গাছ কাটা হচ্ছে এগুলো রাবার বাগান এলাকার রিজার্ভ ফরেস্ট। জোর করে দখল করে পাহাড় কেটে বালু ও মাটি উত্তোলনের ফলে বৃষ্টির সময় রাবার গাছ উপড়ে পড়ছে। এভাবে চলতে থাকলে বাগান রক্ষা করা কঠিন হয়ে পড়বে। বাগানের ফলজ ও বনজ গাছ অবাধে কেটে নিচ্ছেন ইউপি চেয়ারম্যান মুদ্দত আলী। এ বিষয়ে প্রশাসনের সহযোগিতা চাওয়া হয়েছে। অতিদ্রুত সার্ভে করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

অন্যদিকে জেলা বন বিভাগের সহকারী বন সংরক্ষক তারেক রহমান বলেন, বন বিভাগের অনুমোদন ছাড়া গাছ কাটার কোনো বিধান নেই। যদি কেউ অনুমতি ছাড়া ফরেস্ট এলাকায় গাছ কাটে তা হলে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

আর পরিবেশ অধিদফতরের উপ-পরিচালক আকতারুজ্জামান টুকু বলেন, রাবার বাগানের ব্যবস্থাপক আমাদের মৌখিকভাবে এ ঘটনা অবহিত করেছেন। এ বিষয়ে পরিবেশ অধিদফতরে মামলা করা হলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

বাহুবল ইউএনও মনজুর আহসান সময়ের আলোকে বলেন, রাবার বাগানের এলাকা বিভাজনের জন্য সার্ভের কাজ চলছে। এ ছাড়া পাহাড় ও গাছ কাটার ঘটনায় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।


সময়ের আলো/আরএস/




এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ


https://www.shomoyeralo.com/ad/1698385080Google-News-Update.jpg

সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : সৈয়দ শাহনেওয়াজ করিম, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ। নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।
ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫ | ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com
close