ই-পেপার সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪
সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪

আসরের নামাজে যেসব সওয়াব
প্রকাশ: রবিবার, ২৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৪, ১২:৫২ এএম  (ভিজিট : ২২৬)
একজন মুসলমানকে প্রতিদিন পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করতে হয়। এসব ফরজ নামাজের মধ্যে তৃতীয় হচ্ছে আসর। মধ্য দুপুর অতিবাহিত হওয়ার পর আকাশের দিগন্তে সূর্য হেলে পড়লে এবং রোদের তেজ কমে গেলে চার রাকাতবিশিষ্ট এ নামাজ পড়া প্রত্যেক প্রাপ্তবয়স্ক মুসলমান নারী-পুরুষের ওপর ফরজ। প্রতিদিনের পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের সম্মিলিত গুরুত্ব ও পুরস্কার বিভিন্ন হাদিসে বর্ণিত হয়েছে। তবে বিশেষ কারণে আসরের নামাজের রয়েছে বিশেষ গুরুত্ব। হজরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) থেকে বর্ণিত-আল্লাহর রাসুল (সা.) বলেছেন, যদি কোনো ব্যক্তির আসরের নামাজ ছুটে যায়, তা হলে যেন তার পরিবার-পরিজন ও ধনসম্পদ সবকিছুই ধ্বংস হয়ে গেল (বুখারি, হাদিস : ৫৫২)। আবু মালিহ (রা.) বলেন, এক যুদ্ধে আমরা বুরাইদাহ (রা.)-এর সঙ্গে ছিলাম। দিনটি ছিল মেঘলা। তাই বুরাইদা (রা.) বললেন, শিগগিরই আসরের নামাজ আদায় করে নাও। কারণ নবী (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি আসরের নামাজ ছেড়ে দেয় তার আমল বিনষ্ট হয়ে যায়। (বুখারি, হাদিস : ৫৫৩)

দিনের আলো থাকা অবস্থায় শেষ নামাজ এটি। এ সময় প্রকৃতিতে বিশেষ পালাবদল হয়। পৃথিবীর দায়িত্বে নিয়োজিত ফেরেশতাদেরও দায়িত্ব পরিবর্তন হয় এ সময়। তাই এ সময়ের নামাজকে বিশেষভাবে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে হাদিসে। এ নামাজের অনেক ফজিলত ও পুরস্কার রয়েছে। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত-রাসুল (সা.) বলেছেন, ফেরেশতারা পালাবদল করে তোমাদের মাঝে আগমন করেন; এক দল দিনে, এক দল রাতে। আসর ও ফজরের নামাজে উভয় দল একত্র হয়। অতঃপর তাদের মাঝে রাতযাপনকারী দলটি উঠে যায়। তখন তাদের প্রতিপালক তাদের জিজ্ঞেস করেন, আমার বান্দাদের কোন অবস্থায় রেখে এলে? অবশ্য তিনি নিজেই তাদের ব্যাপারে সর্বাধিক অবগত। উত্তরে তারা বলে, আমরা তাদের নামাজে রেখে এসেছি আর আমরা যখন তাদের কাছে গিয়েছিলাম তখনও তারা নামাজ আদায়রত অবস্থায় ছিল (বুখারি, হাদিস : ৫৫৫)। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) আরও বলেন, আল্লাহর রাসুল (সা.) বলেছেন, তোমাদের কেউ যদি সূর্য অস্ত যাওয়ার আগে আসরের নামাজের এক সেজদাও পায়, তা হলে সে যেন নামাজ পূর্ণ করে নেয়। আর যদি সূর্য উদিত হওয়ার আগে ফজরের নামাজের এক সেজদা পায়, তা হলে সে যেন নামাজ পূর্ণ করে নেয় (বুখারি, হাদিস : ৫৫৬)।

আসরের নামাজের আগে চার রাকাত সুন্নতে গায়রে মুয়াক্কাদা নামাজ পড়া অত্যন্ত ফজিলতের বিষয়। সুযোগ হলে আসরের ফরজের আগের এ সুন্নত পড়া চাই। নবীজি (সা.) নিজে এ নামাজ পড়তেন এবং সাহাবায়ে কেরামকে বিশেষভাবে তা পড়ার তাগিদ দিতেন। হজরত আলী (রা.) বলেন, ‘নবীজি (সা.) আসরের ফরজ নামাজের আগে চার রাকাত সুন্নত পড়তেন’ (তিরমিজি, হাদিস : ৪২৯; ইবনে মাজাহ, হাদিস : ১১৬১)। অন্য একটি হাদিসে রয়েছে, নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘আল্লাহ সেই ব্যক্তির ওপর রহম করুন, যারা আসরের আগে চার রাকাত সুন্নত পড়ে’ (আবু দাউদ, হাদিস : ১২৭১; তিরমিজি, হাদিস : ৪৩০)। অথচ অনেকেই দুপুরের ঘুমে, গল্পে-আড্ডায় বা কর্মব্যস্ততায় আসরের নামাজকে গুরুত্বহীন মনে করে ওয়াক্ত পার করে দিই; যা শাস্তিযোগ্য অপরাধ।

আসরের নামাজ পড়ার সঠিক সময় কখন? এ বিষয়ে হাদিসের আলোকে বিস্তারিত বলেছেন ফুকাহায়ে কেরাম। যখন কোনো জিনিসের ছায়া সমপরিমাণ হয়ে যাওয়ার পর দ্বিগুণ হতে শুরু করা থেকে সূর্য ডোবা পর্যন্ত আসরের সময়। আল্লাহর রাসুল (সা.) বলেন, ‘সূর্য যখন হলদে রং হয় এবং শয়তানের দুই শিঙের মাঝখানে এসে যায় তখন আসরের নামাজ পড়ে মুনাফিকরা’ (মুসলিম, মেশকাত, ৬০ পৃ.)। সুতরাং সূর্যের আভা একটু হলদে হয়ে আসার আগেই আসর পড়া উচিত। ইমাম আবু হানিফা (রহ.) থেকেও বর্ণিত হয়েছে, আসরের ওয়াক্তের শুরু হলো এক ছায়া হতে। ইমাম আবু ইউসুফ, ইমাম মোহাম্মদ এবং ইমাম জুফার ও অন্য তিনজন ইমামের মতও তাই। ইমাম তাহাবি (রহ.) বলেন, আমরা এ মতই গ্রহণ করেছি (আকিদাতুত তাহাবি : ৭৮ পৃ.)। পরিশেষে একটি হাদিস স্মরণ করছি, আল্লাহর রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি আসরের নামাজ ছেড়ে দেয় তার অন্যান্য আমলও নষ্ট হয়ে যায়’ (বুখারি, মেশকাত, পৃষ্ঠা : ৬০)। আল্লাহ সবাইকে বোঝার ও আমল করার তওফিক দিন।



সময়ের আলো/আরএস/ 




https://www.shomoyeralo.com/ad/1698385080Google-News-Update.jpg

সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সৈয়দ শাহনেওয়াজ করিম, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ
নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।

ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫ | ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com
close