ই-পেপার সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪
সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪

ডামি নির্বাচনে সহায়তা
সেই এডিসি ইউএনওদের প্রত্যাহারের পরিকল্পনা
প্রকাশ: শুক্রবার, ২৭ সেপ্টেম্বর, ২০২৪, ৩:০০ এএম  (ভিজিট : ৪৯৮)
আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব গ্রহণের দেড় মাসেও প্রশাসনে অস্থিরতা কাটেনি। বিশেষ করে ডামি নির্বাচনে সহায়তাকারী মাঠ প্রশাসনের অধিকাংশ কর্মকর্তা এখনও বহাল থাকায় ক্ষুব্ধ বিগত সরকার আমলে বঞ্চিত কর্মকর্তারা। এমন পরিস্থিতিতে বিতর্কিত অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (এডিসি) ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের (ইউএনও) শিগগিরই প্রত্যাহারের পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। একই সঙ্গে নতুন নিয়োগ পাওয়া ডিসিদের মধ্যে বিতর্কিতদেরও প্রত্যাহার করা হবে। অন্যদিকে ৮ ডিসির পদ ফাঁকা থাকায় সেখানে নতুন পদায়ন নিয়ে জটিলতা এখনও কাটেনি। ডিসি পদায়নে তিন কোটি টাকা ঘুষের একটি চেক পাওয়ার অভিযোগ ওঠায় নতুন পদায়নের ক্ষেত্রে কিছুটা বিপাকে পড়েছে সরকার।

বিদায়ি সরকারের আমলে ‘বঞ্চিত’দের ভূতাপেক্ষ পদোন্নতি দেওয়ার পাশাপাশি চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পাওয়া শীর্ষ কর্মকর্তাদের চুক্তি বাতিল করা হয়েছে। এ ছাড়া প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ পদ থেকে ‘স্বৈরাচারী সরকারের অনুগত’ শীর্ষ কর্মকর্তাদের সরিয়ে দিয়ে তাদের জায়গায় আগের কোণঠাসা কর্মকর্তাদের পদায়ন করা হলেও মাঠ প্রশাসনে পদায়ন নিয়ে হিমশিম খেতে হচ্ছে সরকারকে। ৯ ও ১০ সেপ্টেম্বর দুদিনে ৫৯ জেলায় নতুন ডিসি নিয়োগ দেওয়া হলে যারা ডিসি হতে পারেননি, তারা এই নিয়োগ বাতিলের দাবিতে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে গিয়ে হট্টগোল করেছিলেন। উপসচিব পর্যায়ের ওই কর্মকর্তারা নিয়োগ, পদোন্নতি ও প্রেষণ অনুবিভাগ (এপিডি) শাখার যুগ্ম সচিব কেএম আলী আযমের কক্ষে ঢুকে হইচই-হট্টগোল করেন। পরের দিন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় আট জেলায় নতুন ডিসির নিয়োগ বাতিল করে। একই সঙ্গে ডিসি নিয়োগ নিয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে বঞ্চিত কর্মকর্তাদের অসন্তোষ থেকে সৃষ্ট হট্টগোলের কারণ খতিয়ে দেখতে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সিনিয়র সচিব এমএ আকমল হোসেন আজাদের নেতৃত্বে এক সদস্যবিশিষ্ট কমিটি গঠন করা হয়। কমিটিকে সাত কর্মদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হলেও এখনও প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয়নি বলে জানা গেছে। এ ছাড়া নতুন যোগদান করা ৫১ ডিসির বিষয়ে গোয়েন্দা তদন্ত করা হচ্ছে।

বিশেষ করে জুলাই-আগস্টের ছাত্র-জনতার আন্দোলনে তাদের ভূমিকা কী ছিল, শেখ হাসিনা সরকারের ‘সুবিধাভোগী’ কি না, আগের সরকারের মন্ত্রী ও ভিআইপিদের পিএস ও এপিএস হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন কি না, ছাত্রজীবনে কোনো রাজনীতি করতেন, বিগত ছয় মাস প্রশাসনের কাদের সঙ্গে চলাফেরা করেছেন তা-ও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এ ছাড়া ত্যাগী, বঞ্চিত ও যোগ্য কর্মকর্তাদের পরিবর্তে আওয়ামী লীগ পরিবার সংশ্লিষ্ট ও বিগত ১৫ বছরে গুরুত্বপূর্ণ পদে নিয়োগ পাওয়া কর্মকর্তাদের অর্থের বিনিময়ে ডিসি পদে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে বলে যে অভিযোগ উঠেছে তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। আওয়ামী লীগ সরকারের আশীর্বাদপুষ্ট কর্মকর্তার অপসারণ চেয়ে ঢাকা, খুলনা, লক্ষ্মীপুর ও নাটোরসহ কয়েকটি জেলার ডিসির বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট জেলায় মানববন্ধন ও বিক্ষোভ করেছে সচেতন নাগরিক সমাজ। তাদের মধ্যে যাদের বিরুদ্ধে নেতিবাচক প্রতিবেদন পাওয়া যাবে তাদের প্রত্যাহার করা হবে বলে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে। এ ছাড়া যেসব অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রয়েছেন যারা বিগত ডামি দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনের সহায়তাকারী হিসেবে বিতর্কিত তাদেরও শিগগিরই প্রত্যাহার করা হবে বলে সূত্র জানিয়েছে। নানা বিতর্ক ও সমালোচনার মুখে বাতিল হওয়ার কারণে লক্ষ্মীপুর, জয়পুরহাট, কুষ্টিয়া, রাজশাহী, সিরাজগঞ্জ, শরীয়তপুর, দিনাজপুর ও রাজবাড়ীতে ডিসি পদ এখনও শূন্য রয়েছে। আর ৫টি জেলায় বিগত সরকারের ডিসি বহাল রয়েছে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, ডিসি নিয়োগ নিয়ে বিতর্কের মধ্যেই তিন কোটি টাকার ক্যাশ চেক দিয়ে ডিসি পদায়ন নিয়ে গণমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয়। প্রতিবেদনের বিষয় খতিয়ে দেখতে এক সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। ডিসি নিয়োগ নিয়ে একের পর এক বিতর্কে জড়িয়ে পড়ায় ফাঁকা থাকা ৮ ডিসি পদে নিয়োগ নিয়ে জটিলতা তৈরি হয়েছে বলে সূত্র জানিয়েছে। বৈষম্যের শিকার হওয়া যোগ্য কর্মকর্তাদের পরিবর্তে বিতর্কিতদের পদায়নের অভিযোগে বিতর্কের মুখে এপিডি অনুবিভাগের যুগ্ম সচিব (মাঠ প্রশাসন) কেএম আলী আযমকে গত ১৮ সেপ্টেম্বর তার গুরুত্বপূর্ণ পদ থেকে সরিয়ে দিয়ে সিলেটের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার হিসেবে বদলি করা হয়েছে। তবে এই অনুবিভাগের আরেক যুগ্ম সচিব ড. জিয়াউদ্দিন আহমেদের কক্ষ থেকে ডিসি নিয়োগ নিয়ে আর্থিক লেনদেনের অভিযোগ হিসেবে চেক পাওয়া গেলেও তিনি এখনও এ পদে বহাল রয়েছেন।

বঞ্চিত কর্মকর্তাদের দাবি, ২০১৪ সালে একতরফা নির্বাচন, ২০১৮ সালে রাতের ভোট এবং ২০২৪ সালে ডামি নির্বাচনে সহায়তাকাকারী ইউএনও, ডিসি ও বিভাগীয় কমিশনারসহ মাঠ প্রশাসনে দায়িত্ব পালন করা কর্মকর্তারা বিগত সরকারের আমলে পদোন্নতিসহ ভালো পদায়ন পেয়েছেন। কিন্তু সরকার পরিবর্তনের পরও তাদের ফের পদোন্নতি ও গুরুত্বপূর্ণ পদে পদায়নের চেষ্টা করছে একটি মহল।

এ বিষয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ড. মো. মোখলেস উর রহমান বলেন, মাঠ প্রশাসনের বিতর্কিত এবং অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে এমন কর্মকর্তাদের সরিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। বিতর্কিত ডিসি ও এডিসিদের শিগগিরই সরিয়ে দেওয়া হবে। ফাঁকা থাকা ৮ ডিসি পদে পদায়নের প্রক্রিয়া চলছে। এ ছাড়া পদোন্নতিপ্রাপ্তদের পদায়নেরও কাজ চলছে। গোয়েন্দা প্রতিবেদন এলেই পদায়ন শুরু হবে। তখন গোটা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে যাবে।


সময়ের আলো/আরএস/




https://www.shomoyeralo.com/ad/1698385080Google-News-Update.jpg

সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সৈয়দ শাহনেওয়াজ করিম, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ
নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।

ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫ | ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com
close