ই-পেপার সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪
সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪

ফাঁকা ব্যাংক চেক-স্ট্যাম্পে ঋণের টাকায় জিম্মি গ্রাহক
এনজিওর ফাঁদে পড়ে জেলের ঘানি
প্রকাশ: রবিবার, ২৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৪, ৬:২৭ এএম  (ভিজিট : ১৭৮)
রাজশাহীর পুঠিয়ায় ডাম ফাউন্ডেশন ফর ইকোনমিক ডেভেলপমেন্ট (ডিএফইডি) নামের একটি এনজিওর কাছ থেকে ঋণের টাকা নিয়ে জিম্মি হয়ে পড়েছেন অনেক গ্রাহক। কিস্তি দিতে বিলম্ব হলে দেওয়া হচ্ছে মামলা। অনেক গ্রাহককেই খাটতে হচ্ছে জেল। এতে করে ওই এলাকার সাধারণ মানুষের মধ্যে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। সঠিক সময়ে কিস্তির টাকা পরিশোধ করতে না পারায় একাধিক গ্রাহকের বিরুদ্ধে ব্যাংকের চেক বইয়ের পাতা দিয়ে কোর্টে মামলা করার অভিযোগ উঠেছে ওই এনজিওর বিরুদ্ধে। এভাবে অনেকেই জেল পর্যন্ত খেটেছেন। গ্রামাঞ্চলের সাধারণ মানুষ অভাব-অনটনের তাড়নায় এনজিওদের কাছ থেকে ঋণ নিয়ে কিস্তি হিসাবে সাধারণত টাকা নিয়ে থাকেন। আর এই সুযোগে এনজিওর কর্তৃপক্ষ গ্রাহকদের কাছে প্রথমে ব্যাংকের ফাঁকা চেকের পাতা এবং তিনশ টাকা মূল্যের স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর নিয়ে রাখে।

এ ব্যাপারে ডিএফইডির ব্রাঞ্চ ম্যানেজার আশরাফুল ইসলাম অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, দীর্ঘদিন ধরে যারা কিস্তির টাকা পরিশোধ করেনি শুধু তাদের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। এ বিষয়ে মাইক্রোক্রেডিট রেগুলেটরি অথরিটির এক্সিকিউটিভ ভাইস চেয়ারম্যান মো. সফিউল্লাহ বলেন, বিষয়টি আমার জানা ছিল না। আমি নোট করে রাখলাম। তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানান তিনি।
ডিএফইডি এনজিওর কাছে ফাঁকা চেকের পাতা দিয়ে ৩ লাখ টাকা ঋণ নিয়েছিলেন পুঠিয়া সদরের ব্যবসায়ী মারুফ। টাকা পরিশোধের পর তিনি চেকের পাতা ফেরত চাইলে এনজিওর ক্যাশিয়ার তার কাছে ১০ লাখ টাকা পাবে বলে মামলা করার হুমকি দেন। মারুফের মতো একাধিক গ্রাহকের অভিযোগ, এনজিওটি কিস্তির টাকা পরিশোধ করার পরও তাদের ব্যাংকের চেক বইয়ের পাতা দিতে কর্তৃপক্ষ গড়িমসি ও টালবাহনা করে। এরপর কিস্তির টাকা দিতে বিলম্ব হলে তাদের নামে কোর্টে মামলা করা হয়। ওই এনজিও একাধিক মানুষকে জিম্মি করে রেখেছে। আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় থাকাকালীন গ্রাহকদের বিভিন্নভাবে হয়রানি করার নজির রয়েছে।

পৌর সদরের বাসিন্দা বাহার উদ্দিন ১ লাখ টাকা ঋণ নিয়েছিলেন। ৩০ হাজার টাকার কিস্তি না দিতে পারায় তার বিরুদ্ধেও মামলা করা হয়। তিনি অসুস্থ থাকায় কোর্ট তাকে টাকা নিয়ে ছেড়ে দিয়েছিলেন। পৌর এলাকার নিমতলার ব্যবসায়ী সেলিম হোসেন ১ লাখ টাকা ঋণ নিয়ে সঠিক সময়ে কিস্তি না দিতে পারায় তার নামে মামলা হয়েছে। তিনি গ্রেফতার হওয়ার ভয়ে আত্মগোপনে রয়েছেন। সদর ইউনিয়নের দুর্লভপুর গ্রামের সৌদি প্রবাসী মামুনের স্ত্রী রুপালি বেগম ১ লাখ টাকা ঋণ নিয়েছিলেন। রুপালির মা ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ায় দুটি কিস্তি না দিতে পারায় তার নামেও মামলা হয়েছে। তিনি জেলও খেটেছেন। উপজেলার পালোপাড়া তাহেরের মোড়ের রফিকুল ইসলাম ১ লাখ ৩০ হাজার টাকা ঋণ নিয়েছিলেন। অভাব-অনটন ও অসুস্থ হওয়ায় কিস্তি দিতে না পারায় একটি ভুয়া মামলার কাগজ দিয়ে ভয় দেখানো হয় তার ভাই ঋণের জামিনদার আ. লতিফকে।

দক্ষিণ পালোপাড়া গ্রামের রেজাউল ইসলামের স্ত্রী জলি বেগম ৪০ হাজার টাকা ঋণ নিয়েছিলেন। স্বামী তালাক দেওয়ায় তিনি কিস্তি পরিশোধ করতে না পারায় তার বিরুদ্ধেও দেওয়া হয় মামলা। আগামী সোমবার কোর্টে মামলার হাজিরা দেওয়ার তারিখ রয়েছে।

তাহেরের মোড় পশ্চিমপাড়ার গোলবারের স্ত্রী স্থানীয় জুট মিলে কাজ করেন। অপারেশন করা হয়েছে তার। তিনি একজন রোগী হওয়ার পরও ওষুধ না কিনে এনজিওর হুমকিতে কিস্তির টাকা পরিশোধ করতে বাধ্য হচ্ছেন। তিনি বলেন, ওষুধ খাওয়ার জন্য টাকা রেখেছিলাম। পরে এনজিওর পীড়াপীড়িতে বাসায় যে টাকা ছিল তা দিয়ে দিতে বাধ্য হয়েছি। আমার অপারেশন পরবর্তী সময়ে ওষুধ কিনতে হবে সেই টাকাও এখন আমার কাছে নেই। পরিবারের অভাব-অনটনের কারণে কিস্তির টাকা দিতে পারিনি। স্থানীয়রা বলছেন, যাদের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে তাদের দাবি তাদের কাছে এনজিও এত টাকা পাবে না। কিন্তু অনেক বেশি টাকা দাবি করে কোর্টে তারা মামলা করেছে। আমরা যারা এনজিওর কাছ থেকে কিস্তির হিসাবে ঋণ নিই তারা কেউ ধনী না। অভাবের তাড়নায় বাধ্য হয়ে টাকা ঋণ নিয়ে থাকি। 

ডিএফইডি এনজিও ঋণ নেওয়ার পর অভাবের তাড়নায় কয়েকটি কিস্তি সঠিক সময়ে না দিতে পারায় ঢালাওভাবে চেকের মামলা দিয়ে আমাদের জিম্মি করে রেখেছে। সময়মতো কিস্তির টাকা দিতে না পারলে এনজিওর মাঠকর্মী এবং ম্যানেজার আশরাফুল ইসলাম নিজে গিয়ে গ্রাহকদের অকথ্য ভাষায় গালাগাল করেন। আবদুল লতিফ ও বাহার বলেন, ম্যানেজার আশরাফুল ইসলাম সন্ত্রাসী বাহিনীর ক্যাডারের মতো কথা বলেন। 

তিনি এমপি, উপজেলা এবং ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের পক্ষে নির্বাচনি মাঠে থেকে সরাসরি ভোট দেওয়ার জন্য গ্রাহকদের বিভিন্নভাবে চাপ সৃষ্টি করেছিলেন। এই এনজিও কর্মী এবং ম্যানেজারের আচার-ব্যবহারে এলাকার মানুষ অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছেন। এ ছাড়াও স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাসহ জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে তার নানা ছবি নেট দুনিয়ায় ছড়িয়ে পড়েছে। প্রভাবশালী নেতাদের ছত্রছায়ায় ম্যানেজার আশরাফুলের বসবাস।

সময়ের আলো/আরএস/




https://www.shomoyeralo.com/ad/1698385080Google-News-Update.jpg

সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সৈয়দ শাহনেওয়াজ করিম, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ
নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।

ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫ | ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com
close