প্রকাশ: শুক্রবার, ২৭ সেপ্টেম্বর, ২০২৪, ৪:৩১ এএম আপডেট: ২৭.০৯.২০২৪ ৭:৩৯ এএম (ভিজিট : ৩৪৩)
লক্ষ্মীপুরের কমলনগর উপজেলায় বিস্তীর্ণ এলাকার বাসিন্দারা পানিবন্দি অবস্থায় দুর্বিষহ দিনযাপন করছেন। গত কয়েক দিন ধরে একটানা ভারী বৃষ্টিপাতে তলিয়ে গেছে বিস্তীর্ণ ফসলি জমি। বাদ যায়নি বসতবাড়ির আঙিনাও। জলাবদ্ধতার কারণে কমলনগর উপজেলার চরকাদিরা, তোরাবগঞ্জ ও চরলরেঞ্চ ইউনিয়নের প্রায় ২৫ হাজার একর জমিতে মৌসুমের আমন ধান আবাদ করা সম্ভব হচ্ছে না। এতে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে প্রায় ২০ হাজার টন কম আমন ধান উৎপাদন হওয়ার আশঙ্কা করছে উপজেলা কৃষি বিভাগ।
এ বিষয়ে কমলনগর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোহাম্মদ শাহীন রানা বলেন, এ অঞ্চলের কৃষি কাজের জন্য ভুলুয়া নদী আশীর্বাদ হলেও বিভিন্ন কারণে নদীর পানি প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। এ কারণে সৃষ্টি হয়েছে স্থায়ী জলাবদ্ধতা। ফলে আমন আবাদের জন্য কমলনগরের বহু জমি অনাবাদী থেকে যাবে। তবে ভারী বৃষ্টিপাত ও পানি কমার পর স্থানীয় চাষিদের চারাগাছ সরবরাহ করা সম্ভব হলে আরও কিছু জমি চাষাবাদের আওতায় নিয়ে আসা যাবে। ইতিমধ্যে আমরা বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেছি।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, চলতি আমন মৌসুমের বীজতলা তৈরি ও আবাদের সময় অতিক্রান্ত হয়ে গেছে। বন্যার পানিতে তলিয়ে থাকা বীজতলার বীজ পচে নষ্ট হয়ে গেছে। দ্বিতীয়বার বীজ ও চারা সংগ্রহ করে কেউ কেউ আংশিক বপন করলেও শেষ রক্ষা হয়নি, সেগুলোও পচে গেছে। এক মাসেরও বেশি সময় ধরে এই জলাবদ্ধতায় স্থানীয় বেশিরভাগ কৃষকই তাদের আবাদযোগ্য জমিতে আমন ধানের আবাদ করতে পারছেন না।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, সাধারণত আমন ধানের বীজতলা তৈরি করা হয় জৈষ্ঠ্য-আষাঢ় মাসে এবং ধান বপন করা হয় শ্রাবণ-ভাদ্র মাসে। ধান বপনের সময় শেষ হয়ে গেলেও এসব জমি এখনও ৩ থেকে ৫ ফুট পানিতে তলিয়ে আছে। এ ছাড়া বীজ এবং চারাগাছ সংকটের কারণে চাইলেও এখন আর আবাদ করা সম্ভব নয়।
ক্ষতিগ্রস্ত চাষি ও এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রতি বছরই অতিবৃষ্টির কারণে কম-বেশি এমন সমস্যা মোকাবিলা করতে হয় স্থানীয়দের। এ অঞ্চলের চাষাবাদের ক্ষেত্রে কৃষকদের কাছে স্থানীয় ভুলুয়া নদী এখন মরণফাঁদে পরিণত হয়েছে। এককালের খরস্রোতা ভুলুয়া নদী এখন প্রভাবশালী দখলদার ও অসাধু জেলেদের কবলে পড়ে সরু খালে পরিণত হয়েছে। অবৈধ দখল, মাছের ঘের তৈরি, নদীর দুই পাড় দখল করে গড়ে ওঠা অবৈধ জনবসতি এবং নদীর তলদেশ ভরাট হওয়ায় পানির স্বাভাবিক গতিপথ বন্ধ হয়ে গেছে। ভুলুয়ার শাখা খালগুলোও দখলের পাশাপাশি বছরের পর বছর সংস্কারের অভাবে ভরাট হয়ে যাওয়ায় বর্ষায় পানি নিষ্কাশন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। ভুলুয়া নদীর অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ ও পানি প্রবাহের গতিপথ স্বাভাবিক করতে চাইলেও নিরুপায় এলাকাবাসী। স্থানীয় দখলদার প্রভাবশালীদের কাছে একরকম জিম্মি হয়ে পড়েছেন তারা।
সমস্যা সমাধানে উপজেলা প্রশাসন এবং পানি উন্নয়ন বোর্ডকে বিবাদী করে সুপ্রিম কোর্টে একটি রিট পিটিশন করেছেন স্থানীয় বাসিন্দা সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী আবদুস সাত্তার পালোয়ান। এ বিষয়ে জানার জন্য যোগাযোগ করা হলে অ্যাডভোকেট মোর্শেদ আলম বলেন, সমস্যা সমাধানে দ্রুত প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেওয়াসহ ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের মাঝে রেশনিংয়ের ব্যবস্থা এবং বিনাসুদে কৃষিঋণ চালু করার দাবি জানানো হয়েছে রিট পিটিশনে।
চরকাদিরা ইউনিয়নের চর ঠিকা গ্রামের কৃষক হাচান আলী বলেন, আমি প্রতি বছর কয়েক একর জমিতে ধান চাষ করি। কিন্তু এ বছর এক শতক পরিমাণ জমিতেও আবাদ করা সম্ভব হয়নি। চরকাদিরা গ্রামের কৃষক নিজাম উদ্দীন বলেন, আমাদের ১৬ একর জমির সবটুকুই এখনও ২ থেকে ৩ ফুট পানিতে নিমজ্জিত হয়ে আছে।
সময়ের আলো/আরএস/