ই-পেপার রবিবার ১৫ ডিসেম্বর ২০২৪
রবিবার ১৫ ডিসেম্বর ২০২৪
ই-পেপার

রবিবার ১৫ ডিসেম্বর ২০২৪

সৌন্দর্যের রানী বান্দরবান পর্যটকশূন্য হতে চলেছে
প্রকাশ: শনিবার, ২৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৪, ২:০১ এএম  (ভিজিট : ৩৩৮)
পর্যটকশূন্য হতে চলেছে সৌন্দর্যের রানী বান্দরবান। চারপাশে সবুজ অরণ্যঘেরা প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অপরূপ লীলাভূমি পার্বত্য নগরী বান্দরবান। বর্ষা মৌসুমে এক অনিন্দনীয় দৃশ্যমালায় মনোরম হয়ে ওঠে এর পাহাড়মালা। একসময় সামান্য বৃষ্টি হলে পাহাড়ের ওপর দিয়ে সারি সারি ভেসে বেড়ানো মেঘের দৃশ্য উপভোগ করতে ছুটে আসতেন প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের পূজারি পর্যটকরা। প্রাকৃতিক ঐশ্বর্যকে আলিঙ্গন করতে দেশি-বিদেশি পর্যটকদের গন্তব্য হয়ে উঠত বান্দরবান। 

কিন্তু সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ভালো নেই এ জেলার পর্যটন ব্যবসায়ীরা। একটা সময় ছিল যখন হোটেল-মোটেল আর কটেজগুলোতে বছরের এ সময়টায় জায়গা পাওয়া কষ্টকর ছিল পর্যটকদের ভিড়ে। নানা কারণে সে সংখ্যা নেমে এসেছে ৫ থেকে ২০ শতাংশে। সম্প্রতি পাহাড়ের অস্থিতিশীল পরিবেশের কারণে পর্যটকদের দেখা মিলছে না। এবার পর্যটন দিবসকে কেন্দ্র করে হোটেল-মোটেলের পক্ষ থেকে ছাড় দিয়েও পর্যটকদের আকর্ষণ করা যায়নি।

সন্ত্রাসী নির্মূলে পাহাড়ে যৌথ অভিযান চলছে। এমনিতেই নানা কারণে দীর্ঘদিন ধরেই পর্যটকদের আনাগোনা নেই এই জনপদে। জেলার পরিবহন থেকে শুরু করে ছোট ছোট কটেজ, খাবার হোটেলসহ সব ব্যবসায় এর প্রভাব পড়তে শুরু করেছে।

পর্যটন ব্যবসার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট লোকজন জানান, ২০২০ সালে মহামারি করোনায় তাদের ব্যবসায় ধস নামে। ওই সময় বন্ধ হয়ে যায় সব পর্যটন স্পট। তবে ২০২২ সালে তারা ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করেন। কিছুটা লোকসান কাটিয়ে উঠতে শুরু করেন। কিন্তু গত বছর ভয়াবহ বন্যায় আবার পর্যটন ব্যবসায় ধস নামে। এরপরই পাহাড়ের বিচ্ছিন্নতাবাদী সন্ত্রাসী গ্রুপের আনাগোনা বাড়তে থাকে। চলতি বছর এপ্রিল মাসে কুকি-চিন বা কেএনএফের (বমপার্টি নামে পরিচিত) থানচি ও রুমায় ব্যাংক ডাকাতির ঘটনার পর ফের মুখ থুবড়ে পড়েছে বান্দরবানের পর্যটন ব্যবসা। 

শুক্রবার নীলাচল ও মেঘলা পর্যটন কেন্দ্রে খুব স্বল্পসংখ্যক পর্যটক দেখা গেছে। নীলচল পর্যটন কেন্দ্রে টিকেট কাউন্টারের দায়িত্বে থাকা সুমি ত্রিপুরা বলেন, সারা দিনে দুশ’র মতো টিকেট বিক্রি হয়েছে। কয়েক বছর আগেও সাপ্তাহিক ছুটির দিন ২ হাজারেরও অধিক টিকেট বিক্রি করেছি। যারা ঘুরতে আসছেন তারা বেশিরভাগই আশপাশের জেলার। সারা দিন ঘুরে আবার বিকালে তারা ফিরে যান।

চট্টগ্রামের চন্দনাইশ থেকে পাঁচ বছরের শিশু আর তার সহধর্মিণী নিয়ে নীলাচলে ঘুরতে আসা কামাল উদ্দিন বলেন, অনেক দিন পর আজ সরকারি ছুটির দিনে প্রকৃতি দেখার জন্য ঘুরতে বের হয়েছি। এই পর্যটন স্পটে ফাঁকা জায়গা পেয়ে বাচ্চারা দৌড়াদৌড়ি আর দোলনায় উঠে খেলা করে। এই মেঘলা ঘন কুয়াশার দিনে ঘুরতে এসে খুব ভালো লাগছে।

নতুন দম্পতি চট্টগ্রাম হালিশহর থেকে বেড়াতে আসা মোহাম্মদ হোসেন ও পারভীন আক্তার বলেন, সন্ধ্যায় সূর্য অস্ত্র যাওয়ার আগে পাহাড়ের চূড়ায় নীলাচলে এলে প্রকৃতি যে কত সুন্দর তা দেখা যায়। কখনো হালকা বৃষ্টি আর মেঘে ঢাকা রোদে যেন মেঘের সঙ্গে পাহাড়ের লুকোচুরি খেলা চলে। এর স্মৃতি ধরে রাখতে ছবি তুলে রাখব। 

বান্দরবান হোটেল-মোটেল-রিসোর্ট ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক সিরাজুল ইসলাম জানান, করোনাকালীন লোকসান, বন্যায় ক্ষয়ক্ষতি তারপর চলমান সন্ত্রাসবিরোধী অভিযানের নিষেধাজ্ঞা জারি আর সম্প্রতি তিন পার্বত্য জেলা পরিস্থিতি বিপর্যয়ের কারণে একেবারে পর্যটক কমে গেছে এই জনপদে। বিশ্ব পর্যটন দিবসকে কেন্দ্র করে আর বান্দরবানে পযটকদের আগমনের জন্য হোটেল-মোটেলগুলো ২০ থেকে ৫০ শতাংশ ছাড় রাখার পরও মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে তারা। তবে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে আবারও এই জেলায় পর্যটকদের আগমন ঘটবে এমন আশা রয়েছে পর্যটন সংশ্লিষ্ট সবার।

বান্দরবান টুরিস্ট পুলিশের পুলিশ সুপার আপেল মাহমুদ বলেন, বান্দরবানে পর্যটকদের আগমন কমে গেছে। তবে পর্যটকদের নিরাপত্তার জন্য টুরিস্ট পুলিশ সবসময় সজাগ রয়েছে। 

পর্যটকদের সার্বিক সহযোগিতা ও সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিশ্চিতে বান্দরবান টুরিস্ট পুলিশ কাজ করে যাচ্ছে বলে তিনি জানান।

বান্দরবানের জেলা প্রশাসক শাহ্ মোজাহিদ উদ্দিন বলেন, বান্দরবান পার্বত্য জেলা পর্যটনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ জেলা। এই জেলায় পর্যটক আসুক আমরা সবসময়ই চাই। পর্যটকদের পদচারণায় মুখরিত থাকুক-এটাই আমাদের প্রত্যাশা। প্রান্তিক লেক, নীলাচল ও মেঘলা পর্যটন স্পটগুলোকে আধুনিকায়ন করা হয়েছে। এর পাশাপাশি ৭৪টি পর্যটন কেন্দ্র এই বান্দরবান জেলায় রয়েছে। এর মধ্যে দুই-চারটি পর্যটন কেন্দ্র ব্যতীত বাকি সব পর্যটন কেন্দ্র আসা-যাওয়ার জন্য উপযোগী। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নিরাপত্তা পরিস্থিতি অন্যান্য জেলার চেয়ে ভালো আছে। এখানে সম্প্রীতি রয়েছে, এখানকার মানুষের আন্তরিকতা রয়েছে।





এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ


https://www.shomoyeralo.com/ad/1698385080Google-News-Update.jpg

সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : সৈয়দ শাহনেওয়াজ করিম, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ। নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।
ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫ | ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com
close