ই-পেপার রোববার ৬ অক্টোবর ২০২৪
রোববার ৬ অক্টোবর ২০২৪

রামু ট্র্যাজেডির ১২ বছর
খোঁজ মেলেনি সেই উত্তমের, অগ্রগতি নেই মামলারও
প্রকাশ: রবিবার, ২৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৪, ১:২৯ এএম  (ভিজিট : ২১০)
কক্সবাজারের রামু ট্র্যাজেডির ১২ বছর পূর্ণ হলো আজ। ২০১২ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর রাতে রামুর ১২টি বৌদ্ধবিহার ও বৌদ্ধপল্লির ২৬ বসতিকে অগ্নিসংযোগ ও হামলা করে দুর্বৃত্তরা। পরদিন পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল উখিয়া-টেকনাফের আরও ৭টি বৌদ্ধবিহার। তবে সে রাতের সহিংসতা ভুলে থাকতে চান বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের মানুষ। ১২ বছরে রামুতে যে সম্প্রীতি ফিরেছে সেখানে নতুন করে কোনো ক্ষত তৈরি করতে চান না তারা।

এদিকে যার ফেসবুকে কুরআন অবমাননার অভিযোগে এই ধ্বংসযজ্ঞ চালানো হয় সেই উত্তম বড়ুয়ার খোঁজ মেলেনি এখনও। অগ্রগতি নেই এ ঘটনায় হওয়া একাধিক মামলারও।

শনিবার সন্ধ্যায় কক্সবাজারের রামু সীমা বিহার বৌদ্ধ মন্দির ঘুরে দেখা যায়, পূজা-অর্চনায় মগ্ন বৌদ্ধ ধর্মভীরু মানুষ। প্রদীপ শিখার আলোয় বুদ্ধমূর্তির পদতলে নির্ভয়, স্বতঃস্ফূর্ত নতমস্তক আরাধনায় বিভোর। মধুপূর্ণিমা উপলক্ষে এদিন গৌতম বুদ্ধের ভক্ত অনুরাগীরা রামুর সব মন্দিরে মন্দিরে পূজা-প্রার্থনায় নিবেদিত আছেন।

বৌদ্ধরা জানান, আমরা এখন ভালো আছি। এখন সব ধর্মের মানুষের সঙ্গে মিলেমিশে সুন্দর একটি সমাজে বাস করছি আমরা। তবে অনেকের মনে অজানা কষ্ট, হামলার ১২ বছর হলেও সে ঘটনার হামলাকারীদের পরিচয় অজানা রয়ে গেল। মামলারও অগ্রগতি নেই।

কেন্দ্রীয় বৌদ্ধবিহারের প্রধান ভিক্ষু জানান, রামুর ধর্মীয় সম্প্রীতিতে যারা আঘাত হেনেছিল তারা সফল হয়নি। রামুর কেন্দ্রীয় সীমা বিহারের আবাসিক অধ্যক্ষ প্রজ্ঞানন্দ মহাথের বলেন, যে ক্ষতের তৈরি হয়েছিল, ১২ বছরে আমরা সবাই মিলে তা অনেকটাই কাটিয়ে উঠেছি। সেখানে এসব নিয়ে নতুন করে কিছু বলার নেই।

আইনজীবীরা জানান, মামলার সাক্ষীরা সাক্ষ্য দিতে না চাওয়ায় মামলা নিষ্পত্তিতে দেরি হচ্ছে। ব্যক্তিগতভাবে অনেকের সঙ্গে যোগাযোগ করেও ঠিকমতো সাক্ষ্য পাওয়া যাচ্ছে না। তারপরও চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন আইনজীবীরা।

এদিকে নাম গোপন রাখার শর্তে এক নেতা বলেন, পুরোনো ঘটনা সামনে এনে আমরা এখন বিভক্তিতে যেতে চাচ্ছি না। কারণ দেশে এখন যেভাবে মাজার ভাঙা হচ্ছে এতে আমরাও শঙ্কিত। অন্যদিকে ওই ঘটনার পরপরই রামু, উখিয়া ও টেকনাফে ১৯টি মামলা হয়। এতে এজাহারভুক্ত ৩৭৫ জনসহ ১৫ হাজার ১৮২ জনকে অভিযুক্ত করা হয়। পরে আপসের ভিত্তিতে একটি মামলা প্রত্যাহার হলেও বাকি ১৮ মামলায় ৯৯৩ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেয় তদন্তকারী সংস্থা।

২০১২ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর উত্তম বড়ুয়া নামের এক বৌদ্ধ যুবকের ফেসবুকে পবিত্র কুরআন অবমাননার অভিযোগ তুলে রামুর বৌদ্ধবিহার ও বাড়িঘরে হামলা চালানো হয়। ওই দিনের হামলায় কয়েকশ বছরের প্রাচীন ১২টি বৌদ্ধবিহার ও ২৬টি বসতঘর পুড়িয়ে দেওয়া হয়। এ ছাড়াও বৌদ্ধবিহার ও ক্ষতিগ্রস্ত ঘরবাড়িগুলোতে ব্যাপকভাবে ভাঙচুর ও লুটপাট করা হয়।

এ ঘটনার ১২ বছরে এসেও সেই উত্তম বড়ুয়ার কোনো খোঁজ জানেন না তার বাবা ও মা। এমনকি উত্তম বড়ুয়ার স্ত্রী সন্তান নিয়ে এখন কোথায় আছেন তার তথ্যও দিতে পারেননি কেউ। তবে উত্তম বড়ুয়ার বাবা সুদত্ত জানান, তার ছেলে দেশে আছে কি বিদেশ আছে তা জানেন না। সরকার চাইলে ছেলেকে তার কাছে ফিরিয়ে আনতে পারেন। মৃত্যুর আগে ছেলেকে দেখতে চান এই পিতা।

উত্তমের মা মাধু বড়ুয়া জানান, ১২ বছর আগে সংগঠিত ঘটনাটিতে উত্তম কোনোভাবেই জড়িত ছিল না। উত্তমকে ফিরে আনা হলে প্রকৃত সত্য জানা যাবে। ছেলেকে ফিরিয়ে আনার দাবি মায়ের। এ ছাড়া তারা শান্তিতে থাকতে চান। তিনি জানান অনেক সাংবাদিক তাদের সঙ্গে দেখা করে বক্তব্য নিতে চান বর্তমান সময়ে আমরা কিছু বলতে চাচ্ছি না। আমাদের যা বলার তা ধর্মীয় নেতাদের বলছি।

সময়ের আলো/আরএস/ 





https://www.shomoyeralo.com/ad/1698385080Google-News-Update.jpg

সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সৈয়দ শাহনেওয়াজ করিম, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ
নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।

ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫ | ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com
close