ই-পেপার রোববার ৬ অক্টোবর ২০২৪
রোববার ৬ অক্টোবর ২০২৪

চিকিৎসার অভাবে ধুঁকছেন গুলিবিদ্ধ শিক্ষার্থী আকবর
প্রকাশ: শনিবার, ২৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৪, ২:৩৬ এএম  (ভিজিট : ১৮৪)
সিলেট মদনমোহন সরকারি কলেজের একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী আকবর হোসেন। শারীরিক প্রতিবন্ধী দিনমজুর রওশন আলীর ছেলে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের উত্তাল দিনগুলোয় অন্য ছাত্রদের মতো শামিল হয়েছিলেন স্বৈরাচারবিরোধী মিছিলে। ১৭ জুলাই থেকে কলেজ প্রাঙ্গণে ছাত্রদের মিছিলে সক্রিয় ছিলেন এই কিশোর। কিন্তু ৪ আগস্ট পুলিশের গুলিতে গুরুতর আহত হন তিনি। স্থানীয়রা সিলেট সরকারি হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখানেই চলে চিকিৎসা। ছেলের চিকিৎসায় উপায়ান্তর না দেখে রওশন আলী তার পরিবার নিয়ে ফিরে আসেন চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জে। নিজের প্রতিবন্ধকতা, পরিবর্তিত রাজনৈতিক পরিবেশে কাজ না পাওয়া, ছেলের উন্নত চিকিৎসাÑএসবের চাপে খাবি খাচ্ছেন রওশন; দুচোখভর্তি হতাশা নিয়ে তাকিয়ে আছেন ছেলে আকবরের দিকে। এক পর্যায়ে নিজের ব্যর্থতা মেনে নিয়েই বুঝি হাউমাউ করে কেঁদে ওঠেন।

চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জ উপজেলার পাইকপাড়া দক্ষিণ ইউনিয়নের দায়চারা গ্রামের রওশন আলীর বাড়ি। সময়ের আলোর সঙ্গে কথোপকথনের সময় এ আবেগঘন পরিবেশ তৈরি হয়। স্ত্রী ফেরদৌসী বেগম একই সঙ্গে স্বামী ও সন্তানকে সামাল দিতে গিয়ে নিজেও কিছুক্ষণ পরপর আবেগপ্রবণ হয়ে পড়ছেন। এখন জরুরি ভিত্তিতে দরকার ছেলের চিকিৎসা। কিন্তু এই নারী জানেন না কীভাবে কোথা থেকে এসব সাহায্য পাবেন তিনি।

আহত শিক্ষার্থী আকবর জানান, গত ৪ আগস্ট সিলেটের কলেজ ক্যাম্পাস এলাকায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় ছাত্র-জনতার সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষের সময় বিপরীত দিক থেকে ছোড়া গুলিতে বুক, হাত, পিঠসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে গুলিবিদ্ধ হন তিনি। আহত অবস্থায় ওই দিনই তাকে সিলেট হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য বলা হলেও অর্থাভাবে বন্ধ হয়ে গেছে চিকিৎসা। গুলির ক্ষত নিয়ে বাড়িতে বিছানায় পড়ে থাকলেও শারীরিক প্রতিবন্ধী বাবা রওশন আলী ছেলের চিকিৎসা না করাতে পেরে তীব্র হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়েন।

রওশন আলী বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে তার ছেলে বুক, হাতে গুলিবিদ্ধ হয়েছিলেন। পুরো শরীরজুড়ে রয়েছে ছররা গুলির ক্ষত-বিক্ষতের চিহ্ন। স্থানীয়দের সহযোগিতায় ছেলের কোনোমতে চিকিৎসা করালেও পুরো সুস্থ করে তুলতে পারেননি। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে আহত সিংহভাগ শিক্ষার্থীর চিকিৎসার ব্যয় বহন করলেও আমার বেলায় তা জোটেনি।
হাউমাউ করে কেঁদে তিনি আরও বলেন, আমি এক সময় প্রবাসে ছিলাম। সেখানে দুর্ঘটনার শিকার হয়ে আমার হাত কেটে ফেলতে হয়েছে। বর্তমানে দিনমজুরি করে পরিবার নিয়ে কোনো মতে বেঁচে আছি। এখন আবার ছেলের এই অবস্থা। ছেলের চিকিৎসায় ব্যয় মিটাতে না পেরে এখন মানবেতর জীবনযাপন করতে হচ্ছে আমাকে।

আহত আকবর হোসেনের মা ফেরদৌসী বেগম জানান, তিনি পেশায় গৃহিণী। আন্দোলন শুরু হওয়ার পর থেকেই তীব্র অনটনে ভুগছেন। গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর নিজ হাতে সন্তানের শরীর থেকে ছররা গুলির ছোট ছোট কার্তুজ উঠিয়েছি। সেই গুলি আমার কাছে রয়েছে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে ছেলের উন্নত চিকিৎসার দাবি জানান তিনি। 

আহত শিক্ষার্থী আকবর হোসেন আরও বলেন, আমাকে প্রথমে সিলেট সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য বলা হলেও টাকার অভাবে চিকিৎসা করাতে পারছি না। জীবনে কিছু পাই বা না পাই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সঙ্গে আছি এবং থাকব, যেহেতু আমিও একজন ছাত্র। তবে আমার কর্মসংস্থান হলে পরিবারের পাশে দাঁড়াতে পারব।

সময়ের আলো/আরএস/




https://www.shomoyeralo.com/ad/1698385080Google-News-Update.jpg

সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সৈয়দ শাহনেওয়াজ করিম, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ
নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।

ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫ | ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com
close