ই-পেপার সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪
সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪

ডেঙ্গুর কাছে সুখীদের হার
প্রকাশ: শনিবার, ২৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৪, ৩:০৪ এএম আপডেট: ২৮.০৯.২০২৪ ৩:৪৫ এএম  (ভিজিট : ২৩১)
বাংলাদেশ রেলওয়ে ঢাকা ডিজেল লোকোমোটিভ ওয়ার্কশপে ট্রেড অ্যাপ্রেনটিস পদে কর্মরত ছিলেন আকলিমা আক্তার। সিটি ব্যাংকে কর্মরত স্বামী সাইফুল ইসলাম। এই দম্পতির দুই বছরও না হওয়া একমাত্র সন্তান সামিহা বিনতে ইসলামকে নিয়ে তাদের ছোট্ট সুখী সংসার। আর আকলিমা আক্তারকে পরিবারের সদস্যরা সুখী নামে ডাকতেন। হাসিখুশি সুখী সবাইকে সুখে রাখতে চাইতেন। সেই সুখী বুধবার সকালে ডেঙ্গুতে মারা গেছেন। বিকালে আকলিমার মরদেহ নিয়ে তার স্বামী সাইফুল ইসলাম যখন ঢাকা থেকে ছুটছেন নোয়াখালীর দিকে, তখন এই দম্পতির দুই বছরও না হওয়া একমাত্র সন্তান সামিহা বিনতে ইসলাম জ্বর নিয়ে হাসপাতালের বিছানায়। জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এভাবেই নীরবে ডেঙ্গু পরিস্থিতি ভয়ংকর হয়ে উঠেছে।

ঢাকার ওয়ারির বাসিন্দা মোহাম্মদ নাদিম তার পরিবারের সবাই ডেঙ্গুতে আক্রান্ত বলে এই প্রতিবেদককে জানান। তিনি বলেন, শুরুতে আমার বৃদ্ধ বাবা জ্বরে আক্রান্ত হন। তার ডায়াবেটিক ও উচ্চ রক্তচাপ ছিল। তার শারীরিক অবস্থা খারাপ হলে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। বাবাকে নিয়ে যখন হাসপাতালে তখন আমার মায়ের ডেঙ্গু হয়। মা পুরোপুরি সুস্থ হওয়ার আগেই ডেঙ্গুতে আক্রান্ত আমার স্ত্রী ও বাচ্চা। কীভাবে কী হচ্ছে বুঝতে পারছি না। এখন আল্লাহ, আল্লাহ করছি।    

বর্ষা মৌসুমে ডেঙ্গুর সংক্রমণ বেশি হয়। বর্ষা শেষ হয়ে আসছে। কিন্তু গত কিছু দিন ধরে মুষলধারে বৃষ্টি হচ্ছে। আর এই বৃষ্টি ডেঙ্গু সংক্রমণের ঝুঁকি আরও বাড়াচ্ছে। স্বাস্থ্য অধিদফতর জানিয়েছে, শুক্রবার ডেঙ্গুতে আরও দুজনের মৃত্যু হয়েছে। এ সময় ডেঙ্গু নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে ৩২১ জন। আগের দিন বৃহস্পতিবার ডেঙ্গুতে ৩ জন মারা গিয়েছিল। এ বছর এখন পর্যন্ত ১৪৩ জন ডেঙ্গুতে মারা গেছে। আর হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে ২৭ হাজার ৭০৫ জন। এত মৃত্যুর পরও স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের গা ছাড়া ভাব যাচ্ছে না। তারা গতানুগতিক ধারায় কাজ করছে। সামনে ডেঙ্গু পরিস্থিতি আরও নাজুক হয়ে উঠতে পারে বলেই মনে করছেন জনস্বাস্থ্যবিদ ও কীটতত্ত্ববিদরা। তারা বলছেন, এ পরিস্থিতিতে ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়লে তা সামলানো কঠিন হতে পারে।

চলতি বছরের শুরুতে ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়লেও মার্চ মাস থেকে এ প্রবণতা কমে আসে। তবে আগস্ট মাসের শেষ দিক থেকে তা বাড়তে থাকে।  আগস্ট ও সেপ্টেম্বরে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি বৃষ্টি এবং তাপমাত্রা বৃদ্ধিতে এডিস মশার বিস্তার ঘটেছে। এ কারণে ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যাও বাড়ছে। চলতি মাসের ২৭ দিনে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে ১৪ হাজার ৮৬৪ জন।
প্রতিবেদন বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ডেঙ্গুর নতুন ভয় গ্রামে। গত শতাব্দীর ষাটের দশকে এ দেশে ডেঙ্গু শনাক্ত হয়। এরপর ২০০০ সালে প্রথম বড় আকারে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়। ডেঙ্গু ছিল মূলত ঢাকা শহরকেন্দ্রিক। এরপর প্রতিবছর কমবেশি ডেঙ্গুর সংক্রমণ দেখা দিতে থাকে। ২০১৯ সালে বড় বড় শহরের পাশাপাশি কয়েকটি গ্রামেও ডেঙ্গু শনাক্ত হয়। গত কয়েক বছর ধরে ৬৪ জেলাতেই ডেঙ্গু শনাক্ত হয়েছে, বহু গ্রামের মানুষ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছে। এর অর্থ, সারা দেশে ডেঙ্গুর বাহক এডিস মশা আছে। মশা নিয়ন্ত্রণ কর্মকাণ্ড সাধারণত বড় বড় শহরে চোখে পড়ে। গ্রামে সেই কর্মকাণ্ড নেই। উপকূলের জেলাগুলোতে ডেঙ্গুর প্রকোপ নতুন ঝুঁকি বলে মনে করছেন জনস্বাস্থ্যবিদরা। গ্রামের মানুষের করণীয় সম্পর্কে সরকারের পক্ষ থেকে স্পষ্ট কোনো বার্তা নেই। গ্রামে তাই ডেঙ্গুর ঝুঁকি থেকেই যাবে।

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ও কীটতত্ত্ববিদ ড. আবদুল আলীম বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে এডিস মশা বৃদ্ধির অনুকূল পরিবেশ তৈরি হচ্ছে। নগরকেন্দ্রিক এডিস মশার প্রজননকাল জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর। কিন্তু  এডিশ মশা এখন সারা দেশে, সারা বছর প্রার্দুভাব দেখা যাচ্ছে। তিনি বলেন, ডেঙ্গুর প্রকোপ কমাতে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, মশক নিয়ন্ত্রণ এবং মানুষকে সচেতন করার কাজটি আর সেভাবে হচ্ছে না। কিন্তু চেষ্টাটা ধরে রাখতে হবে। এডিস ও কিউলেক্স মশা নিধনের জন্য আলাদা আলাদা কর্মসূচি রাখতে হবে। স্থানীয় সরকার, স্বাস্থ্য বিভাগ, শিক্ষাসহ সব বিভাগের মধ্যে সমন্বিত একটি উদ্যোগ দরকার, যা এখন পর্যন্ত দেখা যাচ্ছে না।

এমিরেটাস অধ্যাপক ডা. এ বি এম আবদুল্লাহ সময়ের আলোকে বলেন, এটি মশাবাহিত রোগ। ঘর থেকেই ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হচ্ছি। প্রথম আমার ঘর, আমাকে নিরাপদে রাখতে হবে। তিনি বলেন, মশার চরিত্র পাল্টেছে। বর্ষায় শহরকেন্দ্রিক এডিস মশা সারা দেশে ছড়িয়ে পড়েছে। ডেঙ্গুর ধরন পাল্টেছে। অনেকে দ্বিতীয়বার ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হচ্ছেন। কিছু বুঝে ওঠার আগেই অনেকে শক সিনড্রোমে মারা যাচ্ছেন। নীরবে ভয়ংকর হয়ে উঠছে ডেঙ্গু। অধ্যাপক আবদুল্লাহ বলেন, সরকারের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, সিটি করপোরেশন, পৌরসভা, স্থানীয় সরকার, জনগণ সবার কাজ। ডেঙ্গু নিয়ে সচেতনতায় গণমাধ্যম ভালো ভূমিকা রাখছে। পাশাপাশি সামাজিক শক্তির দায়িত্ব রয়েছে। ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, সিটি করপোরেশনের কাজ দৃশ্যমান করার তাগিদ দেন তিনি।


সময়ের আলো/আরএস/





https://www.shomoyeralo.com/ad/1698385080Google-News-Update.jpg

সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সৈয়দ শাহনেওয়াজ করিম, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ
নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।

ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫ | ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com
close