লক্ষ্মীপুরে বানের পানি নেমে যাওয়ার পর হঠাৎ করে বেড়েছে ডায়রিয়া রোগের প্রকোপ। একই সঙ্গে বাড়ছে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যাও। আক্রান্তদের মধ্যে অধিকাংশই শিশু। শয্যা ও প্রয়োজনীয় ওষুধ সংকট থাকায় চিকিৎসা সেবা দিতে হিমশিম খাচ্ছেন সদর হাসপাতালের চিকিৎসকরা।
জেলা সিভিল সার্জন ডা. আহম্মদ কবীর বলেন, ধারণ ক্ষমতার চেয়েও তিনগুণ রোগী ভর্তি থাকায় চিকিৎসাসেবা প্রদানে হিমশিম খেতে হচ্ছে চিকিৎসকদের। চিকিৎসক ও জনবল সংকটের কারণে কাক্সিক্ষত সেবা প্রদান করা যাচ্ছে না স্বীকার করে সিভিল সার্জন আরও বলেন, বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বারবার অবহিত করা হলেও এখনও কোনো সমাধান মেলেনি। ভয়াবহ বন্যা পরবর্তী সময়ে দূষিত পানির প্রভাবে রোগবালাই বেড়ে যাওয়ায় হাসপাতালের বহির্বিভাগেই প্রতিদিন প্রায় ১ হাজার ২০০ রোগী চিকিৎসা সেবা নিতে আসেন। তার ওপরে রয়েছে ওষুধের সংকট। এ জন্য রোগীর চাহিদা অনুযায়ী ওষুধ সরবরাহ করা যাচ্ছে না। হাসপাতালে আরও ওষুধের প্রয়োজন রয়েছে বলেও জানান সিভিল সার্জন।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, লক্ষ্মীপুর সদর হাসপাতালটি ১০০ শয্যাবিশিষ্ট হলেও অবকাঠামোগত সুবিধা ছাড়া গত ২১ বছরেও মেলেনি প্রস্তাবিত জনবল, প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি ও চিকিৎসক। ৫০ শয্যার জনবল দিয়েই কোনো রকমে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে এর চিকিৎসা কার্যক্রম।
বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা বলছেন, বন্যার পানি নামার পর দূষিত পানির প্রভাব ও নলকূপের পানি দূষণের ফলে ডায়রিয়া রোগের প্রকোপ দেখা দিয়েছে। সঙ্গে সঙ্গে বাড়ছে ডেঙ্গু রোগীও। শয্যা ও জনবল সংকট এবং নানা অব্যবস্থাপনার কারণে হাসপাতালটিতে এখন ব্যাহত হচ্ছে চিকিৎসাসেবা।
লক্ষ্মীপুরে ১৮ লাখ মানুষের চিকিৎসাসেবার একমাত্র ভরসাস্থল জেলা সদর হাসপাতাল। এটি ১০০ শয্যার হাসপাতাল হলেও বর্তমানে হাসপাতালটিতে ভর্তি রয়েছে তিন শতাধিক রোগী। এতে শয্যা সংকটে ভোগান্তিতে পড়েছে রোগীরা। সাম্প্রতিক ভয়াবহ বন্যা পরবর্তী সময়ে পানিবাহিত রোগের পাশাপাশি দেখা দিয়েছে ডায়রিয়া রোগের প্রকোপ। বাড়ছে ডেঙ্গু রোগীও। গত ১০ দিনে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে জেলা সদর হাসপাতালে চিকিৎসা সেবা নিয়েছেন ৬ শতাধিক রোগী। অথচ হাসপাতালটিতে ডায়রিয়া ওয়ার্ডে শয্যা রয়েছে মাত্র ১০টি। প্রতিদিনই ডায়রিয়া ওয়ার্ডে গড়ে ভর্তি হচ্ছেন ৯০ থেকে ১০০ জন রোগী।
এ বিষয়ে সদর হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার ডা. জহিরুল ইসলাম রনি বলেন, ভয়াবহ বন্যা পরবর্তী সময়ে দূষিত পানির প্রভাব ও নলকূপের পানি দূষণের ফলে ডায়রিয়া রোগের রোগের প্রকোপ দেখা দিয়েছে। ডায়রিয়া ওয়ার্ড ১০ শয্যার হলেও বর্তমানে এই ওয়ার্ডে ১০০-এর ওপর রোগী ভর্তি আছে। আক্রান্তদের মধ্যে অধিকাংশই শিশু। তা ছাড়া মশার উপদ্রব বাড়তে শুরু করায় বাড়ছে ডেঙ্গু রোগীও। লক্ষ্মীপুরে যে হারে ডায়রিয়া রোগী বাড়ছে তাতে চিকিৎসা সেবা দিতে আমাদের হিমশিম খেতে হচ্ছে। ওয়ার্ডে হাঁটার জায়গা পর্যন্ত নেই। ডায়রিয়ার পাশাপাশি ডেঙ্গু রোগী মোকাবিলা করাটা এখন চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
হাসপাতালের সিনিয়র স্টাফ নার্স লিলু রানী দাস বলেন, যেভাবে রোগীর চাপ বাড়ছে তাতে রোগীদের কাক্সিক্ষত সেবা দেওয়াটা এখন কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। জনবল সংকট থাকায় পরিস্থিতি সামাল দিতে বেগ পেতে হচ্ছে আমাদের। এরপরও রোগীর সেবা দিতে সাধ্যমতো চেষ্টা করছি আমরা।
রোগীর স্বজনরা জানান, হাসপাতালটিতে শয্যা সংকট থাকায় একই বেডে ৪ থেকে ৫ জন রোগীকে চিকিৎসা নিতে হচ্ছে। এরপরও স্থান সংকুলন না হওয়ায় মেঝেতেও বিছানা পেতে চিকিৎসা নিতে হচ্ছে অনেক রোগীকে। এতে কাক্সিক্ষত স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন তারা। স্যালাইন ও ওষুধ না পাওয়ারও অভিযোগ করেন অনেকে। হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীর স্বজন সুমাইয়া আক্তার বলেন, শয্যা সংকট থাকায় একই বেডে ৪ থেকে ৫ জন করে রোগী রাখা হচ্ছে। সেবিকারাও ঠিকমতো রোগীদের সেবা দিচ্ছেন না। প্রয়োজনীয় ওষুধও কিনতে হচ্ছে বাইর থেকে। তা ছাড়া হাসপাতালের পরিবেশও নোংরা।
অন্যদিকে বহির্বিভাগে চিকিৎসাসেবা নিতে আসা রোগীরা বলছেন, ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে থেকেও চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন তারা। এ জন্য হাসপাতালের অব্যবস্থাপনাকে দায়ী করছে রোগীরা।
সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. অরূপ পাল জানান, সদর হাসপাতালটি ১০০ শয্যার হলেও বর্তমানে তিন শতাধিক রোগী ভর্তি আছে। জনবল ও শয্যা সংকট থাকায় রোগীদের কাক্সিক্ষত চিকিৎসাসেবা প্রদানে বিড়ম্বনায় পড়তে হচ্ছে তাদের। এরপরও তারা সাধ্যমতো চেষ্টা করে যাচ্ছেন।