ই-পেপার সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪
সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪

কাজে ফিরেছেন শ্রমিকরা
প্রকাশ: শুক্রবার, ২৭ সেপ্টেম্বর, ২০২৪, ২:২৬ এএম  (ভিজিট : ১৮৪)
গাজীপুরে বেশিরভাগ পোশাক তৈরি কারখানায় উৎপাদন চলছে শান্তিপূর্ণভাবে। নতুন করে কোনো কারখানায় শ্রমিক বিক্ষোভ হয়নি। বৃহস্পতিবার সকাল থেকে এ শিল্পাঞ্চলের বেশিরভাগ কারখানায় উৎপাদন কাজে যোগ দিয়েছে শ্রমিকরা। শ্রমিক আন্দোলনের মুখে গত সোমবার বন্ধ ঘোষণা করা ১৪টি কারখানার মধ্যে ৫টি খুলে দেওয়া হয়েছে। বন্ধ রয়েছে আরও ৯টি। তবে এই ৯ কারখানাও শিগগিরই খুলে দেওয়া হবে বলে জানিয়েছে কারখানা কর্তৃপক্ষ ও শিল্প পুলিশ।

শিল্প পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, গাজীপুরে মোট নিবন্ধিত কারখানা আছে ২ হাজার ৬৩৩টি। এর বাইরে অনিবন্ধিত কারখানা আছে ৪০০ থেকে ৫০০টি। এসব কারখানায় কাজ করে প্রায় ২২ লাখ শ্রমিক। এসব শ্রমিকের ১৮ দফা দাবি বাস্তবায়নে রাজি হয়েছে মালিকপক্ষ। ফলে বিক্ষোভ-প্রতিবাদসহ অন্য কর্মসূচি বন্ধ করে অধিকাংশ কারখানায় কাজে ফিরেছে শ্রমিকরা। তবে গত বুধবার মহানগরীর ছয়দানা এলাকায় ফুল এভার বিডি লিমিটেড নামের একটি পোশাক কারখানায় বকেয়া বেতনের দাবিতে বিক্ষোভ করে শ্রমিকরা। বৃহস্পতিবার কোথাও শ্রমিক অসন্তোষের খবর পাওয়া যায়নি।

জানা যায়, শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর গত ২১ আগস্ট ছয় দফা দাবিতে গাজীপুরে প্রথম আন্দোলন শুরু করে টঙ্গীর বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড কারখানার শ্রমিকরা। এরপর ধীরে ধীরে অশান্ত হয়ে ওঠে গাজীপুর শিল্পাঞ্চল। অন্যান্য কারখানায়ও শুরু হয় আন্দোলন। থেমে থেমে প্রায় প্রতিদিনই চলে শ্রমিকদের এ কর্মসূচি। দাবি আদায়ে কারখানায় হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনাও ঘটে। এসব কারণে সাধারণ ছুটি ও অনির্দিষ্টকালের জন্য অনেক কারখানা বন্ধ ঘোষণা করা হয়। পাশাপাশি স্বাভাবিক উৎপাদন ব্যাহত হয় অনেক কারখানায়। এ ঘাটতি পুষিয়ে নিতে চেষ্টা করছেন কারখানার মালিকরা।

গাজীপুর শিল্প পুলিশের দেওয়া তথ্য মতে, গত শুক্রবার বন্ধের দিনেও গাজীপুর মহানগর ও মহানগরের বাইরে সব মিলিয়ে প্রায় ২৫ শতাংশ কারখানা খোলা ছিল। এসব কারখানায় উৎপাদন কাজ চলেছে। বৃহস্পতিবার সকালেই যথারীতি কাজে যোগ দিয়েছে শ্রমিকরা। কারখানা এলাকায় নিরাপত্তায় পুলিশ মোতায়েন ছাড়াও রয়েছে সেনাবাহিনী ও বিজিবির টহল।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, গত সোমবার মহানগরীর টঙ্গী, সদর উপজেলার বাঘেরবাজার ও কালিয়াকৈর উপজেলার মৌচাক এলাকায় শ্রমিক অসন্তোষ দেখা দেয়। বিক্ষোভ, সড়ক অবরোধ, কারখানা ভাঙচুরের ঘটনায় অশান্ত হয়ে ওঠে গাজীপুর শিল্পাঞ্চল। ছুটি ঘোষণা করা হয় ১৪টি কারখানায়। পরে সেনাবাহিনী ও পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। তবে মঙ্গলবার সকাল থেকে গাজীপুর শিল্পাঞ্চলে বেশিরভাগ কারখানায় উৎপাদন চলমান থাকে। শান্তিপূর্ণভাবে কাজে যোগ দিয়েছে নারী-পুরুষ শ্রমিকসহ অন্য কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা। অন্যদিকে বুধবার মহানগরীর ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের ছয়দানা হাজীপুর পুকুর এলাকায় বকেয়া বেতনের দাবিতে ফুল এভার বিডি লিমিটেড নামের একটি কারখানার শ্রমিকরা মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করে। বেলা ১১টার দিকে অবরোধ করলে দুই পাশের যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এতে ভোগান্তিতে পড়েন ওই পথে চলাচলকারী যানবাহনের যাত্রীরা। পরে বেতন পরিশোধের আশ^াসে দুপুর ১টার দিকে অবরোধ তুলে নিলে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়।

গাজীপুর শিল্পাঞ্চল-২-এর টঙ্গী জোনের সহকারী পুলিশ সুপার মোশারফ হোসেন জানান, কোথাও শ্রমিক অসন্তোষের খবর পাওয়া যায়নি। বৃহস্পতিবার ৯টি কারখানা বন্ধ ছিল। সেগুলোও দুয়েক দিনের মধ্যে খুলে দেওয়া হতে পারে।

বন্ধ থাকা কারখানার মালিকপক্ষকের সঙ্গে বেতন পরিশোধ করার জন্য আলোচনা করেছি। আশা করা হচ্ছে সমাধান হয়ে যাবে। এ ছাড়া সকাল থেকেই গাজীপুরের বেশিরভাগ কারখানা খোলা আছে। কারখানার নিরাপত্তায় শিল্প পুলিশের পাশাপাশি জেলা এবং মহানগর পুলিশ কাজ করছে। বিজিবি ও সেনাবাহিনীর টহল জোরদার করা হয়েছে।

গাজীপুর শিল্প পুলিশের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ সারোয়ার আলম বলেন, গাজীপুর শিল্পাঞ্চলের কোথাও কোনো শ্রমিক বিক্ষোভ কিংবা সড়ক অবরোধের খবর পাওয়া যায়নি। শ্রমিকরা শান্তিপূর্ণভাবে সকালে কাজে ফিরেছে।

গাজীপুর কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদফতর জানায়, গাজীপুরে মোট নিবন্ধিত কারখানা আছে ২ হাজার ৬৩৩টি। এর মধ্যে তৈরি পোশাক (আরএমজি) কারখানা ১ হাজার ১২০টি এবং অন্যান্য কারখানা ১ হাজার ৫১৩টি। এ ছাড়া অনিবন্ধিত কারখানা আছে ৪০০ থেকে ৫০০। সব মিলিয়ে এসব কারখানায় ২২ লাখের মতো শ্রমিক কাজ করে।

আশুলিয়ায় ১৭টি বাদে সব কারখানা চালু : এদিকে আশুলিয়ার পরিবেশ অনেকটাই শান্ত। ১৭টি ছাড়া অধিকাংশ পোশাক কারখানায় উৎপাদন শুরু হয়েছে। তবে বকেয়া বেতনসহ বিভিন্ন দাবিতে বন্ধ রয়েছে ৯টি কারখানা। এ ছাড়া ৮টিতে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করেছে কারখানা কর্তৃপক্ষ। বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে আশুলিয়া শিল্প পুলিশ-১-এর পুলিশ সুপার মোহাম্মদ সারোয়ার আলম এ তথ্য নিশ্চিত করেন।

শিল্প পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, সকাল থেকে ডিইপিজেডসহ শিল্পাঞ্চলের অধিকাংশ তৈরি পোশাক কারখানায় স্বতঃস্ফূর্তভাবে কাজে যোগ দিয়েছে শ্রমিকরা। এখন পর্যন্ত কোথাও কোনো বিশৃঙ্খলার খবর পাওয়া যায়নি। তবে বকেয়া বেতনসহ আরও কিছু সমস্যার কারণে বৃহস্পতিবারও ১৭টি কারখানায় উৎপাদন বন্ধ রয়েছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে গোটা শিল্পাঞ্চলে নিয়োজিত আছেন র‌্যাব, পুলিশ, বিজিবিসহ সেনাবাহিনীর সদস্যরা।

বাংলাদেশ গার্মেন্ট ও সোয়েটার্স শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের আইন বিষয়ক সম্পাদক খায়রুল মামুন মিন্টু বলেন, অধিকাংশ পোশাক কারখানায় শ্রমিকরা উৎপাদনে যোগ দিয়েছে। তবে বকেয়া বেতনসহ কিছু কারখানায় দাবি নিয়ে সমস্যার সমাধান হয়নি। আলোচনার মাধ্যমে দ্রুত সমাধানের জন্য যোগাযোগ করা হচ্ছে।

আশুলিয়া শিল্প পুলিশ-১-এর পুলিশ সুপার সারোয়ার আলম সময়ের আলোকে বলেন, গতকাল সকাল থেকে শিল্পাঞ্চল আশুলিয়ার প্রায় সব কারখানাতেই উৎপাদন স্বাভাবিক রয়েছে। তবে শ্রম আইনের ১৩ (১) ধারায় ৯টি কারখানা অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ। এ ছাড়া আরও ৮টি কারখানায় সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। বিভিন্ন কারণে এসব কারখানা বন্ধ। যেমন কোনোটা বেতন পরিশোধ করতে পারছে না। আবার কারও অর্ডার নেই ইত্যাদি। সাধারণ ছুটি ঘোষণা হওয়া ৮টি কারখানার পাঁচটিতেই মালিকপক্ষ শ্রমিকদের বেতন পরিশোধ করতে পারছে না। অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা হওয়া ৯টি কারখানার মধ্যে দুটি নন আরএমজি ফ্যাক্টরি। আর বাকিগুলোর মধ্যে দুটি শ্রমিকদের বেতন পরিশোধ করতে পারছে না। কারখানার সামনে অতিরিক্ত পুলিশ ও সেনাবাহিনীর টহল অব্যাহত রয়েছে বলেও জানান তিনি।

সময়ের আলো/আরএস/




https://www.shomoyeralo.com/ad/1698385080Google-News-Update.jpg

সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সৈয়দ শাহনেওয়াজ করিম, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ
নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।

ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫ | ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com
close